বেপরোয়া গতিই বাইক দুর্ঘটনার মূল কারণ :
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থারও পরিবর্তন এসেছে। আর এই পরিবর্তন আমাদের রুচিকে প্রভাবিত করছে। নামিদামি বাইক অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের বিলাসিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। সময় বাঁচিয়ে, দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো এবং আরামদায়ক ভ্রমণে বাইকের জুড়ি মেলা ভার। নিঃসন্দেহে, মোটরবাইক এখন পরিবহনের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম।
অথচ তিন দশক আগেও বাইক ছিল খুব কম মানুষের হাতে, যা সমাজের বিত্তবানরা ব্যবহার করতেন। সময়ের সাথে সাথে মানুষের আয় বেড়েছে, রুচির পরিবর্তন হয়েছে। অর্থাৎ যারা আগে সাইকেল কিনতেও পারেননি, তারাও আয় পরিবর্তনের কারণে বাইক কিনছেন। যৌতুক হিসেবে বাইক এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিকে যেমন বেড়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও মডেলের বাইক ব্যবহারকারীর সংখ্যা, অন্যদিকে বেড়েছে দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের সংখ্যাও।
(আজ বাইক দুর্ঘটনা নিয়ে লিখতে বসেছি কারণ গত সপ্তাহে আমি নিজেও এই বাইক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি।অফিসে যাওয়ার পথে আমার সঙ্গে এই দুর্ঘটনা হয়। আমি রাইড করছিলাম না,আমি পিছনে বসে ছিলাম।খুলনা থেকে অফিস যাওয়ার পথে আমার নিজের গ্রামের রাস্তা ব্যবহার করতে হয়।আমার বাড়ির কাছাকাছি পৌছালে অন্য একটা বাইক ভয়ানক গতিতে আমাদের ধাক্কা দেয়।আমি বাইক থেকে ছিটকে পড়ে যায়।পাশেই ছিল কৃষ্ণচূড়া ফুল গাছ।মাত্র এক সেকেন্ড আগে দুর্ঘটনা ঘটলে আজ দৃশ্য অন্যরকম হতে পারত।ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় অল্পের জন্য বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছি।)
Source: Mobile Camera
অস্বীকার করার উপায় নেই যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোটরবাইক এখন কিশোর এবং যুবকদের অত্যন্ত আকর্ষণীয় যানবাহন। তরুণ-যুবকরা বাইক চালাতে চায় এটাই স্বাভাবিক! বাবা, ভাই, মামা কিংবা কাকা যার বাইক হোক না কেন, তাদের বাইকের চাবি পেলেই সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে বাইক নিয়ে ছুটছেন। রাস্তা দিয়ে তাদের বাইকের গতিতে ভয় পেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। দুর্ঘটনার পরিণতি জানা সত্ত্বেও, অনেক সচেতন পিতা বা অভিভাবক তাদের ১৩-১৫ বছরের কিশোর সন্তানকে বাইক চালাতে দিচ্ছেন । আর কখনো কখনো এসব কিশোরদের হাতে 'দানবরূপী বাইক' দিয়ে বাবা বা আত্মীয়স্বজনের গর্বের হাসি হাসে।
রাস্তায় উঠলেই চোখে পড়ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অধ্যয়ন করছে এমন কিশোরদের তিনজন বা কখনো চারজন করে বাইক নিয়ে ছুটে যেতে, কখনোবা তারা দল বেধে বাইকে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠছে। দেখে মনে হবে, কিশোরদের বাইক চালানো যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর ১০০ কিমি বা তার অধিক গতিতে না চালালে যেন স্বস্তি নেই তাদের! কে জানে, হয়তোবা প্রিয় সন্তানকে বাইক চালাতে দেখে মনে মনে খুশিও হচ্ছেন কেউ কেউ!
রাস্তায় নামলেই দেখা যায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা তিন-চার জনের দলে বাইক নিয়ে ছুটছে, কখনও কখনও দল বেঁধে বাইক নিয়ে প্রতিযোগিতা করছে। দেখে মনে হবে কিশোর-কিশোরীদের বাইক চালানো যেন স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে উঠেছে। আর ১০০ কিমি বা তার বেশি গতিতে না চালালে তাদের মনেই হয় না যে বাইক চলছে!
