কেমন ছিল ১৯৯০ দশকে গ্রামের টেলিভিশন দেখা।
''নমস্কার''
প্রিয় বন্ধুরা,
আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় সকলই ভালো আছেন। আর আমি ঈশ্বরের কৃপায় আমার পরিবার-পরিজনদের নিয়ে ভালো আছি। তাই আজ আপনাদের মাঝে ভিন্ন রকম বিষয় নিয়ে হাজির হলাম। আজকে আলোচ্য বিষয় গ্রামে ৯০ দশকের টিভি দেখা নিয়ে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
Pixabay
আমাদের বাড়িতে ১৯৮৯ সাল থেকে ১টি ২১ ইঞ্চি ন্যাশনাল কোম্পানি সাদা কালো টেলিভিশন ছিল। আর এই ২১ ইঞ্চি সাদা কালো টেলিভিশনটি আমার মা এর বিয়েতে পন হিসেবে দিয়েছিল আমার মামার বাড়ি থেকে। ১৯ টা গ্রামে নিয়ে প্রায় ২০ হাজার জনসংখ্যার ইউনিয়নে তখন ৩টি মাত্র টেলিভিশন ছিল।
ইউনিয়নে ৩টি টেলিভিশনের মধ্যে আমাদের বাড়িতে ১ টি টেলিভিশন। আমাদের আত্মীয় বাড়িরতে আরেকটি টেলিভিশন ছিল। আরেকটি টেলিভিশন ছিল আমাদের ইউনিয়ন ক্লাব ঘরে। আমাদের এখানে ইলেকট্রিসিটি ছিল না বলে একটি বিশাল আকৃতির বড় ১২ ভোল্ট ব্যাটারির মাধ্যমে টেলিভিশন চালানো লাগতো।
টেলিভিশন দেখার জন্য প্রায় নৌকা করে ২০ কিলোমিটার দূরে হবিগঞ্জ শহর থেকে ব্যাটারি চার্জ করে আনা হত । এখনকার মত ডিস লাইন ওয়াইফাই মাধ্যমে টিভি দেখার ব্যবস্থা ছিল না। তখন টিভি দেখার জন্য লম্বা বাঁশের একেবারে উপরিভাগ অ্যালুমিনার এন্টেনা বেধে এন্টেনার কেবল লাইন টিভির সাথে কানেক্ট করা হত।
Pixabay
ঝড় বৃষ্টি হলে তখন আর টিভি চ্যানেল পরিষ্কার দেখা যেত না। বাতাসে যখন বাঁশের উপর অ্যালুমিনার এন্টিনাটি নড়াচড়া করছো তখন টিভি চ্যানেল পরিষ্কার দেখা যেত না। তখন ৪ থেকে ৫ টা টিভি চ্যানেল দেখা যেত। চ্যানেলের নাম গুলি হল- বিটিভি, একুশে টিভি, ন্যাশনাল, দুরদর্শন, আগরতলা এই কয়টা চ্যানেল দেখা যেত।
প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারে একুশে টিভি চ্যানেল এবং বিটিভি চ্যানেলে সিনেমা সম্প্রসারিত হত। আর ঐদিন সিনেমা দেখার জন্য আমাদের ঘরে এবং বাইরে প্রচুর পরিমান লোক হত। সিনেমা দেখার মাঝে বুট, বাদাম, পেঁয়াজু, মুড়ি ইত্যাদি এগুলি খাওয়া হতো।
সিনেমার মাঝে একটু করে আবার বিজ্ঞাপন দিত আর সকলেই তখন খুব বিরক্ত হত। তখনকার সময় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল টিভি চ্যানেলের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল রামানন্দ সাগরের রামায়ণ। ন্যাশনাল টিভি চ্যানেলে রামায়ণ শোটি দেখানো হতো রাতের বেলা তখন প্রচুর পরিমান লোক রামায়ণ দেখার জন্য আমাদের বাড়িতে হাজির হত।
আরো কিছু জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের মধ্যে আলিফ লায়লা দেখার জন্য হিন্দু-মুসলমান সকল শ্রেণীর মানুষ আমাদের বাড়িতে এসে বির করত। কিছু ড্রামা সিরিয়াল ছিল যেমন টিপু সুলতান, রবিনহুড ইত্যাদি দেখানো এইসব গুলির জন্য সব সময় আমাদের বাড়িতে লোকের একটা বির জমে থাকতো তাই টেলিভিশন বারান্দায় রেখে দিত শো চালাকালীন সময় যাতে বাইরে থেকে সবাই দেখতে পারে।
screenshot+collage edited
তখনকার কার্টুন শো এর মধ্যে আমার সব থেকে ফেভারিট শো ছিল B1-B-2 এবং মিনা কার্টুন শোটি। সব থেকে বেশি পরিমাণ মানুষ হত ফুটবল বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়। ১৯৯৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ দেখার জন্য প্রচুর পরিমাণে লোক আসতো আমাদের বাড়িতে। আমাদের বাড়ি বিশাল বড় হবার কারণে টেলিভিশন বাড়ির উঠানে রাখা হতো সবাই যেন দেখতে পারে।
