সূর্যাস্ত!
Hello Everyone,,,
নমস্কার বন্ধুরা! কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক বেশি ভালো আছেন। আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে পোস্ট লিখতে বসেছি। চলুন তাহলে আজকের পোস্টটির মূল বিষয় নিয়ে কথা বলা যাক--
নতুন একটা লেখা লিখতে বসেছি তবে কি লিখবো সেটা নিজেও বুঝতে পারছি না। জীবনে এমন এমন কিছু পরিস্থিতি সামনে আসে যখন নিজের অনুভুতিটা প্রকাশ করার মতো ভাষাও খুজে পাওয়া মুশকিল।
আজ পোস্ট লেখার অনুভুতিটা একটু অন্যরকম। মনে আসছে অনেক কিছুই তবে সেগুলোকে লেখার মাধ্যমে ব্যক্ত করতে পারছি না। আজ লেখার জন্য কোনো শক্তি পাচ্ছি না তবুও কম্পমান হাতে কিছু লিখতে বসলাম।
প্রতিদিনই সন্ধ্যার সময় ঠাকুমার এখানে নাম সংকীর্তন করা হয় তাই আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। আমার জেটু ও আমরা সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমার জেটু ডোল বাজাচ্ছিলো। আমার দাদার মেয়ের অবস্থাটা একবার দেখুন। আমাদের বাড়িতে প্রতিদিনই এমন নাম কীর্তন করা হয় তাই ছোটবেলা থেকেই ওর মধ্যে এই বিষয়গুলো নিয়ে একটা আকর্ষণ জন্মে গিয়েছে।
সবকিছু শেষ হওয়ার পর রাতে খাওয়া শেষ করলাম এবং ভাবলাম যে আজ সকাল সকাল ঘুমাতে যাবো কিন্তু সে গুড়ে বালি। রাতে ঘুমই আর আসতে চায় না। এক পর্যায়ে দেখি রাত ১.৩০ বেজে গিয়েছে তখন ঘুম আসেনি। কিছুক্ষণ পরই বাবা আমাকে ডাক দিয়ে বললো যে ঠাকুমার অবস্থা ভালো না।
যদিও রাত ১২ টার পর পরবর্তী দিন ধরা হয় তবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটা পুস্তক হলো পঞ্জিকা।
আর পঞ্জিকায় রয়েছে, দিন যার রাত তার । সুতরাং, সূর্যোদয় থেকে শুরু করে পরবর্তী সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়কে এক দিন বলে ধরা হয়। সেই হিসাবে ঠাকুমা শনিবার দেহ রেখেছে বলে ধরা হবে।
যদিও আমরা বুঝতে পারছি যে সে তার জীবনের পূর্ণ আয়ুষ্কাল ভোগ করতে পেরে তবুও নিজেদের মনকে শান্ত করা কঠিন। সারারাতে আর ঘুমানো হয় নি। সবাই সকাল হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম।
সকালের শুরুটা হলো প্রচন্ড ঝড় আর বৃষ্টির মাধ্যমে। বেশ কিছু সময় পর পরিবেশ ঠান্ডা হলো এবং তারপর আমরা আমাদের কার্যক্রমগুলো শুরু করে দিলাম।
সকাল ১১ টার দিকে ঠাকুমাকে নিয়ে শ্মশানঘাট এর উদ্দেশ্য রওনা হলাম। দাদুকে হারিয়েছি বেশ কয়েকবছর আগে, তখন আমি ১০ শ্রেণিতে পড়লাম। আর আজ জীবনের আরও নক্ষত্রকে হারিয়ে ফেললাম।
আমার বাবা ও আমার দুইজন জেটু এবং আমি মিলে ঠাকুমা কে বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন যেন ছোটবেলার স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো।
আমার বাবা ও জেটুরা বিধিমতো সকল কাজ আরম্ভ করলো।
ঠাকুমা মারা যাওয়ার কয়েক দিন আগে থেকে কাউকে আর চিনতে পারতো না। তবে আমি একদিন এসে ঠাকুমাকে ডাক দিলাম--
আমি: ও বুনডি ( ছোটবেলা থেকে আমি আমার ঠাকুমাকে বুনডি বলে ডাকি আর সারাজীবন এই বলেই ডেকেছি)।
তখন আমার জেটু ঠাকুমাকে বলল: মা, কে ডাক দিছে বলতো?
ঠাকুমা: কে? তনয় ডাকেছে?
যে মানুষটা কাউকে চিন্তে পারছে না এমনকি আমার বাবা জেটুদেরও চিন্তে পারছে না সে একবার ডাক শুনেই আমাকে চিনতে পারলো।এটা দেখে না চাইতে চোখে জল চলে আসলো। বাড়িতে আমিই শুধুমাত্র ঠাকুমাকে বুনডি বলে ডাকতাম আর কেউ ডাকতো না।
সূর্যের আলোয় যেমন পৃথিবী আলোয় আলোকিত হয় তেমনই ঠাকুমা আমাদের সবাইকে আগলে রেখেছে সারাটাজীবন।
সূর্যাস্তের কারনে যেমন প্রকৃতি অন্ধকারময় হয়ে যায় তেমনই, সূর্যাস্তের ন্যায় ঠাকুমাও চলে গিয়েছে আমাদের জীবন থেকে, এটা এমনই সূর্যাস্ত যে সূর্যের আর কখনও উদয় হবে না!
সত্যি কথা বলতে আপনার পোস্ট পরিদর্শন করতে গিয়ে, খুব খারাপ লাগলো। আপনার ঠাকুমা এ পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়ে চলে গেছেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি। সৃষ্টিকর্তা যেন উনাকে পরকালে ভালো রাখে। আমাদের সবাইকে একদিন যেতে হবে। ধৈর্য ধারণ করুন। ভরসা রাখুন সৃষ্টিকর্তার উপর।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মতামত করার জন্য। আসলে আমাদের হাতে কিছুই নেই। সৃষ্টি কর্তার সকল সিদ্ধান্ত আমাদের মেনে নিতেই হবে।
প্রিয় ভাই, পৃথিবীতে আমরা কেউই চিরস্থায়ী নই। আমাদের সকলকে একদিন পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যেতে হবে। তবে আপনার ঠাকুমা নিশ্চই অনেক ভালো মানুষ ছিলেন জন্য এতদিন পৃথিবীতে সবার সাথে মিলেমিশে বসবাস করেছিলেন। আপনার ঠাকুমার জন্য রইলো অনেক অনেক দোয়া।
ভালো থাকবেন ভাই। মন খারাপ করবেন না।
আপনার ঠাকুমার নামে প্রতিদিন রাতের বেলা সংকীর্তন দেওয়া হয় এতে করে আপনার ঠাকুমা যেন স্বর্গবাসী লাভ করে থাকে ৷ এমন আমরাও করে থাকি ৷
ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷
সবাইকেই একদিন চলে যেতে হবে এটাই নিয়ম। তবে আপনার ঠাকুরমা ১০৬ বছর বেচে ছিলেন এটা শুনে অবাক হলাম। ওপারে ভালো থাকুক উনি।
আপনার সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ে খুব খারাপ লাগলো। আপনার ঠাকুমা এই পৃথিবী থেকে চিরদিনের মত ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আপনার ঠাকুমার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি পরকালে যেন ওনাকে ভালো রাখে।