"শারদীয়া দুর্গাপূজা পরিক্রমণ-১৫ তম পর্ব"
হ্যালো..!!
আমার সুপ্রিয় বন্ধুরা,
আমি @aongkon বাংলাদেশের নাগরিক।
আজ- ৯ই ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ।
আমি আশা করি, আপনারা সবাই সুস্থ এবং সুন্দর আছেন। আমার মাতৃভাষা বাংলার একমাত্র ব্লগিং কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ফাউন্ডার, এডমিন প্যানেল, মডারেটর প্যানেল এবং সকল সদস্য ও সদস্যাদের আমার অন্তরের অন্তরস্থল থেকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন রইল।
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সবাইকে শ্রী শ্রী মা দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা। আজকে আমি আপনাদের সাথে শারদীয়া দুর্গাপূজা পরিক্রমনের ফটোগ্রাফি গুলো শেয়ার করবো। শ্রী শ্রী মা দুর্গাপূজা দেখতে ছোটবেলা থেকেই আমি অনেক পছন্দ করি। আমি যখন ছোট ছিলাম মা-বাবা, দাদু-ঠাকুমা এদের হাত ধরে শ্রী শ্রী মা দুর্গাপূজার সময় বিভিন্ন মন্দিরে গিয়ে পূজা দেখতাম। তারপর একটু বড় হলে বাইসাইকেলে করে বন্ধুদের সাথে শ্রী শ্রী মা দুর্গা পূজার এই চারটি দিনে পুজো দেখার পাল্লা দিতাম। আমার শৈশবের শ্রী শ্রী মা দুর্গা পূজার সময়টা সত্যি অনেক মধুর ছিলো। আজকে আমি "শারদীয়া দুর্গাপূজা পরিক্রমণ-১৫ তম পর্ব" আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তু তে ৷৷
প্রতিবছর শরৎকালের আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে দুর্গাষষ্ঠী, দুর্গাসপ্তমী,মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়াদশমী নামে পরিচিত। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষটিকে বলা হয় "দেবীপক্ষ"। শারদীয়া দুর্গাপূজাকে "অকালবোধন" বলা হয়।
"শ্রী শ্রী মা দুর্গার আগমন ঘোটকে, যার অর্থ ছত্রভঙ্গ"
"শ্রী শ্রী মা দুর্গার গমন ঘোটকে, যার অর্থ ছত্রভঙ্গ"
এই বছর শ্রী শ্রী মা দুর্গার আগমন ও গমন দুটোই ঘোটকে। এটা আমাদের সবার জন্য অশুভ ইঙ্গিত। আমাদের শাস্ত্রে বলা আছে সপ্তমীতে দেবী দুর্গার আগমন এবং দশমিতে গমন হয়। আরও বলা আছে, কোনও বছর দেবীর আগমন ও গমন একই বাহনে হলে তা অত্যন্ত অশুভ।
বর্তমানে তো দেখতেই পাচ্ছেন বিশ্ব রাজনীতির প্রবল আগ্রাসন এবং বিভিন্ন মহামারী ও যুদ্ধ লেগেই আছে। তাই বর্তমান বিশ্ব অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। আমাদের সবার প্রার্থনা মা দুর্গা আমাদের এই সংকট থেকে উদ্ধার করুক। কারণ তিনিই আমাদের একমাত্র ভরসা মহাশক্তি মহামায়া।
কয়েকটি ফটোগ্রাফিকে একত্রিত করে কভার ফটো তৈরি করে নিয়েছি।
এই বছরের শারদীয়া দুর্গাপূজাতে অনেক সুন্দর সময় অতিবাহিত করেছিলাম। আমাদের পাড়ার ইয়াং জেনারেশনরা মিলে আমরা বিজয়া দশমীর একদিন পরে রাজবাড়ী জেলার নলিয়া জামালপুর এ গিয়েছিলাম। এই জায়গাটিতে প্রতিবছর বেশ জাঁকজমকপূর্ণ শ্রী শ্রী শারদীয়া দুর্গা উৎসব পালিত হয়। এবারে পুজার ভিতরে অবশ্য আমাদের বাড়ি থেকে একটি প্রাইভেট কার ভাড়া করে এই জায়গাটিতে পূজা দেখতে গিয়েছিল আমাদের পরিবারের লোকজন। আমাকেও এই জায়গাটিতে পূজা দেখতে যেতে বলেছিলো বাড়ি থেকে কিন্তু আমি পাড়ার ছেলেপেলেরা একসাথে যাবো বলে গিয়েছিলাম না। আমারা বিজয়া দশমীর একদিন পরে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম যে, রাজবাড়ী জেলার নলিয়া জামালপুরে শ্রীশ্রী দুর্গা পূজা দেখতে যাব। আমরা এর আগেও এক বছর নলিয়া জামালপুরে পিকআপ ভাড়া করে পূজা দেখতে গিয়েছিলাম ইয়াং জেনারেশনরা মিলে। তাই এই বছরেও সবাই মিলে একটি পিকআপ ভাড়া করেছিলাম নলিয়া জামালপুরে পূজা দেখতে যাওয়ার জন্য।
