বিলুপ্ত শৈশবের সাথে বিলুপ্ত আজ ছেলেবেলার বহু অভ্যেস।
প্রিয় বন্ধুরা,
আজকে এক বন্ধুর থেকে জানতে পারলাম তাদের স্কুলে প্রাক্তন ছাত্রদের নিয়ে খেলার আয়োজন করা হয়েছে, পাশাপশি জানতে পারলাম এটা নাকি প্রতি বছরই আয়োজন করা হয়ে থাকে।
কথাটা শুনে মনটা একদিকে যেমন আনন্দে ভরে গেল, সাথে একটা অজানা কষ্ট মনটাকে ঘিরে ধরলো।
সত্যি তো! কবে যেনো নিজের অজান্তেই শৈশব, শৈশবের বন্ধু এবং অনেককিছু পিছনে ফেলে রেখে এসেছি, যার সন্ধান আজও পাইনি।
আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেককেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব, আমিও চেষ্টা করেছি একসময় পুরনো ফেলে আসা শৈশবের কিছু সঙ্গীকে খোঁজার, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাদের কারোর কোনো সন্ধান কখোনো পাই নি।
আর এখন একেবারেই সময় করে উঠতে পারিনা সোশ্যাল মিডিয়াতে থাকার। আগে অফিসের কাজে বাসে, ট্রেনে চোখ কত খুঁজেছে সেই হারিয়ে যাওয়া শৈশবের সাথীদের কিন্তু চোখে পড়েনি কাউকেই।
আজকে সবাই গৃহবন্দী, কারণ হাতে একটা মোবাইল থাকলেই সকল খবর ঘরে বসে পেয়ে যাওয়া সম্ভব।
তাই সময়ের সাথে মানুষের পাশাপশি হারিয়ে গেছে অনেক অভ্যেস, খেলা, খাবার আরো না জানি কতকিছু।
আগে সাত সকালে খবরের কাগজে মুখ রাখার অভ্যেস ছিল, এমনকি কাগজের ঠোঙায় করে কিছু কিনে আনলে তার গায়ে অসমাপ্ত লেখাটাও পড়ার অভ্যেস ছিল।
আর এখন পলিথিনের যুগে, প্রকৃতির সাথে আমরাও নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে ফেলেছি। দূষিত কেবলমাত্র প্রকৃতি নয় আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন ও হয়ে গেছে।
আগে স্কুল থেকে ফিরে নিয়ম করে সন্ধ্যে পর্যন্ত না খেলে বাড়ি ফেরার কথা মাথায় আসতো না, কতবার আমার ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ গোড়া থেকে উঠে গেছে তার ইয়াত্তা নেই।
আর এখনকার ছেলে মেয়ে ধুলো বালি মেখে খেলার কথা তো দুরস্ত, সামান্য একটু পড়ে গেলেই মা, বাবা রে রে করে ওঠেন!
- আসলেই কি সব দোষ সময়ের?
নাকি সময়ের সাথে আমাদের ভুলে যাওয়া মা, বাবার সেই ছেলেবেলার শিক্ষা।
এখন তো কচি কাচাদের হাতে মোবাইল দেখে এবং তাদের এই যন্ত্র পরিচালনার দক্ষতা আমাকে বেশ অবাক করে।
ঘরে বসে খেলা তাহলে কারা শেখাচ্ছেন?
জন্মেই কি কোনো শিশু মোবাইল, ইন্টারনেট সম্পর্কে জেনে যায়?
আসলে আমাদের মা, বাবাদের মতন ধৈর্য্য এখনকার মা, বাবাদের মধ্যে বিলীন।
কাজেই মোবাইল হাতে দিয়ে দায়িত্ত্ব ঝেড়ে ফেলে নিজেদের জীবন এবং নিজেদের ইচ্ছে পূরণেই বেশিরভাগ মানুষ ব্যস্ত।
ঘরের চারদেয়ালে বন্দী শৈশব কখনোই সঠিক লালন পালনের মাধ্যম হতে পারে না।
সেই কুমির ডাঙ্গা, লুকোচুরি, হা ডু ডু, গাদি, খো খো, ডাঙ্গুটি আরো কত খেলা খেলতে দেখিনা এখনকার শিশুদের!
