ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা📚 || 10% Beneficiaries @shy-fox

পৃথিবী আমাদের সৌরজগতের একটি ছোট্ট গ্রহ আর এই সমগ্র সৌরজগৎ ছায়াপথের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। একাধিক গ্রহ নিয়ে যেমন সৌরজগৎ গড়ে ওঠে, তেমনি অসংখ্য সৌরজগৎ মিলে তৈরি হয় একটি ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি। আমাদের সৌরজগৎ যে ছায়াপথের অন্তর্গত তার নাম মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। আমরা যতটা কল্পনা করতে পারি তার চেয়েও অনেক অনেক গুণ বড় আমাদের এই ছায়াপথ।

আমাদের যদি কল্পনা করতে বলা হয় সূর্যের আকার নির্ধারণের জন্য সেটাও আমরা ব্যর্থ হব এবং একটি ছায়াপথ এর তুলনায় একটি সূর্য অতি সামান্য বিন্দু কনা মাত্র। আমাদের সূর্যের চেয়েও বহু বড় অসংখ্য তারকা, নক্ষত্র, নীহারিকা, গ্রহ-উপগ্রহ, সৌরজগৎ এবং মহাজাগতিক সকল বস্তু সমন্বয়ে ছায়াপথ গড়ে ওঠে। একটি আদর্শ ছায়াপথে এক কোটি থেকে এক লক্ষ কোটি তারকা পর্যন্ত থাকতে পারে, মহাজাগতিক বস্তুর দূরত্ব পরিমাপের করতে আমরা আলোকবর্ষ ব্যবহার করি। এক বছরে আলো যত দুরত্ব অতিক্রম করতে পারে তাকে আলোকবর্ষ বলে যা প্রায় ৯.৫ লক্ষ কিলোমিটার। আমরা সকলে জানি, আলো এক সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ দূরত্ব অতিক্রম করে, সেই হিসাবে ছায়াপথের ব্যাস সাধারণত কয়েকশো আলোকবর্ষ থেকে কয়েক হাজার আলোকবর্ষে বিস্তৃত হয়ে থাকে এবং একটি ছায়াপথ থেকে আরেকটি ছায়াপথের দূরত্ব হতে পারে কয়েক লক্ষ থেকে কয়েক কোটি আলোকবর্ষ। আমরা যেখানে বসবাস করি সেই গ্যালাক্সির নাম মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশ গঙ্গা ছায়াপথ, এই গ্যালাক্সির মধ্যে আমাদের সৌরজগৎ খুবই ক্ষুদ্র এবং আমাদের পৃথিবী একটি পরমাণুর সমতুল্য। একদম পরিষ্কার রাতের আকাশে অতি উজ্জ্বল আলোর যে বন্ধনি দেখা যায় সেটি হল আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথ। আগে মানুষেরা বিশ্বাস করতো আমাদের এই গ্যালাক্সির বাইরে অন্য কোন জগতে নেই কিন্তু বিজ্ঞানীরা প্রমান করার পরে একটি উত্তর সবসময় খুঁজতে থাকে... আসলে আমাদের এই মহাজগতে কতগুলো গ্যালাক্সি রয়েছে এবং সেই গ্যালাক্সিগুলো কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে?

আমাদের সূর্য একটি মাঝারি সাইজের নক্ষত্র, এর চেয়েও অধিক বড় এবং বিশালাকৃতি নক্ষত্র ছায়াপথে বিরাজ করে। যেমন, পৃথিবী যেমন সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে তেমনি নক্ষত্রগুলো গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাকহোল ঘিরে ঘুরতে থাকে। তেমনি একটি ছায়াপথ কোন একটি কেন্দ্র কে প্রদক্ষিণ করে ঘুরতে থাকে, আমাদের এই ছায়াপথ তার আবর্তন পূর্ণ করতে প্রায় ২০ কোটি বছর সময় নেয়। বিজ্ঞানের ধারণা করেন পৃথিবীতে যত বালুকণা রয়েছে তার চেয়েও অনেক গুণ বেশি পরিমাণে ছায়াপথ এই মহাবিশ্বে রয়েছে। বর্তমানে আমাদের কাছে হাবল টেলিস্কোপ সহ আরও শক্তিশালী টেলিস্কোপ রয়েছে। এই টেলিস্কোপ দিয়ে যতদূর পর্যন্ত আমরা দেখতে পারি তাকে বলা হয় পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব বা Observable Universe. মহাবিশ্বে প্রধানত দুই ধরণের ছায়াপথ দেখতে পাওয়া যায়, একটি হলো নীল ছায়াপথ, আর একটি হলো লাল ছায়াপথ। যে ছায়াপথে এখনো নতুন নতুন তারা জন্ম হচ্ছে সেগুলো কে নিল ছায়াপথ বলা হয় এবং যেসব ছায়াপথে নতুন তারা উৎপত্তি থেমে গেছে সে গুলোকে বলা হয় লাল ছায়াপথ বলা হয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা মতে প্রায় ২০০ কোটি বছর পর একটি ছায়াপথ নীল ছায়াপথ থেকে লাল ছায়াপথে রূপান্তরিত হতে শুরু করে। ছায়াপথ বিভিন্ন আকৃতিও হতে পারে।

যেমন সূর্যের মৃত্যু ঘটে তেমনি ছায়াপথের মৃত্যু ঘটে। ছায়াপথের মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো ছায়াপথের গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়া, কিন্তু এই গ্যাস কিভাবে শেষ হয় সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনো সঠিক তথ্য দিতে পারেননি তবে অনেকেই মনে করেন গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাকহোল এই গ্যাস শুষে নেয় এবং একটি গ্যালাক্সির মৃত্যু ঘটে।