Better life with steem || The Diary Game || 05th July, 2024 || হসপিটালে কাটানো একটি দিনের গল্প
|
---|
Hello,
Everyone,
নিজের জীবন নিয়ে আমাদের অনেক অভিযোগ থাকে। কখনো কখনো নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে অসহায় মানুষ মনে হয়। মনে হয় যেন আমার থেকে খারাপ পরিস্থিতিতে এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই।
তবে এই সমস্ত ধারণাগুলো বদলে যায় যখন হসপিটালে গিয়ে কিছু সময় কাটাতে হয়। তখন একবার হলেও মনে হয়, যেমন আছি বেশ ভালো আছি। আমার থেকেও খারাপ পরিস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ রয়েছে।
প্রকৃত অর্থে অসহায়তা কাকে বলে সেটা বোধহয় সেই মানুষগুলিকে দেখে আমরা অনুভব করতে পারি, যারা রৌদ্র, ঝড়, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হসপিটালের বাইরে কাটিয়ে দেয় দিনের পর দিন, শুধুমাত্র প্রিয় মানুষের সুস্থতার অপেক্ষায়। আমি কোনো বেসরকারি হসপিটাল বা নার্সিংহোমের কথা বলছি না। আমি কথা বলছি সরকারি হাসপাতালের যেখানে চারিদিকে এমন অসহায়তার চিত্র চোখে পড়ে প্রায়শই।
গতকাল ঠিক এমন একটা দিন কাটিয়েছি আমি। আজ সেই গল্পই উপস্থাপন করবো এই পোস্টের মাধ্যমে। চলুন তাহলে শুরু করি, -
"সকালবেলা"
গত পরশুদিন রাত ৮টার ট্রেন ধরে আমি দিদি বাড়িতে গিয়েছিলাম। বাবার শরীরটা একটু খারাপ, তার সাথে আমার দিদির মেয়ের শরীরও। অন্যদিকে সেদিন দিদির নাইট ডিউটি ছিলো। যেহেতু দিদির হাজব্যান্ড নিজেই অসুস্থ। তাই সবাইকে একসাথে রেখে ডিউটিতে যেতে দিদির একটু ভয় লাগছিলো। সেই কারণেই রাতের বেলায় আমার ছুটে যাওয়া।
যেহেতু আমি রাতে ছিলাম, তাই দিদিও বললো যদি পরদিন সকালে দাদাকে নিয়ে আমি হসপিটালে যেতে পারি, তাহলে দাদার এমআরআই সেদিন করিয়ে নেবে। আর কয়েকদিন বাদেই দাদা অপারেশন করার ডেট পড়বে, তার আগেই এই সমস্ত টেস্টগুলো করিয়ে ডক্টর দেখানোর প্রস্তুতি চলছে।
যাইহোক সেই মতো গতকাল সকাল ৫:৫০ এ ঘুম থেকে উঠলাম। কারণ দিদির মেয়ের স্কুল গাড়ি আসে ৬.৩৫ মিনিটে। এর মধ্যে ওকে রেডি করে, ওর টিফিন তৈরি করে দিতে হয়। যেহেতু বাচ্চা মানুষ ঘুম থেকে উঠতে চায় না, তাই একটু কষ্ট করেই ওকে ঘুম থেকে তুলে রেডি করে দিতে হয়। আমাদের বেরোনোর কথা ছিলো ৭ টায়। তবে সমস্ত কিছু রেডি করে ৭.১০ নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম দাদাকে নিয়ে।
উবেরের মাধ্যমে গাড়ি বুক করে ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম হসপিটালে। ততক্ষণে দিদির নাইট ডিউটি শেষ হয়ে গিয়েছে। আমরা পৌঁছানোর পর সোজা গেলাম এমআরআই করার জন্য যেখানে টিকিট কাটা হয় সেখানে। দিদি তখনও পর্যন্ত ড্রেস খোলেনি,,যাতে সেখানে গিয়ে একটু আগে লাইন পাওয়া সম্ভব হয়।
কারণ অফিসের স্টাফদের জন্য আলাদা লাইন থাকে।সেখানে গিয়ে কাগজপত্র জমা করার পর, দিদি এসে বলল ভোর ৪.৩০ থেকে এমআরআই করার লাইন পড়েছে। তাই বেশ কিছুটা লেটেই আমাদের ডাক পড়বে। সেখান থেকে দিদির ওয়ার্ডে গিয়ে, ওর রুমে বসে সকালের খাওয়া-দাওয়া শেষ করলাম।
