আমরাই সেরা প্রজন্ম (১৯৯১-২০০৭ ইং) // পর্ব-০৭।

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ মঙ্গলবার। ২৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।

IMG_20220914_122847_984.jpg



সুপ্রিয় বন্ধুগণ, নয় মাস রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের দেশে সময়ের তালে তালে এক এক প্রজন্ম এসেছে। স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যদি একটু সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করি তাহলে সুস্পষ্ট ভাবে দেখা যাবে যে, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই প্রজন্মটা এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের সবথেকে সেরা প্রজন্ম। আমার দৃষ্টিতে এই প্রজন্মটা কেন সব থেকে সেরা প্রজন্ম সেই কথাগুলো আজ আমি আপনাদের নিকট উপস্থাপন করছি। আমি আশা করি, আমার লেখাগুলো পড়ে আপনাদের সামান্য পরিমাণ হলেও ভালো লাগবে।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমরাই দেশের সেরা প্রজন্ম এবং সৌভাগ্যবান প্রজন্ম। কারণ আমাদের সময় আমরা যেমন বিভিন্ন প্রকারে খেলায় সময় দিয়েছি ঠিক তেমনি আমাদের দেশের খেলাধুলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমরাই সবথেকে বেশি সমর্থন করেছি। আমাদের প্রজন্মের সকল ছেলে-মেয়েদের নিকট ক্রিকেট খেলা অত্যন্ত প্রিয় একটি খেলা। কারণ একমাত্র আমাদের প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরাই শচীন টেন্ডুলকার, বীরেনদার সেবাগ, আফ্রিদি, রিকি পন্টি, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, জয়সুরিয়া, শোয়েব আক্তার এর মতো বিশ্বমানের খেলোয়ারের খেলা দেখতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, একমাত্র আমাদের প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরাই দেশীয় সেরা ক্রিকেট খেলোয়ার যেমন হাবিবুর বাশার, রফিক হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, আফতাব আহমেদ ও আশরাফুল ইসলাম এর মতো সেরা ক্রিকেট খেলোয়ারদের ক্রিকেট খেলা দেখতে পেরেছে।

আমাদের দেশের বুকে ক্রিকেট খেলাকে সবথেকে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে একমাত্র আমাদের প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরাই। যখন বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে কিংবা শ্রীলংকা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতো তখন আমাদের প্রজন্মের সকল ছেলেমেয়েদের মাঝে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়ে যেত। আমরা বাংলাদেশের ক্রিকেট ম্যাচ বিটিভিতে দেখার জন্য অথবা রেডিওতে ক্রিকেট ম্যাচের ধারা বিবরণী শোনার জন্য কত যে অপেক্ষা করেছি সেটা ভাষায় বোঝানো সম্ভব না। পাড়ার একটি সাদা কালো টেলিভিশন দিয়ে প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন মানুষ বসে ক্রিকেট খেলা দেখেছি। যখন আমাদের দেশের প্লেয়াররা চার-ছক্কার বন্যা বয়ে দিতো তখন আমরা সকলেই সেই দৃশ্য দেখে আনন্দ করতাম। আমাদের দেশীয় প্লেয়ারদের ভালো খেলা দেখে টাইগার টাইগার ধ্বনি করে আমাদের গলা ফাটিয়ে ফেলতাম। যদিও আমাদের কণ্ঠের আওয়াজ তাদের কান পর্যন্ত পৌঁছাতো না, কিন্তু তারাও জানতো সারা দেশে আমাদের নিয়ে কতই না মাতামাতি চলছে।

বিটিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখার পাশাপাশি একমাত্র আমাদের প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরাই রেডিওতে ক্রিকেট খেলার ধারা বিবরণী শুনে ক্রিকেট খেলাকে সমর্থন করেছে ও ক্রিকেট খেলাকে উপভোগ করেছে। আমরা যখন রেডিও অন করে ক্রিকেট খেলার বাংলা ধারা বিবরণী শোনা শুরু করতাম তখন আমরা এক অসাধারণ মুহূর্ত অতিবাহিত করতাম। বিশেষ করে বাংলা ধারা বিবরণীতে যখন জাফরুল্লাহ সারাফাত আসতো তখন তার দেওয়া বাংলা ধারা বিবরণী শুনে আমাদের মনের মধ্যে এক অন্যরকম উত্তেজনা সৃষ্টি হতো। খেলার মাঠে কি রকম উত্তেজনা বিরাজমান করছে সেটা হয়তো আমরা দেখতে পারতাম না, কিন্তু বাংলা ধারা বিবরণী শুনে বুঝতে পারতাম খেলাটি কি পরিমাণ উপভোগ্য হচ্ছে। সত্যি আমাদের দেশের ক্রিকেট খেলাকে দেশের সকল প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া এবং সকলের নিকট ক্রিকেট খেলার আনন্দটা ভাগাভাগি করে নেওয়ার প্রজন্মই আমরা। কারণ আমাদের দেশের ভালো খেলা দেখে আমরা যেমন হেসেছি, আনন্দ করেছি, জয় ধ্বনি প্রকাশ করেছি, তেমনি খেলার মাঠে আমাদের দেশের খারাপ অবস্থা দেখে ঠিক ততটাই কষ্ট পেয়েছি ও কেঁদেছি। কিন্তু তারপরেও আমরা খেলাকে সমর্থন করেছি এবং আমাদের দেশের খেলোয়াড়দেরকে সমর্থন করেছি, খেলোয়াড়দেরকে উৎসাহ দিয়েছি।

আমার আজও মনে আছে যেদিন বাংলাদেশে প্রথম একদিনের ক্রিকেট ম্যাচে সিরিজ জিতেছিল, যেদিন বাংলাদেশে প্রথম অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমকে পরাজিত করেছিল, যেদিন বাংলাদেশে প্রথম পাকিস্তান ক্রিকেট টিমকে পরাজিত করেছিল সেদিন আমাদের দেশের ক্রিকেট প্রেমী মানুষেরা যে পরিমাণ আনন্দ করেছিল, এখন বাংলাদেশ যদি ক্রিকেট বিশ্বকাপও জিতে যায় পূর্বের সেই পরিমাণ আনন্দ কিন্তু কেউ অনুভব করবে না। সত্যি বলতে আমাদের প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের মধ্যে যে পরিমাণ জীবনী শক্তি ছিল, যে পরিমাণ চঞ্চলতা ছিল, যে পরিমাণ আবেগ ছিল, যে পরিমাণ আত্মবিশ্বাস ছিল, যে পরিমাণ ধৈর্য ছিল বর্তমান সময়ের ছেলে মেয়েদের মধ্যে ততটা নেই। তাই খেলাধুলা থেকে শুরু করে সবদিক থেকে দেশের সবচেয়ে সেরা প্রজন্মই হলো আমাদের প্রজন্ম অর্থাৎ আমরা।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, শুধুমাত্র খেলাধুলাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেই আমাদের প্রজন্ম অর্থাৎ আমরা সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি পরিশ্রম করেছে আমাদের প্রজন্ম। আমাদের প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা শিক্ষার প্রতি তীব্র আগ্রহ, অনুরাগ, শিক্ষার প্রতি তীব্র আকর্ষণ ও কৃতিত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে উন্মোচিত করেছে আমাদের দেশে শিক্ষার এক নতুন দিগন্ত। আমরা আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সফল এক নতুন জোয়ার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের দেশের সকল ছেলে-মেয়ে স্কুলমুখী হয়েছে এবং শিক্ষা লাভের আগ্রহ বৃদ্ধি হয়েছে।

চলবে।



ষষ্ঠ পর্বটি পড়ার লিংক





১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 65046.03
ETH 3451.46
USDT 1.00
SBD 2.55