"সুস্বাস্থ্য রক্ষায় সকালের জলখাবারের ভূমিকা "
জলখাবারের বিভিন্ন পদ |
---|
Hello,
Everyone,
কেমন আছেন আপনারা সকলে?
আশা করছি সকলের ভালো আছেন এবং প্রতিদিনের মতো আপনারা সকলেই নিশ্চয়ই আপনাদের দিনটি অনেক সুন্দর ভাবে শুরু করেছেন।
আজকে আমি আপনাদের সাথে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে কথা বলব সেটা হলো ব্রেকফাস্ট অর্থাৎ সকালের জলখাবার।
বর্তমান যুগে আমরা সকলেই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছুটে চলছি। এই ব্যস্তময় জীবনে বেশিরভাগ মানুষই সকালের জলখাবার খেতে ভুলে যায় কিংবা বলা যেতে পারে সময়ের অভাবে সঠিকভাবে ব্রেকফাস্ট করতে পারেনা। কিন্তু এই অভ্যাসটি শারীরিকভাবে আমাদের কতটা ক্ষতি করে সেই বিষয়ে হয়তো সঠিক তথ্য আমরা কেউই জানিনা।
আজকে আমি আপনাদের সাথে সেই বিষয়ে কিছু তথ্য শেয়ার করতে চলেছি, যেগুলো আমি আমার দিদির কাছ থেকেও বহুবার শুনেছি। আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন আমার দিদি একজন নার্সিং স্টাফ, গত বছর সে এমএসসি কমপ্লিট করেছে। আমি যখনই দিদির বাড়িতে ঘুরতে যাই তখনই এই ব্রেকফাস্ট করা নিয়ে দিদির কাছে বকা শুনি, কারণ বেশিরভাগ দিনেই ওর কাছে গেলে আমি ব্রেকফাস্ট করি না।
রুটি ঘুগনি |
---|
আসলে এই অভ্যাসটা আমার বেশ কিছু বছর ধরে তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে বিয়ের পরে। আগে মায়ের বকা শুনে সময়ের মধ্যে সকালের খাবার খেয়ে নিতাম,কিন্তু বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়ির নিয়ম অনুসারে চলতে গিয়ে এবং সাংসারিক কাজের কারণে সেই সময় কখনো অতিবাহিত হয়ে যায় বুঝতে পারি না এবং এই ভাবেই চলতে চলতে একটা সময় এটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।
আমার বিশ্বাস আমার মতন এরকম অনেকেই আছেন যারা সংসারের কাজের চাপে হোক বা নিজের অনিচ্ছায় হোক সকালের জলখাবার নিয়মিত খান না। সেটি আমাদের শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকারক প্রথমে সেই বিষয়ে আপনাদের সাথে কিছু তথ্য শেয়ার করব। চলুন তাহলে শুরু করি, -
- ১.) আমাদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা আছে যে ব্রেকফাস্ট না করলে আমাদের ওজন কমে যাবে। আসলে আমরা অনেকেই জানিনা যে, এই সকালের জলখাবার না খাওয়ার কারণেই কিন্তু আমাদের ওজন কমার বদলে বরং আরো বেড়ে যায়।কারণ সকাল থেকে কিছু না খেলে আমাদের দুপুরের খাবার একটু বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়ে যায় এবং সেখানে যদি শর্করা এবং ফ্যাটযুক্ত খাবার থাকে আমাদের মন সেই দিকেই বেশি ঝোঁকে এবং লোভের বশবর্তি হয়ে আমরা সেই খাবার গুলোই বেশি খেয়ে ফেলি, যার কারণে কিন্তু আমাদের শরীরে ক্যালরির পরিমাণ বাড়ে এবং ওজন বৃদ্ধি পায়।
জ্যাম পাউরুটি |
---|
- ২.) আমাদের শরীরে সমস্ত অরগ্যানগুলো এমন ভাবেই তৈরি যে, সেগুলো খুবই সিস্টেমেটিক ভাবে কাজ করে সুতরাং যদি আমরা ব্রেকফাস্ট না করি, তাহলে সেই অরগ্যানগুলো তাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে চালাতে পারে না। যেটা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে খারাপ প্রভাব ফেলে। যার ফলে আমরা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
- ৩.) সকালের জলখাবার না খেলে আমাদের শরীরের মধ্যে কোনো প্রোটিন,ভিটামিন কিছুই প্রবেশ করে না। যার ফলে সারাটা দিন আমাদের এনার্জি ঠিক থাকে না এবং শরীরে ক্লান্তি অনুভূত হয়।
সুজি,পরোটা ও আপেল |
---|
- ৪.) ক্যান্সার রোগ সম্পর্কে আমরা সকলেই মোটামুটি অবগত,কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই এটা জানেন না যে, যদি দিনের পর দিন আমরা সকালের জলখাবার না খাই, তাহলে আমাদের এই অভ্যাসটি আমাদের শরীরে কিন্তু ক্যান্সারের কোষ তৈরি করতে সক্ষম হয়।কারণ ব্রেকফাস্ট না খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়,যার ফলে ক্যান্সারের কোষ গুলো খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ক্যান্সারের মতন একটি মারন রোগে আমরা আক্রান্ত হই।
ডিমটোস্ট |
---|
৫.) অনেকের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে,যে সকল মানুষের ডায়াবেটিস আছে তারা তারা যদি সকালে বেশি জলখাবার না খায়,তাহলে তারা সুস্থ থাকবেন। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা যে, যদি সুস্থ মানুষও সকালের জলখাবার দীর্ঘদিন ধরে না খায়, তাহলে তারাও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
৬.) ব্রেকফাস্ট আমাদের হার্টের জন্যও যথেষ্ট উপকারী। একটা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে আমরা অর্থাৎ যারা সকালে কাজের চাপে হোক বা অভ্যাসবশত হোক সকালের জল খাবার না খাই, তাদের কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। কারণ এতে আমাদের শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়,যার ফলে ধমনীতে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে এবং এরফলে স্ট্রোকের সম্ভবনা বেড়ে যায়।
- ৭.) যারা মাইগ্রেনের ব্যাথার সাথে পরিচিত আছেন তারা জানেন যে,এই ব্যথা কতটা অসহ্য হয়। তবে আপনারা জেনে অবাক হবেন যে,ব্রেকফাস্ট না খাওয়ার অভ্যাসের কারণে কিন্তু আমাদের রক্তের শর্করার মাত্রা অনেকটা কমে যায়। যার ফলেই মাথা ব্যথা বা মাইগ্রেনের মতন এই সমস্যা দেখা দেয়। আর এটি এমনি একটা সমস্যা যেটা একবার শুরু হলে সহজে শেষ হতে চায় না,তাই রোজ সঠিক সময়ে সকালের জল খাবার খাওয়াটা অত্যন্ত জরুরী।
চিনি ছাড়া লিকার চা |
---|
- ৮.) আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা বেশিরভাগ দিন সকালেই এক কাপ চা এবং তার সাথে দুটি বিস্কিট খেয়ে দুপুর পর্যন্ত থেকে যান। অথচ আমরা বুঝতেও পারি না যে এটি আমাদের শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকারক। তার উপর যদি আবার চিনিযুক্ত চা হয়, তাহলে কিন্তু ক্ষতির মাত্রা আরও দ্বিগুণ বেড়ে যায়।আপনারা সকলেই জানেন বিপাকক্রিয়া আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরী এবং সেটি নিজস্ব একটি পদ্ধতিতে কাজ করে। কিন্তু আমরা সকালের জলখাবার না খাওয়ার কারণে,এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে হতে পারে না। যার ফলেই বিপাকতন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সঠিক ভাবে ব্রেকফাস্ট না করলে আমাদের শরীরে এইরকম আরও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। হিসাব করলে দেখা যাবে আগেরকার দিনের মানুষ বর্তমান দিনের মানুষের তুলনায় অনেক কম অসুস্থ হতেন। তার পেছনে অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ হলো সঠিক সময়ে খাওয়া-দাওয়া করা।
রুটি ও সুজি |
---|
আগেরকার দিনের মানুষ আর কিছু হোক না হোক সকালে ভাত খেয়ে তারপর কাজে যেতেন। এই কারণে আজও দেখবেন শহরের মানুষের তুলনায় গ্রামের মানুষ অনেক কম অসুস্থ হয়। কারণ গ্রামের মানুষ এখনো পর্যন্ত সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেদের কাজগুলো সারার পরে সঠিক সময়ে অন্ততপক্ষে সকালের খাবার খেয়ে নেন।
আগে হয়তো মানুষের কাছে খাবারের বিভিন্ন অপশন ছিল না, কিন্তু তারা তাদের সাধ্য মতন যেটুকু খাবার যোগাড় করতে পারতেন, সেই খাবারটুকু অন্ততপক্ষে সময় মতন খেয়ে নিতেন। কিন্তু বর্তমান যুগে মানুষের কাছে খাবারের বিভিন্ন অপশন আছে কিন্তু সেগুলোকে খাওয়ার মতন সময় নেই।
লুচি ও আলুর তরকারি |
---|
বর্তমানে মানুষ ভুলে যায়,আমাদের ভালোভাবে বাঁচার জন্যই আমরা কাজ করে থাকি, কিন্তু এখন সবাই শুধু কাজ করতেই ব্যস্ত শরীরের দিকে নজর দেওয়ার মতন সময়ের বড্ড অভাব। সুস্থভাবে বাঁচতে হলে আগে নিজের শরীরকে সুস্থ রাখতে হবে। এই কারণেই আপনাদের প্রত্যেককে অনুরোধ করব আপনারা সকলেই নিজেদের ব্যস্ততম সময় থেকে একটু সময় বার করে, নিজেদের সকালের খাবার সময় মতন খেয়ে নেবেন।
আজকের লেখা আপনাদের কেমন লাগলো সেই বিষয়ে জানাতে ভুলবেন না। সকলেই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আপনাদের সকলের আজকের দিনটি খুব ভালো কাটুক এই প্রার্থনা রইলো।
আপনার পোস্টে সব ধরনের জল খাবার সাস্থের জন্য অনেক ভালো ৷ রুটি বলেন সুজি বলেন তারপর ডিমপোস্ট আবার জেম পাউরুটি এগুলাই সাধারনত সকাল বেলায় জল খাবার হিসেবে আমরা খেয়ে থাকি ৷
সকালের নাস্তা খাওয়া এটি শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ কারন অনেকই রয়েছে সকাল বেলা নাস্তা না করে কাজে চলে যায় ৷ কাজে এইটু দেরি হতেই পারে তারা ভাবে যে কাজ টা শেষ করেই যাই এভাবে চলতে থাকলে শরীরের অনেক ক্ষতি এবং দুর্বলতা দেখা যেতে পারে ৷
যাই হোক দিদি আপনার পোস্ট টি পড়ে খুবই ভালো লাগলো ৷ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভালো থাকবেন ৷
#miwcc
আপনি একদম ঠিক বলেছেন, আগের মানুষ ঘুম থেকে উঠে পান্তা ভাত দিয়ে মরিচ ভাত খেত। বিন্দাস দুপুরবেলা পর্যন্ত তারা আর কোন খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন মনে করত না। সে মানুষগুলো শরীর অনেক ভালো ছিল।
বর্তমান সময়েও গ্রামাঞ্চলের মানুষ এই খাবারটা এখনো খায়, যারা খায় তাদের শরীর এখনো অনেক ভালো থাকে।
আপনি আপনার পোস্টে উল্লেখিত, প্রত্যেকটা খাবারের উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের সাথে আলোচনা করেছেন। আসলে আমার ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে যেটা হয়। আমি যখন কাজের চাপ একটু বেশিই থাকে। তখন সকালের নাস্তাটা অনেক সময় করা হয় না।
এ বিষয়গুলো সাধারণত আমার সাথে হয়ে থাকে।কাজ করার টেনশনে খাওয়ার কথা, সঠিকভাবে মনে থাকে না।
আপনি এখানে সবাইকে অনুরোধ করেছেন। সকালের নাস্তাটা যেন ঠিক ভাবে খায়, চেষ্টা করব আপনার অনুরোধ রাখার জন্য।
অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা টপিক আমাদের সাথে আলোচনা করার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল ভালো থাকবেন।
#miwcc
আপনার পোষ্টটি পড়ে আজ নতুন করে অনেক কিছু শিখলাম। আপনি সকালের নাস্তা সম্পর্কে অনেক ভালো তথ্য আমাদের দিয়েছেন। আশা করি প্রত্যহিক জীবনে এসব কাজে লাগাতে পারলে আমরা সুস্থ থাকবো। আমাদের দেহ মন দুটোই ভালো থাকবে।
অনেক ধন্যবাদ দিদি এমন পোষ্ট করার জন্য।
#miwcc
সকালের খাবারের প্রতি সবারই একটু অনীহা থাকে এমনকি আমিও এই দলের বাইরে নয়।কারণ সকালের খাবার শেষ কবে আমি টাইম মতো খেয়েছি, সেটা সত্যিই আমার স্মরণ নেই।
তবে আজকে আপনার পোস্টটি পরে সকালের খাবারের উপকারিতাগুলোর চেয়ে অপকারিতাগুলোতে আমি বেশি মনোনিবেশ করেছি।কারণ এই অপকারিতাগুলো স্মৃতিতে রেখে ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো রোজার পর থেকে সকালের খাবার টাইম মতো খেতে🥰🥰।
ধন্যবাদ দিদি এতটা ইনফরমেটিভ একটা পোষ্ট আমাদের সবার সাথে শেয়ার করার জন্য।
#miwcc