শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সাথে লড়াই সম্ভব যদি মানসিক শক্তিকে জাগ্রত করা যায়!
লড়াই শব্দটি যদিও বচসা তথা বাক বিতণ্ডার সাথে জড়িত;
কখনো কখনো দেশের অভ্যন্তরীণ অশান্ত পরিবেশকে বোঝাতে গিয়েও শব্দটির প্রয়োগ করা হয় থাকে।
দু'দেশের যুদ্ধের ক্ষেত্রেও শব্দটি প্রযোজ্য!
তবে, ব্যাক্তি জীবনেও কিন্তু শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, মানসিক প্রতিবন্ধকতা এবং আর্থিক প্রতিবন্ধকতা;
একটা, অথবা একাধিক প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রেও শব্দটি আমরা ব্যবহার করে থাকি।
আমরা প্রায় সকলেই দৈনন্দিন জীবন যুদ্ধে কোনো না কোনো লড়াই করে চলেছি।
(Picture clicked from television) |
---|
উপরিউক্ত তিনটি লড়াই কিন্তু কোনো দেশের লড়াইয়ের চাইতে নেহাত কম কষ্টসাধ্য নয়।
এখন প্রশ্ন হলো, এই লড়াইয়ের মধ্যে কোনটি আমাদের সবচাইতে জয় করতে বেগ পেতে হয়?
আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে মানসিক লড়াই জয় করতে পারাটা বোধহয় সবচাইতে কঠিন।
আমার অভিমতের পিছনের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণের পূর্বে জানিয়ে রাখি ব্যাক্তি বিশেষে আমরা ভিন্ন, কাজেই অনেকের মতামত ভিন্ন হতেই পারে।
ব্যাক্তিগত জীবনে হোক অথবা কর্মজীবন, জীবনের যেকোনো প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করা সম্ভব যদি মানসিক শক্তি আমরা হারিয়ে না ফেলি।
আজকে লেখার শীর্ষক নির্বাচন করেছি, একটি ছেলের বাস্তব জীবনকে কেন্দ্র করে।
ছেলেটির নাম শ্রীকান্ত বোলা, গুগল্ থেকে অনেকেই তার জীবনের কাহিনী যদি পড়তে চান, অনায়াসে পেয়ে যাবেন।
জন্মান্ধ একটি ছেলে, যাকে জন্মের পর পর তার বাবা অন্ধ হয়ে জন্মেছে বলে মাটিতে জীবিত পুঁতে ফেলতে গিয়েছিল চাষের ক্ষেতে!
তবে, মায়া হয় বলে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ফেলেন। যদিও পরে তাদের আরো একটি সুস্থ পুত্র সন্তান হয়।
সৃষ্টিকর্তা যদি কিছুর অভাব রেখে থাকেন, তাহলে সেটা কোনো না কোনো ভাবে পূর্ণ করে দিয়ে থাকেন, তবে নিজের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে মানসিক শক্তি দিয়ে জাগ্রত নিজেকেই করতে হয়।
(Small clips of the film taken from YouTube) |
---|
শৈশব থেকেই শ্রীকান্ত অসম্ভব মেধাবী ছিল, বিশেষ করে অঙ্কে! যে ফর্মুলা চোখে দেখে মনে রাখা সম্ভব হতো না যাদের দৃষ্টিশক্তি আছে, শ্রীকান্ত না দেখেই সমস্ত ফর্মুলা দিয়ে মুখে মুখে আর হাতের আঙুলের সাহায্যে সমাধান করে ফেলতে পারতো।
সময়ের সাথে বড়ো হতে হতে তার নিজের ভাই তাকে বলতো পড়াশুনা করে কি হবে? অন্ধ মানুষদের একটাই জীবিকা ভিক্ষা!
তবে, অনেক সময় প্রবাদের কথার মত, বাস্তবের কিছু শিক্ষা মিলে যায়।
আপনের চাইতে পর ভালো, পরের চাইতে জঙ্গল।
শ্রীকান্তের সাথেও এমনটাই হয়, তার এক শিক্ষিকা তার পথ প্রদর্শক এর কাজ করেন।
ছেলেটির লড়াই ছিল একটি বিষয় নিয়ে আর সেটা হলো, তাকে বিশেষ দলে নয়, স্বাভাবিক মানুষের মতো স্বাভাবিক শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে।
এই লড়াইতে তার পরিবার নয়, সঙ্গী ছিল তার একমাত্র শিক্ষিকা।
শ্রীকান্ত বোলার জীবনের উপরে ছায়াছবি হয়েছে, নাম শ্রীকান্ত!
