"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ২৩ || "আমার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি"

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

হ্যালো..!!
আমার সুপ্রিয় বন্ধুরা,
আমি @aongkon বাংলাদেশের নাগরিক।

আজ - ১৩ ই আশ্বিন ‌|| ১৪২৯ বঙ্গাব্দ || বুধবার || শরৎকাল



আমি অংকন বিশ্বাস, আমার ইউজার নেম @aongkon। আমি বাংলাদেশ থেকে বলছি। আমি মা, মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমিকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি। আশা করি, আপনারা সবাই সুস্থ এবং সুন্দর আছেন। আমার মাতৃভাষা বাংলার একমাত্র ব্লগিং কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] এর ফাউন্ডার, এডমিন প্যানেল, মডারেটর প্যানেল এবং সকল সদস্যসদস্যাদের আমার অন্তরের অন্তরস্থল থেকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন রইল।

indian-1283789_640.jpg

সোর্স:

আজকে আমার পোস্টটি হলো আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা - ২৩ এ অংশগ্রহণ করে আমার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করব। এমন একটি সুন্দর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি নিজের কাছে গর্ববোধ করছি। এর আগে আমি এমন ধরনের কোন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি করি নাই, কারণ আমি বর্তমানে লেভেল ওয়ানে আছি। প্রতিযোগিতা যেমনই হোক না কেন অংশগ্রহণ করাটাই বড় কিছু, আমি মনে করি। মানুষের জীবনে শুধুই যে ভালো অভিজ্ঞতা থাকবে এটা তো হতে পারে না, অনেক অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকে যেটা হয়তো মুছে ফেলা যেতে পারলে জীবনটা আরো সুখকর হয়ে উঠতো। কিন্তু এটা তো জীবন, এখানে তো হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ থাকবেই এটাই তো নিয়ম। জীবনটা আসলে নদীর মত বয়ে চলে।



মূল ঘটনা:

আমার স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার অনুভূতি শেয়ার করতে আমাকে ফিরে যেতে হবে আজ হতে ঠিক নয় বছর আগের দিনে।

আমার বাবা ছিল আমাদের গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং তিনি এই স্কুলটি স্থাপন করেছিল এখান থেকেই আমি পি.এস.সি পাশ করে পাশের গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই, কারণ আমাদের গ্রামে কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল না, বর্তমানেও নেই অবশ্য। জীবনের সবথেকে নিষ্ঠুরতম ঘটনাটা এই ফুলবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের থেকেই ঘটেছে। আমার আগে থেকেই এই স্কুলে ভর্তি হওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না, কারণ স্কুলটা লেখাপড়ার দিক থেকে খুব একটা ভালো না বললেই চলে। এখানে ভর্তি হওয়ার দুটি কারণ ছিল একটি হলো এই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির মেম্বার ছিল আমার বাবা এবং আরেকটি হলো এই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিল বাবার বন্ধু। এখানে ভর্তি হওয়া ছাড়া আমার কোন উপায় ছিল না। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার পরে একটি বছর মোটামুটি ভালোই কাটলো তারপর সপ্তম শ্রেণীতে উঠলাম। আমার জীবনের সবচেয়ে তিক্ত ঘটনাটা এই সপ্তম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় ঘটেছিল যেটা আমি মৃত্যু পর্যন্ত ভুলতে পারবো না। ঘটনাটি ঘটেছিল সপ্তম শ্রেণীর শেষের দিকে ঠিক বার্ষিক পরীক্ষার আগে। আমি ছোটবেলা থেকেই স্কুলের বন্ধুদের সাথে খুবই মজা করতাম আবার সবাই আমাকে নিয়েও খুব মজা করত। আর এই মজা করাই একদিন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমার জন্য। প্রায় দিনই স্কুলে গিয়ে কয়েকজন বন্ধু ছিলাম এভাবে মজা করতাম যে একজনের বই অথবা গাইড অন্য একটা বন্ধুর ব্যাগের ভিতর রেখে দিতাম গোপনে, তারপর যে বন্ধুর বই বা গাইড হারিয়েছে সেই বন্ধু এসে খোঁজাখুঁজি করলে তখন সবার ব্যাগ চেক করতাম এবং যার ব্যাগে বই এবং গাইড খুঁজে পেতাম তাকে নিয়ে অনেক মজা করতাম এবং অনেককে ক্ষ্যাপাতাম।

children-602967_640.jpg

সোর্স:

