আমরাই সেরা প্রজন্ম (১৯৯১-২০০৭ ইং) // পর্ব-০৮।

in আমার বাংলা ব্লগ4 months ago (edited)



হ্যালো বন্ধুগণ,
আমি @bidyut01. একজন বাঙালি ব্লগার।সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকের ব্লগটি শুরু করছি।



আজ বৃহস্পতিবার। ,০৭ ই মার্চ, ২০২৪ ইং।


আসসালামু আলাইকুম।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আপনারা সবাই আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা গ্রহণ করবেন। আমি আশা করি আপনারা সবাই মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে অনেক ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং নিরাপদে আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান আল্লাহপাকের দয়ায় অনেক ভাল আছি। আজকে আমি আরো একটি নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি।

IMG_20220914_122847_984.jpg



সুপ্রিয় বন্ধুগণ, নয় মাস রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের দেশে সময়ের তালে তালে এক এক প্রজন্ম এসেছে। স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যদি একটু সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করি তাহলে সুস্পষ্ট ভাবে দেখা যাবে যে, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত এই প্রজন্মটা এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের সবথেকে সেরা প্রজন্ম। আমার দৃষ্টিতে এই প্রজন্মটা কেন সব থেকে সেরা প্রজন্ম সেই কথাগুলো আজ আমি আপনাদের নিকট উপস্থাপন করছি। আমি আশা করি, আমার লেখাগুলো পড়ে আপনাদের সামান্য পরিমাণ হলেও ভালো লাগবে।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশে যতগুলো প্রজন্ম পর্যায়ক্রমে এসেছে তার মধ্যে আমাদের প্রজন্ম অর্থাৎ আমরাই হলাম দেশের সবথেকে সেরা প্রজন্ম। কারণ আমরা আমাদের শৈশব ও কৈশোরের সময়টুকু যেভাবে কাটিয়েছি এবং যেভাবে উপভোগ করেছি সেটা হয়তো আমাদের দেশের আর কোন প্রজন্মের সুযোগ হবে না। একমাত্র আমাদের প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরাই হাতে ঘড়ি এবং পায়ে জুতা দিয়েও মেঠো পথ দিয়ে বিদ্যালয়ে গেছে। আর এভাবে বিদ্যালয়ে যেতে গিয়ে আমরা কখনো পথের ধুলোর সাথে খেলা করেছি আবার আমরা কখনো পথের কাঁদা মেখে স্কুলে গিয়েছি আবার স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরেছি। একমাত্র আমাদের প্রজন্মের ছেলে মেয়েরাই দল বেধে একত্রে একই সময়ে স্কুলে গিয়েছি আবার ছুটির পরে দল বেঁধে বাড়ির দিকে রওনা হয়েছি। পাড়ার সকল ছেলেমেয়ে মিলে একত্রে স্কুল যাওয়ার সময় এবং স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় আমরা যে পরিমাণ আনন্দ উপভোগ করেছি সেটা হয়তো আর অন্য কোন প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের ভাগ্যে আসেনি বা আসবেও না।

সুপ্রিয় বন্ধুগণ, আমরাই সেই প্রজন্ম যাদের লেখাপড়া শেখার প্রতি ছিল পর্বত সমান আগ্রহ এবং অদম্য জীবনী শক্তি। রাতে এবং একেবারে ভোর রাতে লেখাপড়া করার জন্য আমরা আলোর উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম হারিকেন বা ল্যাম্প। প্রতিদিন সন্ধ্যা রাতেই কেরোসিন তেল দিয়ে আমরা হারিকেনে আলো জ্বালিয়ে লেখাপড়া শুরু করতাম। আর এভাবে লেখাপড়া করতে করতে যখন রাত অনেকটাই গভীর হয়ে যেত এবং আমাদের চোখে মুখে ঘুম লাগতো তখন আমাদের আশপাশ দিয়ে অনেকগুলো জোনাকি পোকা টিপটিপ আলো জ্বালিয়ে আমাদের চোখের ঘুম নিমিষেই দূর করে দিতো। পড়ার ফাঁকে কিছু সময়ের জন্য জোনাকি পোকার আলোর দিকে তাকালে কখন যে চোখ থেকে ঘুম চলে যেত বুঝে উঠতে পারতাম না। আবার রাতে লেখাপড়া করার সময় আমাদের কানে কোন প্রকারের টেলিভিশনের গান-বাজনার আওয়াজ আসতো না কিংবা কোন বক্সের গান-বাজনার আওয়াজ আসতো না। তখন একটু রাত বাড়ার সাথে সাথে চারিদিকে ঝিঝিঁ পোকার ডাক শুরু হতো। মনে হতো যেন আমাদের লেখাপড়ার আওয়াজ শুনে ঝিঁঝি পোকারাও লেখাপড়া শুরু করে দিয়েছে। সত্যিই এরকম মুহুর্তের সাক্ষী একমাত্র আমাদের প্রজন্মের ছেলে মেয়েরাই।

