"Travel diary- Explored Digha-(last part)"

in Incredible India2 months ago
IMG_20240608_021127.jpg
"দীঘাভ্রমনের শেষ দিনে উপভোগ করা মোহনার সৌন্দর্য্য"

Hello,

Everyone,

দীঘার মোহনার সৌন্দর্য্যের কথা অনেকবারই শুনেছি, কিন্তু যতবার দীঘায় যাওয়া হয়েছে কখনই মোহনার কাছে যাওয়া হয়নি। তবে শেষবার যখন বান্ধবীদের সাথে গেলাম, তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আর কিছু হোক না হোক অন্তত মোহনায় একবার নিশ্চয়ই যাবো।

কিন্তু যদি ভাগ্যে না থাকে তাহলে সৌন্দর্য্য হয়তো কোনো ভাবেই উপভোগ করা যায় না। আগের পোস্টেই জানিয়েছিলাম বিকেলের দিকে আকাশ মেঘলা করে বৃষ্টি শুরু হয়েছিলো। যথারীতি পরের দিন ফোনে‌ অ্যালার্ম দিয়ে ঘুম থেকে উঠেছিলাম।

IMG_20240607_121847.jpg
"দীঘার সমুদ্রের মোহনা"
IMG_20240607_121743.jpg
"দীঘার সমুদ্রের মোহনা"

কারণ‌ সূর্যোদয়ের পূর্বে ‌মোহনায় পৌঁছে সূর্যোদয় দেখার প্ল্যান করেছিলাম। তাই‌‌ ঘুম থেকে উঠলাম এবং ফ্রেশ হয়ে তৈরি হয়ে নিলাম মোহনায় যাওয়ার জন্য। হোটেল থেকে বাইরে বেরিয়ে দেখি রাস্তা সম্পূর্ণ ভিজে।‌‌ রাতে অনেক জোরে বৃষ্টি হয়েছিল যেটা আমরা ‌ঘুমের‌ ঘোরে বুঝতে পারিনি।

সূর্যোদয় আদেও দেখা হবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্তু মোহনা দেখতে যেতে হবে এটাই ছিল উদ্দেশ্য। তাই দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম। অতো ভোর বেলায় গাড়ি পাবো কিনা এই নিয়ে বেশ‌‌ সন্দেহ ছিলো। অথচ দেখলাম রাস্তায় গাড়ির লাইন রয়েছে।

আসলে দর্শনার্থীরা যারাই আসে, তারাই হয়তো মনে হয় খুব ভোরে যায়, এই কারণে গাড়িগুলো ভোরবেলা থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়ায়। যাইহোক সেখান থেকে একটি টোটো ভাড়া করে আমরা উঠে পড়লাম। যেহেতু রাতে বৃষ্টি হয়েছিলো, তাই হাওয়াটাও বেশ ঠান্ডা ছিল।

IMG_20240607_121630.jpg
"দূরের ল্যাম্পপোস্ট গুলো দেখতে সারিবদ্ধ ভাবে জ্বালিয়ে রাখা মোমবাতির মত লাগছিল"

বেশ কিছুক্ষণ চলার পর, দূর থেকে দেখতে পেলাম সাড়ি দিয়ে অনেকগুলো লাইট জ্বলছে। দেখে যেন মনে হচ্ছে কেউ সারিবদ্ধভাবে মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখেছে। যত কাছেই গেলাম, তত স্পষ্ট ভাবে দেখতে ‌পেলাম‌ যে, দূরে ল্যাম্প পোস্টের আলো জ্বলছে। আরো কিছুটা এগিয়ে টোটো থেকে নেমে গেলাম। কারন‌‌ তারপর থেকে আমাদেরকে হেঁটেই যেতে হবে।

টোটো থেকে নেমে দেখতে পেলাম, সামনে আরো অনেক মানুষ হেঁটে চলেছে, মোহনা দেখার উদ্দেশ্যে। বেশ অনেকখানি হেঁটে যাওয়ার পর মোহনার সৌন্দর্য্য দেখতে‌ পেলাম। যদিও সূর্যোদয় দেখা হয়নি, কিন্তু মোহনার সৌন্দর্য্য,‌ সমুদ্রের থেকে সত্যিই ভিন্ন।

IMG_20240607_121705.jpg
"মোহনায় যাওয়ার পথ"
IMG_20240607_121719.jpg
"সমুদ্রের জল তখনও অনেক দূরে"

যখন আমরা প্রথম গেলাম তখন সমুদ্রের জল অনেকখানি দূরে‌ ছিলো। মোহনার কাছে বেশ বড় বড় পাথর রাখা। তবে পাথর গুলো একটি নির্দিষ্ট ডিজাইনে কাটা ছিলো। সেখানে ঘুরে মোহনা দেখার সাথে সাথে যখন সময় অতিক্রম হলো, দেখলাম সমুদ্রের জল ধীরে ধীরে আরও কাছে এগোচ্ছে।

IMG_20240607_121652.jpg
"ঐ সমুদ্রের পাড়ে দাড়িয়ে থাকা দুজন অনেক আবেগ জাগিয়ে তুলেছিল সেদিন"

দূর থেকে দেখলাম দলছুট হয়ে দুজন সমুদ্রের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। তারা বোধহয় সমুদ্রকে আরও কাছ থেকে উপভোগ‌ করতে গিয়েছে। জানিনা ওদের দুজনকে দেখে মনের ভিতরের সুপ্ত কিছু ইচ্ছে, আবারও প্রবল হয়ে উঠলো। মনের অজান্তেই তাদের দুজনকে ক্যামেরা বন্দি করে নিলাম।

IMG_20240607_121831.jpg
"মেঘলা আকাশ হলেও সূর্যের আলোর আভা বোঝা যাচ্ছিল "
IMG_20240607_121801.jpg
"ঢেউগুলো পাথরের গায়ে আছড়ে পড়ার মুহুর্ত"

ওখানে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝলাম, মেঘের আড়াল থেকে সূর্য বোধহয় আর উঠবে না। তাই সূর্যোদয় দেখতে আবারও কখনো এই দীঘায় যেতে হবে।

যাইহোক সেখান থেকে খুব কাছাকাছি একটি মাছের বাজার ছিলো, যেখান থেকে অনেকেই মাছ বাড়িতে নিয়ে যান। সমুদ্র থেকে মাছগুলো তুলে সরাসরি ওই বাজারে নিয়ে আসে এবং সেখান থেকে আমাদের মতন সকল দর্শনার্থীরা নিজেদের প্রয়োজন অনুসারে মাছ কিনে নিতে পারেন ।

IMG_20240607_121933.jpg
"ইলিশ"
IMG_20240607_122244.jpg
"পমফ্রেট"
IMG_20240607_122032.jpg
"ভোলা,কাঁকড়া ,অন্যটির নাম মনে নেই"
IMG_20240607_122324.jpg
"লটে/লইট্যা"
IMG_20240607_122014.jpg
"কাঁকড়া"
IMG_20240607_122001.jpg
"চিংড়ি"

মার্কেটে ঢুকতেই টুপটাপ বৃষ্টিতে শুরু হলো। কোনো রকমে আমরা গিয়ে একটা দোকানের সামনে দাঁড়ালাম। তারপর বৃষ্টিতে একটু কমতেই আমরা বাদ বাকি দোকানগুলো ঘুরে দেখলাম। ইলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মাছ দেখতে ভালো লাগলেও, বাজারের গন্ধটা বড্ড বেশি অস্বস্তিকর ছিলো। আমরাও নিজেদের মতো কিছু মাছ প্যাকিং করিয়ে নিলাম।

IMG_20240607_122049.jpg
"ব্যালকনির থেকে শেষবারের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছিলাম"

যাইহোক সকলে কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে আমরা হোটেলের উদ্দেশ্য রওনা হলাম। সেখান থেকে সকালেই আমাদের বেড়িয়ে পড়তে হবে। তাই ব্যলকনি ও রুমে ছড়িয়ে থাকা সব জিনিসপত্র গুছিয়ে, সকলে চেঞ্জ করে, রুম ছাড়লাম। একটু মনটা খারাপ লাগছিল ঠিকই, তবে বাড়িতে তো ফিরতেই হবে।

IMG_20240607_122414.jpg
"বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি"

হোটেল ছেড়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে। তখন অবশ্য রৌদ্রের দেখা মিললো। একটু হলেও আফসোস হলো। সেদিন অবশ্য সারাদিন মেঘ রৌদ্রের লুকোচুরি খেলা চলেছিলো। যাইহোক, ফেরার আগে দোকান থেকে ব্রেকফাস্ট করে, সোজা চলে গেলাম দীঘার বাস টার্মিনালে। তখন আবার আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা দিলো।

IMG_20240607_122116.jpg
"আকাশে আবার মেঘের ঘনঘটা"
IMG_20240607_122104.jpg
"দীঘা বাস টার্মিনাল"

কারণ আমাদের বাস সেখান থেকে ছাড়ার কথা ছিলো। বান্ধবীর দাদা আগের রাতে টিকিট কেটে এনেছিলো। সেই অনুযায়ী আমরা সেখানে একটু অপেক্ষা করলাম। বেশ কিছুক্ষণ পরে বাস আসায় উঠে পরলাম। তারপর সিটে বসে, লাগেজ গুছিয়ে, মাছের প্যাকেটটা রাখলাম।

IMG_20240607_122133.jpg
"ফেরার পথে এক নাম জানা নদীর উপর দিয়ে ব্রীজ পার হওয়ার মুহুর্ত"

বাস ছাড়ার পর কখন ঘুমিয়ে পড়লাম, সেটা বুঝতে পারিনি। কারণ অনেক ভোরে উঠেছিলাম এবং বাসে জানালার পাশে সিট পাওয়ায়, বেশ ভালো হওয়া লাগছিলো, তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। অবশেষ একটা নির্দিষ্ট স্থানে বাস থামলে, সেখানে নেমে আমরা একটু কলা ও বিস্কুট কিনে নিলাম।

এরপর বাস কোথাও দাঁড়ায়নি। বারাসাতে দুজন নামলো, এরপর আমি যেহেতু দত্তপুকুরের নামবো তাই দত্তপুকুরে স্টপেজ দিলো। শুভ আমাকে আনার জন্য বাস স্ট্যান্ডে ওয়েট করছিলো। তবে সেখান থেকে সোজা আমি ননদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, কারণ ননদ আমাকে মাছ আনতে বলেছিলো।

IMG_20240608_011140.jpg
"প্যাকিং করা কাঁকড়া মাছ"
IMG_20240608_011247.jpg
"প্যাকিং খোলার পরবর্তী অবস্থা, বরফ তখনও সম্পূর্ণ গলেনি"
IMG_20240608_011328.jpg
"কাঁকড়া মাছ"

সেটাই আমি প্যাকিং করিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। ননদ মাছটা খুলে দেখে নিলো ভালো আছে কিনা এবং তারপর ফ্রীজে রেখে দিলো। সেদিন ননদের বাড়িতেই একটু ভাত খেয়ে, তারপর সবার সাথে গল্প করে বাড়িতে এসেছিলাম। এইভাবেই শেষ হয়েছিল আমাদের দীঘা‌‌ সফর।

সত্যি কথা বলতে ওই দুইদিন এত আনন্দ করেছিলাম যে বেশ কিছুদিনের মানসিক অবসাদ কাটিয়ে উঠেছিলাম সম্পূর্ণভাবেই। এমনকি আজও ওই দিনগুলি সম্পর্কে ভাবলে, আনন্দে ভরে ওঠে মনটা।

আপনাদের কেমন লাগলো আমার সম্পূর্ণ দীঘা ভ্রমনের অভিঞ্জতা পড়ে ও ছবি দেখে, তা জানাতে ভুলবেন না। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং আনন্দে থাকবেন। শুভরাত্রি।

Sort:  
 2 months ago 

দিদি আপনার দীঘা ভ্রমনের অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে ভাগ করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আজ আপনার ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। কেননা আপনার মোহনা দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো। জীবনে এমন কিছু মহুর্ত সত্যি আমাদের মানসিকভাবে চাঙ্গা করতে সাহায্য করে। যেকোন স্থান ভ্রমন যেমন আনন্দের তেমনি শিক্ষনীয় বটে। আপনি নিশ্চই আনন্দ যেমন উপভোগ করেছেন তেমন নতুন কিছু শিখতেও পেরেছেন এই স্থানটিকে ঘীরে।

যাইহোক দিদি, আমি কখনো সমুদ্রের পারে যাইনি। তবে আমারো প্রবল ইচ্ছা কোন একদিন সমুদ্র পারে যাবো। নিজেকে প্রকৃতির মাঝে বিলিয়ে দেবো। টিভিতে সমুদ্র দেখে অভ্যস্থ। জানিনা বাস্তবে এর সৌন্দর্য কতটা আমাকে মুগ্ধ করবে।

দীঘা ভ্রমনে গিয়ে আপনি আমাদের বিভিন্ন মাছের সাথে পরিচয় করে দিয়েছেন। সামুদ্রিক মাছ পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকে এবং খেতেও অনেক সুস্বাদু হয়। ধন্যবাদ দিদি দারুন একটি মহুর্ত আমাদের সাথে ভাগ করার জন্য। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইলো।

 2 months ago 

সমুদ্রের সৌন্দর্য্য নিশ্চয়ই আপনাকে মুগ্ধ করবে এবিষয়ে আমি নিশ্চিত। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি আপনিও সমুদ্র দর্শন করতে পারবেন। একথা সত্যি যে সমুদ্র হোক না পাহাড়, যেকোনো স্থানে নিজের বন্ধুদের সাথে ভ্রমণ আমাদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা করে। সামুদ্রিক মাছ অনেক উপকারী ঠিকই, তবে আমার মাছ একেবারেই অপছন্দ। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন।

Loading...
 2 months ago 

আমরা বিগত পোস্টেই অবগত হয়েছি আপনার দীঘায় ঘুরতে যাওয়া নিয়ে। সত্যি আপনার মনে হয় যাওয়ার ছবিগুলো দেখে আমারও যাইতে ইচ্ছে করতেছে। আপনার তোলা ফটোগ্রাফি গুলো খুব সুন্দর হয়েছে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই মোহনার সূর্যটা দেখার জন্য প্লান ছিল।
আপনার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে মনে হল বেশ আনন্দ করেছেন।

আপনার ঘুরতে যাওয়ার সর্বশেষ পর্ব শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 months ago 

হ্যাঁ মেঘের জন্য মোহনায় সূর্যোদয় দেখা হয়নি, তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে রৌদ্র দেখে খারাপই লাগছিলো। এই একটি জিনিস বাদে বাকি সব কিছু খুব ভালো ছিলো। যদিও আমি ফটোগ্রাফার নই, তবে মুহুর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করেছি। সেগুলো আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ভালো থাকবেন।


Oh yes!
We support ANY quality post and good comment
ANYWHERE and at ANYTIME
Curated by : @patjewell

 2 months ago 

Thank you for mach @patjewell ma'am for your support. 🙏

Pleasure! 🎕

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 68255.87
ETH 3271.92
USDT 1.00
SBD 2.68