বলাই(প্রথম পর্ব)।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
বলাইয়ের লেখাপড়া শেষ হয়েছে মাস ছয়েক। কিন্তু সে চাকরির নাম নেয় না। বাবা মা কে ছোটবেলায় হারিয়েছে বলাই। তারপর থেকে মাসির কাছেই মানুষ। বলাইয়ের মাসি এবং মেসো অবশ্য তাকে তাদের ছেলের মতোই ভালোবাসে। কারণ তাদের ছেলে নেই এক মেয়ে শুধু। সেই আদরেই বলাই টা একটু ত্যাদর হয়েছে। বলাইয়ের সমবয়সী সব বন্ধুরাই প্রায় চাকরি পেয়ে গেছে। বলাই খুব একটা ভালো ছাএ না। তবু সেকেন্ড ক্লাস নিয়ে বাংলা'ই অনার্স টা করেছে খুব কষ্টে। বলাই দেখতে অনেক টা রোগা পাতলা গঠনের। মাথার চুলগুলো বেশ বড়। বলাইয়ের মাসির ঐরকম বড় চুল একেবারেই পছন্দ না। চুল নিয়ে বলাইয়ের মাসি কিছু বললেই বলাই উদাহরণ হিসেবে কাজী নজরুল কে টেনে আনে। বলে আরে মাসি আমি তো উনার উওরসরী আমার চুল বড় থাকবে এটাই স্বাভাবিক। রবিবারের দুপুর। দুপুরের খাওয়া শেষ করে বলাই শুয়ে শুয়ে একটা রোমান্টিক উপন্যাস পড়ছে। হঠাৎ পায়ের আওয়াজ যেন তার ঘরের দিকে কেউ আসছে।
শব্দ টা পেয়েই বলাই বইটা লুকিয়ে রাখল বালিশের নিচে। হাতের কাছে ছিল একটা ইংরেজি উপন্যাস। সেটা নিয়ে সমানে পাতা উল্টাচ্ছে বলাই। হঠাৎ বলাইয়ের মাসির মেয়ে মিনতী ঘরে ঢুকল। মিনতী বলাইয়ের থেকে বছর তিনেকের বড়। মিনতী একটা স্কুলের শিক্ষিকা। এখনো বিয়ে করে নি। ওদের সম্পর্ক একেবারে ভাই বোনের মতো। সারাক্ষণ ঝগড়া মারামারি লেগেই থাকে। ঘরে ঢুকেই মিনতী বলে উঠল হ্যা রে বলাই রবিবারের দুপুরে করছিস কী?
দেখছিস না একটা ইংরেজি উপন্যাস পড়ছি।
ভন্ডামি বাদ দে বলাই। বাংলা ডিপার্টমেন্টর ছাএ হয়ে ঠিকমতো বাংলা টাই পড়তে পারিস না। আর তুই পড়বি ইংরেজি উপন্যাস।
আমি এখন উপন্যাসে ঢুবে গেছি। এখন এসব বলে লাভ নেই। কী বলতে এসেছিস বল?
হ্যা রে আমার একটা কাজ করে দিবি?
কী কাজ।
আমি এবং আমার বন্ধু নিশীতা সিনেমা দেখতে যাব। সিনেমা হলে অনেক ভীড়। তুই গিয়ে দুটো টিকিট এনে দিবি ভাই?
ওসব আমার দ্বারা হবে না। তুই যা।
এটুকু সাহায্য করতে পারবি না। আমি না তোর বড় বোন। আর কখনো আমার কাছে কিছু চেয়ে দেখিস। তখন দেখব??
