আমরাই সেরা প্রজন্ম (১৯৯১-২০০৭ ইং) // পর্ব-১০।

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ মঙ্গলবার। ২৬ ই মার্চ, ২০২৪ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।

IMG_20220914_122847_984.jpg



সুপ্রিয় বন্ধুগণ, নয় মাস রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের দেশে সময়ের তালে তালে এক এক প্রজন্ম এসেছে। স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যদি একটু সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করি তাহলে সুস্পষ্ট ভাবে দেখা যাবে যে, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই প্রজন্মটা এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের সবথেকে সেরা প্রজন্ম। আমার দৃষ্টিতে এই প্রজন্মটা কেন সব থেকে সেরা প্রজন্ম সেই কথাগুলো আজ আমি আপনাদের নিকট উপস্থাপন করছি। আমি আশা করি, আমার লেখাগুলো পড়ে আপনাদের সামান্য পরিমাণ হলেও ভালো লাগবে।

গ্রীস্মের সন্ধ্যায় যখন দক্ষিণের বাতাস বইতে লাগতো ঠিক তখনই বাড়ির উঠানে খেজুরের পাতা দিয়ে তৈরি পাটি বিছিয়ে শুয়ে থাকার অপূর্ব অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা একমাত্র আমাদের প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদেরই আছে। গরমের রাত্রে বাড়ির উঠানে শুয়ে আমরা আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশের তারা গণনা করার মতো পাগলামি কার্যক্রম গুলো একমাত্র আমাদের প্রয়োজন ছেলে মেয়েরাই করেছে। শুধু তাই নয়, আমরাই নিজ চোখে দেখেছি জোছনা রাতের চাঁদের আলো কালো মেঘে ঢেকে যেতে। আবার মেঘের আড়াল থেকে চাঁদের আলো যখন পুরো পরিবেশ আলোকিত করে দিতো তখন সেই ঝলমলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একমাত্র আমরাই প্রাণ ভরে উপভোগ করেছি।

শুধু এখানেই শেষ নয়, আমাদের শৈশবে গ্রীস্মের সন্ধ্যা রাতে বাড়ির উঠানে শুয়ে অপেক্ষা করতাম কখন আমাদের দাদা ও দাদি এশার নামাজ শেষ করে আমাদের কাছে আসবে। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে দাদা-দাদী আসতে একটু দেরি হলে-- তাদেরকে ডাকতে আমাদের দেরি হতো না। দাদা ও দাদী আসার সাথে সাথে তাদেরকে জড়িয়ে ধরে শুনতে চাইতাম সেই ভালোলাগার রূপকথার গল্প। যখন দাদা হাতপাখা দিয়ে আস্তে আস্তে বাতাস করতো আর দাদি জিন-পরীদের ভয়ংকর গল্প শুরু করত তখন গল্প শুনতে শুনতে প্রচন্ড ভয় আমাদের মনের ভেতর জন্ম হতো। শুধু তাই নয় যখন ভয়ের মাত্রাটা একটু বেশি হয়ে যেত তখন খুব দ্রুত দাদীর কোলের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে শুয়ে থাকতাম। তারপরও গল্প শোনা বন্ধ করতাম না।

জিন-পরীদের ভয়ঙ্কর গল্প শুনতে শুনতে কখন যে দাদীর কোলে ঘুমিয়ে যেতাম কখনোই বুঝতে পারতাম না। আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমরা ঠিকই আমাদের বিছানায় আছি। আবার কোনদিন রাত্রে দাদা ও দাদীর মুখে বিভিন্ন রাজা- রানীর গল্প শুনে আমরা খুবই আনন্দ পেতাম। আবার যেদিন গোপাল ভাঁড়ের গল্প শুনতাম সেদিন হাসতে হাসতে আমাদের পেট ব্যথা হয়ে যেত। সেইদিন আর চোখে ঘুম আসতো না। আবার যেদিন দাদীর মুখে ছেলে ধরা গল্প শুনতাম সেইদিন ভয়ে জড়ো হয়ে আমাদের গলা শুকিয়ে যেত। প্রতিদিন গরমের সন্ধ্যা রাতে দাদা দাদির কাছ থেকে এরকম গল্প শোনার মুহূর্ত আমাদের জীবনের অন্যতম একটি সেরা মুহূর্ত।

দাদা-দাদির কাছ থেকে এরকম মজার মজার গল্প যতই শুনতাম ততই এরকম গল্প শোনার আগ্রহ আরো বৃদ্ধি হতো। আর আমাদের দাদা-দাদীরা এতটাই আমাদের ভক্ত ছিল যে, তারা গল্প শোনাতে কখনোই ক্লান্ত অনুভব করতো না। আমাদের দাদা-দাদির কাছ থেকে আমরা যে পরিমাণ আদর ও ভালোবাসা পেয়েছি সেটা অন্য কোন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা হয়তো পায়নি, আর ভবিষ্যতে পাবেও না। আসলে আমাদের প্রজন্মের সকল ছেলে মেয়েদের জীবনে আমাদের দাদা ও দাদা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে রয়েছে। আমরা শুধুমাত্র দাদা-দাদির কাছ থেকে মজার মজার গল্প শোনার মধ্যেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখিনি। আমরা আমাদের দাদা-দাদে সমস্ত হুকুমগুলো যথাযথভাবে শুনেছি ও তাদের আদেশ-নির্দেশ পালন করেছি। বিশেষ করে দাদা ও দাদিদের ওযু করার পানি এগিয়ে দেওয়া, খাবার খাওয়ার সময় দাদা দাদিদের ডেকে আনা, গোসলের সময় তাদের পোশাক দেওয়া এবং গোসলের পরে তাদের পোশাকগুলো রোদে শুকাতে দেওয়া সহ অনেকগুলো হুকুম আমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার শুনেছি। শুধু তাই নয়, আমাদের জন্য বাবা যখন মজার খাবার কিনে আনতো তখন দাদা ও দাদীকে না দিয়ে সেই খাবার আমরা এক টুকরোও খেতে পারতাম না।

চলবে।



নবম পর্বটি পড়ার লিংক



আমার পরিচয়।

IMG_20220709_132030_108.jpg



আমার নাম মোহাঃ নাজিবুল ইসলাম (বিদ্যুৎ)। আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমি অতিশয় ক্ষুদ্র জ্ঞানের একজন মানুষ। আমি মেহেরপুর জেলার ছোট্ট একটি গ্রামে বসবাস করি। আমি ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে কাজ শুরু করার মধ্য দিয়ে আমার স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে যাত্রা শুরু হয়। আমার স্টিমিট আইডি নাম (#bidyut01). প্রথম প্রথম স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ কিছুই পারতাম না। কিন্তু আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সম্মানিত ফাউন্ডার, এডমিন এবং মডারেটরদের সার্বিক সহযোগিতায় খুব সহজেই স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ গুলো সম্পর্কে জানতে পারি ও শিখতে পারি। এরপর থেকে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কে আমার এলাকাতে আমি ব্যাপকভাবে প্রচার করি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে আমার এলাকার অনেকেই এখন আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সদস্য। যাহোক, এখন আমার মাতৃভাষায় লেখালেখি করতে আমার খুবই ভালো লাগে। যদিও আমার প্রধান পেশা শিক্ষকতা এবং পাশাপাশি মাছের চাষাবাদ করা। আমার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৮ জন। আমার পরিবারের প্রধান হলো আমার বাবা ও মা। আমার পছন্দের কাজ সমূহ হলো-ছবি অঙ্কন করা, যেকোনো জিনিসের অরিগ্যামি তৈরি করা, বিভিন্ন প্রকারের রেসিপি তৈরি করা, কবিতা লেখা, ভ্রমণ করা ও ফটোগ্রাফি করা। আর একটু সময় সুযোগ পেলেই পুরনো দিনের মুভি গুলো দেখতে আমি খুবই পছন্দ করি।



১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 61038.67
ETH 2626.98
USDT 1.00
SBD 2.62