বুক রিভিউ -সাতকাহন (10% beneficiaries for @shy-fox
কেমন আছেন সবাই? আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি বুক রিভিউ নিয়ে হাজির হয়েছি। আমি যে বইটি নিয়ে বুক রিভিউ করব সেটি হচ্ছে আমাদের সবার প্রিয় সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস সাতকাহন । সাতকাহনের মাধ্যমে আমরা একটি মেয়ের সংগ্রামী জীবন ও একটি মেয়ে হয়ে ওঠার গল্প জানতে পারবো আশা করি আপনারা আমার এই বুক রিভিউ করবেন।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
বুক রিভিউ | সাতকাহন |
---|---|
লেখক | সমরেশ মজুমদার |
ধরণ | উপন্যাস |
প্রকাশনী | নবযুগ |
প্রথম প্রকাশ | ১লা বৈশাখ ১৩৯৭ |
দেশ | বাংলাদেশ |
উপন্যাসের ভাষা | বাংলা |
উপন্যাসের মূল কাহিনী
সমরেশ মজুমদার এই উপন্যাসটি উনিশশো সালের দিকে রচনা করেছিলেন । যদি সময়টা এখনকার মত হত তাহলে দীপাবলি এক অন্য দীপাবলি হয়ে উঠতো। হঠাৎ করে তার জীবনে এক কালো অধ্যায় নেমে আসে । এই ঘন অন্ধকার জগত আসলে কি ছিল? আমরা উপন্যাসের মাধ্যমে জানতে পারি অন্ধকার ছিল তার জীবনে বিয়ের প্রস্তাব আসা । স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের সমাজে এখনও মেয়েদের বোঝা হিসেবে দেখা হয় পরিবারে ।হয়তোবা বাবা-মা মুখে বলে না কিন্তু এখনও তাদের মাথায় কাজ করে মেয়ে হয়ে জন্মেছ বিয়ে হয়ে অন্যের বাড়িতে চলে যাবে ।সেটাই হবে তোমার ঘর ।আজ হোক বা কাল হোক বিয়ে তো করতেই হবে নাকি। তবে তখনকার সময় দীপাবলি ছিল বলে বিয়ের সময় একটু এগিয়ে এসেছিল । সবেমাত্র 11 তে পড়েছে দিপাবলীর বয়স ।তাকে বসতে হল বিয়ের পিঁড়িতে । বাবা মায়ের মত কিংবা পরিবেশ কিংবা বিভিন্ন ঘটনা কি ছিল তাই বইটি পড়ে জানা যাবে আসলে কেন এই অল্প বয়সে মেধাবী ছাত্রীকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল । দীপাবলীর জীবনে বিয়ের ঘটনাটি একটি অন্যরকম কারণ মাত্র একদিনের সংসার অদ্ভুত লাগছে শুনতে তাইনা। আসলে মেয়েদের জীবন এমনই। কোন মেয়ের জীবনে একদিনের সংসার কত বেদনাদায়ক মেয়ে না হলে বোঝা যাবে না।এত বড় জীবনে সদ্য 11 বছরের মেয়ে একদিনের সংসার করে বাড়ি ফিরে আসে বাবা-মায়ের কাছে বিধবা হয়ে বিষয়টা যে একটি মেয়ের জন্য কতটা করুন কতটা মর্মান্তিক তা আপনারা উপন্যাসটি না পরে বুঝতে পারবেন না । আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কত ধরনের কুৎসা, কত ধরনের নীচ মনের অধিকারী মানুষগুলো আমাদের জন্য কি কি নিয়ে বসে থাকে ,কল্পনাও করতে পারি না আমরা। আসলে কত ভাবে তাদের কাছে পণ্য জানা যায় সামান্য কিছু এখানে।আমরা জানবো খুব ছোট আকারে শুরু হয় দীপাবলির বিধবা জীবন ।বৈধব্য জীবনী ঠাকুমার বাধা-বিপত্তি। একটি সদ্য কিশোরী মেয়ের তাকে কঠোরভাবে মানতে হয় বিধবার জীবন ,সন্নাসীর মতো জীবনযাপন করতে শুরু করে । জীবনে বাধা আসে সে নিজেই এগুলো প্রতিবাদ করতে চায়। দীপাবলীর মধ্য আমরা এই একুশ শতকের একটি ছাপ পাবো ।সেই সাথে দেখতে পাব আমি কেন করছি? কেন এটা আমাকে করতে হবে? কেন তুমি আমাকে এটা বলছো এই প্রশ্নটা সে করতে জানে ।এটা সাধারনত ওই সময়কার মেয়ে কখনোই করতো না তাদের ওপর যা চাপিয়ে দেয়া হতো তারা শুধু তাই করত। এবার চলে আসি দীপাবলির চরিত্রটি কেমন ছিল ?তার জীবনে এমন কিছু চরিত্র ছিল যারা তার জীবনটাকে সুন্দর করে তুলেছে ক্ষণিকের জন্য হলেও সত্য সাধন মাস্টার কিংবা তার বাবা-মা মানুষটি কিংবা তার ঠাকুরমা । সেই ঠাকুমা যে ঠাকুরমা তার জীবনকে বাধ্য করেছে তবুও সেই মানুষ গুলো নিয়েই দীপাবলি পেতেন তার জীবনের সুখ ।