বাটারফ্লাই ইফেক্ট নিয়ে কিছু তথ্য
কখনো কোন বিষয়কে ছোট করে দেখা উচিত নয়। সামান্য একটি বিষয় থেকেই অনেক বড় বড় ঘটনার সৃষ্টি হয়। সামান্য বিষয়কেও অবহেলা করার সুযোগ নেই। ইংরেজিতে এই বিষয়ে খুব সুন্দর একটা ব্যাখ্যা রয়েছে যার নাম বাটারফ্লাই ইফেক্ট। সেটা নিয়ে আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করব ,শুরু করা যাক।
বাটারফ্লাই ইফেক্ট বলতে মূলত ছোট একটি ঘটনার কারণে খুব বড় একটি ঘটনা ঘটার ব্যাপারটাকে বোঝায়। এটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় কাহস থিওরী বা শৃঙ্খলা তত্ত্বও বলা হয় । উদাহরণস্বরূপ একটি গল্প বলা যায়, ধরুন মিস্টার সোহেল একটি স্কুলের গণিত শিক্ষক। সে একদিন তার স্কুলে ক্লাস নিচ্ছেন। হঠাৎই তার ফোনে কল আসে তার মেয়ে টমেটো কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলেছে। সে স্বভাবতই বিচলিত হয়ে পড়ে। স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে সে বাসায় ফিরে যায়। এদিকে সোহেল সাহেব তার ক্লাস না নেওয়ায়, রাকিবের স্কুল ১ ঘন্টা আগে শেষ হয়ে যায়। ফলে সে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসে। সেদিন ঘটনাবশত তার বাবাও বাসায় ছিলেন। তাই রাকিব তার বাবা এবং মা মিলে ঠিক করেন সিনেমা দেখতে যাবেন। তারা সময় মতন বের হয়ে যান। কিন্তু সিনেমা হলে গিয়ে তারা টিকিট পান না। তাই তারা ঠিক করে রেস্টুরেন্টে খেতে যাবেন। কিন্তু রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পথে তাদের গাড়ির চাকা পাঞ্চার হয়ে যায়। রাকিব আর রাকিব এর মা উবারে করে বাসায় ফিরে যায়। তাদের বাবা পরবর্তীতে গাড়ি ঠিক করে বাসায় নিয়ে আসবেন। কিন্তু বাসায় আসার একটু পরে রাকিবের মায়ের কাছে কল আসে রাকিবের বাবা এক্সিডেন্ট করেছে। এই যে পুরো ঘটনাটি একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখবেন যদি সোহেল সাহেবের মেয়ে টমেটো কাটতে গিয়ে হাত না কাটতো তাহলে কিন্তু রাকিবের বাবার অ্যাক্সিডেন্ট হতো না। বিষয়টা অদ্ভুত শোনালেও ওই ঘটনাটি কিন্তু পরোক্ষভাবে হলেও এই ঘটনাটির জন্য দায়ী।
Source
এই বিষয়টিকেই বলা হয় বাটারফ্লাই ইফেক্ট। এটি সর্বপ্রথম উপস্থাপন করেন, গণিত এবং আবহাওয়াবিদ এডওয়ার্ড লরেঞ্জ। তিনি একটি অধিবেশনে প্রশ্ন রেখেছিলেন, ”ব্রাজিলে যদি কোন প্রজাপতি ডানা ঝাপটায় তাহলে এই কারণে ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা?” অনেকেই প্রথমে এটিকে হাসি ঠাট্টা করে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বিজ্ঞান দেখে যে এটা সম্ভব। আমরা প্রতিনিয়ত ছোট বড় অনেক ধরনের কাজ করি, সকাল থেকে শুরু করে হাজার হাজার ডিসিশন নেই। সামান্য একটি ডিসিশন এর জন্য আমাদের জীবনে ব্যাপক একটি পরিবর্তন ঘটা সম্ভব। হয়তো সেটা সরাসরি আমরা বুঝতে পারবো না, কিন্তু পর্যবেক্ষণ করলে তা অবশ্যই আমাদের সামনে আসবে।
আপনাদের সাথে একটি বাস্তব উদাহরণ শেয়ার করি, ১৯০৬ সালে ভিয়েনা শহরে এক চিত্রশিল্পী একটি ইহুদি কন্যার প্রেমে পড়ে। ছেলেটি তার কুকুরের মাধ্যমে মেয়েটির কাছে চিঠি পাঠাতো। কিন্তু মেয়েটির ধণাঢ্য পরিবার এই গরিব ছেলের সাথে সম্পর্ক করতে দিতে একদমই রাত ছিল না। তারা তার পোষা কুকুরটাকে মেরে ফেলে। ছেলেটি খুবই কষ্ট পায়। একটি সময় সেই ছেলেটি যোগ দেয় সেনাবাহিনীতে। এক ব্রিটিশ সেনা তাকে মেরে যখম করে। তাকে মেরে ফেলার হুকুমও ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সেনার মায়া হয় এবং তাকে ছেড়ে দেয়। সেই ছেলেটি ছিল পরবর্তীকালের ভয়ংকর শাসক এডলফ হিটলার। দ্বিতীয় বিশ্ব চলার সময় যার নেতৃত্বে প্রায় ৬৩ লক্ষ ইহুদি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে ধারণা করেন সেই ইহুদি মেয়ের পরিবারের কারণেই ইহুদিদের প্রতি তার এত ঘৃণা ছিল। আর কি হত যদি ব্রিটিশ সেনা তাকে সেদিন দয়া না করে হত্যা করে ফেলত। পুরো বিশ্বের ইতিহাসই পরিবর্তন হয়ে যেত।
খুবই ইন্টারেষ্টিং একটি কনসেপ্ট এই বাটারফ্লাই ইফেক্ট। আপনার কী এমন কোন কিছু মনে পড়ে। ক্ষুদ্র কোন ঘটনা যার প্রভাব ছিল অনেক বড় ।
বাটারফ্লাই ইফেক্ট নিয়ে বেশ তথ্য আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আসলে এই বিষয়ে আমার কখনো ধারণা ছিল না। তবে আপনার আজকে পোস্ট করে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছি।
এরকম নিত্য নতুন শিক্ষনীয় পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।