আমরাই সেরা প্রজন্ম (১৯৯১-২০০৭ ইং) // পর্ব-০৬।

in আমার বাংলা ব্লগ7 months ago



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ মঙ্গলবার। ২০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।

IMG_20220914_122847_984.jpg



সুপ্রিয় বন্ধুগণ, নয় মাস রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের দেশে সময়ের তালে তালে এক এক প্রজন্ম এসেছে। স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যদি একটু সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করি তাহলে সুস্পষ্ট ভাবে দেখা যাবে যে, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই প্রজন্মটা এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের সবথেকে সেরা প্রজন্ম। আমার দৃষ্টিতে এই প্রজন্মটা কেন সব থেকে সেরা প্রজন্ম সেই কথাগুলো আজ আমি আপনাদের নিকট উপস্থাপন করছি। আমি আশা করি, আমার লেখাগুলো পড়ে আপনাদের সামান্য পরিমাণ হলেও ভালো লাগবে।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমরাই সেরা প্রজন্ম, কারণ রোনালদো ও রোনালদিনহোর মতো বিশ্বমানের ফুটবল খেলোয়াড়দের খেলা দেখার সৌভাগ্য একমাত্র আমাদেরই হয়েছে। আসলে এরকম বিশ্বমানের ফুটবল খেলোয়ারদের খেলা দেখে আমাদের কৈশোরের অনেকখানি মুহূর্ত কেটেছে ফুটবল খেলার মধ্য দিয়ে। একই সাথে আমরা অন্যান্য খেলাতেও অনেক বেশি সময় দিয়েছি। সত্যি বলতে আমাদের প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা খেলাধুলার প্রতি যে পরিমাণ আসক্ত ছিল সেই পরিমাণ হয়তো আর অন্য কোন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা হবে না। আমাদের প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের নিকট বিকেল বেলা ছিল খেলাধুলা করার সবচাইতে উত্তম সময়। পাশাপাশি ছুটির দিনে আমরা খেলাধুলা করতাম সকালে ও বিকেল সময়ে। একই সাথে দিনের যেকোনো সময় একটু সুযোগ পেলেই আমরা দলবদ্ধভাবে যে কোন খেলাধুলা শুরু করে দিতাম। সত্যিই আমরা খুবই উপভোগ করেছি আমাদের কৈশোরের সময়টুকু।

যদিও আমাদের সময় তেমন একটা খেলনা সামগ্রী আমরা পেতাম না। কিন্তু তারপরেও চেষ্টা করতাম সেই সময় প্রচলিত খেলনা সামগ্রীগুলো ক্রয় করতে। বিশেষ করে আমাদের ওই সময় ১৭ টাকা দামের ক্রিকেট খেলার বল পাওয়া যেত। আর সেই বল ক্রয়ের জন্য আমরা কখনো বাড়ি থেকে ধান চুরি করতাম, আবার আমাদের মধ্যে কেউ কেউ টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে রাখতো, আবার অনেকেই মায়ের কাছ থেকে কলম বা খাতা কেনার জন্য দুই টাকা নিতো মিথ্যে বলে। এভাবে ৫-৭ জন মিলে ক্রিকেট খেলার একটি বল কিনতাম ১৭ টাকা দিয়ে। আর এভাবে যখন আমরা একটা বল কিনতে সক্ষম হতাম তখন আমরা মে পরিমাণ আনন্দ অনুভব করেছি সেটা হয়তো সামান্য লেখার মাধ্যমে বোঝাতে পারবো না। আমাদের প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা তাদের খেলাধুলার সামগ্রীগুলো পেতে এভাবেই কষ্ট করেছে, সংগ্রহ করেছে। কিন্তু তারপরেও খেলাধুলা থেকে আমরা কখনোই পিছুপা হইনি।

