আপনার শপিংই যখন আপনার অসুস্থতা।
'শপাহোলিক' শব্দটার সাথে আমি পরিচিত ছিলাম।কিন্তু এমন কাউকে কখনো নিজের চোখে দেখি নাই। আমার পরিচিত অনেকেই আছেন যারা শপিং করতে খুব ভালোবাসেন কিন্তু তাদেরকে কোনমতেই শপিং এ আসক্ত বলা যাবে না কারন তারা জানে কোথায় থামতে হবে।
শপিং এর প্রতি দূর্বলতা আমার মাঝেও আছে। আগে আরো বেশি প্রকট ছিলো কিন্তু এখান থেকে বের হওয়ার জন্য আমি শপিংমলগুলোতে যাওয়া কমিয়ে দিয়েছি কিংবা অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও দেখা কমিয়ে ফেলেছি।আগে সময় পেলেই ভিডিওগুলো দেখতাম আর প্রয়োজন ছাড়াই অনেক কিছু অর্ডার দিতাম।
কিন্ত গত রোজার মাসে একটা জিনিস খেয়াল করলাম যে , আমি অনেক কিছু অর্ডার করেছি যেখানে আমি রোজার আগেই কলকাতা থেকে বেশ কিছু শপিং করছি। তখন মনে হলো যে, আমি শপাহোলিক হয়ে যাবো নাতো।
শপিং মলে যাওয়া আগেই কমিয়েছিলাম এরপর কমালাম ভিডিও দেখা। কিন্তু যত যা-ই বলি না কেন সত্যিকার অর্থে যাদেরকে শপাহোলিক বলা যায় এমন কাউকে আমার আগে চোখে পরে নাই। সামান্য কেনাকাটা যে যে কি পরিমাণ ভয়াবহ আকার নিতে পারে সেটাই বলতেছি আজকে।
আমার পরিচিত একজনের হাসবেন্ড মারা গেছেন দুই /আড়াই বছর আগে। এর মাঝে সে তাদের বাড়ি ছাড়া সমস্ত প্রপার্টি বিক্রি করে দিয়ে সব টাকা ব্যাংকে রেখেছেন। এরপর দুবাই, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কাশ্মির ও ইন্ডিয়ার আরো কয়েকটা জায়গা ঘুরে এসেছেন এটা জানতাম আমি কিন্তু এর চেয়ে বেশি কিছুই জানতাম না।
আমি কয়েকমাস আগে যখন কলকাতা যাই, তখন তিনিও চেন্নাইয়ে যান তার ছেলে-মেয়েদের নিয়ে। তিনি তখন এত শপিং করেছিলেন যে তার কাছের সব টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার সব জিনিসপত্র নিয়ে আসতে পারেন নাই। এ কারনে সে ছেলেকে জিনিসপত্রসহ চেন্নাইতে রেখে আসেন।আমার ছেলে এসে আমাকে বলেছিলো যে , ও'তো কান্না করতেছে।ও আগে একা কখনো বিদেশে থাকে নাই।
এরপর দেশে এসে টাকা পাঠিয়ে দিয়ে ছেলেকে দেশে আনেন। তখন পর্যন্ত এটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছিলাম। কিন্তু এই ঘটনার পর থেকেই তার শপিং এর গল্প কিছু কিছু করে কানে আসতে থাকে আমার।গতকাল সকালে তার ছেলে আমার বাসায় এসে বলতেছে যে , আন্টি আম্মুতো আবার কলকাতা যাচ্ছে।আমি কারন জিজ্ঞেস করায় সে বললো শপিং করাটাই আসল কারন অন্য আর তেমন কিছুই নেই।
এর থেকেও ভয়াবহ সংবাদ পেলাম যে, ওদের ইন্দিরা রোডের বাড়িটাও বিক্রি করতে চাচ্ছে। গতকাল ও আমার ছেলেদেরকে বলে গেছে যে, আমি বুঝতেছি এত খরচ করাটা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু সেটা আমার আম্মু বুঝতেছে না। এটা জানার পরই বিভিন্ন জায়গায় ঘাটাঘাটি কিছুটা ঘাটাঘাটি করলাম এই শপিং আসক্তি নিয়ে। এর ফলে জানতে পারলাম যে, এটা একটা মানসিক ফোবিয়া। বিভিন্ন কারনে মানুষের এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এর মাঝে একটা কারন হলো, মানুষ তার কস্ট, স্ট্রেস ইত্যাদি অনেক সময় শপিং এর মাধ্যমে কমায়।
এর ফলে মানুষের মাঝে ডোপামিন এর মতো সুখ সৃষ্টিকারী হরমোন নিঃসরণ হয় হয় আর এটাই একসময় বাড়তে বাড়তে একসময় আসক্তিতে পরিণত হয়। এটাতেই হয়তোবা আমার পরিচিত মানুষটা আক্রান্ত।
আবার অনেক সময় মানুষ স্ট্যাটাস শপাহোলিকে ভুগে এবং এসব মানুষরা তাদের সামর্থের বাইরে গিয়ে শপিং করেন নিজের ইমেজকে ধরে রাখার জন্য।
আবার কেউ কেউ সেল দেখলেই ঝাপিয়ে পরেন, এর মাঝে আমিও আছি।
আবার কিছু মানুষ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র যেমন, পেইন্টিং, পুরোনো দিনের জিনিস ইত্যাদি সংগ্রহ করতে ভালোবাসেন।এর জন্য যত টাকাই লাগুক না কেন তারা পিছিয়ে আসে না।
আবার বুলিমিক শপাহোলিক হলেন তারা যারা নিজেরাও জানেন না কেন কিনতেছেন।
আবার তারা অনেক সময় যা কিনেন সেটাকে পাল্টে নতুন আরেকটা আনার চেষ্টা করেন।
এরকম আরো অনেক ধরনের কেনাকাটায় আসক্ত মানুষরা আমাদের চারপাশে ক্রমশ বাড়তেছে। ২০১৮ সালের এক গবেষণায় জানা যে,
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮% মানুষ এই সমস্যাতে আক্রান্ত।
তবে এই সমস্যাতে আক্রান্ত ব্যাক্তি যদি নিজে থেকে বুঝতে না পারেন তাহলে তার কাছের মানুষদের এই বিষয়টাতে সচেতন হয়ে শুরুতে বোঝানো আর এতে কাজ না হলে অবশ্যই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
💯⚜2️⃣0️⃣2️⃣4️⃣ This is a manual curation from the @tipu Curation Project.
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 4/7) Get profit votes with @tipU :)
ঠিক বলেছেন আপু, শপিং করতে কেনা ভালোবাসি সবাই ভালোবাসি আমিও প্রতিমাসেই স্যালারি পেলে অনেক টাকার শপিং করি । এটা জানতাম না যে যুক্তরাষ্ট্রে ৮০% মানুষ এই সমস্যাতে আক্রান্ত আছে।
আমাদের সবার উচিত অতিরিক্ত শপিং না করে যতটুক দরকার ততটুকের মধ্যেই সীমাবদ্ধতা থাকা।
এটা জেনে ভালো লাগলো আগে আপনি অনেক শপিং করতেন এখন কমিয়ে দিয়েছেন।
ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
শপিং করাটা দোষ এর কিছু না তবে প্রয়োজন এর অতিরিক্ত না করাই ভালো।তবে আমরাতো সবসময় এতো হিসেব করে চলতে পারি না তাই
হাতে টাকা থাকলে আবার অনেক সময় ধার করে হলেও কমবেশি অতিরিক্ত শপিং করি।
তবে এতে যাতে আমরা আসক্ত না হয়ে পরি এটাই খেয়াল রাখা উচিত।
ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে।
ভালো থাকবেন সবসময়।
শপিং করাটাও যে একটা অসুস্থতা, আজকে আপনার পোস্ট পরিদর্শন করে বুঝতে পারলাম। আসলে আপনি যে মহিলার কথা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। উনি মনে হয় নিজের কষ্ট নিজের সমস্যাগুলো এই শপিং করার মাধ্যমে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন এবং উনি মনে করেন, শপিং করলে উনি ভালো থাকেন। তাই হয়তো বা এমনটা করছেন। তবে অতিরিক্ত টাকা খরচ করাটা মোটেও ঠিক না।
যেহেতু ওনার স্বামী মারা গেছে। ছেলে মেয়েদের নিয়ে ভালোভাবে চলার জন্য অবশ্যই কিছু টাকা প্রয়োজন। কিন্তু সব টাকা যদি এভাবে শপিং করে উড়িয়ে দেয়। তাহলে পরবর্তী সময়ে উনাদের না খেয়ে থাকতে হবে। আমার মনে হয় উনার এখন থেকেই ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। ধন্যবাদ অজানা বিষয়টা সম্পর্কে অবগত করার জন্য। ভালো থাকবেন।
উনার ছেলে তার মামাকে সব জানাবে বলে ঠিক করেছেন।আশা করি ওর মামা যা যা করা প্রয়োজন সব কিছু করবেন।কারন মামারা সব সময়ই বোন আর ভাগ্নে-ভাগ্নীর ভালো চায়। আাশা করি সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
এতো সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে। ভালো থাকবেন সবসময় এই শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
যাক এটা শুনে ভালো লাগলো আশা করি ওনার ভাই উনাদের জন্য বেশ ভালো একটা উদ্যোগ গ্রহণ করবে। কেননা এভাবে যদি সবকিছু শেষ হয়ে যায় পরবর্তীতে তাদের অনেক কষ্ট করে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হবে। আবার মনে হয় যতক্ষণ আমাদের হাতে টাকা আছে, তার সব ব্যবহার করা উচিত। আশা করি উনি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন, ধন্যবাদ।
একটা কথা আছে না প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। কমবেশি আমরা প্রত্যেকেই শপিং করতে পছন্দ করি। কিন্তু এই শপিং করার অতিরিক্ত অভ্যাসটা আমাদের এক সময় অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। আপনার পোস্টে আপনার পরিচিত একজনের গল্প তুলে ধরেছেন। আমার কাছে মনে হয় শপিং করা উচিত। কিন্তু সেটা প্রয়োজনের অধিক নয়।
খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।