আমাদের প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়ায় যে রকম পারদর্শী ছিল ঠিক তেমনি বাড়ির কাজ করার ক্ষেত্রেও অনেক বেশি দক্ষ ছিল। একমাত্র আমাদের প্রজন্মের ছেলে মেয়েরাই লেখাপড়ার পাশাপাশি বাড়ির প্রায় সমস্ত কাজই করে সবদিক থেকে দক্ষতা অর্জন করেছে। বিশেষ করে আমাদের প্রজন্মের সকল মেয়েরাই বাড়ির কাজে যেমন পারদর্শী ছিল ঠিক তেমনি লেখাপড়ায় ছিল অত্যন্ত মেধাবী এবং ছিল অত্যন্ত স্কুলমুখী। একমাত্র আমাদের প্রজন্মের মেয়েরাই ধর্মীয় গোড়ামীকে লাথি মেরে শিক্ষা অর্জনের জন্য এবং নিজেদের সৃজনশীলতাকে বিকশিত করার জন্য লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়েছিল এবং উচ্চ শিক্ষায় নিজেদেরকে শিক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছিল। আমাদের প্রজন্মের মেয়েরাই নারী শিক্ষার জোয়ার তৈরি করেছিল। একই সাথে নারীদের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের প্রজন্মের নারীরা যেরকম সচেতন ও সোচ্চার ছিল ঠিক তেমনি আমাদের প্রজন্মের সকল ছেলেরাই নারীদের সকল কাজে সহযোগিতা করেছে এবং তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আজকের নারী সমাজ অনেক উন্নতি ও অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং দেশের প্রতিটি সেক্টরে আমাদের দেশের নারীদের বিশেষ মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর নারীদের এই মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে একমাত্র আমাদের প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা।

আমাদের প্রজন্মের ছেলেরাও লেখাপড়া শেখার পাশাপাশি বাড়িতে প্রচুর কাজ করতো। আমাদের সময় অনেকেই ছিল নিজে উপার্জন করে নিজের খরচে লেখাপড়া করতো। তারপরও লেখাপড়া শেখা থেকে পিছু পা হতো না। আমার আজও মনে আছে, তখনকার আমাদের সময়ে স্কুল থেকে বাড়িতে এসে পাড়ার বড় ভাই, সমবয়সী এবং আমাদের বয়সের একটু ছোট প্রায় সকল ছেলেরাই চলে যেতাম মাঠে গরু চরাতে। আর গরু চরাতে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে যেতাম কোনদিন বাংলা বই, কোনদিন বাংলা ব্যাকরণ এবং কোনদিন নিয়ে যেতাম বিজ্ঞান বই। সাধারণ গণিত ও ইংরেজি বই নিয়ে যেতাম না। গরু চরানোর সাথে সাথে গাছের ছায়াতে বসে আমরা আমাদের লেখাপড়া কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখতাম। সেই সময় আমাদের লেখাপড়া শেখার প্রতি যে পরিমাণ আগ্রহ ছিল এরকম আগ্রহ হয়তো অন্য কোন প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের মধ্যে আর সৃষ্টি হবে না। কিন্তু লেখাপড়া শেখার প্রতি আমাদের আগ্রহ দেখে পরবর্তী প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার প্রতি অনেক উৎসাহ পেয়েছে। যার পরিপেক্ষিতে আজকের সকল ছেলে-মেয়েরা দারুনভাবে স্কুল মুখী হয়েছে।

চলবে।



সপ্তম পর্বটি পড়ার লিংক



আমার পরিচয়।

IMG_20220709_132030_108.jpg



আমার নাম মোহাঃ নাজিবুল ইসলাম (বিদ্যুৎ)। আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমি অতিশয় ক্ষুদ্র জ্ঞানের একজন মানুষ। আমি মেহেরপুর জেলার ছোট্ট একটি গ্রামে বসবাস করি। আমি ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে কাজ শুরু করার মধ্য দিয়ে আমার স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে যাত্রা শুরু হয়। আমার স্টিমিট আইডি নাম (#bidyut01). প্রথম প্রথম স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ কিছুই পারতাম না। কিন্তু আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সম্মানিত ফাউন্ডার, এডমিন এবং মডারেটরদের সার্বিক সহযোগিতায় খুব সহজেই স্টিমিট প্ল্যাটফর্মের কাজ গুলো সম্পর্কে জানতে পারি ও শিখতে পারি। এরপর থেকে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কে আমার এলাকাতে আমি ব্যাপকভাবে প্রচার করি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে আমার এলাকার অনেকেই এখন আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সদস্য। যাহোক, এখন আমার মাতৃভাষায় লেখালেখি করতে আমার খুবই ভালো লাগে। যদিও আমার প্রধান পেশা শিক্ষকতা এবং পাশাপাশি মাছের চাষাবাদ করা। আমার পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৮ জন। আমার পরিবারের প্রধান হলো আমার বাবা ও মা। আমার পছন্দের কাজ সমূহ হলো-ছবি অঙ্কন করা, যেকোনো জিনিসের অরিগ্যামি তৈরি করা, বিভিন্ন প্রকারের রেসিপি তৈরি করা, কবিতা লেখা, ভ্রমণ করা ও ফটোগ্রাফি করা। আর একটু সময় সুযোগ পেলেই পুরনো দিনের মুভি গুলো দেখতে আমি খুবই পছন্দ করি।



১০% বেনিফিসারী প্রিয় লাজুক খ্যাকের জন্য বরাদ্দ।

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 58051.31
ETH 3136.86
USDT 1.00
SBD 2.44