ইচ্ছাপূরণের অপেক্ষা

in Incredible Indialast year (edited)
woman-570883_1920.jpg

Source

বাঁচতে হলে,এমন মুক্ত হয়েই বাঁচা শ্রেয়

Hello,

Everyone,

প্রথমেই আপনাদের সকলকে বুদ্ধ পূর্ণিমার অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আশা করছি আজকের দিনটি আপনাদের সকলের অনেক ভালো কেটেছে। সকলে ভালো আছেন, ও সুস্থ আছেন।

আজকে আমি আপনাদের সাথে একটি আনন্দের কথা শেয়ার করতে চলেছি। এই পৃথিবীতে আমরা প্রত্যেকটি মানুষ ভিন্ন, তাই আমাদের সকলের ভালোলাগা, খারাপ লাগা সবটাই ভিন্ন ভিন্ন কারণের ওপরে নির্ভর করে।

যখন বাস্তব জগত সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না, তখন আমার অনেক স্বপ্ন ছিল, অনেক ইচ্ছে ছিল। কিন্তু যখন সময়ের সাথে সাথে বড় হতে শুরু করলাম, তখন বুঝতে পারলাম জীবনের সব স্বপ্ন পূরণ করা আমাদের সাধ্য নয়। তাই কিছু কিছু স্বপ্ন আজীবন স্বপ্ন হয়েই থেকে যায়।

তবে যদি চেষ্টা করা হয় তাহলে কিছু কিছু স্বপ্ন অবশ্যই পূরণ করা সম্ভব হয়। তার সাথে সাথে এটাও বুঝতে পারলাম, মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বপ্নগুলো অধরা থেকে যায়। কারণ সেখানে বাধার সৃষ্টি করে আর্থিক সমস্যা।

তাই ছোটবেলা থেকে যখন চোখের সামনে বাবাকে দিনরাত পরিশ্রম করতে দেখতাম, তখন নিজের ভেতরেই অনেক স্বপ্ন একটু একটু করে নিজেই শেষ করে দিয়েছি। কারণ ওই বয়সেই এটা বুঝতে শুরু করেছিলাম,আমার স্বপ্নগুলো বাবার পরিশ্রমের কাছে শুধু বিলাসিতা মাত্র।

তাই কখনোই অযথা বায়না করার অভ্যাস তৈরি হয়নি। আসলে ছোটবেলা থেকেই মা আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সাধ্য অনুযায়ী সাধ লালন করা উচিত।যদি সেটা না করা হয় তাহলে শুধুমাত্র কষ্ট পেতে হয়।

এরপর আস্তে আস্তে শুরু হলো বাস্তবের সঙ্গে পরিচয়। একটু একটু করে বড় হতে হতে বুঝতে পারলাম, এই সমাজে ভালোভাবে বাঁচতে হলে অনেক কিছু পরিত্যাগ করতে হয়। আবার অনেক কিছু ছিনিয়ে নিতে জানতে হয়। আর অবশ্যই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে কখনো কখনো বদলেও নিতে হয়। যদি সেটা করা না হয়, তাহলে অনেক মানুষ আমাদেরকে দমিয়ে রাখারই চেষ্টা করে যায় আজীবন।

যাই হোক আজকে এতগুলো কথা এই কারণেই আপনাদেরকে বললাম, কারণ আমার বরাবর ঘুরতে যেতে খুব ভালো লাগে, কিন্তু ছোটবেলা থেকে কখনো সম্ভব হয়নি কারণ, প্রথমত আর্থিক সমস্যা আর দ্বিতীয়ত মায়ের শাসন উপেক্ষা করতে না পারা।

মা বরাবর আমাদেরকে এটা বুঝিয়েছিলেন, স্বাধীনতা ভালো তবে স্বেচ্ছাচারিতা ভালো নয়। আর ঠিক এই কারণেই মায়ের বারণ উপেক্ষা করে, কখনোই কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা আমি পূরণ করতে পারিনি। তখন অবশ্য বয়সটাও কম ছিল, বাস্তব অভিজ্ঞতাও ছিল না, সেই কারণে মায়ের ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক ছিল।

এরপর আস্তে আস্তে বড় হলাম। বিয়ের পরে ভেবেছিলাম হয়তো আমার ইচ্ছে গুলো পূরণ হবে, কিন্তু বাস্তব জীবনের ঠিক তার উল্টোটাই হল। আমার হাজব্যান্ড ঘুরতে যেতে খুব একটা পছন্দ করে না। সে নিজের বাড়িতে, নিজের ঘরে নিজের মতো করে, নিজের বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করে। সেই কারণে আবার একবার আমি আমার ইচ্ছে গুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হলাম।

IMG_20230506_011303.jpg
অনেক বছর আগে হাজারদুয়ারী ঘুরতে গিয়ে তোলা ছবিতে আমি,রাখি ও তিতলি (আমার দিদির মেয়ে)

তবে আমার ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে পূরণ হতে পারে, এটা ভেবেই অনেক ভালো লাগছে। আসলে বহুদিন যাবৎ আমি ও আমার বান্ধবী রাখি, (যার কথা আপনারা বহুবার আমার লেখায় পড়েছেন) প্ল্যান করছি কোথাও ঘুরতে যাব, কিন্তু এই প্ল্যানটা সব সময় প্ল্যান হয়ে থেকে গেছে কখনো সেটা বাস্তবে পূরণ করা সম্ভব হয়নি।

আসলে রাখির মাও মারা গেছেন, তাই বিয়ে না হলেও পরিবারের দায়িত্ব ওর কাঁধে এসে পড়েছে। যেহেতু পরিবারের দাদা ও বাবা রয়েছে তাই বাড়ির সমস্ত কাজকর্ম ওকেই করতে হয়। সত্যি কথা বলতে বিয়ের পর আমাকেও সংসারের অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং এই দায়িত্ব পালন করতে করতে অনেক সময় আমি নিজেও হাঁপিয়ে উঠি।

ঠিক তেমনি রাখিও বাড়িতে কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠে। তাই যখন দুজন কখনো একান্তে বসে কথা বলি, তখন দুজনেরই মনে হয় বাড়ি থেকে দূরে কোথাও যদি নিজেদের মতো একটা দিন বেড়ানো যেত তাহলে ভালো লাগতো। বহুদিন এই ধরনের কথা হচ্ছে, কিন্তু আজকে সন্ধ্যা বেলায় রাখি ফোন করে জানালো ওরা দীঘায় ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করছে।

যদি আমি রাজি থাকি তাহলে আমিও যেন অবশ্যই ওদের সঙ্গে যাই। কথাটা শুনে এক মুহূর্তে মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত ভালোলাগা তৈরি হয়েছে। যদিও জানিনা বাস্তবে এটা সম্ভব হবে কিনা। কারণ যেহেতু আমার বিয়ে হয়ে গেছে তাই এখনো পর্যন্ত বাড়ির সকলের অনুমতি ছাড়া কোথাও যাওয়াটা সম্ভব নয়।

আসলে সম্ভব নয় বলাটা ভুল। চাইলেই সেটা সম্ভব কিন্তু ছোটবেলা থেকে মায়ের যে শিক্ষায় বড় হয়েছি সেটা থেকে নিজেকে আজও বের করতে পারিনি। তাই আজও মনে হয় বাড়ি থেকে পারমিশন না দিলে হয়তো কোথাও যাওয়াটা উচিত নয়।

আমার শশুর শাশুড়ি যেহেতু বাড়ি নেই,তাই তাদের কাছ থেকে অনুমতি এখনো নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে শুভ অনুমতি দিয়েছে। কারণ জানে বহুদিন ধরেই আমার মনে এই ইচ্ছাটা ছিল যে, আমি আমার বান্ধবীদের সাথে কোথাও ঘুরতে যাব।

বাকি যদি শ্বশুর-শাশুড়ি পারমিশন দেয়, তাহলে আশা করছি আমি বান্ধবীর সঙ্গে গিয়ে দুটো দিন অনেক আনন্দ করতে পারব। হয়তো ব্যাপারটা অনেকের কাছে খুবই সামান্য, তবে যদি এই ঘুরতে যাওয়াটা সত্যিই সম্ভব হয়, তাহলে এটা আমার কাছে সত্যিই অনেক বড় পাওনা হবে।

IMG_20230506_011049.jpg
অন্য একটি বান্ধবীর বাড়িতে যাওয়ার পথে তোলা ছবিতে আমি ওরাখঘ্রঢ়

বন্ধু বান্ধবীদের সাথে সময় কাটাতে আমাদের প্রত্যেকেরই ভালো লাগে। আর সেখানে যদি বান্ধবীদের সঙ্গে এরকম একটা জায়গায় ঘুরতে যাওয়া যায়, সমুদ্রে মজা করা যায়, তাহলে তার আনন্দ সত্যিই অন্যরকম। যে আনন্দটা আমি জীবনে একবার হলেও অবশ্যই উপভোগ করতে চাই।

যদি সেটা সত্যিই সম্ভব হয় তাহলে আমার সেই আনন্দের মুহূর্তগুলো আমি অবশ্যই আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আপনারা প্রার্থনা করবেন যাতে আমার এই ছোট্ট ইচ্ছাটা পূরণ হয়। যদিও ইচ্ছাটা অনেক ছোটো কিন্তু তার মধ্যেও অনেক আনন্দ লুকিয়ে আছে।

শেষ করার আগে অবশ্যই আপনাদেরকে অনুরোধ করব, জীবন একটাই, তাই অবশ্যই নিজের ভালোলাগাগুলোর মূল্য দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ এই পৃথিবীতে আপনি যদি নিজে ভালো থাকতে না চান, তাহলে আপনাকে কেউ ভালো রাখবে না। তাই নিজে কিসে খুশি থাকেন, সেটা নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে।

আজকের মত এখানেই শেষ করলাম। আমার লেখাটা আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট এর মাধ্যমে জানাবেন। সকলে ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।

Sort:  
Loading...
 last year 

ঠিক বলেছেন দিদি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বপ্নগুলো অধরা থেকে যায়। কারণ সেখানে বাধার সৃষ্টি করে আর্থিক সমস্যা। যে গুলোর কারনে আমাদের আর কোন পথ থাকে না কষ্ট করে সবকিছু মেনে নিতে হয় ৷ সাধ্যের বাইরে কিছু থাকলে সেটা পুূরন করা যেতে পারে তাছাড়া সম্ভব না ৷ কারন আমাদের জীবনে অনেক বাধা বিপত্তি আসে সেগুলোর সম্মুখীন হতে আমাদের যা কিছু সেটা দিয়ে লড়াই করতে হয় ৷

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের শেয়ার করার জন্য ৷ ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷

 last year 

তাই ছোটবেলা থেকে যখন চোখের সামনে বাবাকে দিনরাত পরিশ্রম করতে দেখতাম, তখন নিজের ভেতরেই অনেক স্বপ্ন একটু একটু করে নিজেই শেষ করে দিয়েছি। কারণ ওই বয়সেই এটা বুঝতে শুরু করেছিলাম,**আমার স্বপ্নগুলো বাবার পরিশ্রমের কাছে শুধু বিলাসিতা মাত্র। **

আপনার সাথে একদম সহমত আমিও যতদিন চাই তাতো আমাদের ইচ্ছে এবং স্বপ্নগুলো তুচ্ছ হয়ে যায় মনে হয় বাবার পরিশ্রমের কাছে আমাদের স্বপ্নগুলো কিছুই নয় আসলে ছোটবেলায় আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বায়না ধরতাম যতদিন যাই আমরা সেই বায়না গুলো ভুলে যাই।

বেশ ভালো লাগলো আপনার পুরো পোস্টে পড়ে আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল দিদি এবং অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য।

 last year 

সত্যি দিদি ছোট বেলার সপ্নগুলো এখন আমাদের কাছে মনে হচ্ছে শুধুই কাল্পনিক কারন সেই সপ্ন গুলো ছিল আমার সাধ্যর বাহিরে,,,,,,সপ্ন দেখলে ও সপ্ন পুরুন করার সাধ্য ছিল না,,,,

তবে যেটুকু সাধ্য এখন তার থেকে বেশি সপ্ন বুনি না,,, কারন সেই কল্পনা আর ব্যস্তবতা অনেক অনেক তারতাম্য,,,,,

আর আপনি আপনার বন্ধুবী সাথে বেস সময় ভালো একটি সময় পার করেছেন,,, এবং সেই বিষয় নিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

 last year 

তাই কখনোই অযথা বায়না করার অভ্যাস তৈরি হয়নি। আসলে ছোটবেলা থেকেই মা আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সাধ্য অনুযায়ী সাধ লালন করা উচিত।যদি সেটা না করা হয় তাহলে শুধুমাত্র কষ্ট পেতে হয়।

আপনার মা আমাদের সাথে এই পৃথিবীতে নেই! অথচ আপনার মায়ের এই মূল্যবান কথাটুকু! আজকে আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করে,,, আমাদের জীবনের বাস্তবতা,,,, আমাদের সামনে তুলে নিয়ে এসেছেন।

সময়টা খারাপ কিন্তু! সেই সময়টাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো টাই আমাদের প্রত্যেকের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। চাইলেই মানুষ সবকিছু করতে পারে না। চাইলেই মানুষ জীবনে অনেক কিছু আশা করতে পারে,,,,, কিন্তু অনেক কিছু আশা করাটা শুধুই বোকামি।

আমিও দেখেছি ছোটবেলায় তোর বাবা আমার মা অনেক পরিশ্রম করেছে। পরিবারের জন্য। তাই আমিও কখনোই বিলাসিতার জন্য,,, বাবা মায়ের কাছে অতিরিক্ত কিছু আশা করিনি,,, কারণ আমি দেখেছি তারা কতটা কষ্ট করে।

ইচ্ছে পূরণের অপেক্ষাটা সবাই করছ কিন্তু কার জীবনে কতটা ইচ্ছে পূরণ হয়। সেটা একমাত্র সেই বুঝতে পারে। আমি অপেক্ষায় আছি। আমার জীবনের অনেকগুলো ইচ্ছে পূরণ করার জন্য।

তবে ইনশাল্লাহ সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা আছে। তার সাথে আছে নিজের কঠোর পরিশ্রম। একদিন নিজের সবগুলো ইচ্ছেকে পূরণ করব।

অসংখ্য ধন্যবাদ,,, মূল্যবান টপিক এবং অজানা কিছু তথ্য তার সাথে জীবনের বাস্তবতাটা আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল, সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সবসময় ভালো রাখুক সুস্থ রাখুক। সেই কামনাই করছি ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57298.55
ETH 3059.61
USDT 1.00
SBD 2.29