ভালোবাসা অনুভূতি না অভ্যেস?
ঘড়ির কাঁটায় ভারতীয় সময় রাত ১১ টা বেজে ৪৬ মিনিট যখন আমার লেখাটা শুরু করছি।
আজকে সারাটা দিন শুধু প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে কেটেছে! প্রশ্ন! হ্যাঁ নিজের কাছে প্রতিদিন আমার অনেক প্রশ্ন থাকে, বিশেষ করে যখন কোনো কাজ থাকে না;
একাকিত্ব আর হারিয়ে যাওয়া মানুষদের ঘিরে একাধিক প্রশ্নের ভীড় জমায়েত হয় আমার মনে।
ব্যস্ত রাখি নিজেকে এই প্রশ্ন গুলো থেকে পালাবার অজুহাতে! ব্যস্ত রাখি কারণ অনেক প্রশ্নের সঠিক উত্তর আজও আমি নিজেকে দিতে পারিনি বলে।
আজকের লেখার শীর্ষক নির্বাচনেও রয়েছে একটি প্রশ্ন।
আমরা এই পৃথিবীতে একা আসি এবং একাই চির বিদায় নিয়ে থাকি এটা অপরিবর্তিত সত্য, কিন্তু এই আসা যাওয়ার মাঝে যে সম্পর্ক গুলোর সাথে আমরা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে যাই সেগুলো কি ভালোবাসা না খানিকটা অভ্যেস?
নাকি এই অভ্যেস গুলোই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ?
কোনটা সঠিক আমার সত্যি জানা নেই।
একটা সময় যাদের ছাড়া বাঁচা দুরস্ত এক মুহুর্ত চোখের আড়াল হলেই মন অস্থির হয়ে যেত; অসময় তারাই যখন হাত ছেড়ে এই পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়, তখন সেই স্মৃতি বিজড়িত শূন্যতা বয়ে বেড়ানো সেটাকেও কি অভ্যেস বলবো না ভালোবাসা?
তাদের স্মৃতি পাথেয় করে প্রতিদিন পুরোনোকে নতুন করে গোছানোর প্রয়াস!
স্বপ্নের মধ্যে তাদের সাথে সময় কাটানো, সবটাই বাস্তব মনে হওয়া, তারপর চোখ খুলে সেই শূন্যতাকে ফিরে পাওয়া এই জীবনটাকে কি নামে ডাকা যায় আমার জানা নেই!
সকালে যাকে বিদায় জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো ফিরে এসে তার নিথর শরীরকে আকড়ে চিৎকার করার যন্ত্রণা কি দুর্বিসহ সেই অনুভূতি কি আদেও শব্দের মাধ্যমে বোঝানো সম্ভব?
একরাশ প্রশ্ন যার কোনো সদুত্তর নেই, যা কারোর সাথে ভাগ করলেও সমাধান কেউ করতে পারবে না, এরকম জীবন সংগ্রামের মাঝেও ভালো আছি বলাটা কি এতটাই সহজ?
এই পৃথিবীতে আমার মনে হয় অনেক মানুষ শারীরিক ভাবে বেঁচে থাকলেও মানসিক ভাবে তারা মৃত!
ভালো পোশাক, প্রসাধনী আর মিথ্যে হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে চাপা কষ্ট যা একাই বয়ে চলেছে কোটি কোটি মানুষ।
আজকে লেখার মানসিকতা একেবারেই নেই, তবুও এই প্রশ্নের ভীড়ে জেরবার হয়ে শব্দগুলোকে মুক্ত করাই শ্রেয় বলে মনে হলো।
যদি কেউ কাউকে ভালোবাসে তাহলে কেনো তারা অসময়ে ছেড়ে বিদায় নিয়ে চলে যায় এই পৃথিবী ছেড়ে?
তারা কি দেখতে পায় চলে যাবার পর
যে, তারা মুক্তি পেলেও বেঁচে থেকে কি দুর্বিসহ যন্ত্রণা কাছের মানুষগুলো প্রতিদিন বয়ে বেড়াচ্ছে?
প্রিয় এবং ভালোবাসার মানুষগুলো চলে যাবার পরে যারা রয়ে যায় তারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন এই স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকাকে কি বলে?
ভালোবাসা না তাদের সাথে কাটানো স্মৃতি বয়ে বেড়ানোর অভ্যেস?
প্রতিনিয়ত তাদের সাথে অতিবাহিত কখনো ভালো কখনো মন্দ সময়গুলো শুধুই স্মৃতি হয়ে পড়ে রয়েছে আর বয়ে বেড়াচ্ছে মানসিক ভাবে মৃত সম্পর্কগুলো!