এই মজাটা আমরা মাঝে মাঝেই করতাম শুধু ছেলে বন্ধুরাই। একদিন ঘটনাটা ঘটলো বিপরীত সবাই ক্লাসে বসে স্যারের ক্লাস করছি হঠাৎ একটি মেয়ে বান্ধবী স্যারকে বলল যে তার নাকি গাইড হারিয়ে গিয়েছে এবং বান্ধবীটি খুব কান্নাকাটি আরম্ভ করে দিল কারন কিছুদিন পর বার্ষিক পরীক্ষা। স্যার তখন বলল, গাইড যদি এই ক্লাসের থেকেই হারিয়ে থাকে তাহলে এই ক্লাসেরই কেউ নিয়েছে নিশ্চয়, যে গাইড নিয়েছো ভালোর ভালোই দিয়ে দাও না হলে কিন্তু মাইর পিঠে আটবেনা। নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাস আছে গাইড তো আমরা কেউই নেই নাই। সবাই বললাম স্যার আমরা কেউই গাইড নিই নাই। তখন স্যার ক্লাস ক্যাপ্টেন কে বলল, সবার ব্যাগ চেক করো। ক্লাস ক্যাপ্টেন যথারীতি সবার ব্যাগ চেক করতে আরম্ভ করল। ক্লাসের প্রথম বেঞ্চেই বেশিরভাগ দিন বসতাম আমি, প্রতি বেঞ্চে চারজন করে বসা যেত। গাইড চেক করা প্রথম বেঞ্চে থেকেই শুরু হল, দুইটা ব্যাগ চেক করার পরেই আমার ব্যাগ নিলো, তারপর যেটা হলো আমার মাথায় মনে হল যেন বজ্র পড়লো, আমার ব্যাগে গাইডটা পাওয়া গেল। আমার ব্যাগে গাইডটা ছিল কিন্তু আমিই জানতাম না, তখন বুঝে ফেলেছিলাম হয়তো বন্ধুদের কেউ রেখে দিয়েছে। কিন্তু আমার ব্যাগে যেহেতু পাওয়া গিয়েছে তাই আঙ্গুলটা আমার দিকে আসবে এটাই স্বাভাবিক। তখন আমি স্যারকে বললাম স্যার গাইড টা আমার ব্যাগে অন্য কেউ রেখে দিয়েছে। তখন স্যার বলছে নিজে গাইড চুরি করে অন্য কারো নাম বলা হচ্ছে ! আগেই যখন বলেছিলাম তখন যদি দিয়ে দিতে তাহলে আর কিছুই বলতাম না। তখন কান্না করছিলাম আর বলছিলাম যে স্যার আমি গাইডটা চুরি করিনি অন্য কেউ রেখে দিয়েছে, আমি খেয়াল করিনি। তখন স্যার বলল চুরি করেছো তখন তার শাস্তি পেতে হবে। ক্লাস ক্যাপ্টেন কে বলল লাইব্রেরী থেকে বেত নিয়ে আসো। কারণ স্যার কখনো ক্লাসে বেত নিয়ে আসতো না। আর পড়াশোনার জন্য কাউকে ক্লাসে মারত না। কিন্ত সেদিনের বিষয়টা ছিল ভিন্ন, সেদিন যেন স্যারের রুদ্র মূর্তি রূপ দেখেছিলাম বেত নিয়ে আসার পরে ক্লাসের সামনে ডেকে নিয়ে সবার সামনে দুই হাতে গুনে গুনে প্রতি হাতে পাঁচটা করে গায়ের সম্পূর্ণ জোর দিয়ে মারছিল। বেতের মাইরের চোটে আমার হাত ফুলে লাল হয়ে গেছিলো। মাইরের ব্যথা যত টা না শরীরে ধরেছিল তার থেকে মনে বেশি অপমান মনে ধরেছিল চুরির অপবাদে। কারন আমার মান-সম্মানের থেকে বড় ছিল আমার বাবার মান সম্মান। মাইরের পরে স্যার একটি সাদা কাগজ আমার কাছে দিয়ে বলল এই কাগজে "আমি গাইড চুরি করেছি" এটা লিখতে। আমার তখন লেখার মত কোন অবস্থা ছিল না একদিকে কান্না করছিলাম অন্যদিকে হাতের যন্ত্রণা। স্যার তারপরে একটা বন্ধুর দিয়ে লেখালো। তারপর সেটা নিয়ে আমাকে বলা হলো ক্লাসের বাইরে গিয়ে হাতে করে দাঁড়িয়ে থাকতে কিন্তু এই প্রস্তাবে আমি সোজাসুজি নারাজ ছিলাম। এটা ছিল বড় পর্যায়ে অপমান করার একটা পদ্ধতি। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম আমি ওটা ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো না মানে থাকবোই না। ওটা ধরে দাঁড়িয়ে না থাকার জন্য ছাড়া আরো কয়েকটি গায়ের উপর বেতের বারি মারল।

