ফিরে পাওয়া ভালোবাসা - গল্পের দ্বিতীয় পর্ব
ফিরে পাওয়া ভালোবাসা
চাচার কথা শোনার জন্য আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আমি নিজে থেকেই চাচাকে বলে উঠলাম চাচা বিয়ের কোনো ব্যাপার স্যাপার নাকি ? পরিবেশটাকে কিছুটা স্বাভাবিক করার জন্য এই কথাটা বলা। চাচা এবার একটা নির্মল হাসি উপহার দিলেন। পরক্ষনেই উনার চেহেরায় কালো মেঘ এসে ভর করেছে। চোখের কোনে অশ্রু যেন চিকচিক করছে। কান্না কান্না একটা অবস্থায় বলতে শুরু করলো।
বাবা, ঘটনা বলতে হলে আমাকে ফিরে যেতে হবে কয়েক বছর আগে, তখন আমি আমার দেশের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পরে ছিলাম। আমার একটায় ছেলে সাথে আছে ছেলের বউ ও আমার একটা নাতনি। গ্রামে কোনো কাজ না থাকায় তারা তিনজন মিলেই চলে আসে এই অচেনা ঢাকা শহরে। আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামেয় থাকতাম। সেই আমারে দেখেশুনে রাখতো। ছেলেটা ঢাকায় আইসা একটা রিক্সা চালাইতো, ছেলের বউ বাসায় বাসায় কাজ করতো আর আমার ছোট্ট নাতনীটা রাস্তায় রাস্তায় ফুল বিক্রি করতো। তার কিছুদিন পড়েই আমার পোলাডা কারেন্টে লাইগা মইরা যায়। এরপর থেকে আমার পোলার বউ বাসায় বাসায় কাজ করতো আর আমার নাতনিটা ফুল বিক্রি করে আমার চিকিৎসার টাকা দিতো। কথা গুলো বলার সময় বৃদ্ধলোকটির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। নিজের দিকে তো কোনো খেয়ালেই ছিল না, নিজের অজান্তেই কখন জানি আমার চোখেও পানি চলে আসছে টেরই পাইনি।
তার কিছুদিন পর নাতনীটাও ফুল বিক্রি করতে গিয়ে একটা এক্সিডেন্ট করে আর সেখান থেকে তাকে একটা ছেলে হসপিটালে নিয়ে যায় আর চিকিৎসার সকল খরচ সেই দেয়। বৃদ্ধলোকটি এতক্ষন পর্যন্ত আমার কাছে অপরিচিত থাকলেও এখন আর অপরিচিত না, কারণ সেই ছেলেটি আমি নিজেই ছিলাম। হটাৎ করেই আমার মনে পরে গেলো সেদিনের কথা। গল্পটা শেষ থেকে আবার শুরু হোক।
আজকে থেকে ঠিক একবছর আগের কথা। সেদিন ছিল মাঘ মাসের শেষের দিন। পরের দিন পহেলা ফাল্গুন। তাই পুরো ভার্সিটি জুড়ে একটা উৎসবের আমেজ চলছিল। এই সময়টাতে ফুল বিক্রি করার ধুম পরে যায়। বাঙালির ভালোবাসা প্রকাশের জন্য এই দিনটা অনেক বড় ভূমিকা রাখে। আমি তখন আমার প্রিয় ও পছন্দের মানুষটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম ভার্সিটির গেটের সামনে। অনেক ছোট ছোট বাচ্চারাই ফুল বিক্রি করছিলো রাস্তায়। হটাৎ দেখি একটা মেয়ে একটু দূরে একটা জায়গায় ফুল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে কাউকে ফুল কেনার জন্য অনুরোধ করছে না। আমি নিজ থেকেই ওর সামনে গেলাম আর জিজ্ঞাস করলাম কি হয়েছে তোমার ? তুমি মন খারাপ করে আছো কেন ? ও আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো। এমনটা আমি মোটেও আশা করিনি। মায়াবী চোখের মাঝে অশ্রু যেন টলমল করছে। তবুও সে চুপ করেই রইলো। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে তোমার আমাকে বলবে না ? এবার সে মুখ খুললো আর বললো আমার ফুল বিক্রি করার পঞ্চাশ টাকা হারিয়ে গেছে।
পঞ্চাশ টাকার জন্য এই সুন্দর মেয়েটা রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে কান্না করছে ভেবেই বুকের ভেতর একটা চাপ অনুভব করলাম। কি এক সমাজ ব্যবস্থা আমাদের !কতটা বৈষম্য জীবনে সাথে জীবনের, মানুষের সাথে মানুষের।
(চলবে..........)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
_
গল্পটা ভীষণ করুন কাহিনীর দিকে যাচ্ছে।
বৃদ্ধ লোকটির চিকিৎসার খরচ তার ছেলে ছিল দিতো কিন্তু তার ছেলে বিদ্যুৎ দূর্ঘটনায় মারা গেছে। আবার তার নাতনিটাও রাস্তায় দূর্ঘটনায় আহত হয়েছিল। আসলে গরিব মানুষকে আল্লাহ কষ্ট বেশি দেয়। দেখা যাক সামনের পর্বে কি হয়।
আসলে মানুষ যখন অসহায় হয়ে যায় তখন সবদিক থেকেই অসহায় হয়ে পড়ে। একদিকে ছেলেকে হারিয়েছে অন্যদিকে তার নাতনিকে। মানুষ কতটা অসহায় হলে এরকম পরিস্থিতির শিকার হয় সেটা ভাবতেই কষ্ট লাগছে। আমাদের আশেপাশে অনেক ছোট ছোট বাচ্চারা ফুল বিক্রি করে। আসলে সেই টাকা দিয়ে অনেকের সংসার চলে। কিংবা তারাও হয়তো পরিবারের পাশে দাঁড়ায় এবং এইটুকু বয়সেই পরিবারের দায়িত্ব নিতে শিখে। আপু আপনার লেখা গল্পের পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
গত পর্ব টা গতকালই পড়েছিলাম। আর বেশ ভালোই লেগেছিল। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিলাম এই পর্বের জন্য। আর আজকে আবার এই পর্বটি পড়লাম। আসলে ধীরে ধীরে গল্পের মূল দিকেই চলে আসলাম দেখছি। বৃদ্ধ লোকটি অবশেষে ছেলেটিকে পুরো গল্প বলতে লাগলেন। যাইহোক আপু যেহেতু এখনো শেষ হয়নি তাই অপেক্ষায় থাকলাম।
যাক দ্বিতীয় পর্ব তাহলে পেলাম ৷ যেমনটা ছিল প্রথম পর্বে ৷সেই গ্রাম থেকে ছুটে বৃদ্ধ লোকটি ৷ যা শেষমেষ তাহলে সেই পুরনো দিনের কাহিনী উৎঘাটন ঘাটন হলো ৷
যা হোক গল্পটা বেশ গভীরের দিকে যাচ্ছে ৷ পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা ৷