পিপাসা - গল্পের প্রথম পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

পিপাসা

man-3959784_960_720.jpg

image source

রোজ সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গে ফারুকের চিৎকার-চেঁচামেচি আর কান্নার শব্দে।কেউ মারামারি করছে কেউ টাকা নিয়ে ঝামেলা করছে আবার কেউবা খাবার নিয়ে ৷ রোজকার এই ঘটনাগুলো তার মন বিষিয়ে তুলছে। মা, দুটো ভাই, আর ছোট দুটো বোন নিয়ে তার পরিবার। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফারুক দেরি না করে বেরিয়ে যায় তার প্রতিদিনের কাজে, রাস্তার এপাশ থেকে শুরু করে ওপাশ মানুষের বাড়ির আনাচে-কানাচে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করেই জীবন চলে তার পরিবারের । এক বেলা খেলে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয়, তবে কি আর করা, অনেক জায়গায় কাজও খুঁজেছে ফারুক, কিন্তু বস্তির ছেলে মেয়েদের এর থেকে ভাল কাজ আর কে দেবে।

বোতল বিক্রি করে যা টাকা পায় তা নিয়ে ঘরের জন্য খাবার কিনে আনে ফারুক। ছোট ভাইবোনগুলো কোথাও ঘুরে ফিরে কাজ করে টাকা আনছে, আবার কোথাও ফুল বিক্রি করে। কিন্তু এভাবে আর তাদের পেট ভরার মত খাবার ও ঘরে যায় না। হঠাৎ একদিন ফারুক শহরে যাওয়ার সুখবর পায়, তাকে একটি গ্যারেজে কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছে তার এক মামা । এত বড় সুখবরের কথা শুনে ফারুক খুশিতে আত্মহারা। তার মা তার ভাইবোনগুলো মুহূর্তেই যেন চোখে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। ফারুক কিছুদিনের মধ্যেই চলে যায় শহরে, বড় বড় দালান কোঠা আর ইট পাথরের শহরে ফারুক নিজেকে সহজে মানিয়ে নিতে পারছিল না।

আর কিভাবেই বা মানিয়ে নিবে - ছোট একটি গ্রামের বস্তিতেই তার জীবনে শুরু। বস্তির আনাচে-কানাচে ঘুরেফিরে বড় হয়েছে ফারুক। গ্যারেজে কাজ শুরু করতেই তার মনে স্বপ্ন আঁকতে শুরু করে। মায়ের জন্য একটি নতুন শাড়ি, ছোট ভাই-বোনদের জন্য নতুন কাপড় কিনে নিতে পারবে সে। এখন তার ইচ্ছায় অনিচ্ছায় কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবেনা। দেখতে দেখতে দুই মাস কেটে যায়। কিন্তু ফারুখের গ্যারেজের মালিক এখনো তার বেতনের টাকা পরিশোধ করেনি।সে জিজ্ঞাসা করতেই বলে আরে ছোটলোকের বাচ্চা এতদিন তো না খেয়ে মরতি এখনতো তিনবেলা খাবার খেতে পারিস এতেই কি কম না !! আরো কটা দিন যাক দিয়ে দিব বেতন। কাজে ঢুকতে না ঢুকতেই টাকা টাকা করে মাথা খেয়ে ফেলেছে। এই কথার উত্তরে আর কিছু বলার নেই ফারুকের।

এদিকে বাড়ি থেকে দিনের-পর-দিন ভাই-বোন আর মায়ের ফোন - কিরে বাবা ? বেতন পেয়েছিস? টাকা পাঠাবি কবে? ছোট ভাই বোন - ভাইয়া আমার জন্য নতুন কাপড়, ভাইয়া আমার জন্য নতুন জুতা, আমার জন্য প্যান্ট শার্ট আনবে কিন্তু। উত্তরে ফারুখ আনবো আনবো। সবার জন্য সবকিছুই নিয়ে আসবো আর মাত্র কটা দিন। এই বলে ফোন রেখে দিল ফারুক।

এই ছোট একটি চাকরির অল্প টাকায় স্বপ্ন দেখছে ফারুক আর ফারুকের পরিবার। তবে এই স্বপ্ন কি আধো পূরণ হবে ?? নাকি রয়ে যাবে শুধুই পিপাসা। এটাই আমরা জানতে পারবো গল্পের দ্বিতীয় পর্বে।

(চলবে..........)