শ্রীশ্রী মাতা সতীর দেহত্যাগের খবর যখন নন্দী ও ভৃঙ্গি দেবাদিদের মহাদেবের কাছে এসে বলেন তখন মহাদেবের ক্রোধ প্রচন্ডমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। আর মহাদেবের এই প্রচন্ড ক্রোধের থেকে সৃষ্টি হয় মহাবলী বীর ভদ্রের। মহাবলী বীর ভদ্রের হাজার হাজার নেত্র, হাজার হাজার বাহু, হাজার হাজার মস্তক দেখতে ভয়ংকর। তারপর বীরভদ্র মহাদেবের আদেশ পেয়ে প্রজাপতি দক্ষ রাজার মহাযজ্ঞ বিনষ্ট করা শুরু করে দেয়। তারপর বীরভদ্র প্রচন্ড ক্রোধে প্রজাপতি দক্ষ রাজার মস্তক ছেদন করে।
এ সময়ে মহাযজ্ঞে স্থানে উপস্থিত সকল ঋষি, মহামনি, দেবতারা ভয়ভৃত হয়ে পড়ে। অনেকেই এই যোগ্য স্থান থেকে পলায়ন করে আবার অনেকেই মহাবলী বীর ভদ্রের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তারপর স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু বীরভদ্রের এই ভয়ংকর রূপ থেকে সবাইকে বাঁচানোর জন্য বীরভদ্র কে বধ করেন। তারপর মহাবীর ভদ্রের মৃত্যুর খবর পেয়ে দেবাদিদেব মহাদেব প্রচন্ড ক্রোধে মহাযজ্ঞে উপস্থিত হয়। তখন মহাদেবের ক্রোধ থেকে ব্রহ্মা-বিষ্ণু এবং অন্যান্য দেবতারা মহাযজ্ঞের স্থান ছেড়ে পলায়ন করে। তারপর মাতা সতীর প্রাণহীন দেহকে কোলে তুলে মহাদেব। আজহারী করে
শ্রী শ্রী মাতা সতীর দেহকে কোলে করে মহাদেব এভাবে অনেকদিন বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে থাকে তারপরেও যখন মাতা সতীর দেহে প্রাণ না ফিরে তত তখন মহাদেবের তাণ্ডব নৃত্যের সমগ্র বিশ্বে প্রলয় প্রলয় নেমে আসে। তখন সকল দেব-দেবতা এবং মনুষ্যগণ ভগবান বিষ্ণুর শরণাপন্ন হন। তারপর ভগবান বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র দ্বারা মহাদেবের কোলে থাকা শ্রী শ্রী মাতা সতীর দেহ ছেদন করা করা হয়।
আর শ্রী শ্রী মাতা সতীর দেহের ছেদনের অংশগুলো ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে পড়তে থাকে। এভাবে মাথা সতীর দেহের ৫১ টি অংশ ভারতবর্ষের ৫১ জায়গায় পড়ে। আর এই ৫১ জায়গা কে মাতা সতীর শক্তিপীঠ বলা হয়। বিভিন্ন দেবীর নামে এইসব শক্তিপীঠ গুলোর নামকরণ করা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এসব শক্তি পিঠে গিয়ে পূজা রচনা করে থাকেন।
নলিয়া জামালপুরে বেশ কয়েকটি পূজার প্যান্ডেল করা হয়েছিলো। প্রথম প্যান্ডেলে আমরা ভগবান নারায়নের সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ ছেদন পর্যন্ত দৃশ্য দেখেছিলাম। তারপর এই প্যান্ডেল থেকে বেরিয়ে এসে অন্য প্যান্ডেলে যাওয়ার পূর্বে বেশ দারুণ একটি দৃশ্য দেখতে পেলাম দুইটি প্যান্ডেলের সংযোগস্থলে একটি ছোট পুকুর এবং এই পুকুরের উপর দিয়ে সংযোগ সেতু রয়েছে। আমরা সেতু পার হয়ে অন্য একটি প্যান্ডেলের দিকে গেলাম। আমরা যে, প্যান্ডেলের দিকে যাচ্ছি এই প্যান্ডেলটিতে সতী দেবীর ৫১ টি শক্তিপীট রয়েছে।
এটা হলো বৈদ্যনাথ ধাম শক্তিপীঠ এই শক্তিপীঠটি প্রথম শক্তিপীঠ এখানে শ্রী শ্রী মাতা সতীর হৃদপিণ্ড পড়েছিলো। এই শক্তিপীঠ টি ভারতের ঝাড়খন্ডে অবস্থিত। এই শক্তি পীঠে রয়েছে জয় দুর্গা দেবী। শ্রী শ্রী মাতা সতীর যে ৫১ টি রূপ রয়েছে তার ভিতরে এটি প্রথম রূপ। এই শক্তি পীঠটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র একটি স্থান।
