বলাই ( দ্বিতীয় পর্ব)।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
বাড়ির সামনে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল বলাই। বেশ ক"বার ভেতরে উঁকি মারল। দেখলো মিনতী আশেপাশে আছে নাকী। মিনতীর হাতে পড়লে আজ রক্ষে নেই। নিচ থেকে বলাই খেয়াল করে দেখল মিনতীর ঘরে আলো জ্বলছে। তার মানে মিনতী তার ঘরেই। বলাই ভাবছে একবার নিজের ঘরে ঢুকতে পারলে আর বের হবো না। চুপি চুপি সদর দরজা খুলল বলাই। মাসি রান্না ঘরে আছে আর মেসো নিজের ঘরে বসে রেডিওতে খবর শুনছে। আশপাশে মিনতীও নেই। সিঁড়ি দিয়ে যেই না নিজের ঘরের দিকে উঠছে বলাই হঠাৎ পেছন থেকে একটা শব্দ,
এই দাঁড়া কোথায় গেছিলি তুই। আর আমার টিকিটের টাকা কোথায়। তুমি জানিস আজ তোর জন্য কতটা সময় আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম সিনেমা হলের সামনে।
বলাই আমতা আমতা করে বলে উঠল আরে আর বলিস না। সবে মাএ সিনেমা হলের দিকে গিয়েছি আর দেখি আমার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাস্টার মশাই। উনার সঙ্গে কথা বলতে বলতে উনার বাড়ি চলে গেছিলাম। আসলে অনেক দিন পর দেখা তো।
একেবারে গল্প বানাবি না বলাই। তুই বাংলা ডিপার্টমেন্টের ছাএ ঠিকই কিন্তু তোর গল্প একেবারেই হয় না। আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমার টিকিটের টাকা দে?
টাকা কিসের টাকা। ওই টাকা খরচ হয়ে গেছে। আমার পরের বারের হাত খরচ থেকে কেটে নিস।
মিনতী রেগে ঘরে চলে গেল। সপ্তাহের ছুটির দিনগুলো বাদে দুপুরের সময় বলাইকে একটা জায়গাই পাওয়া যায়। সেটা হলো গার্লস কলেজের সামনে। বলাইয়ের একমাত্র পছন্দের মানুষ অদিতি সেখানেই পড়ে। অদিতির বাড়ি বলাইয়ের পাশের এলাকায়। প্রায় দেড় বছর ধরে অদিতিকে দেখে আসছে বলাই। কিন্তু বলে সাহস পাচ্ছে না। যদিও অদিতিও বলাইকে পছন্দ করে কিন্তু সেটা বুঝতে দেয় না। সেদিনও গার্লস কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বলাই। অদিতি বের হয়েছে। বলাইয়ের বন্ধু লালু সঙ্গে রয়েছে। বলাই আজ ঠিক করেছে অদিতি কে বলেই দেবে। অনেক হয়েছে আর না। পাশ থেকে সাহস দিচ্ছে লালু। বলাই এগিয়ে গেল অদিতির দিকে।
এই যে শুনছ।
আমাকে বলছেন।
হ্যা তোমাকে বলছি।
ও কিছু বলবেন।
তোমার নাম তো অদিতি। আমাদের পাশের এলাকায় বাড়ি। সেকেন্ড ইয়ারে সামাজিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছ।
অদিতি মনে মনে বলল গাধা টা আসল কথা না বলে শুধু এসব বলছে। যাইহোক আর কিছু বলবেন।
হ্যা। আসলে আমি না তোমাকে অনেক পছন্দ করি। মানে বলতে পারো আমি তোমাকে ভালোবাসি।
কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে অদিতি রেগে গেল। এবং কিছু না বলে দ্রুত চলে গেল বলাই সেটা দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। সন্ধ্যার সময় বলাই তার ঘরে শুয়ে আছে। মিনতী স্কুল থেকে ফিরে বলাইয়ের কোনো কথা শোনেনি। অন্যদিন বলাই এইসময়ে হয় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়,না হলে মিনতী কে বিরক্ত করে। কিন্তু আজ কী হলো বলাইয়ের। মিনতী গিয়ে জিজ্ঞেস করল;
কী রে বলাই কী হয়েছে। সন্ধ্যার সময়ে শুয়ে আছিস যে।
কিছু হয়নি।
আরে বল। সাহায্য তো করতে পারি। বলাই সবকিছু বলল মিনতী কে। পাশের পাড়ার মেয়ে অদিতি। মিনতী বেশ ভালো মতো চেনে। সব শুনে মিনতী বলে উঠল
আরে গাধা এতদিনে একটা কাজ করেছিস। তো ভয় পাচ্ছিস কেন?
আসলে ও চলে যাওয়ার সময় অনেক রেগে ছিল। মনে হয় এতোক্ষণে বাড়িতে বলে দিয়েছে।
আরে গাধা না। মেয়েরা একেবারে সরাসরি হ্যা বলে নাকী। কাল যাস দেখিস কিছু বলবে।
পরের দিন দুপুরে বলাই হাজির গার্লস কলেজের সামনে। আজ অদিতি একটু দ্রুত বের হয়েছে। কিন্তু আজ বলাই আর সাহস করে এগিয়ে যায়নি অদিতির দিকে। বেশ কিছুক্ষণ অদিতি আস্তে হাঁটল না বলাই আসবে তার কাছে। কিন্তু না বলাই আসলো না। শেষমেশ অদিতি গিয়ে বলল এই যে শুনছ;
বলাই বলল ইয়ে মানে আমি।
হ্যা তুমি।
আজ বিকেলে ফ্রী আছ।
মানে ফ্রী আমি।
হ্যা। যতদূর জানি তুমি বেকার। কোনো কাজ আছে বিকেলে।
না।
ঠিক আছে বিকেলে বিদ্যানন্দ পার্কে আসবে, কথা আছে।
এটা শুনে তো বলাই মহা খুশি। তখনই লালু কে সঙ্গে নিয়ে চলে গেল মিনতীর স্কুলে। বলাইকে দেখে বলল তুই এখন। বলাই বলদ জানিস অদিতি আজ বিকেলে পার্ক দেখা করতে বলেছে।
আরে বাহ তাই নাকী। তাহলে তো হয়েই গেল। তো চল যা সমস্যা কোথায়।
ইয়ে মানে যাব তো। কিন্তু কাছ তো টাকা নেই। কিছু টাকা দিবি।
আর বলা লাগবে না। এটা বলে ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে বলাইকে দিল মিনতী। এবং বলল এই যে গাধা শোন একটু বুঝে শুনে কথা বলিস। আর হ্যা হাতে করে একটা গোলাপ নিয়ে যাস। বলাই বাড়ি চলে আসলো। একেবারে চারটার আগ দিয়ে বলাই তৈরি হয়ে চলে গেল বিদ্যানন্দ পার্ক। গিয়ে দেখে অদিতিও চলে এসেছে।।
চলবে.....
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।