"পিছুটান "
![]() |
---|
|
---|
Hello,
Everyone,
হঠাৎ করেই মনের কথা গুলো কাউকে শেয়ার করতে ইচ্ছা হলো। তাই বান্ধবীদের ঘরে বসে লিখছি। যদিও বর্তমানে ওরা ওদের কাকাদের বাড়ির ছাদে, যাযাবরদের মতন কোনোরকম একটি ঘর তৈরি করে রয়েছে। কারণ ওদের বাড়ি ভেঙে দালান বাড়ি তৈরির কাজ সবে শুরু হয়েছে।
সকালবেলায় কমিউনিটিতে নিজের লেখা পোস্ট শেয়ার করার পর, বেশ কিছু কাজ এগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ আগে, আমাদের বাড়িতে গিয়ে কালকের ধুয়ে রাখা সমস্ত বাসনপত্র গুছিয়ে বস্তাবন্দি করে এলাম। আর বিছানার চাদর ও বাবার কিছু জামা কাপড় ভাঁজ করে, সেগুলোকে আলমারিতে রেখে এলাম।
এরপর আবার কবে এসে বাড়িতে থাকা হবে, সত্যিই তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এক বছর পর বাড়িতে এসে যখন সমস্ত কিছু পরিষ্কারের কাজে হাত লাগালাম, তখন বুঝলাম পরিত্যক্ত বাড়িতে এসে থাকার জন্য, অন্তত দুতিন আগে থেকেই বাড়ি পরিষ্কারের কাজে হাত লাগাতে হয়। নচেৎ কোনোমতেই থাকা সম্ভব নয়।
এমন একটা দিনও আসবে, এ কথাটা সত্যিই ভাবিনি, এ কথা যেমন সত্যি ঠিক তেমনি এটাও জানতাম, এই দিনগুলো অনেক কষ্টের হবে। বাবার শরীরটা খুব একটা ভালো না থাকায়, গতকালকেই দিদির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। আর আজ নিজের সমস্ত কাজ গুছিয়ে তারপর বাড়িতে ফিরবো।
আমার বান্ধবী আমার সাথে সমস্ত কিছু গোছগাছ করে এলো। এখন ওদের এই ঘরে বসে নিজের পোস্ট লেখার কাজ কিছুটা এগিয়ে রাখছি। একটু বাদে খাওয়া দাওয়া করে, মামা বাড়িতে যেতে হবে। বেশ কিছু হিসাব নিয়ে মামার সাথে বসতে হবে।তারপর সেখান থেকে বাড়ি ফিরবো।
![]() |
---|
বাড়িটায় যখন তালা দিয়ে বেরোচ্ছিলাম, একটা অদ্ভুত শূন্যতা মনের মধ্যে কাজ করছিল। এমনকি এখন, যখন আপনাদের সাথে কথাগুলো শেয়ার করছি, চোখটা জলে ভরে উঠছে। গলার কাছে সমস্ত অনুভূতি গুলো এসে যেন আটকে আছে।
গতকালও আমার এত খারাপ লাগেনি, যতটা আজ লাগছিলো। বাসনগুলো গোছানোর সময় খাটের নিচে একটা বস্তা চোখে পড়ল, আমি আসলে এই সমস্ত জিনিসগুলো আগে কখনো এত বেশি নাড়াচাড়া করে দেখিনি।
বস্তাটাকে বাইরে বের করে আমি ও আমার বান্ধবী মিলে খুললাম। দেখলাম বস্তার ভিতরে অনেকগুলো নতুন বাসন, যেগুলো কখনো ব্যবহার করা হয়নি, সেগুলোই বস্তাবন্দি করা রয়েছে।
বাসনগুলো মা কিনেছিল এবং ঠাকুমা এত বছর ধরে যত্ন করে রেখেছিলো। ব্যবহার না করার ফলে কিছু কিছু বাসন নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও সেগুলোকে গুছিয়ে আবার তুলে রাখলাম।
অনেকেই বলেছে এতোকিছু বাসন রেখে কি হবে, বিক্রি করে ফেলাই ভালো, কারণ এই বাসন গুলো আর ব্যবহার হবে না। এই কথাগুলো সকলে যত সহজে বলেছে, ততটা সহজে কাজটা করতে পারছি না। কারণ এর মধ্যে আমার মায়ের অনেক পরিশ্রম, অনেক যত্ন লুকিয়ে আছে।
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ হয়েও, কোথা থেকে, কিভাবে, একটু একটু করে টাকা জমিয়ে এই বাসন গুলো কিনেছিলো, সেটা বোধহয় সবার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু আমার মায়ের সেই পরিশ্রম নিজের চোখে যতটা না দেখেছি, তার থেকে অনেক বেশি গল্প শুনেছি দিদিদের কাছে। তাই ওই নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিসগুলোর মধ্যেও যেন, মায়ের ছোঁয়া অনুভব করলাম।
খুব সত্যি বলতে পুরনো শাড়ি, ভেঙে যাওয়া পুরোনো আসবাবপত্র, নষ্ট হয়ে যাওয়া বাসন, এই সমস্ত কিছুর মধ্যে যে এতটা ইমোশন লুকিয়ে থাকতে পারে, এর আগে এতো গভীরভাবে সেগুলো কখনো অনুভব করিনি।
একটা সময় এই বাড়িটাও আমাদের থাকবে না। সবাই সবার জীবনে ব্যস্ত থাকবো। হয়তো প্রয়োজনের তাগিদে হোক বা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে, এই বাড়িটাও এক সময় কারোর কাছে বিক্রি হয়ে যাবে। কিন্তু যা বিক্রি হবে না সেটা হলো, এই বাড়িটাকে ঘিরে আমাদের অনুভূতি। বাড়িটির প্রতিটি কোণায় মা, ঠাকুরমা, বাবা সকলের সাথে জড়িত এতো অগুন্তি স্মৃতি, যা মনের গভীরে আজীবন কাল থেকে যাবে।