এটা হলো নয়নাতী শক্তিপীঠ এখানে শ্রী শ্রী মাতা সতীর পায়ের নুপুরের অংশ পড়েছিলো। এই শক্তি পিঠের অবস্থান শ্রীলঙ্কার জাফনাতে। শ্রী শ্রী মাতা সতীর শক্তি পীঠের ভিতর শ্রীলঙ্কাতে এই একটি মাত্র শক্তিপীঠ আছে। শ্রীলংকার এই শক্তি পিঠের দেবীর নাম হচ্ছে নাইনাতিভু দেবী। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এখানে প্রতিনিয়ত মায়ের আরাধনা পড়ে থাকেন।
আজকে আমি "শারদীয়া দুর্গাপূজা পরিক্রমণ-১৫ তম পর্ব" আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আবার অন্য একটি পোস্টে "শারদীয়া দুর্গাপূজা পরিক্রমণ- ১৬ তম পর্ব" আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
পোষ্টের ছবির বিবরণ
ডিভাইস | স্যামসাং গ্যালাক্সি এফ-৫৪ |
---|---|
লোকেশন | নলিয়া জামালপুর,রাজবাড়ী |
তারিখ | ২৬শে অক্টোবর ২০২৩ |
প্রিয় বন্ধুরা,
আমি স্টিমিট প্ল্যাটফর্মে আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে প্রতিনিয়ত আমার সৃজনশীলতা দিয়ে ভালো কনটেন্ট শেয়ার করে এই কমিউনিটিকে সমৃদ্ধ করতে চাই এবং উচ্চতার শিখরে নিয়ে যেতে চাই। আমার "শারদীয়া দুর্গাপূজা পরিক্রমণ ব্লগটি কেমন হয়েছে আপনারা সবাই কমেন্টের মাধ্যমে অবশ্যই মন্তব্য করবেন, সামান্য ভুল ত্রুটি অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সুপরামর্শ দিয়ে পাশে থাকবেন। আবার দেখা হবে নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে শীঘ্রই, ততক্ষণে সবাই নিজের খেয়াল রাখবেন সুস্থ এবং সুন্দর থাকবেন এটাই কাম্য করি।
আমি অংকন বিশ্বাস, আমার ইউজার নেম @aongkon। আমি মা, মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমিকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি। আমি হৃদয় থেকে ভালবাসি সৃষ্টিকর্তা ও তার সকল সৃষ্টিকে। আমি বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে সিভিল টেকনোলজিতে বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে লেখাপড়া করছি। আমি ভ্রমণ করতে, গান গাইতে ও শুনতে, কবিতা লিখতে ও পড়তে, আর্ট করতে, রান্না করতে ও ফটোগ্রাফি করতে খুবই পছন্দ করি। "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব "আমার বাংলা ব্লগ" আমার ভালোবাসা। আমার নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে "আমার বাংলা ব্লগে" আমার আগমন। এই স্বল্প মানব জীবনের প্রতিটা ক্ষণ আমার কাছে উপভোগ্য। আমি মনে করি, ধৈর্যই সফলতার চাবিকাঠি।
@aongkon
আসলে সত্যি কথা বলতে ভাই আপনি এখানে এত পরিমাণে তথ্য দিয়েছেন এবং এত পৌরাণিক গল্প আমাদের সাথে এখানে শেয়ার করেছেন, যার অধিকাংশই আমার জানা ছিল না। যদিও আমি দুর্গাপুজোতে পুরো কলকাতা ঘুরে দেখার চেষ্টা করি, তবে এই সমস্ত ব্যাপারগুলো আমি জানিনা, যেটা আপনি এখানে শেয়ার করলেন। আসলে একসময় বন্ধু বান্ধবের সাথে গাড়ি ভাড়া করে আমারও ঘুরে বেড়ানো হতো কিন্তু এখন আর সেই সময়টা হয় না। তাছাড়াও কলকাতায় এত ভিড় থাকে পুজোর সময় যে গাড়ি নিয়ে বেরোনো তো দূরে থাক, হেঁটে পর্যন্ত যাওয়া অনেক সময় কষ্টকর হয়ে যায়। মা দুর্গার প্রতিমা ছাড়াও বেশ কিছু ঠাকুরের প্রতিমা দেখলাম এবং তার পেছনের গল্পগুলো কিন্তু বেশ সুন্দর ছিল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, পোস্টটি এত সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য ।
এবারে দুর্গাপূজাতে অনেক আনন্দ করেছিলাম। আমার পোস্টটি বিস্তারিতভাবে পড়ে সুন্দর গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা।