স্মৃতির পাতা থেকে // আমার সাথে ঘটে যাওয়া ভৌতিক ঘটনা (পর্ব ২)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

png_20220822_095958_0000.png

প্রথম পর্বের পর থেকে.....

সেদিন রাতটা ছিল আমাবস্যার রাত চতুর্দিকে গহীন অন্ধকার, কিন্তু আকাশের সাদা আভের কারণে মোটামুটি খুব একটা অন্ধকার মনে হয়নি, কিছুটা হলেও রাস্তাঘাট দেখা যাচ্ছে। আমিও সাহস করে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছি বাজার থেকে মোটামুটি লাইটের কারণে যতটুক আলোতে আসতে পেরেছি ততটুকু ভালোভাবেই এসেছি। কিন্তু যতই সামনের দিকে যাচ্ছি ততই মনের ভিতর কেমন যেন একটা ভয় কাজ করছে, তারপরও বাড়িতে তো যেতেই হবে। এমন একটা পরিস্থিতি ওই মুহূর্তে কোন মোবাইল ফোন ছিল না যে কাউকে ফোন দিয়ে বলবো কিছুটা হলেও এগিয়ে আসতে।

ভয়ে আমার সব যেন ঠান্ডা হয়ে আসছে পুরো শরীর। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে অনেক জোরে হাউমাউ করে কেঁদে দেই কিন্তু কান্না করলে কি হবে আমি তো কান্না করলেন কোন লাভ হবে না, আমাকে বাড়ি যেতেই হবে। তারপরও কিছুটা সাহস নিয়ে আবারো এগিয়ে যাচ্ছিলাম। ঠিক তখন পিছন থেকে কারো হাঁটার একটা শব্দ শুনতে পাচ্ছি। এটা শুনে তো সামনের দিকে যাওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলছি। পেছন দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছিলাম না। আমরা আগে শুনেছিলাম যখন এরকম কোথাও একা একা যাওয়া জন্য যাবে তখন পিছন দিকে যাতে না থাকাই, তাকালে নাকি অনেক ক্ষতি করে ফেলবে। সেই ভয়েও আর পেছনদিকে তাকাচ্ছিলাম না। সামনের দিকে কিছুটা গতি বাড়িয়ে দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম হাঁটতে হাঁটতে সামনে একটা বাড়ি পেলাম সাহস করে দৌড় দিয়ে ওই বাড়িতে ঢুকে পড়লাম।

যদিও বাড়ির লোক আমাকে তেমন একটা চিনে না কিন্তু বাড়িতে ঢুকে তাদেরকে পরিচয় দিতে আমাকে চিনতে পারলো এবং তারা আমাকে বাড়িতে ভিতরে নিয়ে কিছুটা সাহস দিল এবং পানি খেতে দিল আর বলতে লাগলো তুমি এতটুকু একটা বাচ্চা ছেলে তোমার একা একা এভাবে আসা উচিত হয়নি। যাই হোক ঐ মুহূর্তে আমার অবস্থা দেখে ওরাও ভয় পেয়ে গেল। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো ওদের বাড়িতে ওই মুহূর্তে কোন পুরুষ লোক ছিল না, যে আমাকে গিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেবে। বাড়িটা ছিল একটা নতুন বাড়ি শুধু একটা ঘর এবং ওইখানে তারা তাদের তিন সন্তান ও স্বামী স্ত্রীর মিলে ৫ জন থাকত এবং মহিলা স্বামী বাজারে থাকায় তাদেরও এই মুহূর্তে কিছু করা সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু তারপরেও আমাকে তো বাড়িতে যেতে হবে তা না হলে বাড়িতে সবাই অনেক চিন্তা করবে।

