বিলুপ্তির পথে একসময়ের জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক বিনোদন মাধ্যম সার্কাস।

in Incredible India10 months ago
কথিত আছে যে,ধামরাই এর রথযাত্রা ভারতীয় উপমহাদেশের মাঝে দ্বিতীয় বৃহত্তম। এই রথের খুব কাছাকাছিই আমার বাড়ি আর ছোটবেলাও এখানেই কেটেছে। রথের মেলা প্রায় মাসখানেক স্থায়ি হয়।এই মেলা চলাকালীন সময়ে সারাক্ষণ কান খাঁড়া করে রাখতাম ঘন্টার আওয়াজ পাওয়া যায় কিনা।কিন্তু মেলা থেকে ভেসে আসা মাইকের শব্দের মাঝে এই ঘন্টাধ্বনি শুনতে পাওয়াটা বেশ কঠিনই ছিলো তারপরও এর জন্যই অপেক্ষা করতাম।এই শব্দ হাতির গলায় ঝোলানো ঘন্টা থেকে আসতো। শব্দ পেলেই হাতি দেখার জন্য দৌড় দিতাম।কখনো একটা হাতি থাকতো আবার কখনো দুটো আর সাথে বাচ্চা থাকলে সেটা আমাদের জন্য বোনাস ছিলো।কখনো কখনো আশেপাশের বাড়িতে কলাগাছ খেতে আসতো আবার কখনো আমার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে বংশীনদীতে গোসল করতে যেত।আমরা বাচচারা হাতির পেছনে পেছনে হাঁটতাম। কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখতাম যদি কোন কারনে হাতি যদি পেছন ফিরে তাহলে যেন পালাতে পারি।


pixabay

আর রথের পাশেই যাত্রাবাড়ির বিশাল মাঠে পুতুল নাচ,সার্কাসের বিশাল লাল,হলুদ,কমলা, নীল ও সাদা রঙের বিশাল তাবু থাকতো।পাশেই থাকতো নাগরদোলা যাকে আমরা স্থানীয় ভাষায় চড়কগাছ বলতাম। এখনো এগুলো নেই যে এমন না। এখন পুতুল নাচের আসর হয় কিনা আমার জানা নেই কিন্তু কয়েকমাস আগে রথমেলা চলাকালীন সময়ে আমি যাএাবাড়ির মাঠের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সার্কাসের তাবু দেখেছি। তখন সেই হাতিগুলোর কথা চিন্তা করছিলাম যে আগে ওদের খাওয়ার কোন অভাব ছিল না। কলাগাছ ছিলো অনেক বাড়িতেই।তারা সেসব কলাগাছ ওদের খেতে দিতো আবার অনেক সময় কিছুটা জোড় করেই খেতো, তাতে অবশ্য মাহুতের গোপন সায় ছিলো। আগে যেখানে গোসল করতো সেই বংশীতেও এখন আর আগের মতো পানি নেই,শুকিয়ে গেছে।প্রায়ই রাস্তায় চলার সময় হাতি চোখে পরে যাদের দিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে টাকা আদায় করে যাকে বলা যায় ওদেরকে দিয়ে একপ্রকার ভিক্ষা করানো হচ্ছে।


pixabay.

মাঝখানে শুনেছিলাম যে কয়েকবছর রথের মেলায় সার্কাস বন্ধ ছিলো।অথচ সার্কাস ছাড়া আমার কাছে ধামরাই এর রথ চিন্তা করাটাও কঠিন।শুধু যে ধামরাইতেই এমনও না, লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী বিনোদন মাধ্যমগুলো এখন গভীর অস্তিত্বসংকটে ভুগতেছে। বহু প্রাচীনকাল থেকে পুতুলনাচ, যাত্রাপালা বা সার্কাস এর মতো বিনোদনের জিনিসগুলো গ্রামীণ জনসাধারণের চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি লোকজীবনের সৃজন ও মননচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এখন তা বিলীয়মান।
দেশের বিভিন্ন জায়গাতে যাত্রাপালা ও পুতুলনাচ নিয়মিত নাহলেও কিছুটা থাকলেও সার্কাসের অবস্থাই বেশি খারাপ। এর পেছনের কারন হিসেবে বলা চলে আয়োজনে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, প্রশিক্ষণ না থাকা এবং আরও নানান কারণে খুব জনপ্রিয় এই সাংস্কৃতিক মাধ্যমগুলোর নিয়মিত কার্যক্রম প্রায় বন্ধের পথে।


pixabay.

অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অনিবার্য প্রয়োজনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নাম ও মূল আঙ্গিকে বিকৃতি ঘটিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। যার কারনে এটা লোকসানের পথে চলে যাচ্ছে।সার্কাস চাইলেই যে কেউ করতে পারে না বা এতে অংশ নিতে পারে না এর বিভিন্ন কসরতের জন্য দক্ষ জনবল প্রয়োজন। আর এজন্য তাদের নিয়মিত অনুশীলন সবচেয়ে জরুরি।


pixabay

এই কারণে দল ছেড়ে কেউ অন্য পেশায় চলে গেলে ফের তার সার্কাসে ফিরে আসা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ সার্কাসের দলে থেকে ভালো কোন জীবিকার কোন নিশ্চয়তা নেই। তাই অনেকে দল ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দিয়েছেন । শুধু এর সাথে জড়িত দক্ষ মানুষই না সার্কাসের জন্য হাতি, বাঘসহ নানা রকম প্রাণীও প্রয়োজন। বন্য প্রানী রক্ষা আইন ক্রমশ কঠিন হবার কারনে এসব প্রাণী রাখার অনুমোদন পাওয়াও খুব কঠিন হয়ে গেছে ।


pixabay.

এর সাথে যোগ হয়েছে প্রযুক্তি ও বিভিন্ন বিনোদন মাধ্যমের আগ্রাসী থাবা।এখন মানুষ ঘরে বসেই বিভিন্ন উন্নত মানের অনুষ্ঠান দেখতে পারে।যার কারনে এর জনপ্রিয়তা একদম তলানি গিয়ে ঠেকছে। এসকল কারণেই একসময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় সার্কাস আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছে । এখন সারাদেশে হাতেগুনা কয়েকটা দল নামেমাত্র টিকে আছে।

একসময়ের জনপ্রিয় এই সংস্কৃতিক মাধ্যমগুলোকে আমাদের বাঁচাতে হবে।এরজন্য দেশের সরকার ও প্রশাসনের সাহায্য প্রয়োজন।


◦•●◉✿ Thanks Everyone ✿◉●•◦

image.png

Sort:  
Loading...
 10 months ago 

Amiga el circo es un centro de entretenimiento que un va y nuestra mente se pone a volar de tanta fantacia, los animales, lo trapecista y los payaso. Me encantó tu historia me hizo recordar mi infancia. Saludos y bendiciones.🤗

 10 months ago 

@thairisdc(65)
more or less the memories of the circus are related to every kid. I'm glad it made you feel connected to your childhood.
thank you so much

 10 months ago 

@sayeedasultana আপু আপনি একটি বাস্তব ধমী পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন।আগে আমাদের এলাকায় পৌষমাসে পুরো মাস জুড়ে মেলা হতো।আর ঐ মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল সার্কাস। ছোট বড় সব বয়সের মানুষের ভিড় জমত সার্কাস দেখার জন্য।সেই ঐতিহ্য বাহী সার্কাস এখন দেখাই যায়না। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 10 months ago 

@sairazerin(52)
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আমার সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাল থাকবেন

 10 months ago 

আপনার পোস্ট পড়ে ছোটবেলার কথা মনে পড়লো। ছোটবেলায় রওশন সারকাস দেখতে যেতাম নানা বাড়িতে। অনেক দিন পর সারকাসের কথা মনে পড়ে গেল

 10 months ago 

@mukitsalafi(53)
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আমার পোষ্ট পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাল থাকবেন

আপনাদের ধামরাইয়ের রথের কথা শুনে শ্রীরামপুর মাহেশের রথের কথা মনে এলো। এই রথটি ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম এবং বাংলায় প্রাচীনতম রথ। এই রথ প্রথম টানা হয় ১৩৯৬ খৃষ্টাব্দে।

আপনার মেলার বর্ননা আমার ছেলেবেলার কথা মনে করিয়ে দিল।

সার্কাসে যেহেতু মূল আকর্ষণ জীব জন্তু তাই সার্কাসও বিলুপ্ত হয় যাচ্ছে।

 10 months ago 

@impersonal(58)
সার্কাস আসলে কমবেশি আমাদের অনেক এর স্মৃতির সাথেই জড়িয়ে আছে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আমার পোষ্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাল থাকবেন

 10 months ago 

খুব সুন্দর একটি টপিক সিলেক্ট করে আলোচনা করার জন্য ধন্যবাদ আপু।

বহু প্রাচীনকাল থেকে পুতুলনাচ, যাত্রাপালা বা সার্কাস এর মতো বিনোদনের জিনিসগুলো গ্রামীণ জনসাধারণের চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি লোকজীবনের সৃজন ও মননচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এখন তা বিলীয়মান।

একটা সময় ছিলো বৈশাখীমেলার সময় আমাদের এলাকায় সার্কাস আসতো।পুরো মাসব্যাপী চলতো। সার্কাস দেখা আমার কাছে নেশার মতো, যদি শুনেছি এলাকায় সার্কাস এসেছে ওমনি বাবার কাছে জেদ করতাম মেলায় নিয়ে যাও, সার্কাস দেখাও৷ বাবা সহ্য করতে না পেরে আমাকে মেলায় নিয়ে যেতেন আর সার্কাস দেখাতেন। ছোটবেলায় এমন সার্কাসগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে উপভোগ করতাম, কিন্ত এখন সময় ও সুযোগের অভাবে তা আর হয়ে উঠে না।

 10 months ago 

@xadhin(62)

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আমার পোষ্ট পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাল থাকবেন

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.12
JST 0.027
BTC 62601.44
ETH 3376.27
USDT 1.00
SBD 2.49