"রাগ নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে ছোট্ট একটি গল্প!"
রাগ খুবই খারাপ একটা জিনিস যেটা আমরা সহজে আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারি না। রাগের কারণেই আমাদের অনেক সময় অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়ে যায়। যে সমস্যাটা আমরা আসলে সমাধান করার চেষ্টা করলেও, সেটা আদৌ সমাধান হয়ে ওঠে না।
এইতো সপ্তাহখানেক হলো আমাদের গ্রামে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। শুধুমাত্র রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে, একজন স্বামী বিদেশে থাকে তার স্ত্রী বাড়িতে থাকে। তাদের একটা মেয়ে আছে। যেহেতু সংসার সমস্যা তো থাকবেই তাই না। তার দেবর এর সাথে কিছু একটা সমস্যা হয়েছিল, তখন থেকেই শুরু হয় শত্রুতা।
ওই মহিলার হাজবেন্ড একটু রাগী ছিল। তার ভাইয়েরা তার কাছে কল করে করে তার ভাইয়ের বউ এর নামে অনেক বাজে বাজে মন্তব্য বলা শুরু করেছিল। ঘটনাটা ঘটেছিল সপ্তাহখানেক আগে। কিন্তু এই তাদের পারিবারিক সমস্যাটা সৃষ্টি হয়েছিল গত দু'মাস আগে।
এরপরে ভাইদের কথা শুনতে শুনতে লোকটা অতিষ্ঠ হয়ে যায়। সে বাড়িতে আসে ছুটি নিয়ে। বাড়িতে আসার ঠিক দুইদিন পরেই তার ওয়াইফ কে জিজ্ঞেস করে, যে তাদের ভাইয়ের সাথে কি সমস্যা হয়েছিল। তখন তার ওয়াইফ তাকে সম্পূর্ণ বিষয়টা খুলে বলে, সেখানে ঐ লোকটার মা উপস্থিত থাকে।
কিন্তু হঠাৎ করেই লোকটার মা তার ওয়াইফ এর বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা লোকটাকে বলতে থাকে। ওই সময় ওই লোকের ওয়াইফ ওখানে উপস্থিত ছিল না। যার কারণে তার মা তাকে ইচ্ছেমতো ওয়াইফ এর বিরুদ্ধে কথা শোনাতে লাগলো।
লোকটা ঠিক কি করবে বুঝতে পারছিল না। তার এতটা রাগ হচ্ছিল তার ওয়াইফ এর উপর। সে তার ওয়াইফ কে অনেক মারধর করে এবং ওই জায়গাতেই তাকে তালাক দিয়ে দেয়।
তার সাথে তারা পুলিশের কাছে ইনফর্ম করে এবং তার ওয়াইফ কে সে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তার ওয়াইফ তার বাবার বাড়িতে চলে যায়।
সপ্তাহখানেক হয়ে গেছে তাদের আলাদা হয়ে যাওয়ার দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু লোকটা এখন পাগল প্রায় প্রত্যেকদিন শ্বশুরবাড়িতে আনাগোনা করে। তার একটা মেয়ে আছে। সে মেয়ের জন্য তার ভালোবাসা অপরিসীম। তার জন্য বারবার সে মেয়েটাকে দেখতে আসে।
তার কথাবার্তা এবং আকুতি মিনতি করে যার ফলে বোঝা যায়, সে তার ওয়াইফ কে আবার নিতে চায়। সে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি যার কারণে তার ওয়াইফ কে সে তালাক দিয়ে দিয়েছে। এটা তার মস্ত বড় ভুল।সে আর তার পরিবারকে ফিরে পাই নি যার কারণে বর্তমান সময়ে পাগলের মত ঘুরা ঘুরি করে রাস্তায় রাস্তায়।
আসলে রাগ খুবই খারাপ একটা জিনিস। যেটা যখন আমাদের রাগ হয়। তখন আমরা নিজেদেরকে ঠিক রাখতে পারি না। আমরা রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে জানিনা। রাগ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো সেটাও বুঝতে পারি না।
একটা ছোট্ট গ্রামের একটা লোক বাস করত। লোকটার তিনটে ছেলে ছিল। তার ছোট ছেলে প্রচন্ড রাগী ছিল। সে সব সময় তার বড় ভাইদের সাথে ঝগড়া করতো। সে নিজে তাদের মারপিট করত এবং পরবর্তীতে সে নিজেই কান্না করত। আর তার বাবাকে গিয়ে বলত তার বড় ভাইয়েরা তাকে অনেক মেরেছে।
প্রথম কয়েকদিন লোকটা বুঝতে পারিনি, সে তার বড় ছেলেদেরকে অনেক মেরেছে। তারা কেন তার ছোট ছেলেকে মারধর করে, পরক্ষণে লোকটা লক্ষ্য করল।
আসলে তার বড় ছেলেদের কোন দোষ ছিল না। বড় ছেলে আর মেজো ছেলে সর্বদাই চেষ্টা করত তাদের ভাইয়ের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু তারা কোন কিছুতেই তাদের ভাইয়ের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না।
একদিন লোকটা বাজার থেকে ১কেজি প্যারাগ কিনে নিয়ে আসলো এবং তার ছোট ছেলের হাতে দিল। এবং তিনি বললেন শোনো যখনই তোমার রাগ হবে। তখনই তুমি একটা করে প্যারাগ আমাদের বাগানের সবচেয়ে মোটা গাছ আছে, ওখানে গিয়ে মেরে আসবে।
যেই কথা সেই কাজ। যখনই ঐ লোকটার ছোট ছেলের রাগ হতো এবং ভাইদের সাথে মারামারি করত। তখনই সেই প্যারাগ আর হাতুড়ি হাতে নিয়ে, গাছের মধ্যে মেরে আসতো।
একদিন ছেলেটা নিজেই লক্ষ্য বলল। সে চল্লিশ টা প্যারাগ একদিনে একটা গাছে মেরেছে। তার অনেক কষ্ট হয়েছে সে অনেকটা হাঁপিয়ে উঠলো। মারতে মারতে তখন সে সিদ্ধান্ত নিল। সে তার রাগটা কিছুটা কমিয়ে আনবে। তাহলে হয়তোবা এত বেশি প্যারাগ তাকে প্রতিদিন মারতে হবে না।
