আমরাই সেরা প্রজন্ম (১৯৯১-২০০৭ ইং) // পর্ব-০৯।

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ রবিবার। ,১৭ ই মার্চ, ২০২৪ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।

IMG_20220914_122847_984.jpg



সুপ্রিয় বন্ধুগণ, নয় মাস রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের দেশে সময়ের তালে তালে এক এক প্রজন্ম এসেছে। স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যদি একটু সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করি তাহলে সুস্পষ্ট ভাবে দেখা যাবে যে, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই প্রজন্মটা এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের সবথেকে সেরা প্রজন্ম। আমার দৃষ্টিতে এই প্রজন্মটা কেন সব থেকে সেরা প্রজন্ম সেই কথাগুলো আজ আমি আপনাদের নিকট উপস্থাপন করছি। আমি আশা করি, আমার লেখাগুলো পড়ে আপনাদের সামান্য পরিমাণ হলেও ভালো লাগবে।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে গভীরভাবে মনোনিবেশ করা প্রজন্মই হলো আমরা অর্থাৎ আমাদের প্রজন্ম। একমাত্র আমাদের প্রজন্মের শিক্ষার্থীরাই অনুভব করেছে যে এসএসসি পরীক্ষার উত্তেজনা কতটুকু পরিমাণ হয়। কেরোসিন তেল দিয়ে জ্বালানো প্রদীপের মিটমিটি আলোয় সারারাত জেগে অধ্যয়ন করে সকালে এসএসসি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার প্রজন্মই হলাম আমরা। শুধু কি তাই, এসএসসি পরীক্ষার রুমে আগত কক্ষ পরিদর্শকদের দেখে যমের মতো ভয় পাওয়া প্রজন্ম হলাম আমরা। আর তাদের দেখে আমরা কেনই বা ভয় পাবো না, আমাদের ভবিষ্যৎ এর অনেকটা নির্ভর করতো তাদের হাতে। কারণ আমাদের আচরণে তারা যদি অসন্তুষ্ট হতো তাহলে তারা আমাদেরকে বহিষ্কার করে দেওয়ার মতো ক্ষমতা কক্ষপরিদর্শক অর্থাৎ শিক্ষকদের ছিল। এছাড়াও আমাদের প্রজন্মের প্রায় অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীই সকল শিক্ষককে বাঘের মতো ভয় পেত।

একমাত্র আমাদের প্রজন্মের শিক্ষার্থীরাই এসএসসি পরীক্ষার মতো বোর্ড পরীক্ষা দিয়েছে কম্পিউটাকে সামনে রেখে। আমাদের সময় বোর্ড পরীক্ষা যাতে অত্যন্ত স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠু পরিবেশের মধ্যে সম্পূর্ণ হয় সেজন্য তখনকার কর্তৃপক্ষরা প্রত্যেকটি পরীক্ষার রুমে কম্পিউটার সেট করতো। আর পরীক্ষার হলে কম্পিউটার দেখে আমাদের মনের মধ্যে এমনিতে অনেক প্রকারের ভয়, শঙ্কা ও দুশ্চিন্তা জেগে উঠলো। তারপরেও আমরা অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে পরীক্ষা দিয়েছি এবং নিজেরা যতোটুকু পেরেছি পরীক্ষার খাতায় ঠিক ততটুকুই লিখেছি। আমাদের সময় যেদিন একটি বিষয়ে এসএসসি পরীক্ষা সম্পূর্ণ হতো তখন আমাদের কাছে মনে হতো একটা বিপদ থেকে আমরা রক্ষা পেলাম। আর এজন্যই আমাদের প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা তাদের লেখাপড়ার প্রতি অত্যন্ত মনোযোগী ছিল। তাই এখন পর্যন্তও আমাদের প্রজন্মের সকলেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষা অর্জনের জন্য সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পরে আমাদের প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যখন এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতো তখন আমরা যে পরিমাণ আনন্দ অনুভব করেছি, এসএসসি পাস করে আমরা যে পরিমাণ পরিবার ও সমাজ থেকে সম্মান পেয়েছি, ভবিষ্যতে লেখাপড়ায় আরো বেশি অগ্রগতির জন্য আমরা প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের নিকট থেকে যে পরিমাণ উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা পেয়েছি-- সেটা হয়তো অন্য কোন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা পায়নি, আর পাবেও না। আমাদের প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা অর্থাৎ আমরা এসএসসি পাশ করে প্রথমে সৃষ্টিকর্তা নিকট শুকরিয়া আদায় করেছি, তারপরে পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি, সমাজের মুরুব্বী ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি যখন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি তখন তারা আমাদের মাথায় হাত রেখে মন থেকে দোয়া করতো। আর এরকম সকলের নিকট থেকে অকৃতিম দোয়া, স্নেহ ও ভালোবাসা অর্জনকারী প্রজন্মই হলাম আমরা।

