রাতারগুল জলার বন ,যেন বাংলাদেশের ভেতর এক টুকরো আ্যমাজন ফরেস্ট ।

in Incredible India29 days ago (edited)
Black and White Shadow Romantic Photo Collage (3).png

রাতারগুল জলার বন শব্দটার চেয়ে সোয়াম্প ফরেস্ট হিসেবেই বেশি পরিচিত আর এটি সিলেট এর গোয়াইনঘাট এলাকায় অবস্থিত মিঠাপানির এক বন। অনেকেই এই জায়গার সাথে আ্যমাজনের খানিকটা মিল দেখে একে বাংলাদেশের আ্যমাজন বলে থাকে। আমি বেশ কয়েক বছর আগে এক শীতের শেষে গিয়েছিলাম।
যদিও সন্ধ্যা হয়ে আসার জন্য আমার তেমন একটা ঘুরা হয়ে উঠে নাই। যার কারণে এই জায়গার সৌন্দর্য আমার তেমন একটা দেখা হয় নাই। আমি যখন গিয়েছিলাম তখন এই বনের ভেতর দিয়ে পায়ে হাঁটার পথ ছিল ,কিন্তু বর্ষাকালে পুরো এলাকা ডুবে থাকে কোথাও কোমর সমান পানি আবার কোথাওবা আরো বেশি।ইউটিউবে এবং বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক পেইজগুলোতে দেখেছি যে এখানকার বনভূমি বছরের প্রায় সাত মাস পানির নিচে ডুবে থাকে।

20171207_163145.jpg

এই বনের উত্তর দিকে গোয়াইন নদী এবং দক্ষিণে এক বিশাল হাওর অবস্থিত আর এর মাঝখানে রাতারগুল। সিলেট থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে এই বন এর অবস্থান। আমরা সিলেট থেকে এসে নদী পার হয়ে এই অপূর্ব এই বনে পৌঁছেছিলাম।

এই বনটিকে বাংলাদেশ সরকার অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। এটি একটা প্রাকৃতিক বন হলেও সরকার বিভিন্ন প্রজাতির পানি সহিষ্ণু গাছও লাগিয়েছে বলে আমাদের মাঝির কাছ থেকে শুনতে পেয়েছিলাম। এই বনে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের সাপ ,বানর , কাঠবিড়ালি, বেজি,ভোঁদড় ইত্যাদি প্রাণী ছাড়াও পানকৌড়ি, চিল,বালিহাঁস, বক এর মতো বিভন্ন ধরণের পাখি বাস করে।

20171207_165455.jpg

মূলত 'রাতা 'গাছের নাম থেকেই এই বনের নামকরণ করা হয়েছে বলে জানা যায়। এই বনের সবচেয়ে মজার বিষয় হলো যে, আপনি যদি বর্ষায় যান তাহলে এর এক রূপ দেখতে পাবেন আবার শীতের সময় অন্য রূপ। বর্ষায় নৌকা ছাড়া আপনি চলতে পারবেন না আবার শীতের সময় অনেক জায়গাতেই আপনি হেঁটে বেড়াতে পারবেন,যেমন আমি ঘুরেছিলাম। বর্ষায় এই বনের গাছগুলো মাথা বের করে থাকে। কোথাও কোথাও এতো ঘন যে অন্ধকার লাগে।
অনেক জায়গাতে যাওয়ার সময় গাছ সরিয়ে রাস্তা বের করে নৌকা চলার পথ বের করতে হয়। আমার পরিচিত যারা এই বনে বর্ষায় গিয়েছে তাদের কাছে শুনেছি যে অনেক সময় মনের ভেতর একটা ভয় কাজ করে যে গাছ থেকে সাপ এসে পরবে না'তো গায়ের উপর। মাঝখানে একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে পুরো এলাকা ভালোভাবে দেখার জন্য। এখানে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় বর্ষাকাল। এসময় গাছগুলোও ঘন সবুজ হয়ে যায় কিন্তু শীতের সময় লালচে হয় কিছুটা।