আমাদের গ্রামটি ভাটি অঞ্চল হবার কারণে বর্ষার সৃজনে চারপাশে জল থই থই করতো। কিছু লোক এমনও করেছে এক কিলোমিটার আধা কিলোমিটার জলের উপর দিয়ে সাঁতার কেটে আমাদের বাড়িতে এসেছে ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা দেখার জন্য।
তখনকার সময় কারো বাড়িতে একটা টেলিভিশন থাকা মানে অনেক কিছু বুঝাত। আগেকার যে একটা টেলিভিশন দেখার প্রতি মানুষের আগ্রহ ছিল এখন আর তেমন একটা দেখা যায় না। বর্তমান সময়ে আধুনিক প্রযুক্তি এবং সহজলভ্যতার কারণে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে টেলিভিশন মোবাইল ফোন ওয়াইফাই ডিস লাইন আছে।
Pixabay
কোথায় হারিয়ে গেল সেই পুরনো দৃশ্যপোট গুলো হয়তোবা আর কখনো দেখতে পাবো না। আশা করি সবার ভালো লাগবে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের আলোচনার প্রেক্ষাপট এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ।
আমাদের বাসায় এখনো সাদাকালো টেলিভিশন রয়েছে এলাকা জুড়ে খুবই কম বাড়িতেই এই টেলিভিশন থাকতো।। এটা একদম সঠিক বলেছেন ঝড় বৃষ্টির দিনে টিভি দেখে মজা পাওয়া যেত না খুবই ঝিরঝিরি দেখা যেত।। আপনার পোস্টের মাধ্যমে পুরানো সেই দিনের কথা মনে পড়ে গেল খুবই ভালো লাগলো।।
সত্যিকার অর্থে পুরনো স্মৃতিগুলো যখন মনে হয় তখন মন চায় যদি সে পুরনো স্মৃতিতে আবার ফিরে যেতে পারতাম তাহলে কতই না ভালো হতো কতই না আনন্দ লাগতো। ৯০ দশকে টিভি দেখার মধ্যে যে কতটা আনন্দ ছিল লোকে বলে বুঝানো যাবে না। একসঙ্গে সকলেই বসে টিভি দেখা কত পরিবারের লোকজন আসতো যাদের বাড়িতে টিভি থাকতো টিভি দেখার জন্য। কত মানুষের সাথে দেখা হতো যেন একটা মিলন মেলা হতো যাদের বাড়িতে টিভি থাকতো। সুন্দর মন্তব্যটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
একদম ভাই পুরনো দিনের কথা মনে হলে খুবই আনন্দ লাগে মনে হয় যদি আবারও সেই সময়টা ফিরে পেতাম।। সেই ৯০ দশকে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ছায়াছবি দেখার জন্য কত অপেক্ষা করেছি খুবই আনন্দের ছিল সময়টা।।
আসলে আগে যেসময়ের টেলিভিশন দেখার কথা যদি আপনি এখনকার সময়ের কোন বাচ্চার ছেলে ছেলের সাথে গল্প করেন তারা হয়তো কখনো বিশ্বাস করবে না আসলে এ দিনগুলো হয়তো আমরাও দেখতে পায় নাই খুব বেশি তারপরও আমি যতটুকু দেখেছি আমি ততটুকুই জানি যদি একজনের বাড়িতে টিভি থাকতো তাহলে সে বাড়িতে সবাই একসাথে বলবে আমাকে টিভি দেখার জন্য।
এটা একদম ঠিক যে , সময় কারো বাড়িতে একটা টেলিভিশন থাকা মানে অনেক কিছু বুঝাত।আমাদের পুরো এলাকার মাঝে দুটো টেলিভিশন ছিল ,তার একটা ছিল আমাদের বাড়িতে। ছোট বেলায় আমার মনে পরে যেদিন খেলা কিংবা সিনেমা দেখাতো সেদিন বাড়ি ভরে যেত মানুষে। সবাই টিভি দেখতো আর আমি টিভির পাশে বসে মানুষ দেখতাম। এন্টেনার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম ,আপনার পোস্ট দেখে মনে পরলো।
সেই পুরনো স্মৃতিগুলো যখন মনে পরে তখন মন চায় সেই পুরনো দিনগুলিতে ফিরে যাবার। কত বাড়ির মানুষের এসে জোরো হতো আমাদের বাড়িতে টিভি দেখার জন্য। যখন সিনেমা শুরু হতো তখন বড়রা বলতো চুপ করে বসে থাকার জন্য। যেই বিজ্ঞাপন চলে আসতো তখন সবাই গুন গুন করে কথা বলতে লাগতো। সেই দিনগুলি খুব ভালো ছিল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্যটি করার জন্য।