"আরও একবার পুরোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি "
|
---|
Hello,
Everyone,
ঘড়িতে সকাল ৯.৫৪। এস এস কে এম হসপিটালের নিউরো সার্জারি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারের বাইরে বসে আছি এই মুহূর্তে। সামনে স্ট্রেচারে শুয়ে আছে দাদা। যাকে আপ্রাণ সাহস যোগাচ্ছে দিদি। অথচ দিদির মনের ভিতরে না জানি কতো উথাল পাতাল চলছ এই মুহূর্তে।
|
---|
পরিস্থিতি মানুষকে কোথায় এনে দাঁড় করাবে সেটা আমরা কেউ জানিনা। মাঝে মধ্যে নিজেকে দেখে অবাক হই। আমি নিজে কখনো এইভাবে হসপিটালে বসে থাকতে পারবো, ভাবিনি। অথচ কি অদ্ভুত দেখুন আজ সমস্ত ভয় কাটিয়ে, দিব্যি স্যালাইনের বোতল, দাদার রিপোর্ট সবকিছু নিয়ে বসে আছি।
আমার পোস্ট যারা নিয়মিত পড়েন, আপনারা সকলেই জানেন, আমার জামাই বাবু হসপিটালে ভর্তি হয়েছিলেন কয়েকদিন আগে। আজ তার সার্জারির ডেট পরেছে। ভোর বেলায় বাড়ি থেকে বেড়িয়েছি।
কেবিন থেকে অনেকক্ষণ দাদাকে নিয়ে এসেছে অপরেশনের থিয়েটারের বিল্ডিং এ। তাই এখানেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে আমাদের। দিদি ভিতরে গিয়ে জেনে এসেছে, ডক্টর আসতে একটু লেট হবে। তাই আমরা অপেক্ষা করছি।
|
---|
একটু বাদেই লিফ্টের দরজ খুললো। স্ট্রেচারে করে আরও একটি পেশেন্ট নিয়ে এলো। বাড়ির লোকের সাথে কথা বলার মাধ্যমে জানতে পারলাম, ঐ পেশেন্টের কোমরে অপরেশন হবে।
|
---|
কারন, ওনার কোমড়ের হাড় ভেঙে গিয়েছে উঠানে পরে গিয়ে। ওনার কথা শুনে এক মুহুর্তে আমি যেন আমার কোমড়ের ব্যাথা অনুভব করলাম। সত্যি কি বিপদ হতে পারতো আমার, যদি বাথরুমে পরে গিয়ে হাড়ে চোট পেতাম। ঈশ্বর কৃপা করেছেন বলে, শুধুমাত্র ব্যাথা সহ্য করতে হচ্ছে, হাড় ভাঙার যন্ত্রনা নয়।
এইসব ভাবতেই ভাবতেই অপারেশন থিয়েটার থেকে একজন নার্স ডাকলো পেশেন্ট নম্বর ৩০২। আমি দিদির দিকে তাকাতেই দিদি ইশারায় বোঝালঝ দাদার নয়, পাশের পেশেন্টের নম্বর ৩০২। তাই আবার কথাবার্তা বলতে শুরু করলাম আমরা।
আমার যদিও এখন একটু অস্থির লাগছে এখানে বসে। একটু টেনশন হচ্ছে, একটু ভয় লাগছে সবকিছু মিলিয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি। তাই ভাবলাম একটু পোস্ট লিখি। মনটা অন্যদিকে ঘোরানো দরকার। কিন্তু মনকে যা ভাবতে বারন করা হয়, সেটাই ভাবে বারবার।
|
---|
আজ থেকে একবছর আগে যা পরিস্থিতি দেখেছিলাম দাদার, পুনরায় আবার তেমন দেখতে হবে কিনা এটা ভেবেই মন খারাপ হচ্ছে। আবার মনকে এটাও বোঝাচ্ছি, আমার যদি এমন লাগে তাহলে দিদির মনে কি চলছে। কারন তখন একমাস দাদাকে আইসিইউতে ও সর্বক্ষণ দেখেছে।
সেই সময় দিদি আমাদের কিছু না বললেও, পরবর্তীতে শুনেছি কতটা খারাপ পরিস্থিতিতে ছিলো। মাঝে ৫-৬ দিন এমন পরিস্থিতি ছিলো যখন দিদিও হার মেনে নিয়েছিলো। তখন দিদি ভিতরে গিয়ে শুধু দাদাকে তিতলি ও তাতানের গলার শব্দ শোনাতো, যেগুলো ও বাড়ি থেকে ফোনে রেকর্ড করে আনতো। আর বলতো ওরা তোমাকে ডাকছে, বাড়ি যাবে না তুমি। দাদা অচৈতন্য অবস্থায় মাথা নাড়াতো হ্যাঁ বলে।