বেশ কিছুক্ষণ সেখানে দাদাকে বসিয়ে রেখে, দিদি ওর অফিসের কিছু কাজ শেষ করে নিলো। এরপর আমরা আবার এসে নিচে অপেক্ষা করলাম। গতকাল বেশ গরমও পড়েছিল আর দাদাকে নিয়ে সত্যিই যে কোনো জায়গায় বসে থাকাটা বেশ কষ্টের। কারণ দাদাও শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ নয়।
এরপর দিদি আমাদেরকে নিয়ে তাই সাইক্রেটিক বিভাগের ওখানে গিয়ে বসলো। যেখানে সুন্দর একটা ছোট্ট বাগান ছিল এবং সুন্দর হাওয়াও ছিলো। আর সেখানে বসার জন্য সুন্দর জায়গাও বানানো ছিলো। সেখানে বসেই আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম আমাদের সময়ের জন্য।
"দুপুরবেলা"
দেখতে দেখতে অনেকটা সময় সেখানে পেরিয়ে গেলো। সেখানে বসে দেখতে পেলাম সামনে অনেক মানুষের ভিড়, যারা সেখানে মানসিক চিকিৎসার জন্য এসেছে। ছোট বাচ্চা থেকে বয়স্ক মানুষ, প্রত্যেকেরই যে কত রকম সমস্যা সেটা সেখানে থেকে খানিকটা বোঝার চেষ্টা করলাম।লাগছিল
বেশ কিছু পেশেন্টদেরকে দেখে এতটা অসহায় মনে হচ্ছিলো যে, সেই মুহূর্তে নিজেকে সব থেকে বেশি সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছিলো। যেখানে ঈশ্বর আমাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রেখেছেন।
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর, আমরা এসে খোঁজ নিলাম আমাদের ডাক কেন পড়ছে না। পরে জানতে পারলাম তখনও প্রায় ২৫ মিনিট আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তাই সেখান থেকে আমরা আর অন্য কোথাও না গিয়ে, এমআরআই রুমের সামনে বসার জায়গাতে অপেক্ষা করলাম। বেশ কিছুক্ষণ বাদে দিদি এবং দাদাকে ভিতরে ডাকলো। বাইরে আমি অপেক্ষা করলাম।
একা বসে চারপাশের মানুষের অসহায়তার ছবি দেখছিলাম। আর তার সাথে কমিউনিটির কাজগুলোও। অপেক্ষা অবসান হল প্রায় ঘন্টা দুয়েক বাদে। দিদিরা বেড়ানোর পর জানতে পারলাম এমআরআই কমপ্লিট হয়েছে এবং তখন আমরা বাড়ি উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারি।
তবে আরও কিছু কাগজের কাজ বাকি ছিলো। দিদি সেগুলো সেরে নিল তারপর আমরা আবার উবের বুক করে বাড়ির পথে রওনা হলাম। হাসপাতালে পৌঁছানোর সময় এবং আসার সময় কলকাতার বিভিন্ন জায়গার ছবি আমি তুলেছি। সেগুলো শেয়ার করলাম আপনাদের সাথে।
"সন্ধ্যাবেলা"
দিদি বাড়ি পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে আমাদের বেশ বেলা হয়ে গিয়েছিলো। তারপর একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য শুয়েছিলাম। যেহেতু সন্ধ্যাবেলায় আমাকে বাড়িতে ফিরতে হবে এবং ট্রেনে থাকবো। তাই তখনই বুমিং সংক্রান্ত কাজ কিছুটা এগিয়ে রাখলাম।
এরপর দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। তিতলির দিদিমণি তিতলিকে পড়াতে এসেছিল। ও পড়তে বসলো আর আমিও রেডি হয়ে নিলাম। দিদি গতরাতে সারাক্ষণ জেগেছিল যেহেতু নাইট ডিউটিতে ছিলো। বাড়িতে এসে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ও ঘুমিয়ে পড়েছিলো, যেটা খুব স্বাভাবিক। ও এতটাই ক্লান্ত ছিল যে ওকে আমি আর ডাকিনি। তাই দাদাকে আর বাবাকে বলে আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। বাড়ি ফিরতে আমার প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেলো।