একটি কথা এখানে ভাববার বিষয় আমরা সংসার করি ,যার সঙ্গে ঘর বাঁধি, যাকে নিয়ে থাকি হতে পারে সে আমার মা ,হতে পারে সে আমার বাবা ,হতে পারে আত্মীয়-স্বজন। সে কি আমার মনের মানুষ কখনো একসাথে থাকলে মনের মানুষ পাওয়া যায় ।না যায় না ।ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাব দীপাবলি মায়ের চরিত্রে যিনি তাঁর এক অন্যরূপ । বিধবা মেয়ে কিভাবে পড়াশোনা চালিয়ে নানা বাধা অতিক্রম করে চলে আসে শহরের দিকে । শহরের জীবন যাপন শুরু করে খুব সাদামাটাভাবে । যেই ঘর ছেড়ে চলে এসেছিল যেই মানুষগুলোর জন্য বিধবার জীবন-যাপন করতে হচ্ছিল ।সেই মানুষগুলোকে জীবন থেকে তাড়িয়ে দেয় নি সেই মানুষগুলোকে নিয়ে সে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। আমরা উপন্যাসটি পড়ার মাধ্যমে দীপাবলীর এমন কিছু লক্ষ্য দেখতে পারি। দীপাবলি অর্জন করতে চেয়ে ছিলেন সমাজে মেয়েদের সমান অধিকার। যে মানুষগুলো যে ক্ষমতার বলে যে অধিকারের বলে তার ওপরে এই ধরনের অধিকার ফলিয়েছে ।নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে ।দীপাবলি ঠিক সেই জায়গাতে যেতে চেয়েছিল এবং ঘটনার পরিক্রমায় আমরা দীপাবলি কে পাবো ঠিক সেই ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে ।কিন্তু ক্ষমতায় দীপাবলিকে আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষ হিসেবে এবং সে নিঃসঙ্গতাকে পেয়েছিল জীবনে যত বার আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল ভালবেসে ছিল কিন্তু কেউই হয়ত নারী বলে তারে ভালবাসাটাকে পর্যাপ্ত মর্যাদা দিতে পারেনি।
কিংবা দীপাবলি যেই ক্ষমতার অধিকারী সেই ক্ষমতাকে পছন্দ করেনি কিংবা সেই ক্ষমতা প্রশ্ন করেননি কিন্তু তাদের চরিত্র কেমন ছিল আমরা খুঁজে পাবো এমন একটি দীপাবলি যে পৃথিবীর সব বাধা অতিক্রম করে উঠে আসে সেই প্রত্যন্ত জায়গা থেকে। তার বিধবা জীবন থেকে নতুন সংসার জীবন ।নতুন সংসার থেকে ভালোবাসার মানুষ আবার ভালোবাসার মানুষ ত্যাগ করা এবং দিনশেষে একটি মানুষকে নিয়ে বেঁচে থাকা ঠিক সেই মানুষটিকে নিয়ে বেঁচে থাকা যে মানুষটি হয়তো বা পরোক্ষভাবে তার জীবনে সব কষ্টের জন্য দায়ী ছিলেন কিন্তু তবুও সে মানুষটিকে দীপাবলি ত্যাগ করেননি । আপনি সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন যদি সমরেশ মজুমদারের এই কালজয়ী উপন্যাস আপনি পড়েন।
শিক্ষা
- জীবনে চলার পথে বিভিন্ন ধরনের ধরনের বাধা আসতে পারে তবে সেই বাধা অতিক্রম করার মন মানসিকতা থাকতে হবে
- জীবনের সর্বোচ্চ বিপদে নিজেকে সামলিয়ে ধৈর্য ধরে থাকতে হবে
- সব ধরনের বিপদের মধ্যেও নিজের লক্ষ্য ঠিক রেখে কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় তার শিক্ষা পাওয়া যায়।
- জীবনের লক্ষ্য অর্জনের যে মানুষগুলো আমাদের সবথেকে বাধা সৃষ্টি করে সেই মানুষগুলোকে নিয়ে যে ভালো থাকা যায় সে শিক্ষা পাওয়া যায় এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে।
ব্যক্তিগত মতামত
ব্যক্তিগত রেটিং ৫/৫
উপন্যাসের লিংক এখানে
ধন্যবাদ
@abidatasnimora
অসাধারণ একটি উপন্যাসের বিচার বিশ্লেষণ করেছেন আপনি।দিয়েছেন ব্যক্তিগত মতামত ও।দীপাবলী তৎকালীন সমাজের দুর্দশাগ্রস্ত নারী সমাজের এক প্রতিনিধি।তার জীবন সংগ্রাম আর বাঁচার তীব্র লড়াই আমাদের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব কে চপেটাঘাত করে।অসাধারণ একটি উপন্যাস সত্যি।দারুন লিখেছেন আপনি।ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার ভাল লেগেছে শুনে খুব ভালো লাগলো দাদা। আপনি রিভিউটি মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