একমাত্র আমাদের প্রজন্মের ছেলে মেয়েরাই ক্রিকেট খেলার জন্য সব থেকে বেশি সংগ্রাম করেছে, বেশি কষ্ট স্বীকার করেছে। কারণ আমাদের জমানো একটি অথবা দুইটি টাকা দিয়ে ৫-৭ জন মিলে যখন একটি বল ক্রয় করতাম তখন ক্রিকেট খেলার জন্য ব্যাট ক্রয় এর মতো সমর্থ আমাদের ছিল না। ঠিক তখনই ক্রিকেট খেলার জন্য ব্যাটের অভাব পূরণ করার লক্ষ্যে আমরা উঠে পড়তাম নারিকেলের গাছে। নারিকেলের শুকনো ডান্টি দিয়ে ব্যাট বানিয়ে ক্রিকেট খেলা করেছি আমরা অর্থাৎ আমাদের প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা। নারিকেলের শুকনো ডান্টি তৈরি করা ব্যাট দিয়ে এবং ১৭ টাকা দামের বল দিয়ে আমাদের সময় প্রায় প্রতিদিন বিকেলে ১৫-১৬ জন ছেলেরা একত্র হয়ে খেলা করতাম। শুধু তাই নয়, ওই সময়কার বড় ভাইয়েরাও আমাদের সাথে ক্রিকেট খেলায় মেতে উঠতো।

আমাদের প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা খেলাধুলা করার জন্য উন্মুক্ত ফাঁকা মাঠ পেয়েছিল যথেষ্ট পরিমাণে। শুধু তাই নয়, উন্মুক্ত ফাঁকা মাঠ বাদেও আমরা সুযোগ পেলেই আমাদের বাড়ির আঙ্গিনাতেও খেলা শুরু করতাম। আর আমাদের খেলা দেখার প্রধান দর্শক ছিল আমাদের পাড়ার কিংবা আমাদের সমাজের বয়স্ক মানুষেরা। আমাদের খেলা করার মুহূর্তে যদি সামান্য কোন দোষ ত্রুটি হতো তাহলে বয়স্ক মানুষেরা চেষ্টা করতো সেটা সংশোধন করে দিতে। আবার খেলার মধ্যে আমরা যখন হাসা-হাসি করতাম, আনন্দ উল্লাস করতাম তখন আমাদের দেখে সেই বয়স্ক মানুষেরাও আনন্দ অনুভব করতো। সত্যিই অসাধারণ মধুর ছিল আমাদের সেই উপভোগ্য মুহূর্তটুকু। আমাদের সেই সময় ছিল না কোন রাজনৈতিক প্রভাব, ছিল না তেমন কোন হিংসা-বিদ্বেষের প্রভাব, ছিল না কোন ধরনের মতবিরোধ। আমাদের সেই সময় ছিল শুধু পরস্পরের প্রতি সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সহানুভূতি।

আমাদের প্রজন্মের সময় কোন মায়েরা তাদের সন্তানদের খেলার সাথীকে আলাদা চোখে দেখতো না। আমাদের সময়ের সেই আদর্শ মায়েরা নিজের সন্তানকে যেভাবে আদর যত্ন করত ঠিক সেই ভাবেই নিজ সন্তানের খেলার সাথীকে স্নেহ করেছে ও দিয়েছে মায়ের ভালোবাসা। আর এই কারণেই আমাদের সময়ের সকল ছেলে-মেয়েদের মধ্যে এক ধরনের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি হতো। সেই বন্ধন সহজে নষ্ট হতো না। আর এই বন্ধনের জন্যই আমরা প্রতিদিন একত্রিত হয়ে বিভিন্ন প্রকারের খেলা করতাম, আনন্দ উল্লাস করতাম, সুন্দরভাবে সেই মুহূর্তটুকু অতিবাহিত করতাম। আর এ কারণেই আমি মনে করি আমাদের প্রজন্মই হলো আমাদের দেশের সবচেয়ে সেরা প্রজন্ম। যাদের খেলাধুলা করার সামগ্রীর অভাব ছিল কিন্তু আদর, স্নেহ, ভালোবাসা, নম্রতা ও সভ্যতার কোন অভাব ছিল না।

চলবে।



পঞ্চম পর্বটি পড়ার লিংক





১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।
Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 65897.19
ETH 2706.68
USDT 1.00
SBD 2.88