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বৃদ্ধির কারণগুলোর মধ্যে কিশোরদের হাতে বাইক তুলে দেয়া ছাড়াও আরও কিছু কারণ রয়েছে যেমন- দুই বা ততোধিক আরোহী, অস্বাভাবিক গতি, সাবধানতার সাথে ওভারটেকিং না করা, চালানো অবস্থায় হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা, কাঁধে কান লাগিয়ে মোবাইলে কথা বলা, ট্রাফিক আইন মান্য না করা ইত্যাদি।
অনেক সময় মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতির কারণে পথচারীদেরও দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়, ফলে প্রাণহানিও হয়। কিশোর-যুবকদের অকালমৃত্যুর কারণে পিতা-মাতা সন্তান হারায়, সন্তান হারায় তার পিতাকে, স্ত্রী হারায় তার স্বামীকে। আর সেই সংসারে শুরু হয় সারাজীবন কান্না। এর থেকে মুক্তির উপায় হল-
আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, মানসম্পন্ন হেলমেট পরতে হবে,বাইক চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা না বলা এবং হেডফোন দিয়ে গান না শোনা, অন্যমনস্ক না হওয়া, গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা, ঝুঁকি নিয়ে ওভারটেক না করা ইত্যাদি। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার বড়াতে হবে। দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গা গুলোতে সার্বক্ষনিক ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে, সর্বোপরি দুর্ঘটনার কারণ ও পরিণতি সম্পর্কে অভিভাবক, আত্মীয়স্বজনদের সচেতন করতে হবে। এবং প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত কিশোর-যুবকদের হাতে 'দানবীয় বাইক' হস্তান্তর করবেন না। তবেই দুর্ঘটনা কমতে পারে। মনে রাখবেন "একটা দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না"।
তো বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই।আমার পোস্টটি পড়ে কেমন লাগল তা কমেন্টে জানাবেন।
শুধু বাইক নয় যেকোন সড়ক দূর ঘটনার প্রধান কারণ অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেক করার চেষ্টা। তবে বাইকের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়। এর জন্যে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
বাইক দুর্ঘটনায় এখন দেশে সবথেকে বেশি।প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বাইক দুর্ঘটনার কথা শোনা যায়।
আমার পোষ্টে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।।
আপ্নাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। বাইক দুর্ঘটনায় আমি আমার অনেক কাছের বন্ধুদের হারিয়েছি। এবং অনেকেই মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। তাই আমি মনে করি রাস্তায় কখনোই বেপরোয়াভাবে বাইক চালানো ঠিক নয়।
এটা জেনে খারাপ লাগল আপনি বাইক দুর্ঘটনায় খুব কাছের বন্ধুকে হারিয়েছেন।এটা এমনই বাজে ভাবে দুর্ঘটনায় পতিত হয় যে,একটু স্পিড থাকলে তা মৃত্যু ডেকে নিয়ে আসে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।
নিজে রাইড করলে সাবধানে রাইড করবেন। আর আশেপাশের ভাইদের সচেতন করে তুলবেন।
ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
বাইক দুর্ঘটনা খুবই মারাত্মক একটা দুর্ঘটনা। বেশ কয়েক বছর হবে আমাদের গ্রামে বাইক দুর্ঘটনা হয়েছিল। যেখানে তিনটা ছেলে ছিল দুইটা ছেলের বয়স প্রায় ২০ বছরের কাছাকাছি। আর একটা ছেলের বয়স পাঁচ বছর। তারা তিনজন বাইকে করে একটু ঘুরতে বের হয়েছিল। কিন্তু অতিরিক্ত জোরে বাইক চালানোর কারণে তাদের বাইক এক্সিডেন্ট করে।
যেখানে ২০ বছরের দুইটা ছেলের সাথে সাথেই মৃত্যুবরণ করে। আর পাঁচ বছরের ছেলেটা মাঝখানে থাকার কারণে সে বেঁচে যায়। আমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে গার্ডিয়ান দের প্রতি। কেন গার্ডিয়ান যদি ছেলেমেয়েদেরকে বাইক কিনে না দেয়। তাহলে কিন্তু তারা এই ধরনের ঘটনা আক্রান্ত হয় না। তাই আগে নিজেদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। চমৎকার বিষয় উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ। অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করে চলা উচিত।
হ্যাঁ বাইক দুর্ঘটনা গুলো খুবই মারাত্মক হয়।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটা বড় বিপর্যয় ডেকে আনে।আর বেঁচে ফিরলেও সারা জীবন ভোগাবে এমন ইনজুরি হয়ে যায়।
ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মূল্যবান মন্তব্যর জন্য।।
বর্তমান সময়ে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য রোড এক্সিডেন্টটা বেশি হচ্ছে।। বিশেষ করে যুবক বয়সের যারা রয়েছে তারা বেপরোয়া গাড়ি বেশি চালিয়ে থাকে এবং হাজারো যুবক বাইক এক্সিডেন্টে প্রাণ হারাচ্ছে।
শুনে খারাপ লাগলো আপনি নিজেও এক্সিডেন্ট করেছিলেন সেটা নিজের ভুল হোক আর অন্যের ভুল হোক।। সৃষ্টিকর্তা রহমতে বড় কোনো দুর্ঘটনা হয়নি সে জন্য শুকরিয়া সৃষ্টিকর্তার কাছে।।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সাথে এতো সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।আপনার পোস্ট টি পেয়ে অনেক ভালো লাগলো। আপনি আজকে আমাদের সাথে বেপরোয়া গতিই বাইক দুর্ঘটনার মূল কারণ গুলো খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে এবং সকলের সাথে শেয়ার করেছেন ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর পরিবার ও নিজের খেয়াল রাখবেন।
ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোষ্টটি পড়ে এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য। আমার পোস্ট করার যথার্থতা তখনই হবে যখন সবাই এটার মেসেজ টা বুঝতে পারবে।আমাদের দেশে যুবক এবং কিশোররা যেভাবে বাইক চালায় তা সত্যিই ভয়ানক।
বর্তমানের একটি বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন আপনি লেখার এই অংশে। এই বয়সে সব কিছুই রঙ্গিন মনে হয়, তাই ঐ কিশোরেরা একটু এরকমই। তবে এ ক্ষেত্রে আমি অভিভাবকদের দায়ী করবো।
কারণ এই বয়সী কিশোর -কিশোরীরা থাকে চঞ্চল। তাদের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তাই হয়তো মাঝেমধ্যেই হারিয়ে যায়।
গতির কথা না বললেই নয়, কারণ এটার জন্য প্রতিদিন হাজারো মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করছে। বিগত হয়েছে দুইটি বছর, আমি আমার এক জন আপনজনকে হাযরিয়েছিলাম এই বাইক দূর্ঘটনায়।
সকল কিশোর-কিশোরী এবং অভিভাবকদের আহ্বান জানাতে চাই, এই বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য।