"রাত্রিবেলা"
বাড়িতে ফিরে কিছুক্ষণ সবার সাথে কথা বললাম, কারণ শুভ মাসিরা ছিলো আমাদের বাড়িতে। তারা দাদার বিষয়ে জানতে চাইছিলো। মিনিট দশেক সময় কাটিয়ে তারপর আমি গেলাম স্নান করতে। স্নান করে আসার পর এতটা ফ্রেশ লাগছিল যে, শুয়ে বিশ্রাম নিতে গিয়ে আমি প্রায় ঘুমিয়ে পড়ছিলাম।
তারপর আবার উঠে বসলাম। কমিউনিটির কাজ দেখলাম। গতকাল রাতে আমি আর কোনো কিছু রান্না করিনি। শাশুড়ি মা সেরে নিয়েছিলেন। এমনকি পিকলুকেও শুভ রাতে খেতে দিয়ে দিয়েছিলো।
তারপর আমরা সকলেও খেয়ে নিলাম এবং আমি বসলাম কমিউনিটের কাজ নিয়ে। কাজ শেষ করে প্রায় রাত দেড়টার পর ঘুমাতে গেলাম। এই ভাবেই গতকাল দিনটা কেটেছে আমার। ভালো থাকবেন সকলে।
সমস্যা যখন আসে তখন হয়তো একসাথে আসে। এদিকে বাড়িতে আপনার শ্বশুর অসুস্থ ছিল কয়েকদিন আগে। আর এখন বাবা ও দিদির মেয়েও অসুস্থ তাই সেখানে গিয়ে আপনি ভালো করেছিলেন। এসময় আপনার সাহায্যের দরকার আপনার দিদির।
দিদি, এটা কিন্তু ঠিকই বলেছেন। আমাদের আশেপাশে অনেক মানুষ বাস করে যারা সুস্থভাবে জীবন কাটাতে পারে না। এসব দেখলে সত্যি নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়, অন্তত আমরা ভালভাবে জীবন কাটাতে পারছি । মানসিকভাবে ভারসাম্য মানুষগুলো পৃথিবীর সব থেকে অসহায় মানুষ। ভালো থাকবেন।
একদম সঠিক কথা, খারাপ সময় বোধহয় একসাথেই আসে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। আমার ক্ষেত্রে এমনটাই হচ্ছে গত বছর থেকে, জানিনা এর শেষ কবে হবে। তবে একটার পর একটা ঘটনা ঘটেই চলেছে জীবনে। কিন্তু এই সব কিছুর পরেও, সেই সকল মানুষদেরকে দেখলে নিজেকে বেশ ভাগ্যবান মনে হয়, যারা হাসপাতালে শারীরিক ও মানসিক ভাবে লড়াই করে চলেছে। ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে। ভালো থাকবেন।
Thank you for your support @pelon53 Sir and @steemcurator08. 🙏
আমাদের সকলের উচিত মাঝে মাঝে হাসপাতাল থেকে ঘুরে আসা, তাহলে আমাদের জীবন নিয়ে আর কোন অভিযোগ থাকবে না, আমরা তখন বুঝতে পারব আমাদের থেকেও অনেক মানুষ বেশি বিপদে আছে, আপনার সারাদিনের কার্যক্রম খুব ভাল লেগেছে, মানুষ ক্লান্ত হওয়ার পর যখন গোসল করে তখন শরীরটা অনেক হাল্কা হয়ে যায়, এবং শরীরের ক্লান্তি অনেক অংশে কমে যায়, ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট করার জন্য।
জীবনের প্রতি অভিযোগ থাকলে আমাদের সব সময় নিজের থেকে যারা খারাপ পরিস্থিতিতে আছে, তাদেরকে দেখে নিজের জীবনের প্রতি ও ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। সত্যিই হাসপাতালে গেলে মনটা বড় খারাপ হয়ে যায়। শারীরিকভাবে সেদিন কতখানি ক্লান্ত ছিলাম সত্যিই জানিনা, তবে মানসিক ক্লান্তি ছিলো অনেকখানি। আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।
