বর্তমানে মাদকাসক্তির প্রভাবে যুব সমাজের অবক্ষয়, কারণ ও প্রতিকার।। By shakib6176

কেমন আছেন প্রাণপ্রিয় বন্ধুগণ।আমি আশা করি সবাই ভালো আছেন ও সুস্থ আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। প্রথমে, আমি ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়ার সম্মানিত এডমিন,মডারেটর,ও কমিউনিটির সকল সদস্যদের আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।এই কমিউনিটিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে কমিউনিটির নিয়ম-শৃঙ্খলা, সহযোগীতা,পরামর্শ আমাকে দিন দিন মুগ্ধ করে নিচ্ছে।যার জন্য কমিউনিটির সদস্যদের সাথে নিয়মিত কাজ করে যেতে চাই। আজকে আপনাদের বর্তমানে মাদকাসক্তির প্রভাবে যুব সমাজের অবক্ষয়, কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ।

pexels

মাদকাসক্তি সমাজের একটি মারাত্মক ব্যাধি। যুবসমাজ এ রোগের কবলে পড়ে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আজকের তরুণরাই আগামীর ভবিষ্যৎ, দেশ ও জাতির কর্ণধার। এই তরুণদের সত্য, সঠিক ও সুন্দর করে গড়ে তোলার মধ্যেই দেশের কল্যাণ নিহিত। আর এই তরুণ বা তরুণ সমাজের বিপদ মানেই দেশের অনিবার্য বিপদ। আমাদের সমাজ নানাভাবে বিপর্যস্ত। যুবসমাজ এই রোগের শিকার। সংগ্রাম, প্রতিবাদ ও বিজয়ের ঐতিহ্য রয়েছে এমন তরুণদের ধ্বংস করতে আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্র জেগে উঠেছে। আজকের তরুণরাই আগামী দিনের দেশ ও জাতির কর্ণধার। তরুণরাই পারে শত বাধা অতিক্রম করে দেশকে স্বপ্নের দেশে পরিণত করতে।

pexels

তাই সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর 'আঠারো বছর' কবিতায় বলেছেন-
এই বয়স থেমে থাকে না পথে,
এদেশের বুকে আঠারো নেমে আসুক।
কিন্তু দুঃখজনক ঘটনা হলো যুব সমাজ এখন বিপথগামী হচ্ছে। যুব সমাজের অবক্ষয়ের কারণে জাতি হতাশায় নিমজ্জিত। তারুণ্যের অবক্ষয় জাতির বুকে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছে। সমগ্র সমাজকে অনিশ্চিত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর এ সমস্যার সমাধান না হলে দেশ ও জাতি ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।

মাদকাসক্তি কি:
মাদকাসক্তি হলো বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করে নেশাগ্রস্ত হওয়ার প্রবণতা। নেশা সাময়িকভাবে মনের কষ্ট লাঘব করে, সমস্ত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে, নেশার কারণে প্রকৃত চেতনা দূর করে তাকে নিয়ে যায় আলাদা জগতে। মাদকদ্রব্য হিসেবে ব্যবহৃত অনেক পদার্থ রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ; অ্যালকোহল, গাঁজা, ভাং, আফিম, গাঁজা, চরস, প্যাথেড্রিন, ফেনসিডিল ইত্যাদি। সাম্প্রতিক সময়ে হেরোইন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জীবনের হতাশা, ব্যর্থতা, দুঃখ, কৌতূহল, আসক্তির সূত্রপাত এবং জীবনের অস্থিরতা, নৈতিক মূল্যবোধের অভাব, অসদাচরণ, কালো টাকার উত্তাপ এবং অপরিচ্ছন্ন খরচের পথ যুব সমাজকে বিভ্রান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

pexels

মাদকাসক্তির প্রভাব:
সারা বিশ্বে মাদকাসক্তি ব্যাপক। অনেক উন্নত দেশে মাদকাসক্তির ব্যাপকতা জাতির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অপক্যালিপটিক আসক্তি ব্যাপক। মাদকের বিস্তারের ফলে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ মাদকাসক্তিতে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে তরুণ সমাজের মধ্যে এর বিস্তারের প্রবণতা অনেক বেশি। শিক্ষাজীবনের অনিশ্চয়তা, বেকারত্বের অভিশাপ, দারিদ্র্যের কবলে পড়া এসব কারণে যুবসমাজ ক্রমেই নেশার দিকে ধাবিত হচ্ছে। মাদকাসক্তদের নৈতিক মূল্যবোধের অভাবের কারণে তারা অন্যায় ও অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। মাদক সেবনকারীরা মাদকের উচ্চ মূল্যের ফলে অবৈধ উপায়ে সক্রিয়ভাবে অর্থ উপার্জন করছে। ড্রাগ ব্যবহারের ব্যাপকতা এবং এর নেতিবাচক পরিণতি বিবেচনা করা সহজ।

pixabay

তারুণ্যের অবক্ষয়ের কারণ: আমাদের দেশের যুব সমাজ আজ নানা ধরনের নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার। যুব সমাজের অবক্ষয়ের প্রধান কারণ নিম্নরূপ:

আদর্শ ও মূল্যবোধের অভাব: আমাদের যুব সমাজ বিপদে পড়ার অনেক কারণ রয়েছে। আমাদের দেশের যুব সমাজের বিপথগামী হওয়ার অন্যতম কারণ আদর্শের অভাব। তারা তাদের সামনে আদর্শ কিছু দেখতে পায় না, ভালো কিছু শিখতে পারে না, সৎ পথে চলার অনুপ্রেরণা পায় না। রাজনীতির নামে অবাধে চলছে মিথ্যাচার, সন্ত্রাস ও স্বেচ্ছাচারিতা। সিনেমা, রেডিও-টেলিভিশনের খারাপ প্রভাবে তরুণ সমাজ বিভ্রান্ত হচ্ছে।

খারাপ সংস্কৃতির প্রভাব: আমাদের সমাজে তারুণ্যের অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ বিজাতীয় সংস্কৃতির নামে খারাপ সংস্কৃতির বিস্তার। আজকাল আমাদের চলচ্চিত্রের অশ্লীল নাচ, গান, সংলাপ ক্রমেই গ্রাস করছে তরুণদের। বিদেশী উপসংস্কৃতি ডিশ অ্যান্টেনার প্রভাবে আমাদের যুবসমাজকে আঁকড়ে ধরেছে। তাছাড়া রুচিহীন পোশাকও অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ।

মাদকাসক্তি ও রাজনৈতিক অবক্ষয়: মাদকাসক্তি আমাদের যুবসমাজকে বিভ্রান্ত করেছে। নেশার নীল দংশনে তাদের দংশন করা হচ্ছে। গাজা, হেরোইন, চরস, ফেনসিডিল আফিম, পেথিডিন ও কোকেন প্রতিদিন বাজারে সহজলভ্য এবং যুবসমাজ এগুলো গ্রহণ করায় আমাদের তরুণ সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

মাদকাসক্তি ও রাজনৈতিক অবক্ষয়: মাদকাসক্তি আমাদের যুবসমাজকে বিভ্রান্ত করেছে। নেশার নীল দংশনে তাদের দংশন করা হচ্ছে। গাজা, হেরোইন, চরস, ফেনসিডিল আফিম, পেথিডিন ও কোকেন প্রতিদিন বাজারে সহজলভ্য এবং যুবসমাজ এগুলো গ্রহণ করায় আমাদের তরুণ সমাজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তরুণদের বিপথগামী হওয়ার অন্যতম কারণ রাজনৈতিক অবক্ষয়। রাজনীতির নামে সন্ত্রাস ও দাঙ্গা যুব সমাজকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে।

শিক্ষার প্রভাব: শিক্ষাক্ষেত্রে অব্যবস্থা ও বিশৃঙ্খলা প্রায়ই শিক্ষার্থীদের বিপথে নিয়ে যায়। ভর্তি সমস্যা, পরীক্ষা স্থগিত, ফলাফল ঘোষণা বিলম্ব, অধিবেশন জ্যাম এবং কখনও কখনও ধর্মঘট ইত্যাদি ছাত্রদের মধ্যে মানসিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। তাছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণ, ককটেল পার্টি ও মারামারি হয় সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মনে সবসময় ভয় থাকে। অনেক সময় দেখা যায় গুটিকয়েক সন্ত্রাসী গোটা ছাত্র সমাজকে জিম্মি করে রেখেছে।

বেকারত্ব এবং খেলাধুলা এবং শারীরিক ব্যায়ামের অভাব: বেকারত্ব তরুণদের বিচ্যুতির অন্যতম কারণ। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরি বা কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাই, চুরি, ছিনতাই, চোরাচালান, মাদক ব্যবসাসহ নানা অবৈধ কর্মকাণ্ডে। সুস্থ শরীরেই থাকে সুস্থ মন। এটা মেনে নিলেও খেলাধুলা ও ব্যায়ামের অভাবে আমাদের যুব সমাজ নানাভাবে বিপথে যাচ্ছে।

pexels

যুব সমাজের বিপথগামীতা থেকে মুক্তির উপায় বা প্রতিকার:-
নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হলে যুব সমাজকে বিপথগামী হওয়া থেকে বিরত রাখা সম্ভব;
সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে;

• লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে;
  মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে মাদক পাচারের উৎস ও রুট ধ্বংস করতে হবে;
  শিক্ষা অবশ্যই রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে হবে;
  পারিবারিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা ও মূল্যবোধ পুনরুদ্ধার করতে হবে;
  কর্মসংস্থান খাতকে অপ্রয়োজনীয় অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হবে;
  রাষ্ট্রের উচিত একটি সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করে তরুণদের আকাঙ্খা ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা;
  যুবকদের দুর্বলতা সম্পর্কে প্রথম সতর্কতা অবশ্যই পরিবার থেকে আসতে হবে।

pixabay

রাষ্ট্র, সমাজ এবং ব্যক্তি সমন্বিত প্রচেষ্টা যদি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উপরোক্ত সমস্যাগুলির সমাধানের জন্য যুবসমাজ নিঃসন্দেহে পথ থেকে দূরে সরে যাবে এবং একটি সুস্থ পথে পরিচালিত হবে।
তাই আজকের তরুণরাই আগামীতে জাতি ও দেশকে পথ দেখাবে বলে যুক্তি দেওয়া যায়। তাদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। পরিবার থেকে শুরু করে সামাজিক ও জাতীয় জীবনে তরুণদের জন্য গঠনমূলক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।