kid-6240739_640.jpg

সোর্স:

যন্ত্রণায় ছটফট করছিলাম আর কান্না করছিলাম। তারপর স্যার ক্লাস থেকে চলে গেলে আমি সোজাসুজি কান্না করতে করতে বাড়ি চলে আসি। বাড়ি এসে দেখি বাবা স্কুল থেকে এখনো আসেনি, একটু পরে বাবা আসয় সব বিষয় বাবাকে খুলে বললাম। বাবা আমাকে ছোটবেলা থেকেই খুব বিশ্বাস করতো। আমার বাবা-মার বিশ্বাস ছিল যে আমি এ ধরনের কাজ করতে কখনোই পারিনা। তাদের দেয়া শিক্ষার উপর আত্মবিশ্বাস ছিল। ওই দিনই রাতে জ্বর চলে আসে সেই জ্বর ৩-৪ দিন ছিল। তারপর থেকে ঔ স্কুলে আর যেতাম না। কিছু দিন পরে বাবার বন্ধু অর্থাৎ প্রধান শিক্ষক বাবার কাছে ফোন করে আমার সাথে ঘটা বিষয়টা নিয়ে অনুতপ্ত হয়েছিলেন, এবং সপ্তম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষাতে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম যে যেখানে আমাকে এবং বাবাকে অপমান করা হয়েছে সেখানে আর আমি আর যাব না। তাই সেই পরীক্ষা তো ও অংশগ্রহণ করেছিলাম না। কারণ ওই অপবাদটা আমাকে ভেতর থেকে কষ্ট দিচ্ছিল । তারপর বাবা ওই স্কুলর ম্যানেজিং পদ থেকে বেরিয়ে আসে যাতে আমি অন্য স্কুলে ভর্তি হতে পারি। তারপর নতুন বছরে আমাদের বাড়ি থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরে ধোকড়াকোল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই একবারে অষ্টম শ্রেণীতে। সবকিছু নতুন করে শুরু করাটা আমার জন্য কঠিন হয়ে গিয়েছিল। এই স্কুলেরও প্রধান শিক্ষক সহ চার পাঁচ জন শিক্ষক বাবার বন্ধু শিক্ষকতা করত এবং পড়াশোনার মানেও আমাদের উপজেলার ভেতর প্রথম সারিতে ছিল। এখান থেকে আমি জে.এস.সি তে ভালো রেজাল্ট করি এবং এস.এস.সি থেকে এ-প্লাস পেয়ে মাধ্যমিক লেখাপড়ার সমাপ্ত করি।

সময় সব ক্ষত পূরণ করে দেয় ঠিকই কিন্তু ক্ষতের চিহ্ন স্মৃতি হয়ে থেকে যায় জীবনের পাতায়।