দীপাবলীর জীবন কাহিনী টা যে পড়েনি সে কখনোই এই বইটির মজা বুঝবে না।আসলে এই বইটির লেখার ধরন এবং প্রত্যেকটা লাইন যে এত বেশি ভালো লাগার তা আসলে বলে বোঝানো সম্ভব না। প্রত্যেকটা লাইনে আমাদের সমাজের মেয়েদের সংগ্রাম লুকিয়ে আছে। আমাদের সমাজের মেয়েদের কষ্ট লুকিয়ে আছে যা সমরেশ মজুমদার খুব সুন্দর ভাবে কাহিনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। আপনি আমার খুব প্রিয় একটি বইয়ের রিভিউ করেছেন আপু , অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকে ধন্যবাদ আপু।
আপনার কথার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত। যারা উপন্যাস পড়ে তাদের অন্তত একবার দীপাবলীর জীবন কাহিনী পড়া উচিত অন্তত প্রথম পর্বটি। এই বই পড়া ছাড়া আসলে এই বইয়ের সত্যিকারের মজা বোঝা যাবে না এবং গুরুত্ব উপলব্ধি করা যাবেনা। সম্পূর্ণ একমত।
অসাধরন একটি উপন্যাস আপু । উপন্যাস পড়তে আমার খুবই ভালো লাগে ।উপন্যাসটি নারী সমাজের একটি দুর্দান্ত প্রতিনিধি। বাঁচার লড়াই বাঁচার সংগ্রাম। আপনার উপন্যাস টি দারুন ছিল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি উপন্যাস আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপু
উপন্যাসের বিষয়বস্তু গুলো বর্তমান সমাজে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজন। তবে আপনার লিখা বিচার-বিশ্লেষণ থেকে উপন্যাসের সারাংশ টুকু অর্জন করতে পেরেছি। বর্তমান সমাজেও কিছু কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষ দেখা যায় যারা মেয়েদের বস করিয়ে রাখতে চাই। আমি এই বছরই একটি ঘটনা দেখেছি দেখে আমার মনকে নাড়া দিয়েছিল। একটা মেয়ে সে জেএসসি এসএসসি এবং এইচএসসি তে এ প্লাস পেয়েছে কিন্তু কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না হওয়ার কারণে তাকে আর পড়াশোনা করাবে না ,তাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। গোঁড়ামি এখনো আমাদের মাঝ থেকে সরে যায়নি। জানিনা এই কোরানিক হবে আমাদের মাঝ থেকে উচ্ছেদ হবে। কবে সমাজে নারীদের প্রাপ্ত সবটুকু সম্মান এবং মর্যাদা দেওয়া হবে? বড় অবাক লাগে দিন শেষে। আপু আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ অনেক কিছু জানতে পারলাম আপনি উপন্যাসটি থেকে। আপনাকে আমি 100 তে 100 দিলাম।
ভাই আপনাকে শুধু বলব এই উপন্যাসটি একবার অবশ্যই পড়ে দেখবেন তাহলে অনেক ভালো লাগবে। আর অবশ্যই পোস্ট পাবলিশ করার আগে অথবা কোন কমেন্ট পাবলিশ করার আগে বানানগুলো একবার চেক করে নেবেন। আমরা ভয়েজে টাইপ করে থাকি তাই কিছু ভুলভ্রান্তি হয়ে যায় যেটা একবার পড়ে নিলেই সংশোধন হয়ে যাবে বলে বিশ্বাস করি।
সমরেশ মজুমদারের বেশ কিছু বই আমি পড়েছি। কিন্তু সাতকাহন আসলে পড়া হয়নি।
আপনার লিখনী পড়ে মোটামুটি একটা ধারণা পেলাম। বইটি কিনে পড়তে হবে। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য 💌
পড়ে দেখবেন ভালো লাগবেন ভাইয়া।
ভাইজান এটা আপনাকে পড়তেই হবে। আমার পড়া অন্যতম সেরা উপন্যাস। এটা মিস করা যাবে না। সময়-সুযোগ করে পড়ে নিয়েন।
আমার জীবনে যত উপন্যাস পড়েছি তার মধ্যে এটি প্রথম পাঁচটার মধ্যে অন্যতম সেরা। প্রথম পর্বটি দুইবার পড়েছি আর দ্বিতীয় পর্বটি একবার। এই উপন্যাস পড়ার পরে সমরেশ মজুমদারের প্রতি আমার অনেক বেশি গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল এবং তার লেখাকে আমি ভালবেসে ফেলেছিলাম। দীপাবলি বন্দ্যোপাধ্যায় (মুখপাধ্যায়) হচ্ছে এক প্রতিটি চরিত্র যেটা আমাদের সমাজে অনেকেই রূপায়িত করছেন বা চিত্রিত করেছেন।
আপনি উপন্যাসটি পড়েছেন শুনে অনেক ভালো লাগলো ।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া সত্যি বলছেন দীপাবলি এখনো আমাদের সমাজে বাস করে । এখনো দীপাবলীরা অবহেলিত নিপীড়িত।