বর্ষায় বাইরে যাওয়া সম্ভব হতো না বলে প্রতিদিন এক এক জনের বাড়ি গিয়ে, ফুল, ফল, নাম, দেশ আবার কখনো চোর, ডাকাত, বাবু ও পুলিশ খেলতাম।
আর এখন তো লুডো পর্যন্ত ছেলে মেয়েরা মোবাইলে খেলে, তার থেকে অর্থ উপার্জনের কারণে! অথচ আমরা যেকোনো খেলা খেলেছি শারিরীক এবং মানসিক প্রশান্তির কারণে।
আমার শৈশবে রামায়ণ, মহাভারত, ঠাকুমার ঝুলি, ঠাকুর্দার ঝুলি, বিক্রম বেতাল, সহ খবরের কাগজে ছাপা বিভিন্ন কমিকস পড়ার অভ্যেস ছিল।
এখন তো সবটাই প্রায় ইতিহাস, জানিনা নিজেরা পুরনো হয়ে গেছি নাকি এই আধুনিকতার নামে নতুন প্রজন্ম পিছিয়ে পড়ছে।
এরপর আসি খাবারের কথায়, এখন অনলাইনে সব অত্যাধুনিক খাবার উপলব্ধ কাজেই বাড়িতে তৈরির ঝঞ্ঝাট কেউ বিশেষ পোয়াতে চান না।
এখন স্কুলের টিফিন বক্স খুললে স্যান্ডউইচ, কেক, চাউমিন ইত্যাদি খুঁজে পাওয়া যায়।
যদিও বেশিদিন মাকে পাইনি, তবুও আমাদের টিফিনে রুটি, তরকারি, বাড়িতে তৈরি চিঁড়ের পোলাও এইসব থাকতো।
এর পাশাপাশি বন্ধুর দল মিলে কোনো একদিন বাড়ি থেকে এক একজন এক একটা জিনিষ নিয়ে গিয়ে টিফিনের সময় আলু কাবলি তৈরি করে সানন্দে খেয়েছি।
স্কুল ফেরার পথে বাড়িতে লুকিয়ে আচার কিনে খেয়েছি, কারণ বাইরের খাবার খাওয়ার অনুমতি সেই সময় একেবারেই ছিল না।
এছাড়াও কারেন্ট নুন,বা লবণ যাই বলুন সেও খেয়েছি প্রচুর। যেহেতু টিফিনে বাইরে যাবার অনুমতি ছিল না, তাই মাঝে মধ্যে মুখ্য স্কুল গেটের নিচের ফাঁকা জায়গা দিয়ে হাত ঢুকিয়ে এক, আধ সময় শক্ত আইস ক্রিম কখনো কমলা রং আবার কখনো গোলাপী রঙের কিনে খেয়েছি, আবার কখনো চুর্মুর (ফুচকা ভেঙে আলু সহযোগে তৈরি টক, ঝাল স্বাদের খাবার)।
আমাদের বলে রাখা ছিল ওইসব আইস ক্রিম একে বারেই খাওয়া যাবে না, কারণ ওগুলো পরিশুদ্ধ জল দিয়ে তৈরি করা হয় না।
অথচ আজকে যখন দেখি মা, বাবার স্বয়ং শিশুদের ফরমায়েশ পূরণের জন্য নিজেরাই অনলাইন থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবার শিশুদের মুখে তুলে দিচ্ছেন, তখন মনে প্রশ্ন জাগে, এরা কি নিজেদের শৈশব এবং সর্বোপরি শৈশবের সমস্ত শিক্ষাই ভুলে গেছেন!
একদিকে আঘাতের ভয়ে বাইরে বের করছেন না, অপরদিকে এত বদভ্যাস! এটা কি কেবল সেই শিশুদের দোষের আওতায় পড়ে?
শৈশব থেকে বাইরে খেলাধুলো না করে যেমন তারা শারীরিকভাবে শক্ত হতে পারছে না, অপরদিকে এই ধরনের খাবার তাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে নির্মম পরিণতির দিকে, এটা কেমন ভালোবাসার সংজ্ঞা?
সুস্থ্ মস্তিষ্ক গড়তে হলে শিশুদের শুরু থেকে গড়তে হবে সবরকম পরিবেশের মধ্যে দিয়ে, সেখানে যদি আমরাই সচেতন না হই তাহলে আর এইসব শিশুদের দোষ দিয়ে কি লাভ?
তাই আজকে বন্ধুর সাথে কথা বলার পরে মনে হলো, আমাদের পরের প্রজন্ম সত্যি কি জানতে পারবে ঘরের বাইরেও একটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ আছে?
বাইরের খাবারের পাশাপশি তারা কি জানার সুযোগ পাবে সেই সব খাবারের যা আজ প্রায় হারাতে বসেছে?
প্রযুক্তির হাত ধরে সময় হয়তো বাচানো যায়, কিন্তু সত্যি কি মানুষের মতো মানুষ হওয়া যায়?
জানিনা কারণ আমি আজও ঘুম পাড়ানি গান যেটা আমার দিদিমা গাইতেন সেটা ভুলিনি।
আন্তরিকতা, ভালোবাসার পরিভাষা এখন আবদ্ধ হয়ে গেছে প্রযুক্তিতে, কাজেই বেচে থাক আমার স্মৃতির পাতায় আবদ্ধ সেই শৈশব, যেখানে অমলিন বন্ধুত্ব ছিল, আর ছিল একসাথে পথ চলার অঙ্গীকার।
Your post has been rewarded by the Seven Team.
Support partner witnesses
We are the hope!
Amiga es verdad ya los niños no juegan como antes ahora están metidos viendo vídeos juego y las relaciones personales sean perdido con la llegada de tecnología.
Los niños de ahora no sabe jugar a la escondida, les fastidia ir a parques lo ven como aburrido prefieren estás en un teléfono o computadora. Me encantó tu publicación. Saludos y bendiciones.🤗
Muchas gracias por compartir su punto de vista, me alegra que se esté concentrando en el compromiso. Actúa de la misma manera y mantén siempre el estatus de tu club. Amor y abrazo.