একটি দুষ্টু মিষ্টি অবুঝ প্রেমের গল্প (পর্ব ২ বা শেষ পর্ব)// ১০% পে-আউট লাজুক খ্যাকের জন্য।
প্রথম পর্বের পর থেকে
শাওন সুজনের এই কথা শুনে খুব রেগে গেল এবং সে সুজনের সাথে কোন কথা না বলে সেখান থেকে চলে গেলো। পরেরদিন খুব অবাক একটা বিষয় হয়েছিল সেটি হল মেয়েটি যখন দেখল তার চাচাতো বোন শাওনকে একটা চিঠি দিয়েছিল প্রেমের প্রস্তাবের, সে ওইটা দেখে ভিতরে ভিতরে একটু হিংসা হয়েছিল। তখন সে পরেরদিন শাওনের সাথে নিজে থেকেই কথা বলা শুরু করলো। তাহলে এখন শুনুন শাওনের সাথে মেয়েটা কি কথা বলেছিল।
শাওন ও মেয়েটি কথোপকথন:
মেয়েটিঃ এই শাওন কেমন আছেন আপনি?
শাওনঃ জি আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
মেয়েটিঃ আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভাল আছি। কালকে আপনি আমার দূরসম্পর্কের চাচাতো বোন যে চিঠিটা দিয়েছিল তার কি করলেন?
শাওনঃ কি আর করব ওটা আমার পকেটের হয়েছে। তাকে যদি সামনে পাই তাহলে তার খবর আছে।
মেয়েটিঃ হাহাহাহা... থাক আর খবর করতে হবে না আপনি চিঠিটা আপনার কাছে রেখে দিন না হয় ফেলে দিন, এ ব্যাপারে আর আপনাকে সামনের দিকে এগোতে হবে না।
শাওনঃ আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যেহেতু বলছেন তা হলে এখানেই থাক।
হঠাৎ একজন ঝাল মুড়িওয়ালা পাশ দিয়ে যাচ্ছে তা দেখে মেয়েটি বলল শাওন আমাকে ঝাল মুড়ি খাওয়ান না। শাওন রীতিমতো এই আচরণ দেখে অবাক। সে আর দেরী না করে ঝাল মুড়িওয়ালাকে ডেকে এনে মেয়েটিকে ঝাল মুড়ি খাওয়ালো। এদিকে সুজন দূর থেকে তাদের এই কর্মকাণ্ড গুলো দেখছে আর ফুলছে। হঠাৎ শাওন সুজনকে দেখতে পেয়ে ডাক দিল। সুজন এসেছে কিন্তু তার মনটা খুব খারাপ। কিরে সুজন কি হয়েছে তোর মন খারাপ নাকি? চল আমরা তিনজনে মিলে একটা খেলা খেলি। তখন সুজন বলল নারে দোস্ত আমার ভালো লাগছে না আমি খেলব না। সুজনের এই কথা শোনার পর মেয়েটি ও সুজনকে রিকোয়েস্ট করল তাদের সাথে খেলা করার জন্য। মেয়েটি বলাতে সুজন ও তাদের সাথে খেলতে রাজি হয়েছে এবং তারা তিনজনে মাঠে দৌড়াদৌড়ি করল কিছুক্ষণ খেলাধুলা করল।
"দেখেন কত ছোট্ট একটা বয়স এখনো খেলার বয়স অথচ তাদের মাঝে একজনের প্রতি আর একজনের আন্তরিকতা ভালোবাসা তা কিন্তু বর্তমান জামানায় আপনি খুঁজে পাবেন না।"
এখানে একটি হাস্যকর বিষয় আপনাদের সামনে বলি সেটি হলো একদিন শাওন মেয়েটিকে উপহার হিসেবে তার গলার একটি চেইন দিয়েছিল। মূলত এই চেইনটি ছিল শাওনের ছোট বোনের। পরবর্তীতে একদিন মেয়েটি ওই চেইন গলায় দিয়ে শাওনের বাসায় শাওনকে ডাকতে এসেছিল। সেইদিনই শাওনের ছোট বোন মেয়েটির গলায় ওই চেইন দেখে চিনতে পেরে যায় এবং সে সাথে সাথে মেয়েটির গলা থেকে জোর করে চেইন ছিনিয়ে নেয়। এই ঘটনায় মেয়েটির অনেক দুঃখ পেয়েছিল এবং মেয়েটি তখন শাওনের বাসা থেকে রাগ করে চলে গিয়েছিল। এই ঘটনাটি দেখে শাওন তো লজ্জায় কি করবে, কি না করবে সে বুঝতে পারছিল না। বোনকে ও কিছু বলতে পারলো না।
এভাবেই বেশ কিছুদিন চলতে থাকলো। এদিকে সেই মেয়েটি যে শাওনকে ভালোবাসার প্রস্তাব এর চিঠি পাঠিয়ে ছিল সে তার চিঠির উত্তর না পেয়ে একদিন শাওনের সামনে এসে হাজির। সে শাওনকে তার চিঠির উত্তর জানতে চেয়ে জিজ্ঞাসা করল, আর বলল কেন সে তার চিঠির উত্তর দেয়নি। তখন শাওন শুধু একটাই উত্তর দিয়েছিল। আর সেই উত্তরটি হলো আমি চিঠির উত্তর দিব কি দিব না সেটা আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার এই ব্যাপারে আমি কাওকে জবাবদিহি করতে পারব না। শাওনের এই কথায় মেয়েটির অনেকটা কষ্ট পেয়ে সেখান থেকে চলে গিয়েছিল এবং সে আর কখনো শাওনের সামনে ভালবাসার দাবি নিয়ে এসে দাঁড়ায়নি। যদিও তারও একটা কারন ছিল।
এদিকে সুজন জানতো না শাওন যে মেয়েটিকে কথায় কথায় আগে ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়েছিল এবং মেয়েটির সাথে অনেক বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। সুজন ঠিক করল শাওনকে কিছু না জানিয়ে মেয়েটিকে সে তার ভালোবাসার প্রস্তাব দিবে। একদিন বিকেল বেলায় সে একটি ফুল নিয়ে মেয়েটির বাসার সামনে গিয়ে হাজির হল আজকে সে মেয়েটিকে তার ভালবাসার কথা জানাবেই। মেয়েটি তখন তার বাসার ছাদে তার ফ্যামিলির সাথে বসে গল্প করছিল। সুজন মেয়েটিকে দেখল এবং সে তাকে ডাক দিল তার কাছে আসার জন্য। এদিকে সুজন অপেক্ষা করছে কিন্তু মেয়েটি তার ভাইদের ভয়ে বাসা থেকে আর বের হলো না। সুজন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সেখান থেকে চলে গেল।
এই ঘটনার পর থেকে মেয়েটি সকালবেলায় মাদ্রাসায় আসা বন্ধ করে দিয়েছিল। শাওন প্রতিদিন মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করে কিন্তু মেয়েটি আর আসেনা। তারপর শাওন সুজন কে জিজ্ঞাসা করল কিরে সুজন মনি যে পড়তে আসে না তুই কি জানিস কি কারনে আসে না। তাতো জানিনা রে দোস্ত তবে আমিতো তোকে না জানিয়ে একটা কাজ করেছি সেজন্য কি আসে না নাকি বলতে পারতেছি না। বলস কি? কি কাজ করে ছিলি তুই? তখন সুজন বলল যে আমিতো কয়েকদিন আগে তোকে না জানিয়ে মেয়েটিকে প্রেমের প্রস্তাব দিব বলে তার বাসার সামনে গিয়েছিলাম। সেদিন মেয়েটি আমার ডাকে সাড়া না দিয়ে বাসায় চলে গিয়েছিল এরপর থেকে আসলে আমি আর কিছু জানিনা। এরপর শাওন সুজনের উপরে একটু রাগান্বিত হল তবে সুজনকে কিছু বলল না এ ব্যাপারে আর। কিন্তু তারা দুজন আবার ঠিক করল একদিন মেয়েটির বাসার সামনে তারা আবার যাবে জানার জন্য কি হয়েছিল।
তারা দুজন পরেরদিন মেয়েটির বাসার সামনে গিয়ে ছিল খোঁজ নেওয়ার জন্য। মেয়েটির পাশের বাসার একটা ছোট্ট মেয়ের মাধ্যমে তারা জানতে পারে যে মেয়েটি তার মাকে নিয়ে হসপিটালে রয়েছে। তার মা নাকি অনেক অসুস্থ। তো তারা দুজন কোন হসপিটালে রয়েছে সেই খবরটা নিয়ে তারা সেদিনই সেখানে চলে গেলো।
এখানে আমি একটা বিষয় বলি প্রেম মানুষকে কতটুকু সাহসি করে তোলে তা আমার পরবর্তী অংশে আপনারা বুঝতে পারবেন। যদিও তারা এখনো ছোট ধরতে গেলে অবুঝ।
তারা হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিয়ে মেয়েটি ও তার মা-কে খুঁজে বের করল। এবং তারা দুজনই হাসপাতালের ঐ ওয়ার্ডে সরাসরি সেখানে প্রবেশ করল এবং মেয়েটির সাথে কথা বলতে শুরু করল। এরপর তারা মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে তার মার। সেইসাথে তারা তার মাকে জিজ্ঞাসা করছে আন্টি আপনি কেমন আছেন? কি হয়েছে আপনার? তখন মেয়েটির মা মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করল এই ছেলে দুটোকে আমি তাদেরকে চিনতে পারছিনা। তখন তারা দুজন বলল আন্টি আমরা আপনি যে এলাকায় থাকেন আমরা সেখানকারই আমরা যে মাদ্রাসায় পড়ি আপনার মেয়েও সেই মাদ্রাসায় পড়ে। আমরা একটা কাজে এদিকে এসেছিলাম তো আর জানতে পারলাম যে আপনি অসুস্থ তাই আপনাকে দেখতে আসলাম এই আর কি। তখন মেয়েটির মা ছেলে দুটির জবাবে উত্তর দিল জী বাবা আমি ভালো আছি তোমরা এসেছ আমি খুব খুশি হয়েছি আমার জন্য দোয়া করিও। আর এখন তোমরা একটু বস। তখন তিনি তার মেয়েকে বলল ওদেরকে কিছু ফল খেতে দাও।
ফল খেতে খেতে মেয়েটিকে বললো ইশারা দিয়ে একটু বাইরে আসবে তোমার সাথে আমাদের কিছু কথা আছে। তখন মেয়েটি বলল না আমি এখন যেতে পারবো না মা খুব অসুস্থ আমি ওনাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারবো না। তখন তারা দুজন একটু মন খারাপ করে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে চলে গেল। পরেরদিন তারা দুজন আবার হাসপাতালে এসে হাজির। আজকের তারা ভিতরে ঢুকতে ভয় পাচ্ছে, কারণ কালকে একবার এসেছে আজকে আবার কি বলবে।
তখন তারা দুইজনে দূর থেকে মেয়েটিকে দেখার চেষ্টা করছিল এবং আস্তে আস্তে তারা জানালার কাছে সে মেয়েটিকে ইশারা দিল বাইরে বের হয়ে আসার জন্য। মেয়েটির আজকে মন মেজাজ ভালো ছিল। তাই সে তাদের সাথে দেখা করার জন্য বাহিরে বের হয়ে আসলো। এরপর তারা দুজন মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করল কি হয়েছে তোমার কেন আর মাদ্রাসায় আসতেছো না। মেয়েটি তাদের উত্তরে বলল আমি আর ওই মাদ্রাসায় কখনোই যাবো না, আর তোমরা দুজন আমার সাথে আর কখনো দেখা করার চেষ্টা করবে না। কারণ ইতিমধ্যে আমার মেজো ভাই এই ব্যাপারটা নিয়ে আমার সাথে খুব রাগারাগি করেছিলো এবং সে আমাকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিয়েছিল এতে করে তোমাদের এই অনেক ক্ষতি হবে। আর এই জন্যই আমি চাইনা আমার জন্য কারো ক্ষতি হোক। তাই আমি তোমাদের প্রতি অনুরোধ করবো আমার সাথে তোমারা দেখা করা বা কথা বলার কোনো চেষ্টাই করবে না। যাও এখন এখান থেকে তোমরা চলে যাও কারণ যে কোন সময় আমার ভাইয়েরা এখানে চলে আসবে। একথা বলেন মেয়েটি তার মায়ের কাছে চলে গেল। আর তারা দুজন হাসপাতাল থেকে চলে আসলো।
এরপর শাওন এই বিষয়টা নিয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছি আর সুজনের উপর রাগ হয়ে দুজনের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। শাওন আরো বেশ কয়েকবার মেয়েটির সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি। মেয়েটির মা সরকারি চাকরি করতো বলে হঠাৎ একদিন চাকরি থেকে ট্রান্সফার হয়ে অন্য এলাকায় চলে যায়। সেই যে চলে গেলো আর কখনো শাওনের সাথে কোনরকম যোগাযোগ হয়নি, শাওন ও আর যোগাযোগ করতে পারেনি। আজ হয়তো শাওনের সংসার হয়েছে ছেলে মেয়ে হয়েছে কিন্তু সে আজও তার প্রথম ভালোবাসাকে ভুলতে পারেনি ভুলতে পারবে ও না কোনোদিন। এখনও তারে চোখে ভেসে বেড়ায় সেই মেয়েটির ছবি। তার কথা মনে হলে এখনো সেই ভেবে ভেবে তার মন খারাপ করে।
বেশ কয়েক বছর পর শাওন এই খবর পেয়েছিলো যে মেয়েটির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। কিভাবে পেয়েছিল জানেন, যেহেতু মেয়েটির দূরসম্পর্কের চাচাতো বোন শাওনের এলাকায় থাকতো একদিন হুট করে তাদের দুইজনের দেখা হয়ে গিয়েছিল। আর সেই দিনই সে মেয়েটি শাওনকে বলেছিল আমার বড় বোনের জন্য আমি আমার ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়েছিলাম কিন্তু আপনি আপনার ভালোবাসাকে ধরে রাখতে পারলেন না। কিছুদিন আগে আমার ওই বড় বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তখন শাওন একথা শুনে সে মেয়েটির সাথে কোন কথা না বলে সেখান থেকে চলে আসে। এর পরের টা আপনারা বুঝে নিবেন।
সমাপ্ত
সত্যি কথা বলতে আমি কখনো এভাবে গল্প লিখি নি।স্টিমের যোগদান করার পর থেকেই বিশেষ করে আমার বাংলা ব্লগে যোগদানের পর থেকে গল্প লেখার চেষ্টা করছি। লেখায় যদি ভুল ত্রুটি থেকে থাকে আপনারা আপনাদের মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে জানাবেন এতে করে আমি নিজের ভুল গুলোকে ধরতে পারবো এবং সেই সাথে আরো ভালো ভালো লেখা গল্প আপনাদেরকে উপহার দেওয়ার উৎসাহ পাবো।
শুভেচ্ছান্তে,@alauddinpabel
আমি আলাউদ্দিন পাবেল।
গাজীপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে।
প্রেমের গল্প টা খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আপনি। আমার খুব ভালো লেগেছে গল্পটা। আমি আমার ব্লগে এটি রাখলাম। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ খুব সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য
আমার গল্পটি ভালোলাগা এবং এটিকে আপনার ব্লগে রেখে দেওয়ায় আমি আপনার নিকট কৃতজ্ঞ। অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আপনাকে এত সুন্দর একটি গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য।
আসলে গত পর্বটা ভালো ছিলো।এ পর্বটা আরো ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর লেখার জন্য।
আমার গল্পের পর্ব গুলো পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার কালকের পর্ব টি পড়ার পর থেকেই আমি পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করছিলা। আপনার লেখা অনেক বেশি ভালো হচ্ছে। আপনার গল্পটা আমার কাছে সত্যি খুব ভাল লেগেছ। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে এত সুন্দর লেখনীতে তুলে ধরার জন্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আপনার অসাধারণ ও গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য।
ভালবাসার গল্প গুলো আমার কাছে অনেক ভালো লাগে ভাইয়া। এই পর্ব টি বুঝার জন্য গতকালের পর্ব টি পড়ে নিয়েছি৷ প্রথম ভালবাসা এতো সহজে ভুলা যায় না। আমার কাছে বেশ লাগলো গল্পটা ভাইয়া। শুভ কামনা রইলো অনেক।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু আমার গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে এইটা জেনে আমি খুবই আনন্দিত। শুভকামনা অবিরাম।