আমার লেখা ভালোবাসার অনুভূতি - শেষ পর্ব- কষ্ট পোষা মানুষ !! @shy-fox 10% beneficiary

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আমার লেখা ভালোবাসার অনুভূতি-শেষ পর্ব

chobi.jpg

ছবিটি pixabay.com থেকে নেয়া হয়েছে

বিন্তি নামের খুব মিষ্টি একটা মেয়ে ওর বন্ধু ছিল। ওকেই নিজের প্রিয় মানুষ বানিয়ে নিয়েছিল কলরব। আমার আর কলরবকে ভালোবাসি বলা হয়নি। বিন্তি কিছুটা মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। সেটা তখন কোনো সমস্যা না হলেও ওই কারণেই কলরবকে হারাতে হয়েছিল আমাদের। ভার্সিটির প্রথম বর্ষে একটা ব্যার্থ মানুষ হিসেবে নিজের ভালোবাসার কথা চাপা দিয়ে সবকিছু থেকে যখন নিজেকে আমি গুটিয়ে নিচ্ছিলাম তখন কলরব আর বিন্তির প্রেমটা প্রজাপতির মতো উড়ছিল। আমি কিভাবে মেনে নিয়েছিলাম সেটা আমার কাছেই অজানা।হয়তো কলরবকে কথা দিয়েছিলাম বলেই ওর খুশিতে হস্তক্ষেপ করার ইচ্ছেটা আর হয়নি আমার। ভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষে পরিবারকে মানিয়ে নিয়ে ওরা বিয়ে করে নিয়েছিল। একজন নাকি আরেকজনকে হারাতে চায়নি তাই তাড়াতাড়ি কবুল বলে নিয়েছিল। আমি আর ঐদিকে পাত্তা দেইনি। নিজের মতো একটু একটু করে গুছিয়ে নিচ্ছিলাম। খুব কষ্ট হতো, ভেতরটা ভার হয়ে থাকতো। কথা বলা, হাসা, প্রিয় কাজগুলো করা...সব একরকম ভুলে গিয়েছিলাম।

রোজ রাতে বিছানার ওপর এপাশ ওপাশ করে রাত কেটে যেত, আমার ভেতরকার অনুভূতিগুলো আমাকে ঘুমুতে দিতো না, জানালার পাশে বসে নিজেকে সবকিছু থেকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করতাম রোজ কিন্তু সেটা আজও সফল হয়নি। খুব ভয়ানক একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে নিজেকে টেনে হিচরে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। তারপর অনেকদিন কেটে গিয়েছিল প্রায়। কষ্টগুলো ভুলে যেতে বই পড়ার অভ্যাস বানিয়েছিলাম, দুইটা পোষা বিড়াল ছিল, ছোটো একটা বারান্দা বাগান ছিল....আমার সময় খুব ভালোই কেটে যাচ্ছিল। অফলাইন জগতের মধ্যে নিজেকে নিয়ে আসা, সবকিছু থেকে দূরে, যখন তখন ঘুরতে বেরিয়ে পড়া....যতটা কষ্ট থেকে দূরে থাকা যায় আমি চেষ্টা করেছিলাম। আসলে ফায়দা তেমন হয়নি হয়তো। নাহলে আজকে এই সকাল বেলায় চায়ের মগ হাতে বারান্দায় বসে আগের কথাগুলো মনে করতাম না আমি।

কষ্ট চেপে রাখতে রাখতে একরকম বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। চোখের দৃষ্টি আর ঝাপসা হয়ে আসতো না জলে। কেউ হয়তো আমার জায়গায় থাকলে সব ছেড়ে ছুড়ে দেশান্তরী হতো কিন্তু আমি নিস্তব্ধ পুতুল হয়ে এখনো থেকে গেছি এইখানে। আমি কষ্ট পুষতে ভালোবাসি বলেই হয়তো দৌড়ে পালাতে পারিনি।চোখের সামনে নিজের মানুষটাকে আরেকজনের করে দিয়েছিলাম আর এখন যেটা পাচ্ছি সেটা তো কষ্টই না বলা চলে। আমি তো কষ্ট পোষা মানুষ...আমি জানি পুড়ে যাওয়া মনের যন্ত্রণা খুব সমীচীন না হলেও সহ্য করার মতন। তাই এখনও সহ্য করে যাচ্ছি। আমাকে আগলে রাখার জন্য এখন আর কোনো হাত নেই, আমার মন খারাপ উধাও করে দেয়ার মত এখন আর কোনো মানুষ নেই...আমি কিন্তু দিব্যি বেচেঁ আছি, বেচেঁ থাকার তাগিদ তাই বেচেঁ আছি অবশ্য।

আমি আমার জীবনে কোনোদিন এত ছোটো কাফনের কাপড় দেখিনি। সেদিন দেখেছিলাম একদম কাছ থেকে। বিন্তির মানসিক অসুখটা খুব খারাপ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। ও কলরবের পাশে কাউকে সহ্য করতে পারতো না। কলরব লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে যেত, লুকিয়ে পয়সা পাঠাতো। এত ভালো একটা মানুষ বেচেঁ থাকতেই হয়তো ভেতরে ভেতরে মরে গিয়েছিল। আমি প্রায় এক বছর পর ওর কাছ থেকে এইসব শুনেছিলাম। আমার কিছু বলার মত ছিল না সেদিন। তারপর একদিন.....সব শেষ। বিন্তিকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর কথাটা বিন্তি মেনে নিতে পারেনি। হাসপাতালে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো কলরব আর রিমঝিমকে দেখতে চেয়েছিলো।

রিমঝিম.....কলরব আর বিন্তির চার বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে,খুব আদরের ছিল ও। আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর আর মিষ্টি একটা মুখ ছিলো রিমঝিম।শেষবারের মতো দেখা করার কথাটা কলরব ফেলতে পারেনি বলেই হয়তো আজকে কলরবের কথা মনে করে সবাই চোখের পানি ফেলে। সেদিন বিন্তি খাবারে বিষ মিশিয়ে নিজেকে শেষ করেছিল, সেই সাথে কলরব আর রিমঝিমকেও নিয়ে গিয়েছিল একবারের মত। চার বছরের একটা মিষ্টি বাচ্চা, আমাকে খালামনি বলে যে ডাকতো দেখা হলেই....ওর মুখে শেষবারের মত আর খালামনি ডাকটা শোনার ভাগ্য হয়নি। কাফনের কাপড় মোড়ানো দুইটা নিষ্পাপ মুখ সেদিন আমাকে একবারের জন্য চুপ বানিয়ে দিয়েছিল। আমি আর সেই মুখ দুটো ভুলতে পারিনি। ওরা রোজ আমার স্বপ্নে আসে,আমার কল্পনাতে ভেসে বেড়ায় ওদের কথা। প্রতিটা রাত খুব কষ্টে কাটে আমার। এত কাছ থেকে প্রিয় মানুষ হারানোর যন্ত্রণাটা কোনোকিছুর সাথে মেলানো সম্ভব না হয়তো।

আমরা কেউই কথা বলতাম না কলরবের সাথে....ওর বিয়ের পর থেকে। কারণ বিন্তি সেটা সহ্য করতে পারতো না। খুব রেগে যেত, ছোটো মেয়েটার উপর হাত তুলতো, কলরবকে যা মুখে আসতো তাই বলতো। আমরা সবাই তাই কলরবের কাছ থেকে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলাম। ও যাতে ভালো থাকে সেইজন্য নিজেদের কষ্ট দিতাম। মাত্র দু তিনবার রিমঝিমকে দেখতে পেরেছিলাম,তাও খুব কষ্টে কলরব সময় করে লুকিয়ে নিয়ে এসেছিল ওকে আমাদের সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার জন্য। প্রিয় মানুষটাকে এইভাবে হারিয়ে ফেলার পর আর কোনোদিন কাউকে প্রিয় বানানোর ইচ্ছে হয়নি, কারও প্রিয় মানুষ হয়ে ওঠারও ইচ্ছে হয়নি। নিজের মত থেকে গেলাম...এখনো তাই আছি, বেশ ভালই আছি। শুধু ওই রাতের বেলায় আর আমার অবসরগুলোতে খুব পোড়ায় ওই নিশ্চুপ মুখ দুটো। সাদা কাপড় জড়ানো, চোখ বন্ধ , চুপচাপ শুয়ে থাকা শরীর দুটো আমার চোখে এখনও ভাসে। আমি মাথা থেকে সরিয়ে দিতে পারিনা। বাকিটা জীবন এই কষ্ট পোষা মানুষ হয়েই কাটিয়ে দিবো....আর কাউকে প্রিয় বানিয়ে হারিয়ে ফেলার কিংবা কাউকে কথা দিয়ে সেই কথা রাখার জন্য নিজেকে আর এইভাবে নিঃস্ব করে ফেলার ইচ্ছে নেই আমার....



সমাপ্ত



break.png

banner-abb23.png

Sort:  

আপনার লেখা ভালোবাসার অনুভূতি টির প্রথম পর্ব খুব সুন্দর লেগেছিলো। গল্পটি অনেক ভালো লেগেছে আমার কাছে। শেষ পর্বটি শেয়ার করার জন‍্য ধন্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা রইল প্রিয় আপু। ভালোবাসা অবিরাম 💯🥰

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 68125.63
ETH 3308.80
USDT 1.00
SBD 2.74