চোখ বন্ধ করে অন্যের সমালোচনা না করে একবার কারণ খুঁজে দেখেন।
জিজ্ঞেস করলাম ও নিজে কেমন আছে। শুধু বললো বুঝিছই তো আমি একা মানুষ। তাই একটু সমস্যা হচ্ছে। ওর বর থাকে দেশের বাইরে। মেয়েকে নিয়ে মায়ের কাছেই থাকতো। ও আসলে যে জিনিসটা বলতে চাচ্ছিলো সেটা খুব ভালো করেই বুঝেছি। কারণ আমি আমার মা ,বাবা আর শাশুড়ি তিনজনের মৃত্যু খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমার শাশুড়ী মারা গেছেন লিভার ক্যান্সারে। তখন হসপিটালেও তাকে রাখে নাই করোনার ভয়ে।হসপিটাল থেকে বাসায় ডাক্তার এনে ব্লাড, এলবুমিন দেয়া থেকে শুরু করে পেটের পানি ফেলা সবকিছুই বাসায় করা হতো।
তার রুমকেই হসপিটালের রুম করে ফেলা হয়েছিলো। একই রকম ব্যবস্থা আমার মায়ের ক্ষেত্রেও করা হয়েছিল। সারক্ষন অক্সিজেন চলতো তার সাথে বাইপ্যাপ দিয়ে ব্লাড থেকে কার্বনডাইঅক্সাইড বের করা হতো প্রতি দুই ঘন্টা পর পর। তাকেও শেষ এর দিকে হসপিটালে রাখা হয় নাই ক্লিনিক্যাল ভাইরাস এর ভয়ে। কারন এসব রোগীর একবার যদি ইনফেকশান হয়ে যায় তাহলে আর যেটা দিন বাঁচার সম্ভাবনা আছে সেটাও বাচবে না। কিন্তু এই সময়গুলো আমাকে একা মোকাবিলা করতে হয় নাই ,যার কারণে চাপ পড়লেও সেভাবে চাপ পরে নাই আমার উপর। আমরা কয়েকজন পালা বদল করে সময় দিয়েছি ।
এই সময় পাশে লোকজন বেশি না থাকলে যে কি সমস্যা হয় সেটা দেখেছি আমার পরিচিত একজনের মৃত্যুর আগে। তাদের দুই ভাই বোনের মাঝে প্রায়ই ঝগড়া লেগে যেত। কারণ দুজনেরই কাজ থাকতো। এই কথাটা শুনতে খুব খারাপ শোনা গেলেও বাস্তব খুব কঠিন। আমরা প্রায় সময়ই অন্য একজন মানুষের প্রতি আঙ্গুল তুলি যে ,এই কাজটা সে কিভাবে করলো। কিন্তু তার জায়গায় যদি নিজেকে রাখা যায় তাহলে বোঝা যায় তার কি পরিস্থিতি। তাই অন্যের দিকে আঙ্গুল তোলার আগে দুইবার চিন্তা করা উচিত ।
বাসায় যতই লোকজন থাকুক না কেনও প্রতি মুহূর্তে কারো মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকার মতো মানসিক যন্ত্রণাদায়ক বিষয় আর কিছুই নেই। আমি যখন এরকম মুহূর্ত কাটিয়েছি তখন বাসা থেকে বের হতে পেতাম হয়তে বাসায় এসে আর দেখতে পাবো না।
আমার ওই বন্ধুকে সান্ত্বনা দিলাম ঠিকই কিন্তু আমি বুঝতে পারছিলাম ওর ওপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে চলছে। কারণ এরকম সময় খুব কাছের নামধারী কিছু মানুষ বিন্দু মাত্র কাজে না আসলেও তাদের বলা তির্যক মন্তব্য ঠিকই কানে আসে। সেটা অবশ্য আড়ালেই বেশি হয়। আবার এমনও দেখেছি মৃত্যুর জন্য এই অপেক্ষা অনেক সময় মানুষের জীবন পর্যুদস্ত করে ফেলে। ভালোবাসা ঠিকই থাকে কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে হয় খুব কঠিন।সেটা না যায় কাউকে বোঝানো না যায় সহ্য করা।
