পিপাসা - গল্পের দ্বিতীয় পর্ব
পিপাসা
এই ছোট একটি চাকরির অল্প টাকায় স্বপ্ন দেখছে ফারুক আর ফারুকের পরিবার। তবে এই স্বপ্ন কি আধো পূরণ হবে ?? নাকি রয়ে যাবে শুধুই পিপাসা।দেখতে দেখতে তিন মাস, ফারুক এবার তার মালিককে জোর গলায় বলেই ফেললো - আপনি কি আমাকে আমার পারিশ্রমিক দিবেন? নাকি আমি কাজ ছেড়ে চলে যাব? ফারুকের কথায় মালিক রেগে গিয়ে তার গালে বসিয়ে দিলো এক থাপ্পড়। আর চেঁচিয়ে বলতে লাগলো- বস্তির ছেলের সাহস দেখো!!সে আমার সাথে রাগ দেখিয়ে কথা বলে। দিব না তোকে কোনো টাকা !! এখনি আমার দোকান থেকে বেরিয়ে যা, গ্যারেজের সীমানায় যদি তোকে দেখি তাহলে পুঁতে ফেলবো কিন্তু !!...............
মনে বিষাদ ভরা কষ্ট নিয়ে ফারুক ছুটতে থাকে শহরের অলিতে-গলিতে। দুমুঠো ভাত আর ঠাই দেয়ার মত কেউ নেই ফারুখের। এই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অবস্থায় ফারুক নিয়ে নেয় এক চরম সিদ্ধান্ত। কিছুদিন আগেই গ্যারেজে এক ভদ্রলোক এসেছিল গাড়ি ঠিক করতে, যে ছিল অনেক বেশি ধন সম্পদের মালিক। বউ বাচ্চা নিয়ে সেই ভদ্রলোক দেশের বাইরে থাকতো । আর শহরের বাসায় থাকতেন ভদ্রলোকের বুড়ো মা ও বাবা। ফারুক সেই কথা চিন্তা করেই ভদ্রলোকের বাসার ঠিকানায় রওনা হয়, এত বড় ফ্ল্যাটে দুটো বুড়ো মানুষ ভাবতেই অবাক লাগে। ফারুক দরজায় দাঁড়িয়ে বেল বাজাতেই দরজা খুলে এক বুড়ো মহিলা জিজ্ঞাসা করছেন - কে তুমি বাবা? ফারুক বুদ্ধি খাটিয়ে বলে ফেলল, আপনার ছেলে আমাকে পাঠিয়েছেন। ঘরে নাকি ইলেকট্রিক সমস্যা আছে?? বুড়ো মহিলা অচিরেই হা বলে তাকে ঘরে ঢুকতে দেয়, ফারুখ না চাইতেও সোজা চলে যায় তাদের বেডরুমে, আর আলমারী খুলে এত টাকা-পয়সা দেখে ফারুকের মন আনন্দে ভরে উঠে।
টাকাগুলো হাতে নিতেই ঘরে থাকা বুড়ো লোকটি তাকে জাপটে ধরে আর চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। অনেক ধস্তাধস্তি পরে ফারুকের সামনে থাকা ফুলের টপ এর সাহায্যে সে ওই বুড়ো লোকের মাথা ফাটিয়ে দেয়, আর তৎক্ষণাৎ এই লোকটি মারা যায়। বুড়ো মহিলার চিৎকারে আশপাশের ফ্লাটের মানুষজন জেনে যান। এবং তারা সাথে সাথেই পুলিশকে ইনফর্ম করেন। ফারুক ঘর থেকে বের হওয়ার আগেই পুলিশ তাকে ঘটনাস্থলে ধরে ফেলেন। আর হাজারো জিজ্ঞাসাবাদের পরে কোনো পরিচয় না পাওয়ায় অবশেষে তারা ফারুককে ক্রসফায়ার করে মেরে ফেলেন।আর সেই সাথে মুছে যায় ফারুকের জীবনের সকল স্বপ্ন আশা, না-পাওয়ার পিপাসা ফারুককে ঠেলে দেয় জীবনের শেষ স্তরে । অপরদিকে ফারুকের পরিবার প্রতীক্ষার দিন গুনছে। কখন ফারুখ ফিরে আসবে আর কখন তারা তাদের জীবনের সব থেকে আনন্দের দিন তাকে দেখতে পাবে।
প্রতিটা মানুষ তার পরিবারের সুখের জন্য সবকিছু করতে পারে। বস্তি থেকে শুরু করে বিশাল কোম্পানির মাকিল যেই হোক না কেন প্রতিটা মানুষেরই টাকার প্রয়োজন আর এই টাকার চাহিদা কোনোদিন শেষ হবার নই। আর এই সুখকে কেন্দ্র করে পরিবারের মানুষের মুখে একটুখানি হাসি ফুটানোর জন্য নিজের জীবনকেও বাজি রাখতে অলসতা করে না। তবে এই টাকার পিপাসায় মানুষ ধ্বংস হতে বেশি সময় নেয় না। বাস্তবে হয়তো আমার এই গল্পের ফারুকের মতো হাজারো ফারুকের জীবন এই ভাবে শেষ হয়ে যাচ্ছে শুধু টাকার পিপাসায়।
সমাপ্ত
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
_
আসলে ঠিকই বলেছেন, বস্তি থেকে শুরু করে বড়লোক প্রতিটা মানুষের ই টাকার প্রয়োজন রয়েছে। আসলে অভাবের কারণে মানুষ নিজের বিবেক বুদ্ধি সবকিছু হারিয়ে ফেলে। এটা আসলে তার নিজের কোন দোষ নয় তাকে অন্য কেউ বাধ্য করেছে। গল্পের শেষটা পড়ে ভীষণ খারাপ লাগলো। বিশেষ করে ফারুকের জন্য এবং ওই বৃদ্ধ লোকটির জন্য। কোথায় থেকে কোথায় এসে বিষয়টা এরকম অবস্থা হলো।
হা আপু বিষয়টা খারাপ লাগলেও তবে সব জায়গায় এমনটাই ঘটছে। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