20171207_170021(0).jpg

এখনকার মাঝিদের কাছে শুনেছিলাম যে ,আগে এই জায়গাতে কোনো নিরাপত্তা ছিল না,যেকোনো সময় অপহরণ হওয়ার মতো ভয় ছিল। কিন্তু এখন পর্যটকদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পরে তারা এধরণের কাজ থেকে সরে এসে নৌকা ব্যবসাতে যোগ দিয়েছে। আর এসব মাঝিরা তাদের নৌকাই চালান টাকার বিনিময়ে। অবশ্য এর পেছনে সরকারের ভূমিকাও অস্বীকার করা যায় না।
এখন এই জায়গা পুরোপুরিই নিরাপদ। আমি যখন গিয়েছিলাম তখনকার চেয়ে এখন অবশ্য আরো অনেক বেশি পরিবর্তন হয়ে গেছে এই জায়গা। এখন আপনি চাইলে এখানে কায়াকিংও করতে পারবেন।

তবে পর্যটক যেখানে বেশি হয় ,সেখানকার জীবজন্তুদের জীবন ততই খারাপ হতে থাকে এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তাই আমাদের উচিত না এখানে গিয়ে এমন কোনো কাজ করা যাতে তাদের জীবনের উপর খারাপ প্রভাব পরে । এই বিষয়ে যতটা সম্ভব সচেতন থাকা উচিত।


Thank You So Much For Reading My Blog

HfhigaP72YBd6w1Kgyw9eMoDygDx869D1PKa6jG8D9C9MQ5rA8UuUvaGRermEeDs8YYv1jb4TX4QUAAbRoaAJFmmUaGZUojU1gWvH66zbc...wdYfZe5zwHZgv7fSFyfX5YWvwFGCJXq8EuycKeaUaXARJjpb61mUGxLAjp1XsJ6PQbzF28Bu6LQTgryC3MSekzsBvnPpE3TAcMAMTMQbf9uvFuTHezySGMDKr6.png

Sort:  
Loading...
 27 days ago 

আজকে আপনার পোস্ট পরিদর্শন করতে এসে, আপনার পোষ্টের টাইটেল দেখার পর আমি অনেকটা অবাক হওয়ার মতো অবস্থা। কেননা আমি এই প্রথম আপনার পোস্টে রাতারগুল জলার বন সম্পর্কে জানতে পারলাম, এবং জানতে পারলাম এই বন কোথায় অবস্থিত। আপনার ফটোগ্রাফি দেখেই বোঝা যাচ্ছে এই বন অনেকটা ঘন এবং অনেকটা ভয়ংকর। ধন্যবাদ অজানা এই বন সম্পর্কে আমাদের সাথে আলোচনা করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 27 days ago 

সিলেটে একটি মিঠা পানির বন রয়েছে। নাম শুনেছি অনেক আগেই কিন্তু যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। আপনার পোস্ট পড়ে বুঝতে পারলাম এই বনে বর্ষার সময় ঘুরতে গেলে নৌকায় ঘুরতে হবে।
আবার শীতের সময় গেলে পায়ে হেঁটে ঘুরতে হবে। মানে দুই সময়ে গেলে দুই রকম প্রকৃতি দেখতে পারবো।
আপনার তোলা ফটোগ্রাফি গুলো খুব সুন্দর ছিল।
বাংলাদেশের এই ছোট্ট অ্যামাজন বনের রহস্যজনক কথা নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 27 days ago 

আসলে আমাদের অনেক জায়গার নাম জানা থাকলেও খুব একটা যাওয়া হয় না বিভিন্ন রকমের সমস্যার কারনে। আর এই কারনের মাঝে সবচেয়ে বড় কারন হলো ইচ্ছে। তারপরে বাকী আর সব কারন।
এই বনে বর্ষায় গেলে নৌক ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই বেড়ানোর।আর শীতে বনের ভেতর দিয়ে সরু সরু পায়ে চলা রাস্তা দিয়ে হাটা যায়।
আমরাতো রাত হয়ে যাচ্ছিল বলে দ্রুত বন থেকে বের হয়ে এসেছিলাম
আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো।
ভালো থাকবেন সব সময়।
শুভ কামলা রইলো আপনার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.12
JST 0.028
BTC 65054.60
ETH 3558.38
USDT 1.00
SBD 2.35