এরপর থেকে ছেলেটা নিজেই নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করল। ধীরে ধীরে তার প্যারাগ মারার পরিমাণও কমে আসলো। সে খুব শান্তভাবে তার ভাইদের সাথে কথা বলতে শুরু করলো। যখনই তার একটু রাগ হত। তখনই সে পানির দিকে তাকিয়ে থাকে এবং কিছুক্ষণ পর তার রাগ নিমেষে দূর হয়ে যেত।
সে চিন্তা করল প্রতিদিন এতবার এতগুলো প্যারাগ মারার চেয়ে, আমি আমার নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করবো এবং নিজেকে শান্ত করব। নিশ্চয়ই একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
এই ঘটনার কথা ছেলেটি তার বাবাকে সম্পূর্ণ খুলে বলল এবং বলল যে সে তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছে। তখন তার বাবা তাকে বলল তুমি যেদিন ধীরে ধীরে তোমার রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করবে, এবং কতটুকু করবে কতবার করবে। সেদিন থেকে তুমি প্যারাগ গুলো তুলে ফেলার চেষ্টা করবে।
ছেলেটা বাবার কথা অনুযায়ী সেই কাজ করল। ধীরে ধীরে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করল এবং গাছ থেকে প্যারাগ গুলো ধীরে ধীরে তুলে ফেলতে সক্ষম হলো এবং তার বাবাকে গিয়ে জানালো।
আর ঠিক তখনই লোকটা তার ছেলেকে বলল, দেখো গাছের দিকে একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখ। তুমি যতবার গাছের মধ্যে ফেরার মেরেছ ততবারই গাছের মধ্যে গর্ত হয়ে গেছে। এই গাছের আগে যে রূপ ছিল সেই রূপ তুমি কখনোই ফিরিয়ে আনতে পারবে না। এই গাছ যতদিন বেঁচে থাকবে এই গেছে এই প্যারাগের গর্ত গুলো ঠিক ততদিন রয়ে যাবে।
আমি বুঝতে পেরেছি তুমি এখন তোমার রাগ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছ। তবে তুমি কি জানো বাবা, তুমি যখন তোমার রাগ নিয়ে কোন মানুষকে খুব খারাপ ভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, তার মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলতে। তখন তার মনেও এভাবে ছোট ছোট ছিদ্র হয়ে গিয়েছিল। একটা কথা মনে রেখো মানুষের দেহের ক্ষতের চেয়েও মনের ক্ষত অনেক সময় অনেক বড় হয়। যার কারণে একটা মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায়।
তাই আমাদের যাদের রাগ রয়েছে। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত আমাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, সমাজের মানুষের সাথে পরিবারের মানুষের সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলা।আমি ঠিক জানিনা আপনাদেরকে কতটুকু বোঝাতে পেরেছি। যতটুকু পারি বোঝানোর চেষ্টা করেছি। সবার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি আল্লাহ হাফেজ।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Your post has been rewarded by the Seven Team.
Support partner witnesses
We are the hope!
আমাদের এই সমাজে অনেক মানুষ আছে তারা রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না। রাগ মানুষকে ক্ষতি নিয়ে আসে। রাগ কখনো ভালো হতে পারে না। কথায় আছে রাগের মাথায় কোন কাজ না করে ঠান্ডা মাথায় কাজ করা অনেক ভালো। আপনি যে ঘটনাটি আজ আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন সেই মানুষটি যদি রাগ না করে ঠান্ডা মাথায় সবকিছু ভালোভাবে বুঝে তার স্ত্রীকে বলতো তাহলে হয়তোবা এই সমস্যা দেখা দিত না কিন্তু সে রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিল এবং মারধর করেছিল বলে আজ এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
আমাদের প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে রাগ আছে কিন্তু রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে আমাদের কারণ রাগ আমাদের সব সময় খারাপ দিকে নিয়ে যায় কখনো ভালো দিক নিয়ে যেতে পারে না তাই রাগ কন্ট্রোল করতে হবে।
রাগ খুব খারাপ জিনিস ।এটা আমিও জানি ।কিন্তু আমারও ভীষণ রাগ ।যখন রেগে যাই তখন মাথা ঠিক রাখতে পারি না। উল্টোপাল্টা অনেক কিছুই করে ফেলি। পরে যখন মাথা ঠান্ডা হয় ।তখন আবার ভুলগুলো বুঝতে পারি। আসলে যখন রেগে যাই তখন কি করব বুঝে উঠতে পারিনা। আপনার পোস্টটা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম ।আমিও চেষ্টা করব নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার।