আমাদের বিয়ে এবং ১৮'তম বিবাহবার্ষিকী। পর্ব-২ shy-fox 10%
আমার বাংলা ব্লগ বাসী |
---|
সবাইকে আমার নমস্কার,আদাব।আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি,সুস্থ আছি।আমাদের বিয়ে এবং ১৮'তম বিবাহবার্ষিকী পর্ব-১লিংক
ক্লাস টেনে উঠে কিছুদিন ভালোই দিন কাটছিলো স্কুল পড়াশোনা এগুলো নিয়ে।তারপর হঠাৎ একদিন শুনতে পাই আমার বিয়ের কথা চলছে আমাকে ছেলের বাড়ি থেকে দেখতে আসবে,কথাটা শুনেই যেনো আমার আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা হলো পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাওয়ার মতো অবস্থা,তাই হওয়ার কথা নয় কি বলেন?তখন আমার কতই বা বয়স যে বিয়ের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবো।আমার বলার মতো কিছুই ছিলো না এমন পরিস্থিতিতে কিছু বলা কঠিন। আমি বিস্মিত, হতবাক হয়ে গেছি।এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে উদাসীন বাবা-মায়ের দায়িত্বহীন আচরণ অনেকটা দায়ী বলে আমি মনে করি।আমার মা না হয় অল্প শিক্ষিত সহজসরল প্রকৃতির মানুষ ছিলো কিন্তু আমার বাবা তো একজন শিক্ষিত জ্ঞানী মানুষ ছিলেন তার তো জ্ঞানের কোন অভাব ছিলো না তাহলে সে কেনো এত বড় একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভাবলো না যে এতে করে তার মেয়ের কতটা ক্ষতি হতে পারে এটাই আমার বোধগম্য ছিলো না।
আমি আমার বাবা মায়ের একমাত্র কন্যা সন্তান ছিলাম আর আমার তিন দাদা ছিলো ওরা আমার বড় কিন্তু যৌথ পরিবারে বাবা- কাকাদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার মতো তাদের অবস্থা ছিলো না তাদের বিয়েতে একদম মত ছিলো না ওরা কোনভাবেই চায় নি যে এত অল্প বয়সে আমার বিয়ে হোক আমার মায়েরও খুব একটা মত ছিলো তা কিন্তু নয় কিন্তু আমার বড় কাকা-কাকিমা বাবার উপর দিয়ে কথা বলার মতো সাহস তার ছিলোনা।যাইহোক দেখতে দেখতে সময় অতিক্রম হতে লাগলো তারপর এক শুক্রবারে ছেলে পক্ষ আমাকে দেখতে আসলো আমাকে ঘটা করে দেখার মতো কিছুই ছিলো না কারন যারা দেখতে এসেছে সবাই আমার পরিচিত তাদের কে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি কিন্তু সামাজিক রীতিনীতি বলে একটা কথা আছে না সেটাই রাক্ষা করার জন্য তারা এসেছেন।পরিবারের সবাই এসেছিলো শুধুমাত্র আমার হাসবেন্ড আসেনি। দেখে পছন্দ অপছন্দ হওয়ার কোন বিষয় ছিলো না তাই বিয়ে না হওয়ার কোন চান্স ছিলোনা।
ওরা যাওয়ার কয়েকদিন পর আমাদের বাড়ি থেকে ওদের বাড়িতে যায় তারপর বিয়ের কথাবার্তা পাকা করে, আশীর্বাদ করে এবং বিয়ের দিন তারিখ ধার্য করে১৬ ই মাঘ,৩০ শে জানুয়ারি।সবকিছু ঠিকঠাক করে সবাই বাড়িতে ফিরে আসে।আমার সাথে কি হচ্ছে বা হতে চলছে তার কোন কুল কিনারা আমি খুঁজে পাচ্ছি না কি বলবো কি করবো বুঝে উঠতে উঠতেই বিয়ের দিন চলে আসলো।দিনক্ষণ লগ্ন সবকিছু নিয়ে খুবই ভালোভাবে বিয়ে হয়ে গেলো,তারপর শ্বশুর বাড়িতে আসলাম এসে দেখলাম তাদের পারিপার্শ্বিক দিক খুব একটা ভালো লাগার মতো না তারপরও কিছু করার নেই বিয়ে যখন হয়েছে তখন সবকিছুই মেনে নিতে হবে।বৌভাত অনুষ্ঠান হলো তারপর বাবার বাড়িতে ঘুরতে গেলাম দু'দিন থেকে আবার শ্বশুর বাড়িতে চলে আসলাম ভালোই চলছিলো।
দেখতে দেখতে হাসবেন্ড এর ছুটি শেষ হয়ে গেলো সে তার কর্মস্থলে চলে গেলো আর সেদিন থেকেই আমার জীবনের খারাপ সময় শুরু হয়ে গেলো।আমি যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি বাড়িতে সব কাজ মা কাকিমারা এবং কাজের লোকেরাই করতো তাই কখনো রান্না ঘরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি আর আমাকে রান্নাঘরে কেউ ঢুকতেও দেয়নি তাই কাজকর্ম কখনো করতে পারিনি।কিন্তু এটা তো আর শ্বশুর বাড়ির মানুষ বুঝবে না।আমার শাশুড়ি মা একটু আমার সমস্যা গুলো বুঝতো তাই সে কখনো কিছু বলতো না কিন্তু আমার বড় জা আমার সমস্যা গুলো কখনোই বুঝতে চাইতো না তার কথা আমি বাড়ির বউ আমি যেমন কাজ করি তাকেও সেরকমভাবেই কাজ করতে হবে এগুলো নিয়ে একটু ঝামেলা শুরু করতো শাশুড়ি মায়ের সাথে তখন আমার খুবই খারাপ লাগতো কিছুই বলতাম না শুধু দুচোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরতো। আমি তার হাতে হাতে সব কাজ করে দেওয়ার চেষ্টা করতাম কাটাকুটি মসলা বাটা জল এনে দেওয়া সবকিছু করতাম সে শুধু বসে থেকে রান্না করতো তারপরও তার মন যোগাতে পারতাম না কেন জানি সে আমাকে একদম পছন্দ করতো না।আমি তাকে খুবই সন্মান করি তার সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে চাই না কিন্তু আমি শুধু আমার জীবনের গল্প গুলো শেয়ার করার জন্য এতটুকু বলতে বাধ্য হচ্ছি তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
কিছুদিন পর হাসবেন্ড ছুটিতে আসলো তারপর আমাকে নিয়ে আমার বাবার বাড়িতে ঘুরতে গেলো এবং আমাকে পরীক্ষার জন্য রেখে আবার সে তার কর্মস্থলে চলে গেলো পরীক্ষা দিলাম তারপর আবারও শ্বশুর বাড়িতে চলে আসলাম আবারও ভালো মন্দ নিয়ে দিন কাটতে লাগলো।রেজাল্ট হলো মোটামুটি ভালোই রেজাল্ট আসলো তখন শুরু হলো ভর্তি জটিলতা কোথায় ভর্তি হবো এটা নিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোক চায় আমি এখানেই ভর্তি হই কিন্তু আমার তেমনটা ইচ্ছে ছিলোনা তার কারন হলো এখানে থাকতে আমার অনেক কষ্ট হয় যেগুলো আমি কাউকেই বলতে পারছিলাম না সব কাজকর্ম করে পড়াশোনা করা আর হবে না তারপরও আমি কিছু বললাম না পরে দেখি আমার হাসবেন্ড আমাকে আমার বাবার বাড়তেই ভর্তি করালো কিছুদিন যাতায়াত করতাম তারপর সে ঢাকায় বাসা নিলো এবং আমাকে তার কাছে নিয়ে গেলো।
আমার নতুন সংসারের শুরু এখান থেকেই হলো কাজকর্ম খুব একটা পারিনা, রান্নাবান্নাও করতে পারিনা কোনরকমে দিন পার করতে থাকি। এর মধ্যেই বড় মেয়ের আগমনের বার্তা আসে এবং তার আসার অপেক্ষায় রইলাম এভাবেই এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষা দিলাম রেজাল্ট হলো,কিন্ত পড়াশোনা টা আর এগোনো সম্ভব হলো না বন্ধ করতে হলো।বড় মেয়ের জন্ম তাকে লালন-পালন করা আমার পক্ষে মোটেও সম্ভব ছিলো না,যা আমার জন্য খুবই কষ্টদায়ক হয়ে গেছিলো অনেক কষ্টে মেয়েকে বড় করলাম।চলবে.......
আজ এখানেই শেষ করছি আবার দেখা হবে পরবর্তী পর্বে সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন এই প্রার্থনা করি।
সবার জীবনের সবকিছু একই নিয়মে ঘটে না।তবে সৃষ্টিকর্তা যা করে ভালোর জন্য করে।আপনার তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার পিছনে ভালো কিছু ছিল হয়তো।তবে এটা ঠিক এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে হলে একটা মেয়ের অনেক কিছু আর আগের মতো থাকে না।বিয়ের পরেও যে পড়াশোনা করেছেন এটা জেনে ভালো লাগলো।আপনার আগামী দিনের জন্য অনেক শুভকামনা রইল।
আপু পোস্ট টা পড়ে বেশ ভালো লাগলো,আসলেই আমাদের এই সমাজ কেন জানি অন্যঘরের মেয়ে এনে তারা মানিয়ে নিতে চায় না,অথচ একটা মেয়ে তার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা শশুরবাড়ির মধ্যমনি হয়ে থাকতে।কিন্তু কিছু কিছু মানুষ এমন ভাবে ব্যবহার করে যার জন্য হাল ছেড়ে বাধ্য দিতে হয়।আপু কয়টা মেয়েই শশুর বাড়ি স্বামী থেকে ভালো ফিডব্যাক পাশ।যাক ভালো লাগলো।আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো সারাজীবন যেন এভাবেই দুইজনে পাশাপাশি থাকতে পারেন।ধন্যবাদ
একদম ঠিক বলেছেন আপু যদি সহজে মেনে নেওয়ার মনমানসিকতা পোষণ করে তাহলে কিন্তু একটি নতুন মানুষের জন্য সবকিছুই সহজ হয় কিন্তু এটাই কেন জানি করতে চায় না মানুষ। দোয়া করবেন আপু তাই যেনো হয় আজীবন একসাথে থাকতে পারি।ধন্যবাদ আপু।
সবার জীবনে একটা স্মরণীয় গল্প থাকে। তবে সে ক্ষেত্রে আপনার অল্প বয়সে বিয়ে হলেও সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে এখন তো অনেক সুখী পরিবার নিয়ে আছেন। যদিও সেই সময় চেয়েছিলেন আপনার বিয়েটা যেন না হয়। কিন্তু বিয়ে না হওয়ার কোন চান্স ছিল না। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
জ্বি ভাইয়া বিয়ে হলো সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ যা সবার জীবনেই একদিন আসবেই হয়তো কারো আগে বা কারো পরে। জীবনের সকল সমস্যা অতিক্রম করে সুখে শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারছি এটাই অনেক বেশি আমার কাছে।অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
পোস্ট পড়ে কি আর বলব আপু এগুলো হচ্ছে মেয়েদের জীবনে আসলে অনেক সংগ্রাম করে ঠিকে থাকতে হয়ে এই জীবনে।প্রত্যক নারীর জীবনে এমন কিছু কথা লুকিয়ে থাকে যা কখনো শেয়ার করা হয় না।তবে আপনি শেয়ার করতে পেরেছেন তাতে আমি অনেক ভালো মনে করি কারণ চাপা দুঃখ গুলো মনের মধ্যে রেখে দিতে নেই।অনেক ভালো লিখেছেন পড়ে অনেক ভালো লেগেছে অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি।আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো অসংখ্য ধন্যবাদ।
মেয়েদের জীবনে অনেক ধরনের জটিলতা আসে সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনের বাকি সময় গুলো পার করাই হলো আমাদের কাজ।ঠিক বলেছেন আপু দুঃখ কষ্ট গুলো শেয়ার করলে মন হালকা হয়।সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপু।
অল্প বয়সে বিয়ে আসলে দিদি একটা কথা কি জানেন ৷ আমাদের সমাজে বলতে গ্রামের দিকে এখনো এই সমস্যা টুকু রয়ে গেছে ৷ বিশেষ করে যেসব পরিবার বড় অভাব তারা ভাবে মেয়ে পরিবারের বোঝা ৷ তাই বিয়ে কিংবা তারা বলে একদিন তো বিয়ে দিতেই হবে ৷ আবার এই আপত কে বিয়ে দিলে বাচিঁ ৷ এই যে এতো কুসংস্কৃতি তার প্রভাবেই অল্প বয়সে বিয়ে ৷
যদিও জানি না আপনার বিষয়টা কেমন ছিল৷ তবে আপনার পুরনো গল্পের কাহিনী শুনতে ভালোই লাগছে ৷ পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা ৷
একদম ঠিক বলেছেন ভাই,মেয়েদের কে কেন জানি সবাই তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চায় আমি বুঝি না কেন এরকম করে।আমি মনে মনে স্থির করে রেখেছি খুব সহজে আমার মেয়েদের বিয়ে দিবো না। সঠিক সময় না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো তাতে যে যাই বলুক। ধন্যবাদ ভাই।
হুম ঠিক তাই করবেন দিদি
অনেক কিছু জানলাম আজ পোস্ট পড়ে। ভাল খারাপ মিলিয়ে বেশ ভালোই লাগলো। সবার জীবনেই মনে হয় এমন কিছু হয়। অনেক ভাল লাগলো আপু। ধন্যবাদ আপনাকে।