1.png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

_

Heroism_3rd.png

Sort:  
 2 years ago 

গল্প হলেও বর্তমান সময়ে এটা বাস্তব এবং নির্মম একটা ঘটনা।
পরিবারে একটা ছেলে থাকলে অবশ্যই প্রতিটা সদস্য তার মুখ চেয়ে থাকে।আর এটাই স্বাভাবিক।
দেখি ফারুখ তার কাজের প্রতিদান পায় কিনা!

 2 years ago 

হা বর্তমানে এমনই চলছে, আর বাস্তব বড়ই কঠিন।

 2 years ago (edited)

আপু গল্প কি আপনি তৈরি করেছিলেন?
আসলেই গল্পটি আমাদের বর্তমান সমাজের সাথে একদম মিল খুঁজে পাওয়া যায়। দারিদ্রতা আমাদের পিছুই ছাড়ছেনা। যাইহোক দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম আপু।

 2 years ago 

অবিয়েসলি আমি লিখেছি,, হা আপু বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে। কারণ এরকম অহরহ ঘটে চলেছে।

 2 years ago 

সত্যি বলতে এমন ঘটনা আমাদের বাস্তব সমাজেও ঘটে থাকে ৷ আর পরিবারেরে বড় সন্তানদের যে কতটা দায়িত্ব সেটা বেশ ভালোই জানি ৷
যে ফারুক রোজ কাজ করে সংসার চালায় ৷ আরেকটু ভালো ইনকামের জন্য তার শহরে পাঠায় ৷ আর তখনি ফারুক তার পরিবারের আবদার পূরন করতে পারবে এমনটাই স্বপ্ন দেখে ৷
তবে মালিক পক্ষ বেতন দেয় না ৷ আর বেতন না পেলে ফারুকের দেখা স্বপ্ন কিভাবে পূরন হবে ৷
যা হোক পরের পর্বের অপেক্ষায় ৷ দেখা যাক

 2 years ago 

হা একটা পরিবারের দায়িত্ব মানে অনেক কিছু, আর সেই পরিবার যদি দরিদ্র হয় তাহলে তো কথাই নেই। যথার্থ মন্তব্য করেছেন ভাইয়া ধন্যবাদ।

 2 years ago 

গল্পটা বেশ সুন্দর লিখেছেন আপু,আসলেই বস্তির অসহায় মানুষগুলো জীবনযাএা এমনই।কি জানি ফারুক কে কি গ্যারেজের মালিক আসলেই
বেতনগুলো দিবে কিনা,তার ছোট ছোট স্বপ্ন পূরন করতে পারবে কিনা।পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ

 2 years ago 

হা আপু কিছুটা বাস্তবের সাথে মিল রেখেই লিখেছি, কেননা এখনকার সমাজের অবস্থা আসলেই এমন।

 2 years ago 

গল্পটি অনেক ভাল লাগলো। বাস্তবতা নির্ভর একটি গল্প। এমন গল্প আমাদের সমাজে অনেক দেখা যায়। একটি পরিবারে একজন ছেলে থাকলে সবাই তার আশায় থাকে।গল্পের ফারুক কি তার প্রতিদান পাবে কিনা, তাই জানার অপেক্ষায়।

 2 years ago 

হা আপু, বাস্তবটা আসলেই এমন।
ধন্যবাদ যথার্থ মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 58474.85
ETH 2500.10
USDT 1.00
SBD 2.39