"আরও একবার পুরোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি "

in Incredible Indialast year
IMG_20241118_125417.jpg
"কঠিন মুহুর্ত"

Hello,

Everyone,

ঘড়িতে সকাল ৯.৫৪। এস এস কে এম হসপিটালের নিউরো সার্জারি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারের বাইরে বসে আছি এই মুহূর্তে। সামনে স্ট্রেচারে শুয়ে আছে দাদা। যাকে আপ্রাণ সাহস যোগাচ্ছে দিদি। অথচ দিদির মনের ভিতরে না জানি কতো উথাল পাতাল চলছ এই মুহূর্তে।

IMG_20241118_084636.jpg
"অপারেশন থিয়েটারের বাইরে অপেক্ষারত আমরা"

পরিস্থিতি মানুষকে কোথায় এনে দাঁড় করাবে সেটা আমরা কেউ জানিনা। মাঝে মধ্যে নিজেকে দেখে অবাক হই। আমি নিজে কখনো এইভাবে হসপিটালে বসে থাকতে পারবো, ভাবিনি। অথচ কি অদ্ভুত দেখুন আজ সমস্ত ভয় কাটিয়ে, দিব্যি স্যালাইনের বোতল, দাদার রিপোর্ট সবকিছু নিয়ে বসে আছি।

আমার পোস্ট যারা নিয়মিত পড়েন, আপনারা সকলেই জানেন, আমার জামাই বাবু হসপিটালে ভর্তি হয়েছিলেন কয়েকদিন আগে। আজ তার সার্জারির ডেট পরেছে। ভোর বেলায় বাড়ি থেকে বেড়িয়েছি।

কেবিন থেকে অনেকক্ষণ দাদাকে নিয়ে এসেছে অপরেশনের থিয়েটারের বিল্ডিং এ। তাই এখানেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে আমাদের। দিদি ভিতরে গিয়ে জেনে এসেছে, ডক্টর আসতে একটু লেট হবে। তাই আমরা অপেক্ষা করছি।

IMG_20241118_123514.jpg
"লিফ্টের পাশেই বসার জায়গা"

একটু বাদেই লিফ্টের দরজ খুললো। স্ট্রেচারে করে আরও একটি পেশেন্ট নিয়ে এলো। বাড়ির লোকের সাথে কথা বলার মাধ্যমে জানতে পারলাম, ঐ পেশেন্টের কোমরে অপরেশন হবে।

IMG_20241118_112136.jpg
"এই পেশেন্টকে দেখেই কিছুটা ভয় পেয়েছি "

কারন, ওনার কোমড়ের হাড় ভেঙে গিয়েছে উঠানে পরে গিয়ে। ওনার কথা শুনে এক মুহুর্তে আমি যেন আমার কোমড়ের ব্যাথা অনুভব করলাম। সত্যি কি বিপদ হতে পারতো আমার, যদি বাথরুমে পরে গিয়ে হাড়ে চোট পেতাম। ঈশ্বর কৃপা করেছেন বলে, শুধুমাত্র ব্যাথা সহ্য করতে হচ্ছে, হাড় ভাঙার যন্ত্রনা নয়।

এইসব ভাবতেই ভাবতেই অপারেশন থিয়েটার থেকে একজন নার্স ডাকলো পেশেন্ট নম্বর ৩০২। আমি দিদির দিকে তাকাতেই দিদি ইশারায় বোঝালঝ দাদার নয়, পাশের পেশেন্টের নম্বর ৩০২। তাই আবার কথাবার্তা বলতে শুরু করলাম আমরা।

আমার যদিও এখন একটু অস্থির লাগছে এখানে বসে। একটু টেনশন হচ্ছে, একটু ভয় লাগছে সবকিছু মিলিয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি। তাই ভাবলাম একটু পোস্ট লিখি। মনটা অন্যদিকে ঘোরানো দরকার। কিন্তু মনকে যা ভাবতে বারন করা হয়, সেটাই ভাবে বারবার।

IMG_20241118_085008.jpg
"দাদার মনে সাহস যোগাতে ওনার সাথে গল্প করছে দিদি "

আজ থেকে একবছর আগে যা পরিস্থিতি দেখেছিলাম দাদার, পুনরায় আবার তেমন দেখতে হবে কিনা এটা ভেবেই মন খারাপ হচ্ছে। আবার মনকে এটাও বোঝাচ্ছি, আমার যদি এমন লাগে তাহলে দিদির মনে কি চলছে। কারন তখন একমাস দাদাকে আইসিইউতে ও সর্বক্ষণ দেখেছে।

সেই সময় দিদি আমাদের কিছু না বললেও, পরবর্তীতে শুনেছি কতটা খারাপ পরিস্থিতিতে ছিলো। মাঝে ৫-৬ দিন এমন পরিস্থিতি ছিলো যখন দিদিও হার মেনে নিয়েছিলো। তখন দিদি ভিতরে গিয়ে শুধু দাদাকে তিতলি ও তাতানের গলার শব্দ শোনাতো, যেগুলো ও বাড়ি থেকে ফোনে রেকর্ড করে আনতো। আর বলতো ওরা তোমাকে ডাকছে, বাড়ি যাবে না তুমি। দাদা অচৈতন্য অবস্থায় মাথা নাড়াতো হ্যাঁ বলে।

আজও কিছুক্ষণ আগে দাদার সাথে তিতলি ও তাতানকে ফোনে কথা বললো দিদি। সন্তানের জন্য বেঁচে থাকার তাগিদ বোধহয় সব বাবা মায়েদের মনের জোড় বাড়ায়। দাদার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি।

IMG_20241118_123953.jpg
"দাদাকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে নেওয়ার পর দুই বোন বসে আছি। প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই"

যাইহোক এখন অপেক্ষা শুধু এই কঠিন সময় পার হওয়ার। ডাক্তার এসে দিদির সাথে কথা বলে নিয়েছেন ইতিমধ্যেই। দাদাকে এইমাত্র ভিতরে নিলো। এখন প্রস্তুতি শুরু হবে। অনেকটা সময় লাগবে জানি। আর অপেক্ষাও দীর্ঘ। তাই ঈশ্বরকে স্মরণ করা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কিছু করার নেই। আপনারাও সকলে একটু প্রার্থনা করবেন দাদার জন্যে। এখন এখানেই শেষ করি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সকলে।

Sort:  
 last year (edited)

@sampabiswas যেকোনো পরিস্থিতি আমাদের জীবনে আসে অনেক কিছু শিক্ষা প্রদানের জন্য, তারমধ্যে কিছু আমরা সাদরে গ্রহণ করি, আর কিছু বিষয়কে আমরা কখনোই চাই না আমাদের জীবনে কখনোই আসুক!

কারণ, সেগুলো এতটাই কঠিন পরীক্ষা যে, সেগুলো পার করলেও তার স্মৃতি অক্ষুন্ন হয়ে রয়ে যায় সর্বদা।

আমার সর্বান্তকরণে প্রার্থনা উনি তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যান।
এর পাশাপশি আরেকটি বিষয়কে সাধুবাদ না দিয়ে নিজের মন্তব্যে ইতি টানতে পারলাম না, আর সেটা হলো যদি কারোর মানবিকতা এবং মানুষ শব্দের প্রকৃত সংজ্ঞা শিখতে হয়, একদিনের জন্য হলেও তোর পাঠশালায় পড়ার প্রয়োজন আছে।

খেয়ে মুখ মুছে ফেলতে হামেশাই দেখি, কিন্তু এখন এমন মানুষ সত্যি বিরল, যারা খেয়ে মুখ মুছে ফেলা মানুষগুলো বিপদে পড়লে নিজেদের ধরে রাখতে পারে না, আবারও ছুটে যায় বিপদের সময় পাশে থাকতে।

মুশকিল হলো, তারা বোঝে না, যারা পাশে থাকে তারা যেমন তাদের ধর্ম পালন করছে, মুখ মুছে কিছু মানুষ তাদের কর্মের খেরো খাতা ভরছে।

কাজেই, আমার বিশ্বাস(মানে তোর উপাধির ন্যায়) শেষ হাসি তারাই হাসে, যারা ধর্ম তথা কর্ম সঠিক রাখতে পারে।

কিছু গুণাবলী তোর মধ্যে যেনো সদাই বিরাজ করে, তবে অবশ্যই কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে বৈকি, কারণ বর্তমান সমাজে নরম মাটিতে পা গেড়ে বসে বেশিরভাগ মানুষ।

আমি চাইনা তুই এতটাও কোমল হবি, সময় মতো লক্ষিরুপী, আর প্রয়োজনে চন্ডি রূপ ধারণ করতে হবে!
তবে হেরে যাওয়া অথবা কখনোই ভেঙে পড়া যাবে না, লড়াইটা চালিয়ে যাবার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা তোকে প্রদান করুক এই কামনা করি।

1000039059.jpg

 last year 

সেটা হলো যদি কারোর মানবিকতা এবং মানুষ শব্দের প্রকৃত সংজ্ঞা শিখতে হয়, একদিনের জন্য হলেও তোর পাঠশালায় পড়ার প্রয়োজন আছে।

