হারিয়ে যাওয়া-"মেয়েবেলা"
![]() |
---|
Edited by canva |
---|
Hello,
Everyone,
শুভ সকাল।
কেমন আছেন আপনারা সকলে?
আশা করছি সকলে খুব ভালো আছেন,সুস্থ আছেন। আপনাদের প্রত্যেকের আজকের দিনটি অনেক ভালো কাটুক, এই কামনা রইল।
কাল রাতে ফোনের গ্যালারি ঘাটতে ঘাটতে কয়েকটা ছবি চোখে পড়ল। তাই ভাবলাম আজকে এই বিষয়েই কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
আপনারা সকলেই জানেন আমাদের দেশে বিয়ের পরে প্রত্যেক মেয়েকেই তার স্বামীর ঘরে চলে যেতে হয়। না এটা বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটাই প্রচলিত নিয়ম বা সংস্কার যাই বলুন না কেন।
যে বাড়িতে জন্মের পর থেকে বেড়ে ওঠা, সেই বাড়িটা একটা সময় অচেনা হয়ে ওঠে। আবার যদি অন্য দিক থেকে ভাবা হয় তাহলে দেখবেন, যে বাড়ির সম্পর্কে বিন্দুমাত্র কোনো ধারণা ছিল না, জন্মের পর থেকে হয়তো সেই বাড়িতে কখনো তার যাওয়াই হয়নি, বিয়ের পর সেই রকম একটা বাড়িতে গিয়ে মেয়েরা শুধু যে সেই বাড়িটাকে আপন করে এরকম নয়, বাড়িতে থাকা প্রত্যেকটি মানুষকে আপন ভেবে, তাদের সঙ্গে থাকতে শুরু করে।
একদিকে যে চির চেনা-পরিচিত বাড়ি ছেড়ে নতুন একটা বাড়িতে, নতুন একটা পরিবেশে গিয়ে থাকা, এটা আমাদের মনে ঠিক কিরকম অনুভূতির সৃষ্টি করে, সেটা হয়তো ছেলে হিসেবে আপনাদের কারোর পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। আমি একবারও বলবো না যে সকলের সাথে এটা হয়, এর মধ্যে অনেক ব্যতিক্রমও রয়েছে। তবে বেশিরভাগ মেয়েদের ক্ষেত্রে কিন্তু এটাই সত্যি।
আপনারা অনেকেই হয়তো ভাবছেন আজকে হঠাৎ আমি এই কথা কেন বলছি? আসলে এইবার আমি যখন বাড়িতে গিয়েছিলাম, তার ঠিক একদিন আগে বাঙালির একটা বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল, সেটি সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানেন যার নাম "জামাই ষষ্ঠী"।
এই দিনে বাঙালির ঘরের প্রত্যেক মেয়ে তার স্বামীর সঙ্গে বাপের বাড়িতে আসে এবং সেখানে ছেলেটি তার শ্বশুরবাড়িতে অনেক আদর যত্ন পায়। এই বিশেষ দিনটিকে শুধুমাত্র জামাইদের জন্যই সেলিব্রেট করা হয়। সারা বছর মেয়েরা বাপের বাড়িতে না গেলেও, একটা দিনে মেয়েরা বাপের বাড়িতে যেতে না পারলে মনটা খারাপ হয়।
আমার ক্ষেত্রে সেরকম কোনো ব্যাপার নেই, যেহেতু আমার মা বেঁচে নেই। তাই শুভকে আলাদা করে জামাই আদর করার মতন আমাদের বাড়িতে কেউ ছিল না। এই কারণে আমাদের জামাই ষষ্ঠী কোনদিনও পালিত হয়নি। যেহেতু আমার মা আমার বিয়ের আগেই পরলোক গমন করেছেন। সে দিক থেকে শুভর ভাগ্য কিছুটা খারাপ বলা যায়।
যাইহোক আমাদের গ্রামের আশেপাশের প্রতিটি বাড়িতে সকলের সঙ্গেই আমাদের মোটামুটি সুসম্পর্ক থাকে এবং ছোটবেলা থেকে যাদের সঙ্গে বড় হয়ে ওঠা, তারা যে সব সময় নিজের বান্ধবী হবে এমন নয়। অনেকেই আছে যারা আমাদের থেকে বয়সে একটু বড়, আবার অনেকেই আছে যারা আমাদের থেকে বয়সে একটু ছোট।
![]() |
---|
এই রাস্তা দিয়েই একসময় আমরা স্কুলে যেতাম, তাই সেখানেই দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম |
---|
কিন্তু আমাদের বেড়ে ওঠাটা কিন্তু একই সঙ্গে। কারণ একই সাথে স্কুলে যাওয়া, টিউশন পড়তে যাওয়া সুতরাং ছোটবেলা থেকে তাদের সাথে কাটানো এমন অনেক মুহূর্ত আছে, যেগুলো আজীবন মনের কোণে থেকে যাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল বড় হওয়ার সাথে সাথে এক এক করে যখন সকলের বিয়ে হয়ে যায়, তখন কিন্তু প্রত্যেকে নিজের শ্বশুরবাড়িতে চলে যায় এবং একটা সময় তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয় না।
হয়তো কখনো কখনো এক দুজনের সঙ্গে দেখা হয়,কিন্তু সকলের সঙ্গে একসাথে দেখা হওয়াটা খুবই কম হয়।সৌভাগ্যক্রমে এই বছর আমি এমন দিনেই বাড়িতে গিয়েছিলাম যে,প্রত্যেকেই তখন বাপের বাড়িতে এসেছিল জামাই ষষ্ঠী উপলক্ষে। তাই বহু বছর পরে প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা হয়েছে। যদিও দুজন আমার যাওয়ার আগেই শ্বশুরবাড়িতে ফিরে গিয়েছিল।তাই তাদের সঙ্গে আর দেখা হয়নি।
মেয়েদের জীবন আসলে এরকমই হয়। অথচ ছেলেদের জীবনটা বড্ড অন্যরকম। তারা ছোট থেকে যে বাড়িতে বড় হয়, সেই বাড়িতেই আজীবন থাকে। ছোটবেলা থেকে যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, তারাই তাদের সারা জীবনের বন্ধু থাকে। হ্যাঁ কর্মক্ষেত্রে হয়তো অনেকে বাড়ি থেকে বাইরে থাকে। কিন্তু তাদের শিকড় এক জায়গাতেই থাকে।
কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে সেটা কখনোই সম্ভব হয় না। এই কারণেই কথায় আছে, মেয়েদের নিজস্ব কোন বাড়ি হয় না। ছোটবেলা থেকে যেখানে বড় হলাম, পড়াশোনা করলাম, একটা সময় বুঝতে পারি, সেখানে সারা জীবন থাকা সম্ভব হবে না। আবার শুরু হয় জীবনের একটা পরিবর্তন। নতুন জায়গা, নতুন বাড়ি, নতুন মানুষ, নতুন করে আবার কিছু সম্পর্ক তৈরি করা। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। তবে হ্যাঁ বর্তমানে অনেকের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে।
এবার যখন বাড়ি গিয়েছিলাম তখন ভেবেছিলাম,শুধুমাত্র খারাপ লাগাই ঘিরে থাকবে আমাকে, কিন্তু না বেশ কিছু ঘটনা কিন্তু আমাকে আনন্দ দিয়েছে।ছবিতে আপনারা যাদেরকে দেখতে পারছেন এদের মধ্যে দুজনের সঙ্গে আমার প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর বাদে দেখা হল।
এমনটা নয় যে এর মধ্যে আমরা গ্রামে যাইনি। হয়তো আমি যখন গিয়েছি,তখন সে আসেনি। অথবা সে যখন এসেছে, তখন আমি যাইনি। কিন্তু একটা সময় এরকম ছিল আমরা হয়তো দশ ঘন্টাও কেউ কাউকে না দেখে,কেউ কারোর সঙ্গে কথা না বলে কাটাইনি। এটাই মেয়েদের জীবন।
![]() |
---|
ঠিক কি কথার পরিপ্রেক্ষিতে মনে নেই, তবে অনেকদিন বাদে এমন প্রান খুলে হেসেছি |
---|
এইদিন আমরা সকলে বিকালে মাঠের রাস্তায় হাঁটতে গিয়েছিলাম। সেই সময় সকলে প্রান খুলে হেসেছি, স্কুল জীবনের বিভিন্ন মজার কথা মনে করেছি,একে অপরের জীবনের কথা জেনেছি,অনেক ভালো মুহূর্ত আমরা কাটিয়েছি। ঠিক যেমনটা আপনারা আমাদের ছবিতে দেখতে পারছেন। অনাবিল হাসিতে আমরা ভরে আছি।
আসলে মেয়েবেলা বড্ড তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায়। মেয়ে থেকে কখন বউ,বৌমা,মা হয়ে উঠে বুঝতেই পারি না।আমাদের মেয়েবেলা আমরা অনেক পেছনে ফেলে এসেছি। যেখানে অনেক স্মৃতি মনের কোণে জমা হয়ে আছে এবং আজীবন থেকে যাবে তবে। হ্যাঁ কখনো কখনো মনে হয় মেয়ে হয়ে জন্মানোটা বোধহয় অভিশাপ। আবার কখনো কখনো যখন এটা ভাবি মেয়েদের ছাড়া এই পৃথিবীর সৃষ্টি সম্ভব নয়, তখন মেয়ে হিসেবে গর্ব হয় বৈকি।
তবে হ্যাঁ আজকাল যুগ বদলেছে,যোগাযোগের মাধ্যম বেড়েছে, তাই আপনাদেরকে অনুরোধ করব ছোটবেলার বা স্কুল জীবনের বান্ধবীদের হারিয়ে যেতে দেবেন না। ব্যস্ততা আমাদের সব সময় থাকবে,তার মধ্যে থেকেও নিজের মেয়েবেলাটাকে বাঁচিয়ে রাখবেন।
সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
সত্যি কথা বলতে এই বিষয়টা আমার জানা ছিল না! আপনার পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম! জামাই ষষ্ঠীতে মেয়েরা বাপের বাড়িতে না যেতে পারলে,, কষ্ট পায়।
আপনি দেখলাম আপনার পোস্টে লিখেছেন!মেয়েদের নিজেদের বলতে কোন বাড়ি থাকে না। এই কথাটা একদম সত্য! কিন্তু আমি তার সাথে আরেকটা কথা বলব! অনেকেই কথাটা বলে থাকে, যে মেয়েদের নিজের বলতে কোন বাড়ি নেই! কিন্তু মেয়েদেরকে ছাড়া কোন বাড়ি পরিপূর্ণ হয় না।
আপনি যে মেয়ে বেলাটা আমাদের সাথে তুলে ধরেছেন! সেটা হয়তোবা আমার চেষ্টা করলেও আর কখনোই ফিরে পাবো না! কিন্তু আপনারা দেখলাম বেশ আনন্দ উল্লাস করেছেন,, সবাই মিলে।
এক কথায় আপনার পোস্ট পড়ে,, আমার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল! সেই দিনে আমরা সবাই মিলে অনেক আনন্দ করতাম! অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে,, এত সুন্দর একটা টপিক আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য! ভালো থাকবেন।