সত্যি বলতে আমি অপেক্ষায় ছিলাম দ্বিতীয় পর্বের জন্য ৷ প্রথমে পর্বে পড়েছিলাম ফারুক ছোট একটি চাকরি পেয়ে তার পরিবারের আবদার গুলো পুরন করতে পারবে ৷ সে এমনটাই স্বপ্ন দেখেছিল ৷
কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে তো পুরোটাই উল্ট ৷ যে গ্যারেজে কাজ তার মালিকের কাছে টাকা চাইতেই মারধর ৷
আসলে আমাদের সমাজে সন্ত্রাস জঙ্গি এসব হয় কেন ৷ আমি মনে করি এর পেছনে দারিদ্র আর অভাব সবথেকে দায়ী ৷ আসলে জীবনে বেঁচে থাকার জন্য তো দু মুঠো ভাত প্রয়োজন ৷ কিন্তু সেটাই যদি না জুটে ৷ তাহলে তো খারাপে কাজে লিপ্ত হবেই ৷ সবচেয়ে খারাপ লাগলো শেষমেষ ফারুকের জীবন টা অকারনে চলে গেলো ৷
হা, মানুষ টাকার জন্য কতটা নিচে নামতে পারে, আর পরিবারের জন্য কতটা রিস্ক নিতে পারে তা আজ এই পোস্টের মাধ্যমে তুলে ধরলাম।ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে।
ঘটনা যে এমন হয়ে যাবে কল্পনাই করিনি।ভেবেছিলাম দ্বিতীয় পর্বে হয়তো টাকা পাবে। কিন্তু ওকে যে ক্রসফায়ারের মুখে পড়তে হবে ভাবিওনি।
বাস্তবতা এমনই নিঠুর।চাহিদা মাথায় চেপে বসলে মাথা ঠিক থাকেনা।
এই চাহিদায় আমাদের জীবনের সব থেকে খারাপ জিনিস। ধন্যবাদ আপনাকে।
গল্পের শেষটা খুব কষ্টের। অভাবের তারনায় মানুষ অনেক ভুল কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে। খুব খারাপ লাগলো। এমনটা নাও হতে পারতো। 😥 আমাদের সমাজে এমন অনেক ফারুক আছে যারা জীবনকে বাজি রেখে নানা রকম কাজে নিজেদের কে নিযুক্ত করে ফেলে।গল্পটা বাস্তবতাপূর্ন।আমাদের সমাজে ফারুকরা এভাবেই অপরাধে জড়িয়ে পরে।টাকার দরকার আছে তাই বলে জীবন দিয়ে এমনটা কারোই কাম্য নয়। অনেক ধন্যবাদ আপু। অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
হা তবে সব কিছুর জন্য দায়ি হচ্ছে পরিস্থিতি।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যর জন্য।
ঠিকই বলেছেন আপু। এরকম অনেকেই টাকার জন্য অনেক কিছুই করে ফেলে। শুধুমাত্র নিজের পরিবার পরিজনকে ভালো রাখতে। নিজের শেষ সম্বলটুকু বিসর্জন দিয়ে দেয়। আজকে আপনার গল্পটি পড়ে খুব ভালো লেগেছে। তবে গল্পে ফারুকের চেষ্টা অনৈতিক ছিল বলেই আজকে তার পরিবারের পাশে সে নেই।
চাপে আর পরিবারের চিন্তায় পরে ফারুখ বাধ্য হয়েছে নিজেকে এই অবস্থার মুখে ফেলে দিতে।ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যর জন্য।
গল্পের শেষে এমন ঘটবে ভাবতে পারিনি,আসলে অভাবে মানুষের ভিতরে বুদ্ধি বিবেক হারিয়ে যায়।যার জন্য মাঝে মাঝে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।ফারুক নিজের জীবনটা আরো ধৈর্য নিয়ে সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করে সাজাতে পারতো,হয়ত কষ্ট হতো তবে সুন্দর হতো।ধন্যবাদ আপু
হা তবে পরিস্থিতি ছিল এই অবস্থার জন্য দায়ী। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
গল্পের শেষটা এমন না হলেও পারতো! এই টাকার জন্য ফারুকের জীবন বাজি দিতে হলো! জীবনে টাকার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। তবে সেটা অর্জন করতে হবে বৈধভাবে! ভালো লিখেছেন আপু
হ্যাঁ কিন্তু সেটাই বুঝতে ভুল করেছেন ফারুখ, খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে নিজের মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছিল। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য ।
গল্পটি পড়ে বেশ কষ্ট পেলাম। শেষে এমন পরিস্থিতি মানতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। নিজের পরিবারের সুখের জন্য অপরাধ করতে পর্যন্ত গিয়েছে, এবং নিজের প্রাণ দিয়েছে।
আসলে বাস্তবতার সাথে মিল আছে। এভাবেই অপরাধ বৃদ্ধি পায়। উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাব। অনেক কিছু আপনার এই গল্পের মধ্যে ফুটে উঠেছে।
সেটাই,,, উপযুক্ত কর্মসংস্থান আর চাহিদার অভাবের কারণেই এই অবস্থা অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।