এখনো ফুলবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমার ভেতর থেকে কষ্ট দেয়। আমি এখনো বুঝে উঠতে পারিনা, আমি সেই দোষটা কাকে দিতাম ? আমার নিজের ? আমার বন্ধুদের ? নাকি শিক্ষককে ? বন্ধুদের সাথে অতিরিক্ত মজাই যেন আমার অপমানের জন্য দায়ী। এমন একটা নেক্কারজনক ঘটনা সেটা কারোর কাছে শেয়ার করতেও নিজের ইজ্জতে লাগে। তবে আজ এমন একটা প্লাটফর্ম পেয়েছি আমি যেখানে আমারা সব রকম মনের কথা শেয়ার করতে পারি এবং দুঃখ-কষ্ট গুলোকে এই পরিবারে ভাগাভাগি করে নিতে পারি। আমার বাংলা ব্লগ শুধু একটা ব্লগিং প্লাটফর্মই নয়, এটা একটা পরিবার।



প্রিয় বন্ধুরা, আজকে পর্যন্তই আমার মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা স্কুল জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা অনুভূতি শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে, যাতে হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা কষ্টগুলো কিছুটা পরিমাণ হলেও লাঘব হয়। কারণ আমি জানি, আমার বাংলা ব্লগ পরিবার হতাশা নয়, অনুপ্রেরণা দেয়। সামান্য ভুল-ত্রুটি অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সঠিক পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকবেন। আমি আমার বাংলা ব্লগিং কে আমার সৃজনশীল কনটেন্ট দিয়ে সমৃদ্ধ করতে চাই এবং সফলতার সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে যেতে চাই। আবার দেখা হবে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে শীঘ্রই, ততক্ষণে নিজের খেয়াল রাখবেন সুস্থ এবং সুন্দর থাকবেন এটাই কামনা করি।

সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
@aongkon



standard_Discord_Zip.gif

Sort:  
 2 years ago 

দেখুন এক সময় যে নিষ্ঠুর মজা আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে করেছেন। সেটাই বুমেরাং হয়ে আপনার দিকে ফিরে এসেছে। আপনারা যে ধরনের মজা করেছেন এই ধরনের কাজ কখনোই কারো সাথে করা উচিত না। আশা করি সেটা এখন আপনি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। আপনার তিক্ত অভিজ্ঞতাটা পড়ে ভালো লাগলো। ভালোই লিখেছেন।

 2 years ago 

শৈশবে কোনটা ভুল কোনটা ঠিক এটা বুঝে ওটার বোধশক্তি ছিল না শুধু মজাটাই খুঁজে যেতাম। এখন বুঝি সব কিছুরই একটা লিমিট থাকে, মজা করতে করতে হয়তো সেদিন সেই লিমিট টা পার করে ফেলেছিলাম। সেজন্য আমি আমার তিক্ত অভিজ্ঞতার দোষ কারো উপরেই চাপিয়ে দিই নাই এখন পর্যন্ত। নিজের বুকের গহীনেই সেটা রেখে দিয়েছি।‌‌‌‌ সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশা, হতাশা-অনুপ্রেরণা এসব কিছু নিয়েই তো আমাদের জীবন। ভাই আপনার ভালোলাগা, আমার কাছে অনুপ্রেরণা।

 2 years ago (edited)

আপনার এই অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শেখার আছে। যেমনটা হলো সব বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত মজা করা বিপদের কারণ হতে পারে। আপনার মজার চক্করে নিজেও বিপদে পরেছেন । যাক তবে আপনি নিরপরাধ ছিলেন এটাই বড় ব্যাপার। খারাপ লেগেছে আপনি বেশ মার খাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।

 2 years ago 

হ্যাঁ ভাইয়া মজা ততক্ষণই করা উচিত, যতক্ষণ সেই মজাটা মাথা ব্যথার কারণ না হয়। এমনই তিক্ত অভিজ্ঞতা যেটা এখন পর্যন্ত বলতে পারিনি। সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.26
TRX 0.13
JST 0.032
BTC 60837.81
ETH 2874.77
USDT 1.00
SBD 3.62