  • তোমাকে ধন্যবাদ এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্যে। তবে একটা কথা আমি তোমায় বলতে চাই, উপরের লাইনে তুমি লিখেছ বটে, তবে আমার থেকে শেখার সত্যিই কিছু নেই। বরং আমি তোমার কাছ থেকে প্রতিদিন শিখি। আমার পুরোনো আমির থেকে আজকের আমির মধ্যে যতটা পার্থক্য সবটুকু তোমার জন্যে। না হলে আজও আমি ২০১৯ সালেই পরে থাকতাম। তবে এটাই সত্যি কিছু জিনিস আজও পরিবর্তন করতে পারিনি। কতটুকু পারি জানিনা তবে চেষ্টা করি সঠিক কর্ম করার। তবে ফলের আশায় নয়, আমি এমনই। আমার মানুষ হিসেবে যা করা উচিত মনে হয় তাই করি, ঠিক তোমার মতো।

ripon0630.jpg
Congratulations!!! because your comment has been upvoted by Team 7 using steemcurator09. Curated By <@ripon0630>

ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি আপনার জামাইবাবু তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসুন। আপনি সবসময় দিদির পাশে থাকার চেষ্টা করবেন এবং তাকে সাহস যোগানোর চেষ্টা করবেন কারণ এই সময় কাছের মানুষের খুব প্রয়োজন হয়।

 last year 

আপনার প্রার্থনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ। অবশ্যই চেষ্টা করবো কাছের মানুষগুলোর বিপদে সবসময় তাদের পাশে থাকার। সত্যি বলতে ভালো সময়ে তাদের আনন্দ ভাগ করতে পারি আর না পারি, খারাপ সময়ে কাছে থেকে তাদের কষ্ট, দুঃখ ভাগ করাটা মানবিকতা। এখনও চেষ্টা করি নিজের মধ্যে সেটা বাঁচিয়ে রাখতে। আমার পোস্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্যে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

Loading...
 last year 

সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি আপনার জামাই বাবুর সার্জারির যেনো সুস্থ ভাবে হয়ে যায়। এবং তিনি যেনো খুবই দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। সমস্যা আমাদের জীবনে আসে কিন্তু জীবনের হাল ছেড়ে দিলে হবে না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের অনেক ভাবে পরীক্ষা নিয়ে থাকে। হতে পারে সৃষ্টিকর্তা আপনাদের পরীক্ষা নিচ্ছে সৃষ্টিকর্তার উপরে বিশ্বাস রাখুন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।

 last year 

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই, আমার দাদার জন্য প্রার্থনা করার জন্য। জীবন মানেই তাতে সমস্যা থাকবে, তবে কিছু কিছু পরিস্থিতি আমাদের বড়োই অসহায় করে তোলে। আর আমার ক্ষেত্রে তো যেন একটার পর একটা ঘটনা ঘটেই চলেছে। হ্যাঁ বিশ্বাস তো ঐ একজনের উপরেই আছে, ঈশ্বর ছাড়া অন্য কেউ এই সকল পরিস্থিতি থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করতে পারে না। ভালো থাকবেন।

 last year 

পোস্ট পড়ে জানলাম আপনি এখন অনেক কঠিন খারাপ পরিস্থিতির মাধ্যমে যাচ্ছেন। আল্লাহতালার কাছে দোয়া করি এক কঠিন পরিস্থিতির মাধ্যমে থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।

আসলে কোমরের ব্যথাটা খুবই মারাত্মক আমার হয়েছে সেটা আমি বুঝতেছি কিরকম যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা। হসপিটালে অপারেশনের বাহিরে বসে থাকা কতটা অসহায় যেন সেটা সেটা শুধু যারা বসে থাকে তারাই বুঝে।

আল্লাহ তার কাছে দোয়া করি আপনার বোনের হাজবেন্ড দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান।

 last year 

হ্যাঁ কঠিন পরিস্থিতিই ছিলো বটে, তবে এখন অনেকটাই ভয় কেটেছে। কোমরের ব্যাথা টের পেলাম কয়েকদিন আগেই। তবে হাড় ভাঙার যন্ত্রনা নিঃসন্দেহে আরও তীব্র হয়। গতকাল যার অপারেশন ছিলো, তাকে দেখে বুঝলাম। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ আমাকে অতো বড় বিপদের সম্মুখীন না করার জন্যে। আপনার মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

 11 months ago 

কিছু বিপদ হয়তো বা ক্ষণিকের জন্য খুবই কষ্টকর তবে এর ফল স্বরূপ হয়তো বা উপর আল্লাহ তার জীবনের গুনাহ মাফ করেন ‌‌। ঈশ্বর আমাদের সর্বসময় পরীক্ষা করেন যে আমাদের বান্দা কতটা ধৈর্যশীল।

দোয়া প্রার্থনা করি জামাইবাবু যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন এই সান্তনা দেওয়া ছাড়া আমাদের করণীয় কিছুই নাই ধৈর্য ধরুন ইনশাল্লাহ সুস্থ হয়ে উঠবে খুব দ্রুত।

Coin Marketplace

STEEM 0.07
TRX 0.28
JST 0.034
BTC 100872.22
ETH 3249.55
USDT 1.00
SBD 0.52