মানবিকতার পরিভাষা। The verbiage of humanity.
সকাল থেকে রাত একটা দিনে বাড়ির বাইরে বেরোলে, অথবা কাজের সুবাদে বহু মানুষের সংস্পর্শে আমরা আসি।
সবাই দেখতে মানুষের মতো হলেও,
ভুল ত্রুটি উর্ধ্বে আমরা কেউ নই, তবে অমানবিকতা কখনোই মনুষত্বের পরিচয় বহন করে না।
আমার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা যাক মানবিকতা আর অমানবিকতার প্রভেদ কি ভাবে আমি করে থাকি।
- প্রথমে ঘর থেকে শুরু করি?
ইংরিজিতে একটি প্রবাদ আছে, যার বাংলা অর্থ
ঘরের কথা বলতে তাদের বোঝায় যাদের সাথে আমাদের রোজকার ওঠা বসা, খাওয়া দাওয়া, চলা ফেরা এবং থাকা।
এছাড়াও আত্মীয় স্বজন তো আছেই।
এবার কথা হচ্ছে এই ক্ষেত্রে অসুবিধা হলে, অপছন্দ হলেও সঙ্গ দিয়ে যেতে হয়।
বর্তমানে হয়তো প্রতিবাদ বেড়েছে বলেই বিচ্ছেদ এর পরিমাণ এর সংখ্যাও অধিক হচ্ছে দিনকে দিন।
কথাগুলো আমি আজকে যে লিখছি সেটা আমার ছোটবেলায় বেড়ে ওঠা পরিবেশের সাথে বর্তমান কিছু বৈষম্যের ভিত্তিতে।
এই কমিউনিটিতে কাজ করা সদস্যের অনেকেই জানেন আমার জেঠিমা, যাকে আমার ঠাকুর দাদা সেন্ট্রাল গভর্মেন্ট এর চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন বিয়ের পরে।
আমার জেঠিমা পুলিশ এর বেশ উচ্চপদে চাকরি করতেন এবং আমি সচক্ষে জেলে বন্দি কয়েদি দেখেছি।
তারা এমন খোলা মেলা ভাবে ভিতরে ঘোরাফেরা করে যে, আমি বুঝতেই পারিনি তারা কয়েদী!
যখন জেঠিমার সাথে ফিরছি, আমাকে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন বল তো এরা কারা?
আমি ভেবেছিলাম এরা কাজের লোক, যারা নিজের নিজের কাজ করছে! সত্যিটা জেনে বেশ ভয় পেয়েছিলাম।
কারণ, কিছু মানুষ সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা পূর্ব থেকেই তৈরি থাকে।
যে প্রসঙ্গে বিষয়টি উল্লেখ করলাম সেটা হলো, একই পরিবারে আমার জ্যাঠামশাই ট্রান্সপোর্ট এ চাকরি করতেন।
স্বামী এবং স্ত্রী দুজনেই কর্মরত।
দুজনেরই কাজের সময়ের কোনো ঠিক থাকতো না, আমার জেঠিমা আলিপুর সেন্ট্রাল জেল এ কর্মরত থাকলেও সময় সময় ট্রান্সফার হতো।
আমি আমার জ্যাঠা মশাইকে কোনো সংকোচ ছাড়াই বছরের পর বছর স্ত্রী ফেরার আগেই রান্না সেরে রাখতে দেখেছি।
তারজন্য তার পৌরুষত্ব কে আহত হতে দেখিনি, এক্ ছেলে আর এক মেয়েকে দিব্য সামলে নিয়েছেন!
এটা আমার কাছে মানবিকতার উদাহরণ, যেখানে ভেদাভেদ নেই, আর না আছে তুলনা।
তবে, বেশিরভাগ পরিবার যেখানে স্ত্রী সংসার, সন্তানদের মানুষ করতে ব্যস্ত, আর স্বামী উপার্জনে ব্যস্ত;
সেখানে প্রতিদিন শোনা যায় একটি কথা, সারাদিন কি করো?