আমাদের প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা অর্থাৎ আমরা সকল বিষয়ে যে পরিমাণ অধ্যায়ন করেছি এবং সকল বিষয় থেকে যে পরিমাণ জ্ঞান অর্জন করেছি বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীরা তার ধারে কাছেও নেই। আমাদের প্রজন্মের তৃতীয় বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী তার পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে যে পরিমাণ জ্ঞান অর্জন করেছে, বর্তমান সময়ের গোল্ডেন এ প্লাস প্রাপ্ত শিক্ষার্থী তার ধারে কাছেও যাওয়ার যোগ্যতা রাখে না। আর বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীদের দোষ দিয়েও লাভ নেই। কারণ আমাদের সময় লেখাপড়ার জন্য আমরা যে পরিমাণ পরিশ্রম করেছি বর্তমান সময়ের লেখাপড়া করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের তেমন পরিশ্রম করা লাগে না। একমাত্র আমরাই সেই প্রজন্ম যাদের এসএসসি পরীক্ষার মতো বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার আগে সকল বই এর প্রথম পাতা থেকে শুরু করে বইয়ের শেষ পাতা পর্যন্ত পড়তে হয়েছে এবং বইয়ের সকল অধ্যায় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখতে হয়েছে। তাই আমি মনে করি একমাত্র আমাদের প্রজন্মের সকল শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে সব থেকে বেশি জ্ঞান অর্জন করেছে।

শুধুমাত্র লেখাপড়া করার জন্য দরিদ্রতার মতো চরম বাধাকে অতিক্রম করতে হয়েছে আমাদের প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের অর্থাৎ আমাদের। আমার আজও মনে আছে আমার এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের জন্য আমার বাবা ৭ কাঠা জমি অন্যের নিকট বন্ধক রেখেছিল। তারপরও লেখাপড়া শেখাতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেনি আমার বাবা। আর এজন্যই আমরাই সেরা প্রজন্ম ও সৌভাগ্যবান প্রজন্ম। কারণ আমাদের অভিভাবকরা পর্যন্ত আমাদের বিষয়ে ছিল শতভাগ দায়িত্ববান এবং সচেতন। তাই এরকম সচেতন অভিভাবকদের আমরা আজও স্যালুট জানাই। তাদের যথার্থ সহযোগিতা না পেলে হয়তো আমাদের জীবন অন্ধকারেই থাকতো।

চলবে।



অষ্টম পর্বটি পড়ার লিংক



আমার পরিচয়।

IMG_20220709_132030_108.jpg



আমার নাম মোহাঃ নাজিবুল ইসলাম (বিদ্যুৎ)। আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমি অতিশয় ক্ষুদ্র জ্ঞানের একজন মানুষ। আমি মেহেরপুর জেলার ছোট্ট একটি গ্রামে বসবাস করি। আমি ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে কাজ শুরু করার মধ্য দিয়ে আমার স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে যাত্রা শুরু হয়। আমার স্টিমিট আইডি নাম (#bidyut01). প্রথম প্রথম স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ কিছুই পারতাম না। কিন্তু আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সম্মানিত ফাউন্ডার, এডমিন এবং মডারেটরদের সার্বিক সহযোগিতায় খুব সহজেই স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ গুলো সম্পর্কে জানতে পারি ও শিখতে পারি। এরপর থেকে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কে আমার এলাকাতে আমি ব্যাপকভাবে প্রচার করি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে আমার এলাকার অনেকেই এখন আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সদস্য। যাহোক, এখন আমার মাতৃভাষায় লেখালেখি করতে আমার খুবই ভালো লাগে। যদিও আমার প্রধান পেশা শিক্ষকতা এবং পাশাপাশি মাছের চাষাবাদ করা। আমার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৮ জন। আমার পরিবারের প্রধান হলো আমার বাবা ও মা। আমার পছন্দের কাজ সমূহ হলো-ছবি অঙ্কন করা, যেকোনো জিনিসের অরিগ্যামি তৈরি করা, বিভিন্ন প্রকারের রেসিপি তৈরি করা, কবিতা লেখা, ভ্রমণ করা ও ফটোগ্রাফি করা। আর একটু সময় সুযোগ পেলেই পুরনো দিনের মুভি গুলো দেখতে আমি খুবই পছন্দ করি।



১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 months ago 

একদম ঠিক বলেছেন। কম্পিউটার এখন অনেকটাই উন্নত একটি প্রযুক্তি৷ এখন সকল ক্ষেত্রেই কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি করা হচ্ছে। একমাত্র আমাদের প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় তাদের সামনে কম্পিউটার পেয়েছে৷ এরকম ঘটনা আগে কখনোই ঘটেনি৷ এমনকি কম্পিউটারের জন্য একটি বড় ঘরের প্রয়োজন হতো৷ তবে এখন শুধু ছোট্ট একটি জায়গা হলেই কম্পিউটার সেটআপ করা যায়। এখন যেভাবে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে এবং প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যেও প্রবেশ করছে তাই জন্য সকলে এখন শিক্ষার প্রতি অনেক আগ্রহী হয়ে গিয়েছে৷ সকলেই ভিন্ন ভাবে শিক্ষার জন্য অনেক কিছুই পাচ্ছে। অসংখ্য ধন্যবাদ
এই পোস্ট শেয়ার করার জন্য৷

 2 months ago 

অনেক সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.28
TRX 0.13
JST 0.033
BTC 62873.38
ETH 3037.14
USDT 1.00
SBD 3.63