নিজের কাছে সদুত্তর না পেয়ে আজকের লেখাটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম, উত্তর থাকলে মন্তব্যের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না।
ভালো হোক অথবা মন্দ যতোদিন সম্পর্কের মধ্যে আবদ্ধ আছেন চেষ্টা করবেন তাদের আগলে রাখার কারণ অধিক সময় হারিয়ে সবচাইতে সম্পর্কের মূল্য বেশি অনুভব করা যায়, কারণ প্রকৃত সম্পর্ক আজ এই পৃথিবীতে বিরল।
আমার কাছে মনে হয় যে, জন্মের পর থেকে যে ভালোবাসা গড়ে উঠে সেটা হয়তোবা শুধুই ভালোবাসা । এছাড়া আরো যে ভালোবাসাগুলো আছে সেগুলোও যখন জন্মায় কারো প্রতি তখন হয়তোবা শুধুই ভালোবাসা থাকে। যদিও পরবর্তী সময়ে এসে দায়িত্ব, স্বার্থ এসে প্রভাব ফেলে এর মাঝে।
কখনো মানুষ নিজেই কাউকে প্রচন্ডভাবে ভালবাসে আবার কখনো কখনো সেই ভালোবাসার পরিমাণ কমে যায় কিংবা একেবারেই থাকে না।
কিন্তু তারপর ও যখন এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্যরা এসে জুড়ে যায় তখন সেই ভালোবাসা নাই হয়ে যাওয়া মানুষটাকেও ভালোবাসে অন্যদের জন্য।
এটা বেশি হয় বিবাহিতদের ক্ষেত্রে তাদের সন্তানের প্রতি ভালোবাসা থেকে।মানুষ যুগের পর যুগ ভালোবাসা ছাড়াই এক ছাদের নিচে কাটিয়ে দেয় একসাথে ।এটাকে আমি অভ্যাসের মাঝেই ফেলবো।
মৃত্যুর অনুভুতিরকে শব্দে প্রকাশ করা কখনো সম্ভব না। শুধু মৃত্যু কেন আমার মনে হয় কোন অনুভুতিকেই পরিপূর্ণ ভাবে প্রকাশ সম্ভব না।
মাকে যখন হসপিটালের বেডে দিনের পর দিন কস্ট পেতে দেখেছি, একটা আঙ্গুলও নাড়াতে পারতো না তখন কাউকে না বললেও মাঝে মাঝে এটা মনে এসেছে যে মা চলে গেলে এই কস্ট থেকে মুক্তি পেত।
শুনতে খারাপ লাগলেও এই বিদায় জানানোর অনুভুতির মাঝে তার প্রতি ভালবাসাই ছিলো। কারন জানতাম তাকে কোনভাবেই বাচানো সম্ভব না, শুধুই কস্ট পাচ্ছে।
যদি-ও পরমূহুর্তেই এমন ভাবনা মনে আাসায় নিজের প্রতি ঘৃনা লাগতো।আসলে এই অনুভুতিগুলো নিজে যতটা অনুভব করা যায় সেটা শব্দ দিয়ে কখনোই প্রকাশ সম্ভব না।
সুস্থ মানুষকে বাজার করে ফিরে মিনিট দুয়েকের মাঝে মারা যেতে দেখেছি চোখের সামনে।এই ধরনের মৃত্যুকে মেনে নেয়াটা আসলেই অসম্ভব।
তবে যেভাবেই তারা মারা যাক না কেন চোখ বন্ধ করলেই হোক কিংবা সপ্নেই হোক, এখনো তাদের হাসিমুখ কিংবা তাদের সাথে কাটানো যে সময়টা চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেটাকেও কোনোভাবেই শব্দে প্রকাশ সম্ভব না,এটা একান্তই নিজস্ব অনুভুতি।
Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.
TEAM 1
Congratulations! This post has been upvoted through steemcurator04. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags.রেখে দেই। এমনি কি ঐ স্থানে কাউকে এক সেকেন্ড জন্য ও প্রবেশ করতে দেইনি। খুব ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে।এসব লিখা মনের খোরাক যোগায়। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য। ভালো থাকবেন সবসময়।
আসলে এই সকল প্রশ্নের উত্তর হয়তোবা আমার নিজের কাছেও নেই। একদমই ঠিক বলেছেন সকালবেলা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া মানুষটা, যখন সন্ধ্যের আগ মুহূর্তে নিথর লাশ হয়ে ফিরে আসে। তাকে ধরে চিৎকার করে কান্না করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। হাজার প্রশ্ন থাকে তাকে ঘিরে, কিন্তু সেই উত্তরগুলো কখনোই পাওয়া যায় না।
আমি বেশ কয়েকদিন আগেই একটা পোস্ট লিখেছিলাম। যেখানে আমি আমার বড় খালাম্মার সাথে অনেকটা সময় পার করেছি, কিন্তু যখন চোখ খুললাম তখন বাস্তবতা একেবারেই শূন্য ছিল। আমার মনে হয়েছিল, আমি পৃথিবী থেকে অনেকটা দূরে হারিয়ে গেছি।
আজকে আপনার পোস্ট পড়ার পর কথা বলার ভাষাটা ও অনেকটা হারিয়ে ফেলেছি। কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছি না, কত মানুষ এই পৃথিবীতে মৃত হয়ে আছে সেটা হয়তো বা তারাই জানে। উপরে দেখায় ভালো আছি কিন্তু তারা কতটা ভালো আছে সেটা হয়তো কেউ দেখতে চায় না। ধন্যবাদ মনের অনুভূতি গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি আপনি সবসময় ভালো থাকুন।