মানে সংসার, সন্তান সামলানো এবং তাদের মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তোলার মূল্য অর্থের কাছে নগন্য!
এটাকে বলে অমানবিকতা।
এবার, ঘরের পরেই আসে প্রতিবেশী।
আমি বিশ্বাস করি বিপদে পড়লে সবচেয়ে কাছের যদি কেউ হয় সেটা আত্মীয়র থেকেও আগে প্রতিবেশী।
বিপদ কখনো বলে আসে না, আর ঠিক সেই কারণে কাকে, কার কখন প্রয়োজন হবে এটা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ জানেন না।
আজকাল প্রতিবেশী পকেটের ওজন দেখে মানুষের সাথে ব্যবহার করে, আমি নিজে এরকম একটা ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি এই দূর্গা পুজোর সময়।
আমার অ্যাপার্টমেন্টের এক ব্যাক্তি দেখছি পুজো মাঠের উল্টো দিকে বসে আছেন, আমি দোকান থেকে জিনিষ কিনে ফিরছিলাম।
সেই সময় পৌর সভার লোক চার তলায় উঠে আবর্জনা নিচ্ছিল না, নিচে নেমে দিয়ে আসতে হবে এবং সেক্ষেত্রে কোনো টাকা তারা নেয় না।
তবে উপরে উঠে নিতে হলে, একটা মাসিক বেতন দিতে হয়। সেইভাবেই বেশ কিছু বছর চলছিল, হটাৎ পরিবর্তন হবার ফলে অসুবিধা হচ্ছিল কারণ আমার ফ্ল্যাটে কোনো ব্যালকনি নেই, সাথে আমি থাকি অ্যাপার্টমেন্টের পিছন দিকে।
অন্যদিকে সেই সাত সকালে পৌর সভার গাড়ি আসে, কাজেই সব মিলিয়ে পুরো ঘেঁটে ঘ্!
তাই ওনাকে একটু অনুরোধ করেছিলাম যাতে পৌর সভার ছেলেটি আসলে উপরে আসতে বলেন, কারণ পুজোর মাসের বেতন সহ বোনাস নিয়ে আর আসছে না।
অন্য একজন ছেলেকে পরিচয় দিয়ে যাবে বলে উধাও! যাইহোক, আমার কথার উত্তর উনি যতটা অভদ্র ভাবে দিয়েছিলেন সেটা ভাষায় বিশ্লেষণ সম্ভব নয়, কারণ কথাগুলো আমি লিখলেও অভিব্যাক্তি তো ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়!
কাজেই, এটাও অমানবিকতা আমাকে নজরে, এই সাহায্য করতে ওনার কিন্তু অর্থ খরচ হতো না, তবে এটা আমার কাছে আরো একটি মানুষ চেনার অভিজ্ঞতা।
অনেক সময় আমরা মনে করি বিত্তবান দের সাথেই যোগাযোগ আর সদ্ব্যবহার করা উচিত কিন্তু জানবেন এমন অনেক সময় আসে যখন অর্থ থেকেও পাশে কাউকে পাওয়া যায় না।
সেখানে ব্যবহার আর মানবিকতা কাজে আসে।
এবার চলুন দেখি কাজের জায়গায় কি ধরনের উদাহরণ চোখে পড়ে!
অফিস যাবার এবং ফিরতি পথে বয়স্ক ব্যাক্তিদের দাড়িয়ে থাকতে দেখেও মুখ ঘুরিয়ে বাসের, ট্রেনের সিটে বসে থাকা!
বাচ্চা কোলে মহিলা দাড়িয়ে আছে দেখেও নিজের জায়গা ছেড়ে উঠে না দাড়ানো!
এরপর অফিসে ভালো মনে অন্যের অসুবিধা বুঝে তার কাজের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিয়ে নেবার পরে, যখন নিজের বিপদ আসে তখন তার কাছে গেলে অবলীলায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে না জানিয়ে দিয়ে।
পরিশেষে তাই বলতে চাই, কোনো কিছু নিয়ে বাড়তি অহঙ্কার করা উচিত নয়, জীবন যেখানে অস্থায়ী সেখানে বাকি কোনো কিছু কি সত্যিই মূল্য রাখে?