ওই মহিলাকে বললাম যে আপনি আমাকে কিছুটা পথ এগিয়ে দেন তাহলে আমি বাড়ি চলে যেতে পারবো। কিন্তু এই মহিলাটিও তেমন একটা সাহস পাচ্ছিল না। তারপরও সে তার বাড়ি থেকে সামান্য কিছুটা দূরত্বে আমাকে এগিয়ে দিল। এরপর আমি আবার হাঁটতে শুরু করলাম। ও হ্যাঁ এখানে বলি আমার নানার বাড়ি থেকে আমাদের বাজারের দূরত্ব তিন থেকে চার কিলো রাস্তা হবে। যদিও দিনের বেলায় হলে শুকনো মৌসুমে ক্ষেতের আইল দিয়ে আমরা এই রাস্তাগুলো খুব দ্রুত যাতায়াত করতে পারি কিন্তু রাতের বেলা হলে রাস্তা ছাড়া যাতায়াত করা হয় না।

যাইহোক আমি আবার হাঁটছিলাম আমার মনে একটা ভয় হচ্ছে কিছুটা সামনে গেলে একটা বাড়ি রয়েছে এবং সেই বাড়ি রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে কিন্তু ওদের রাস্তার ওইখানে দুই তিনটা তালগাছ রয়েছে। আমি চিন্তা করতেছি সেই জায়গাটা নিয়ে। সেই জায়গাটা কিভাবে পার হবো। ওই জায়গাটার কথা মনে করে আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম। তারপরও এগিয়ে যাচ্ছিলাম যেতে যেতে সেই তালগাছ গুলোর প্রায় কিছুটা কাছাকাছি চলে এসেছি, কিন্তু এর পরে আমি আর সামনের দিকে যেতে সাহস পাচ্ছি না।

কি করবো কোন কিছুই চিন্তা করে পাচ্ছি না। আস্তে আস্তে করে হাঁটছি যখন ই আমি তাল গাছগুলোর কাছাকাছি আসছিলাম তখন কি বলবো আমি চোখ বন্ধ করে এমন জোরে দৌড় দিলাম, খালি দৌড়াতেই আছি দৌড়াতেই আছি মাঝে মাঝে একটু চোখ খুলছি রাস্তাটা দেখে আবার দৌড় দিচ্ছি। তবে দৌড়াতে দৌড়াতে অনেক দূর চলে আসলাম। অনেকদূর এসে মনে মনে ভাবতেছি এবারের মত মনে হয় বেঁচে গেলাম কোন কিছু দেখতে হলো না। আপনাদের হয়তো মনে প্রশ্ন জাগবে যে গাছগুলোর নিচে কেন এভাবে চোখ বন্ধ করে দৌড় দিলাম। আসলে এই জায়গাটা খুব খারাপ জায়গা। এখানে তাল গাছগুলোতে নাকি বেশ কয়েকটা জীন থাকে যেগুলো মানুষের নাকি অনেক ক্ষতি করে এবং বড়রাও এই গাছতল দিয়ে যেতে তিন চারজন একসাথে দল বেদে যাতায়াত করে। যদিও আমি দেখিনি তবে আমি শুনেছি, এখানে নাকি অনেক দুর্ঘটনাও ঘটেছিল। এই জায়গাটা নিয়ে আমার খুবই ভয় কাজ করতো সবসময়, এমনকি দিনের বেলায় ও এই গাছতলা দিয়ে যেতে ভয় লাগতো। বেশিরভাগ সময় দিনের বেলায় এই গাছতলা দিয়ে না গিয়ে আমরা একটু দূরে ক্ষেতের আইল দিয়ে চলে যেতাম ভয়ে।

চলবে..........

আমার পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

শুভেচ্ছান্তে,@alauddinpabel

আমি আলাউদ্দিন পাবেল।
গাজীপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে।
তারিখঃ ২২-০৮-২০২২ ইং

Sort:  
 2 years ago 

আপনার কাহিনীটি পড়ে আমার নিজের কাছে খুবই ভয় লাগছে। এরকম পরিস্থিতিতে আমি হলে মনে হয় বাসায় আর ফিরে আসতাম না। খুবই ভয়ংকর একটা কাহিনী লিখেছেন । এরকম অনেক ধরনের ভৌতিক কাহিনী আমি আমার মা বাবার মুখে শুনেছি,। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এরকম ভৌতিক কাহিনী আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে আমার ভৌতিক ঘটনাটি পড়ে অসাধারণ ও গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59446.26
ETH 2613.63
USDT 1.00
SBD 2.41