ঠিক বলেছেন হসপিটালে গেলে বোঝা যায় যে আমরা কতটা সৌভাগ্যবান। অসহায় মানুষগুলো ও তাদের সাথে থাকা লোকজন এর দূর্দশা দেখলে দমবন্ধ হয়ে আসে।
লেখাটা পড়ার আপনার দিদির অবস্থা চিন্তা করতে ছিলাম যে এতগুলো অসুস্থ মানুষ ও নিজের ডিউটি সব কিছু সামাল দেয়াটা খুবই কস্টকর।
এর মাঝে আপনি আপনার দিদির কাছে গিয়ে থাকায় এবং আপনার দাদাকে নিয়ে হসপিটালে যাওয়ায় তার কিছুটা হলেও উপকার হয়েছে।
এতকিছু সামলে বাড়ি ফিরে আপনার ক্লান্ত হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। তবে বাড়ির বাকি সবাই মিলে আপনার কাজ কিছুটা হলেও কমিয়ে দিয়েছে এটা দেখে ভালো লাগলো ।
এটা একদমই ঠিক বলেছেন, হসপিটালে ডিউটি করা আসলে অনেকখানি মানসিক চাপ নেওয়া। বিশেষ করে দিদি বাচ্চাদের সেকশনের সিস্টার ইনচার্জ, তাই বাচ্চাদের কান্নায় সারাক্ষন ভরে থাকে ওর ওয়ার্ড। যেটা ওর কাছে আরও বেশি কষ্টের। সেই সমস্ত কিছু পার করে আসার পর বাড়িতে যদি এমন অসুস্থ মানুষ থাকে, আর তাকে নিয়ে এমনভাবে হসপিটালে দৌড়ে দৌড়ে করতে হয়, সেটা আরও অনেকখানি বেশি কষ্টদায়ক। হ্যাঁ সেদিন বাড়িতে এসে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। আর বাড়ির সকলের কারণে কিছু সময় বিশ্রামও পেয়েছিলাম। ভালো লাগলো মন্তব্য পড়ে। ভালো থাকবেন।
সবার প্রথম আপনাকে ধন্যবাদ জানাই আমাদেরকে এত সুন্দর একটি পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য। আসলে আমাদের মধ্যে মাঝে মাঝে এমন সময় আসে, যখন নিজেকে সবচাইতে অসহায় মানুষ মনে হয়। মনে হয় পৃথিবীতে সবচাইতে খারাপ আমি আছি। আপনি ঠিকই বলেছেন, যখন আমরা হসপিটালে গিয়ে কিছু সময় থাকি তখন আসলে আমরা বুঝতে পারি। যে আমাদের চাইতেও অসহায় হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকা মানুষগুলো। হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকা মানুষের চেয়ে আমরা অনেক ভালো আছি। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোষ্ট উপহার দেওয়ার জন্য, ভালো থাকবেন।
একদমই তাই, আমাদের প্রত্যেকের মনেই কখনো না কখনো এই অনুভূতি আসে যে এই পৃথিবীতে আমি সব থেকে খারাপ আছি। তবে এই অনুভূতিগুলো সবটাই শেষ হয়ে যায় যখন বাস্তব চিত্রগুলো আমাদের সামনে আসে। আপনি আমার পোস্টটি পড়েছেন জেনে সত্যিই ভালো লাগলো, আর আপনার মন্তব্য পড়েও আমি বেশ খুশি হলাম। ভালো থাকবেন।
সত্যিই দিদি আমিও আপনার মত কিছুদিন আগে হাসপাতালে সারাদিন কাটিয়ে আসলাম। হাসপাতালে কত মানুষের কত রকম সমস্যা ।সেগুলো আমি নিজের চোখে দেখলাম। সেগুলো দেখে আমি নিজেই মানসিক দিক থেকে এখনো ঠিক হয়ে উঠতে পারিনি। আপনার সারাদিনের কাজকর্ম শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
হ্যাঁ আপনার পোস্টে পড়েছিলাম আপনার দিদাকে নিয়ে যেদিন হসপিটালে থাকতে হয়েছিল ঐদিনের অভিজ্ঞতার কথা। আসলে হসপিটাল জায়গাটাই এমন, সেখান থেকে বাড়িতে ফিরে এলেও, ওখানকার দৃশ্যগুলো যেন কিছুতেই চোখের সামনে থেকে সরতে চায় না। ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্ট পড়ার জন্য। ভালো থাকবেন।