আমাদের মানবিকতা, ব্যবহার আমাদের চলে যাবার পরেও ,
আমাদেরকে মানুষের মনে বাঁচিয়ে রাখে।
ভেবে দেখবেন কথাগুলো।
আমাদের নিজেদের কার্য্যক্রম কে প্রতিদিন উন্নত করবার প্রয়াস করে যাবার প্রয়াস করে যেতে হবে। ছলনা দিয়ে মানুষ ভোলানো যায়, সৃষ্টিকর্তাকে নয়।
মানুষ মরণশীল। কিন্তু মানুষ মরেও বেঁচে থাকে তার ব্যবহার, মানবিকতায়। মানবিকতা সম্পর্কে অনেক সুন্দর ভাবে আপনি আলোচনা করেছেন।যেখানে আপনার নিজের চোখে দেখা মানবিক এবং অনুমানবিক আচরণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমাদের সকলকে মানবিক হওয়া দরকার। তাহলেই পরিবার, সমাজ এবং দেশ সুন্দর হয়ে উঠবে।
আপনার জ্যাঠা মশাই এর মত যদি প্রত্যেকটা পুরুষ তার পরিবারকে এইভাবে সাপোর্ট করতো। তাহলে হয়তো বা প্রতিনিয়ত সংসারের বিচ্ছেদ ঘটত না। কিংবা সংসারের মধ্যে খুনসুটি লেগে থাকত না। আপনার জ্যাঠা মশাইকে হাজার বার স্যালুট।
সবকিছু ছেড়েই একদিন পরকালে চলে যেতে হবে। কোন কিছু নিয়ে অহংকার করা মোটেও ঠিক না। আসলে আমরা যখন রাস্তাঘাটে যাতায়াত করি। তখন অবশ্যই বৃদ্ধ মানুষ কিংবা বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এমন মানুষদেরকে কিছুটা হলেও সাপোর্ট করা উচিত। আবার মাঝে মাঝে দেখা যায় আমরা কাজ করতে গিয়ে নানা ধরনের অসুবিধায় পড়ে যাই। তখন আমাদের সঙ্গীদেরকে নিজেদের কাজগুলো করে দিতে বলি। তারা যখন আমাদের কাজগুলো করে দেয়। তখন আমাদের মাথায় রাখা উচিত। তারা যদি কখনো বিপদে পড়ে আমরাও যেন তাদের বিপদে এগিয়ে গিয়ে, তাদের কাজগুলো নিজে থেকেই শেষ করে দেই।
সময়ের ঘড়ি বোঝা বড় দায়। কখন কোন দিকে ঘুরে যায় সেটা কেউ জানে না। কিন্তু আমাদেরকে সময় অনেক কিছু শিক্ষা দেয়। হয়তোবা আমরা সময়ের সাথে আবার সেটাও ভুলে যাই। কিন্তু জীবন থেকে যে জিনিসটা একবার চলে যায় সেটা আর ফিরে আসে না। তাই যেটুকুই করি না কেন? অন্তত মানুষের মঙ্গলের জন্য করা উচিত।
Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.
জ্বী দিদি বাংলায় একটি কথা আছে এমন জীবন করিও গঠন মরিলে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন। এর কথার কিন্তু গভীরতা অনেক। একটু খেয়াল করলে কিন্তু আমার এই কথার মর্ম ও গভীরতা বুজতে পারবো। কাউকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে যারা ধনী গরীব দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে সত্যি তারা মানুষের পর্যায়ে পরেনা। যেখানে আজ মরলেই কাল আমার দেহ মাটিতে পরে থাকবে।
যাই হোক আপনার প্রতিটি লিখা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখি এবং জানি। আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবোনা কিন্তু একটি আবদার করবো, এমন লিখা সপ্তাহে একটি হলেও আমাদের উপহার দেবেন। ভালো থাকবেন দিদি। শুভকামনা রইলো।