বাড়ি থেকে এসে এই ধরনের কিছু অনুভূতি মনে জাগছিলো। তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে কিছু কথা শেয়ার করি। বাড়ির সামনে থেকে যখন গাড়িতে উঠি প্রতিবার মনের মধ্যে একটা চাপা কষ্ট অনুভব করি। সবকিছু ছেড়ে চলে যাওয়ার কষ্ট। কিন্তু কোথাও একটা জানি আবার চাইলে এই বাড়িটিকে এসে দেখে যেতে পারবো।
কিন্তু সত্যি বলতে যখন ভাবি, একটা সময় এই বাড়িটাও আমাদের থাকবে না। তখন বোধহয় এই গ্রামে ফেরার কোনো পিছুটান রইবে না। সেই দিনটার কথা ভাবলে সত্যিই কষ্ট হয়। জন্মভূমির প্রতি এই পিছুটান বোধ হয় প্রতিটি মানুষের থাকে।
পরজন্ম বলে কিছু হয় কিনা জানিনা, কিন্তু যদি হয় তাহলে আমি ছেলে হয়ে জন্মাতে চাই। নিজের মাটি, নিজের বাড়ি, নিজের প্রিয়জন, সকলের সাথে আজীবন থাকতে চাই।
![]() |
---|
মেয়ে হয়ে জন্মানো অনেক কষ্টের। এক জীবনে বহুবার নিজের প্রিয় জিনিস ছাড়তে হয়। নিজের বাড়ি, নিজের ঘর, নিজের প্রিয় জায়গা, নিজের বন্ধুবান্ধব, সবকিছু।
এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এই কথাগুলো ভেবে অনেক বেশি খারাপ লাগছে। যাইহোক খারাপ লাগার অনুভূতিটা লিখে রাখলাম, আপনাদের সাথে শেয়ার করব বলে। ভালো থাকবেন সকলে।
পড়তে গিয়ে নিজেকেই যেন খুঁজে পেলাম আপনার মাঝে। যখনই বাড়ি যাই তখনই এমন একটা অনুভুতি হয়। থাকার উদ্দেশ্য না নিয়ে গেলে রুমের ভেতর ঢুকি না আমি।
ছোটবেলা থেকে সবকিছু যেভাবে রাখা ছিলো তার আর কিছুই আগের মতো নেই।অথচ বাইরে যতক্ষণ থাকি মনে হয় ভেতরে ঢুকলেই মাকে দেখবো খাটের ওপর বসে আছে আর বাবা শুয়ে আছে।
আমার রুমে ঢুকলে পড়ার টেবিলের সামনের জানালা দিয়ে কারুকাজ করা পিলার আর শ্বেতপাথর এর বারান্দা দেখতে পাবো।অথচ সেই রুমে ঢুকলে দেখা যায় খাটের ওপর আর নিচে গোডাউন এর মতো করে জিনিসপত্র রাখা।
এমন হাজারো টুকরো টুকরো স্মৃতি ছড়িয়ে আছে বাড়ির প্রতিটি কোনায় কোনায়। তারচেয়ে বাইরে থেকে চলে আসি সেটাই ভালো। কল্পনায় থেকে যায় সবকিছু আগের মতোই।
ভালো থাকবেন সবসময়।
আজকে আপনার পোস্টে লেখাগুলো পড়ার পর সত্যি কথা বলতে, নিজের ভেতরের কষ্ট গুলো হঠাৎ করেই মনে হল, সামনে জেগে উঠলো। চোখের জল আর ধরে রাখতে পারলাম না। মনের অজান্তেই অনবরত চোখ দিয়ে জল পড়তে শুরু হলো।
আসলে মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূরা অনেক কষ্ট করেই তাদের এই জিনিসগুলো, একটু একটু করে কিনে নিয়ে আসে। আর কতটা কষ্ট হয় একমাত্র তারাই বুঝতে পারে।
আসলে এই বাসন গুলো কখনোই বিক্রি করবেন না। এগুলো আপনার মায়ের স্মৃতি, আপনার মায়ের অনেক কষ্টে অর্জিত জিনিস। মেয়েদের জীবনটা অনেকটাই অন্যরকম। সবকিছু ছেড়েই অন্যের বাড়িতে গিয়ে থাকতে হয়। ধন্যবাদ আপনাকে মনের অনুভূতি গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।
মায়ের এত এত কষ্ট যত্ন যেখানে মিশে আছে সেগুলো ফেলে দেবার প্রশ্নই ঊঠে না। বরং অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে সেগুলো রেখে দেয়াই উত্তম।
মধ্যবিত্ত নারীদের কত সংগ্রাম করে বেচে থাকতে হয় তা সবাই জানতে পারেনা।
পিছুটান এর কারণে হলেও বার বার ফিরে যান আপনার প্রিয় ঠিকানায়। সুযোগ পেলে অবশ্যই বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ এর ব্যবস্থা নিবেন।
নিজের বাড়ি সে যতই ভাঙাচোরা হোক না কেন সেটা নিজের বাড়িই হয়। আমাদের ফ্ল্যাটে অনেক অব্যবহৃত জিনিসপত্র আছে। আমি মাকে অনেকবার বলেছিলাম এগুলি বিক্রি করে দিয়ে তার বদলে নতুন জিনিস কেনার জন্য কিন্তু মা কখনো রাজি হয়নি। এখন বুঝতে পারি এই প্রত্যেকটা জিনিসের সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।