আজও কিছুক্ষণ আগে দাদার সাথে তিতলি ও তাতানকে ফোনে কথা বললো দিদি। সন্তানের জন্য বেঁচে থাকার তাগিদ বোধহয় সব বাবা মায়েদের মনের জোড় বাড়ায়। দাদার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি।
|
---|
যাইহোক এখন অপেক্ষা শুধু এই কঠিন সময় পার হওয়ার। ডাক্তার এসে দিদির সাথে কথা বলে নিয়েছেন ইতিমধ্যেই। দাদাকে এইমাত্র ভিতরে নিলো। এখন প্রস্তুতি শুরু হবে। অনেকটা সময় লাগবে জানি। আর অপেক্ষাও দীর্ঘ। তাই ঈশ্বরকে স্মরণ করা ছাড়া এই মুহূর্তে আর কিছু করার নেই। আপনারাও সকলে একটু প্রার্থনা করবেন দাদার জন্যে। এখন এখানেই শেষ করি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সকলে।
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি আপনার জামাইবাবু তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসুন। আপনি সবসময় দিদির পাশে থাকার চেষ্টা করবেন এবং তাকে সাহস যোগানোর চেষ্টা করবেন কারণ এই সময় কাছের মানুষের খুব প্রয়োজন হয়।
@sampabiswas যেকোনো পরিস্থিতি আমাদের জীবন আসে অনেক কিছু শিক্ষা প্রদানের জন্য, তারমধ্যে কিছু আমরা সদরে গ্রহণ করি আর কিছু বিষয়কে আমরা কখনোই চাই না আসুক!
কারণ, সেগুলো এতটাই কঠিন পরীক্ষা যে, সেগুলো পার করলেও তার স্মৃতি অক্ষুন্ন হয়ে রয়ে যায় সর্বদা।
আমার সর্বান্তকরণে প্রার্থনা উনি তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে নিজের পরিবারের কাছে ফরে যান।
এর পাশাপশি আরেকটি বিষয়কে সাধুবাদ না দিয়ে নিজের মন্তব্যে ইতি টানতে পারলাম না, আর সেটা হলো যদি কারোর মানবিকতা এবং মানুষ শব্দের প্রকৃত সংজ্ঞা শিখতে হয়, একদিনের জন্য হলেও তোর পাঠশালায় পড়ার প্রয়োজন আছে।
খেয়ে মুখ মুছে ফেলতে হামেশাই দেখি, কিন্তু এখন এমন মানুষ সত্যি বিরল, যারা খেয়ে মুখ মুছে ফেলা মানুষগুলো বিপদে পড়লে নিজেদের ধরে রাখতে পারে না, আবারও ছুটে যায় বিপদের সময় পাশে থাকতে।
মুশকিল হলো তারা বোঝে না, যারা পাশে থাকে তারা যেমন তাদের ধর্ম পালন করছে, মুখ মুছে কিছু মানুষ তাদের কর্মের খেরো খাতা ভরছে।
কাজেই, আমার বিশ্বাস(মানে তোর উপাধির ন্যায়) শেষ হাসি তারাই হাসে যারা ধর্ম তথা কর্ম সঠিক রাখতে পারে।
কিছু গুণাবলী তোর মধ্যে যেনো সদাই বিরাজ করে, তবে অবশ্যই কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন, কারণ বর্তমান সমাজে নরম মাটিতে পা গেড়ে বসে বেশিরভাগ মানুষ।
আমি চাইনা তুই এতটাও কোমল হবি, সময় মতো লক্ষিরুপী আর প্রয়োজনে চন্ডি রূপ ধারণ করতে হবে, তবে হেরে যাওয়া অথবা কখনোই ভেঙে পড়া যাবে না, লড়াইটা চালিয়ে যাবার ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা তোকে প্রদান করুক এই কামনা করি।
সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি আপনার জামাই বাবুর সার্জারির যেনো সুস্থ ভাবে হয়ে যায়। এবং তিনি যেনো খুবই দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। সমস্যা আমাদের জীবনে আসে কিন্তু জীবনের হাল ছেড়ে দিলে হবে না। সৃষ্টিকর্তা আমাদের অনেক ভাবে পরীক্ষা নিয়ে থাকে। হতে পারে সৃষ্টিকর্তা আপনাদের পরীক্ষা নিচ্ছে সৃষ্টিকর্তার উপরে বিশ্বাস রাখুন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।