মিনতীর থেকে প্রতিমাসে বেশ ভালো টাকা হাত খরচ নেয় বলাই।
আরে রেগে যাচ্ছিস কেন? আমি কী বলেছি যাব না।দে টাকা দে।
মিনতীর হাত থেকে টাকা নিয়ে বের হয়ে গেল বলাই। বের হয়ে পাড়ার মোড় পযর্ন্ত গিয়েছে বলাই। হঠাৎ দেখে বলাইয়ের দুই বন্ধু লালু এবং প্রবীর দাঁড়িয়ে আছে। বলাই জিজ্ঞেস করল; কোথায় যাচ্ছিস তোরা।
লালু বলল কেন তোকে কাল বললাম না আজ আমাদের শহরের টিমের সঙ্গে গৌড়হাটি ফুটবল টিমের খেলা আছে। আমরা সেখানেই যাচ্ছি। তুই তো যাবি না।
বলাই: আরে না আমি যাব। কী বলিস, তোরা যাচ্ছিস আর আমি যাব না।
লালু এবং প্রবীরের সঙ্গে বলাই চলে গেলে খেলা দেখতে। এদিকে মিনতী তৈরি হচ্ছে সিনেমা দেখতে যাবে বলে। পাঁচটায় শো শুরু। এখন সাড়ে চারটা বাজে। মিনতী ভাবছে এতোক্ষণ তো বলাইয়ের টিকিট নিয়ে আসার কথা।
অন্য দিকে বলাই তার শহরের টিম এবং গৌড়হাটি টিমের খেলা দেখতে এতো ব্যস্ত যে মিনতীর টিকিটের কথা একেবারে ভুল গেছে। এরই মধ্যে মিনতীর বান্ধবী নিশীতা নিচে এসে ডাক দেয় মিনতীকে।
কী রে মিনতী যাবি না, আয়।
হ্যা দাঁড়া আসছি।
নিশীতা বলে কী রে বলাইকে দিয়ে টিকিট কাটিয়ে এনেছিস তো।
হ্যা রে ওকে তো কখন পাঠিয়েছি। কিন্তু এখনো তো আসে নাই। মনে হয় সিনেমা হলে অনেক ভীড় সেজন্য বলাইয়ের দেরি হচ্ছে। চল ওখানে গিয়ে ওর থেকে নিয়ে নেব। সিনেমা হলে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও বলাইয়ের কোনো অস্তিত্ব পেলো না মিনতী। অন্যদিকে শো প্রায় শুরু এবং কোনো টিকিট নেই। হাউজফুল বোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটা দেখে বেশ ক্ষেপে গেল মিনতী। বলল আজ বাড়ি আসুক বলাই।
সন্ধ্যার সময় ফুটবল ম্যাচ দেখে ফিরছে বলাই। আজ তারা অনেক খুশি। তাদের টিম শক্তিশালী গৌড়হাটি কে গো হারান হারিয়েছে। হঠাৎ বলাইয়ের মনে পড়লো এই আমার না মিনতী জন্য সিনেমার টিকিট নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। আর আমি এ কী করে এলাম। টিকিটের টাকা খেলা দেখতে দেখতে বাদাম এবং ঝাল মুড়ি খেয়েছে। আসার সময় অবশ্য একটা সিগারেটও ধরিয়েছিল সেই টাকা দিয়ে। বলাই ভাবছে মিনতী নিশ্চয়ই ক্ষেপে গেছে। এখন বাড়ি গেলে তার কী হবে।
চলবে.....
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
খুব চমৎকার গল্প লিখেছেন। বিশেষ করে গল্পের শেষের লেখাগুলো হৃদয় ছুঁয়ে গেল। একেবারে মনের বাস্তব কথাগুলো লিখেছেন আপনি। সত্যিই নিজে যদি নিজেকে চিনতে পারি, নিজে নিজের বন্ধু হতে পারলে তাহলে কারো উপর নির্ভর করতে আর হবে না। তখন জীবন সুখী হবে। আপনার গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। এত চমৎকার গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
ভাইয়া আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগল। আসলে বলাইয়ের যেহেতু মা বাবা নেই তার মাসি তাকে অনেক যত্ন করে মানুষ করেছে।আর এতোটা বেশি ভালো বেসেছে যে বলাই একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। মিনতী দিদির টাকা নিয়ে টিকিট না এনে খেলা দেখতে চলে গেল। সত্যি মিনতী দিদি বলাইয়ের ওপর ক্ষেপে আছে।পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
মিনতী এভাবে ক্ষেপে যাওয়ারই বিষয়। বলাই তো মিনতীর টিকিটের টাকা দিয়ে বাদাম ঝালমুড়ি এবং সিগারেট খেয়ে এসেছে। এখন তো সবাই এরকম বড় বড় চুল রাখে। সবাই শুধু কাজী নজরুল ইসলামের উদাহরণ টি এ দেয়। বলাইয়ের এই গল্পটি আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। সন্ধ্যাবেলায় যখন বলাইয়ের সাথে মিনতীর দেখা হবে তখন কি হবে তারই অপেক্ষায় আছি। আশা করছি পরের পর্ব খুবই তাড়াতাড়ি আমাদের সবার মাঝে শেয়ার করবেন। পরের পর্ব দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
আপনার গল্প বলাই পড়ে আমার খুব ভাল লেগেছে। গল্পের শুরুটা চমৎকার হয়েছে । আমার কাছে মনে হল বলাই একজন স্বাধীনচেতা যুবক ছেলে । তার দিদি মিনতি বয়সে বড় হলেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের মত সম্পর্ক। তবে মজা পেয়েছি বলাই তার দিদির টিকেট কেনার টাকা দিয়ে বাদাম সিগারেট খেয়ে নিয়েছে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।