আমার নিজের দূর সম্পর্কের এক ভাইয়ের ছেলে দীর্ঘ দিন কিডনির সমস্যায় ভুগতেছিলো। আমার ভাবি ওকে কিডনি দিয়েছিলো। কিন্তু এই কিডনি ট্র্যান্সপ্ল্যান্টের পরও সুস্থ হয় নাই। ওর বউ আর ছোট ভাই গ্রাম থেকে ঢাকা এসে ক্লিনিক এর পাশেই প্রায় দেড় বছর বাসা ভাড়া করে ছিলো। আর আমার ভাই মানে ওর বাবা প্যারালাইজড হয়ে গ্রামে পরে ছিলো এসময়।বার বার লাইফ সাপোর্ট এ নিতে হতো ওকে। লাইফ সাপোর্ট থেকে কেবিনে নিয়ে যাওয়ার পরই আবার অসুস্থ হয়ে পরতো। যার কারণে আবার লাইফ সাপোর্ট এ নিতে হতো।
ওর ভাই এর চাকরিও প্রায় যায় যায় করতেছিলো। একসময় ওর পরিবার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো যে ওকে লাইফ সাপোর্ট খুলে বাড়িতে নিয়ে যাবে। আমরা সবাই জানতাম যে ও মারা যাবে।ওর বউ রাজী ছিলো না একদমই । সবার কথা চিন্তা করে সেও রাজী হয়ে যায়।কিন্তু কিছু করারও ছিল না। কারণ এটা একটা সার্কেল এর মতো চলতেছিল।ও বাঁচবে না এটাও ডাক্তার বলে দিয়েছিলেন। কিন্তু এভাবে কতদিন বাঁচবে সেটা কারো জানা ছিল না। মধ্যবিত্ত পরিবারের শেষ সম্পদটুকুও শেষ হয়ে যাচ্ছিলো এভাবে। যার কারণে একদিন দুপুরের দিকে ওকে বাসায় নিয়ে যায় আর রাত এগারোটার দিকে ওর মৃত্যুর সংবাদ পাই।
তখন দেখেছিলাম সমালোচনার ঝড়। বিষয়টা অবশ্যই নিষ্ঠুরতার কাজ হয়েছে। কিন্তু ওর জন্য ওর পুরো পরিবার সেই মুহূর্তে অসীম বিপদে পরেছিল। কতটা অসহায় হলে একটা পরিবার এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেটা শুধু আমরা আন্দাজ করতে পারি। তাই অন্যের সমালোচনা করার আগে আমাদের সবারই একবার ভাবা উচিত যে ,এটা কেন তারা করছে।
◦•●◉✿ Thanks Everyone ✿◉●•◦
◦•●◉✿ Thanks Everyone ✿◉●•◦
পোস্টটি সম্পূর্ণ পরে মনাটা ভারাক্রান্ত হযে পরেছে। আপন লোকজনকে একটু একটু করে কষ্টো পেয়ে মরে যাওয়া এটা মনে নিতে খুব কষ্ট হয়। মৃত্যু সত্য হলেও তা মেনে নেওযা কঠিন।
মানব জীবন অনেক কঠিন।
আমাদের সব কিছু মেনে নিতে হয়।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সবসময়।
হৃদয়বিদারক একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
কষ্ট সবারই আছে তবুও আড়ালে আড়ালে সবাই হাসে।ব্যক্তি ভেদে এই কষ্টের কারণ গুলোও সম্পন্ন আলাদা আলাদা। কেউ কারো ব্যথা বোঝে না এটা প্রাকৃতিক একটা নিয়ম। সমালোচনা নামক বিষ ঢুকে পড়েছে আমাদের সমাজের রন্ধে রন্ধ্রে। কেউ কারো পরিস্থিতি বুঝতে নারাজ। কে রাখে কার খোঁজ।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
আমি এখন ঠিক এই অবস্থার মধ্যে রয়েছি। আমার মা আর কোনোদিন ঠিক হবে না, তবু চেষ্টা করে যাচ্ছি যতদিন মাকে ধরে রাখতে পারি। আমার দিদির শ্বশুরবাড়ি কাছেই, কিন্তু ও একটা জব করে বলে রোজ আসতে পারে না। তা সত্ত্বেও ও যথাসম্ভব করে মায়ের জন্য। সত্যি যারা এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যায় তারাই শুধুমাত্র বুঝতে পারে। বাইরে থেকে সমালোচনা করা তো খুব সহজ।
আমি আপনার অবস্থা পুরোপুরিই বুঝতে পারতেছি কারন আমি আমার মাকে মাএ চার মাস আগেই হারিয়েছি।দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে ছিলো সে।
আপনার মা সুস্থ উঠুন এই প্রার্থনা করি সৃষ্টিকর্তার কাছে।