যদি, পারেন অবশ্যই ছায়াছবিটি দেখবেন।
স্পষ্ট ভাষীদের এবং সোজা কথা সোজা ভাবে বলে দেওয়া মানুষগুলোকে কত অপমান, লাঞ্ছনা, তিরস্কার নিতে হয়, সেটাও এই ছেলেটির জীবন থেকে শেখার আছে।
তবে, এই প্রতিবন্ধকতা কোনো মানে রাখে না, যদি মানসিক শক্তি প্রবল হয়।
সে নিজেকে কোনো অংশে কম মনে করতে পারেনি বলেই হয়তো আজকে সে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে।
(Screenshot from YouTube - The real Shrikanth Bolla) |
---|
তার এই সমানাধিকারের লড়াইটা যখন কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছোয় এবং বিপক্ষের উকিল বলেন, যদি আইজ্যাক নিউটন গাছ থেকে আপেল পড়তে দেখতে না পেতেন, তাহলে কি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আবিষ্কার হতো?
শ্রীকান্তের উত্তর দেবার ভঙ্গিমা এবং যুক্তি দেখা তথা গায়ে কাঁটা দেবার মতো ছিল।
সে তার হাতের লাঠি একটি দূরত্ব থেকে মাটিতে ফেলে দেয়!
এরপর, সেই উকিলকে প্রশ্ন করে, আপনি তো দেখতে পান, বলুন আমার লাঠিটি কত গতিতে মাটিতে পড়ল এবং কত সময় লাগলো লাঠিটির মাটি স্পর্শ করতে?
সকলেই অবাক, দুটো প্রশ্নের সঠিক জীবন দিয়ে বিচারক এর কাছে জানতে চেয়েছিল, তার উত্তর সঠিক কি না?
এরকম অনেক উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে গিয়ে আজকের একজন সফল ব্যবসায়ী যাকে সম্মানিত করে গেছেন পূর্ব ভারতীয় রাষ্ট্রপতি এ, পি, জে, আব্দুল কালাম!
এমনকি বিশেষ ক্যাটাগরিতে পাওয়া ব্যবসায়ী পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে, বলেছিল যেদিন আমাকে সাধারণ ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন করতে পারবেন সেদিন এই পুরস্কার আমি গ্রহণ করবো।
ছায়াছবিটি দেখে আমি এতটাই মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম যে, ছবি তোলার কথা মাথায় ছিল না।
তবে, পৃথিবীর কোনায় কোনায় এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা না পাওয়া নিয়ে কপাল চাপরানোর চাইতে নিজের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে সক্ষম হয় মানসিক শক্তি দিয়ে।
হেলেন কেলার এর জীবনী সম্পর্কেও অনেকের হয়তো জানা।
কাজেই পরিশেষে বলবো, নিজের কি নেই সেটা না ভেবে, নিজের মধ্যে কি বিশেষ আছে সেটা খোজার চেষ্টা করলে বোধহয় অনেক যুদ্ধ জয় করা সম্ভব।
Your post has been rewarded by the Seven Team.
Support partner witnesses
We are the hope!
Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.
আপনার সম্পূর্ণ লেখার পরিপ্রেক্ষিতে আমি এটাই বলবো যে পরিশ্রম যদি সফলতার চাবিকাঠি হয় তাহলে এই মানসিক শক্তি পরিশ্রমের আগে থাকবে। কারণ মানসিক শক্তি যার আছে সেই একমাত্র সঠিকভাবে পরিশ্রম করতে সক্ষম।
আপনার লেখাতে উপস্থাপিত মুভিটির নাম আপনার লেখা এবং আপনার কাছেই শুনেছি অনেক বার। এমনকি আমি আপনার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দেখেছিও বটে যেটা নিজের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছে খানিকটা।
আমি শুধু মাত্র এই বাক্যটি তুলে নিয়েছি কারণ এখানে আমাদের জীবনে জড়িয়ে থাকা কয়েকটি শব্দ না বরং সফলতার মূলমন্ত্র উপস্থিত রয়েছে।
মানসিক শক্তি সেটা দুর্লভ যে কারণেই হয়তো বিশ্ব সফলতার ইতিহাসে আমরা হাতে গোনা কয়েকটি নাম দেখতে পারি। যারা ছিল জিরো এই মানসিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেই আমাদের হৃদয়ে অমর হয়ে রয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ম্যাম, আবারো শক্তি সঞ্চয় করার মতো এই দূর্দান্ত শিক্ষনীয় লেখাটি আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য।
ঈশ্বর আপনার সহায় হোন। এভাবেই যেন প্রতিনিয়ত ঈশ্বর আপনার লেখা পড়ার সুযোগ করে দেন আমাদেরকে।