সেই সাথে আপনিও ভালো আর সুস্থ থাকবেন কারন এই মূহুর্তে আপনার ভালো থাকাটা খুবই জরুরি।
শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
আজকে আপনার পোস্ট পরিদর্শন করছিলাম আর বাস্তবতাকে খুব কাছ থেকে উপভোগ করছিলাম। বাস্তবতা অনেক কঠিন আমরা যতই সেটাকে সাদরে গ্রহণ করি না কেন? সেটা আসলে ও এতটা সহজ নয়! বারবার নিজেকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করি এই তো সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে! কিন্তু আসলেও কি সব ঠিক হয়।
পরিস্থিতি বড়ই খারাপ একটা জিনিস! কখন কি ঘটবে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ বলতে পারে না! আসলে জীবনের মানেটা কোথায় গিয়ে শেষ হবে কখন শেষ হবে! সেটা আমরা কেউ জানিনা একমাত্র সৃষ্টিকর্তা বলতে পারে! আমার জীবনের আয়ু কতটুকু।
একজন ব্যক্তিকে সকালে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর রাত 11 টায় তার মৃত্যু হয়! এই বিষয়টা কতটা ভয়ংকর ভাবতেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়! কিন্তু কিছু করার নেই এই পৃথিবী থেকে সবাইকে যেতে হবে! মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষদেরকে এই বিষয়গুলো খুব বাজেভাবে নাড়া দিয়ে ওঠে! তারা নিজেদেরকে কখনো ক্ষমা করতে পারে না! তারা মাঝে মাঝে বলে হয়তো বা হসপিটালে থাকলে আরো কয়েকদিন বেঁচে থাকতো!
বাস্তবতা নিয়ে এত সুন্দর একটা টপিক আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ। অবশ্যই অন্যের দিকে আঙ্গুল তোলার আগে জায়গায় গিয়ে সম্পূর্ণ বিষয় বিস্তারিত জানা উচিত। ভাল থাকবেন।
ঠিকই বলেছেন তারা হয়তো নিজেদের কখনোই ক্ষমা করতে পারবে না।যতদিন বেচে থাকবে ততদিন এই কস্টবোধ নিয়েই বেচে থাকবে। তাদেরকে উপলব্ধি করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন সবসময় এই শুভকামনা রইলো আপনার জন্য
আপু আপনার আজকের পোষ্টটি পড়ে বাস্তবতা অনুভব করলাম। সত্যি বাস্তব বড়ই নিষ্ঠুর। আমাদের সবাইকে একদিন এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। তবে আল্লাহ্ তালার কাছে একটাই চাওয়া যেন আমাদের এত বড় কঠিন রোগ না দেয়।
আর আমাদের সমাজে এমনো লোক আছে যারা কিছু না বুঝে শুনেই সমালোচনা করতে শুরু করে। আল্লাহ না করুক তাদের যদি এমন বিপদ আসে তাহলে তারা বুজবে না বুজে সমালোচনা করলে কতটা খারাপ লাগে।
যাই হোক আপু আপনি এবং আপনার পরিবার সবসময় সুস্থ ও সবল থাকুন এই দোয়া করি। ভালো থাকবেন।
পোস্টটি পড়ে এত সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
আমার নিজেরও লিখতে গিয়ে পুরোনো দিনের কথা মনে পরে গিয়েছিল।
ধন্যবাদ এত সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য।
শুভকামনা রইলো আপনার জন্য
এরকম অভিজ্ঞতা আমারো হয়েছিলো। আসলেই দূর থেকে অনেক কিছু দেখা বা বুঝা যায় না। কেউ ই চায় না তার প্রিয়জন মারা যাক। কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা অনেক সময় বাধ্য করে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। আপনার বন্ধুর পরিবারের ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছিল। আল্লাহ উনাকে জান্নাত দিক এই কামনা করি।
ঠিকই বলেছেন যে, কাছে থেকে না দেখলে কিছুই বোঝা যায় না। মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
পোস্টটি পড়ার পরে নিজের ভিতরে কেমন যেন একটা নাড়া দিয়ে উঠছিল।, বাস্তবতা টা খুবই কঠিন আমরা পিছন থেকে অনেক কিছুই বলতে পারি কিন্তুু কখনো কি তার জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করি না।
আমরা যখন জানতে পারি এই মানুষটা পৃথিবীতে হয়তো আর অল্প কিছুদিন আছে, যাকে বলা যায় একেবারে মৃত্যুর সজ্জা, তখন শুধু সেই মানুষটাই এবং তার পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারে, তাদের কি অবস্থা যাচ্ছে। আর আমরা কিছু মানুষ আছি যারা শুধু না জেনে সমালোচনায় করে যাই। আদু কি এগুলো করা উচিত? আমি বলবো না।
আমার মনে হয়,
জন্ম, মৃত্যু ,বিয়ে বিধাতায় ধার্য করে রেখেছে কখন কার হুকুম আসবে এটা বলা যাবে না,একটা অসুস্থ মানুষকে তার দেশের বাড়িতে দুপুরে নিয়ে গিয়েছে আর এগারোটার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেছে, এটা কতটা ভয়ংকর বিষয়, এটা যারা সমালোচনা করতে পছন্দ করে তাদের বোঝার সাধ্য নয়।
তবে আমার মত মধ্যবিত্ত পরিবারের, সদস্যরা এরকম ভাবে অসুস্থ হলে, এবং সবকিছু বিক্রি করে শেষ চিকিৎসাটা করানোর পরে যখন এই পৃথিবীতে রাখা সম্ভব হয় না তখন, তখন নিজেকে ক্ষমা করানোর মতো একটা কথা চলে আসে তখন মনে হতে থাকে আর কিছুদিন যদি ভালো চিকিৎসা করানো যেত তাহলে হয়তো মানুষটাকে বাঁচানো সম্ভবত।
তবে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে আমরা কেউ স্থায়ী নয়। সবাইকে এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে সৃষ্টিকর্তা প্রতিটা মানুষ এবং প্রতিটা প্রাণীকে একদিন তার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করাবে।
আমি আপনার মা বাবা এবং আপনারদের দূর সম্পর্কের ভাইয়ের জন্য মন থেকে অনেক প্রার্থনা করছি, তাদের আত্মা যেন শান্তি পান, সেই সাথে আপনার বন্ধুর জন্য রইল দোয়া সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে দীর্ঘ আয়ু দান করে।
এত সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য
Welcome 🤗
আপনার পোস্টটি পড়ে আমার কাছে সত্যি অনেক ভালো লাগলো আর অনেক কিছু জানতে পারলাম বাস্তবতা সম্পর্কে। আমরা কোন কিছুই যাচাই-বাছাই না করে অন্য মানুষকে নিয়ে খারাপ সমালোচনা করি যেটা কখনোই করা উচিত না। এতো শিক্ষনীয় একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার এই রকমের আরো আকর্ষণীয় পোস্ট দেখার জন্য আমি অপেক্ষা করছি।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সবসময়। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।