আমাদের বিজয়, আমাদের অহংকার

in Incredible India6 months ago

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “আমাদের বিজয়, আমাদের অহংকার” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

patriot-1019844_1280.jpg
source

একটি মানুষের জীবনে হার জিত থাকবেই, তবুও সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। এটি একটি সাধারণ কথা বা ছন্দ মনে হলেও প্রতিটি মানুষের জীবন সংক্রামের কথা এটি। একটু ভেবে দেখুন তো কোথায় প্রতিযোগীতা নেই। সব ক্ষেত্রেই প্রতিযোগীতা।

মাঝে মাঝে এসব প্রতিযোগীতা যুদ্ধের মতো অবস্থার সৃষ্টি করে। সে হিসেবে আমরা সবাই সৈনিক। কেউ প্রত্যক্ষভাবে, কেউবা পরোক্ষভাবে। যুদ্ধ করেই আমাদের টিকে থাকতে হয় এই পৃথিবীতে।

যেহেতু আমরা সৈনিক সেহেতু আমাদের জীবনে জয় পরাজয় থাকবেই। এটাই জীবন। কিন্তু আমরা সবসময় জয় পাওয়ার জন্য প্রানপন চেষ্টা করি।

কখনো পরাজয় মেনে নিতে চাই না। কিন্তু মাঝে মধ্যে পরাজয়ের মধ্যেও জয়ের থেকে বেশি তৃপ্তি বা স্বাদ পাওয়া যায়। যাক সেদিকে আর যাবো না।

জয় পরাজয় তো আমরা সকলেই বুঝি। তাহলে বিজয় কী জিনিস? বিজয় হলো সামগ্রিকভাবে সবকিছু জয় করা। অনেক প্রচেষ্ঠা এবং সাধনার পর প্রতিপক্ষের সাথে যুদ্ধ করে, অনেক প্রানের বিনিময়ে যা অর্জিত হয় তাই বিজয়। সেটি হতে পারে ছোট কোন ভূখন্ড কিংবা একটি দেশ।

যারা বিজয়ী হয় তারা কিন্তু প্রত্যেকজন একেকটি ইতিহাস হয়ে জাতির সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। বিজয়ীরা তখন নিজেই নিজেদের ইতিহাস রচনা করে আর পরবর্তী প্রজন্ম তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে বিজয়কৃত সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে।

বর্তমান বিজয়ের মাস চলছে। অর্থ্যাৎ আমাদের দেশ এই ডিসেম্বর মাসেই স্বাধীনতা অর্জন করেছিলো। ঊনিশশত একাত্তর সালের ষোলই ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমাদের দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। আর এই যুদ্ধ হয়েছিলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিপক্ষে।

নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলো তাদের নাম এখনো ইতিহাসের পাতায় অক্ষরে অক্ষরে লিখা আছে। তাঁরা আমাদের অনুপ্রেরণা। আমরা নতুনরা তাঁদের থেকেই শিক্ষা নিয়ে থাকি।

national-martys-4087688_1280.jpg
source

যারা তরুণ আছি তারা প্রত্যেকেই মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা জানি। অনেকে বই পুস্তক পড়ে জেনেছি কেউবা নানি দাদিদের মুখে গল্পে গল্পে শুনেছি। বঙ্গবন্ধু সাতই মার্চের সেই ভাষণ শুনলে এখনো গা শিউরে ওঠে। বুকের ভেতর কেমন জানি ঢেউ খেলে যায়।

রক্ত টগবগ করতে শুরু করে। আমরা তো রেডিও টেলিভিশনে শুনে আমাদের এরকম অবস্থা হয় কিন্তু যারা সেসময় সরাসরি শুনেছিলো তাদের কী অবস্থা হয়েছিলো। প্রতিটি বিজয়ের পেছনে একেকটি ইতিহাস থাকে।

এই ইতিহাসগুলো আমাদের সম্পদ। তাই এই ইতিহাস রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। কেউ যেন ইতিহাস বিকৃত না করে সেজন্য উপরমহলকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়।

আমরা প্রত্যেকেই সেইসব মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি কিংবা নাতনি। আমাদের শরীরেও তো সেই একই রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে সেই চেতনা কই। আমাদের মধ্যে স্বদেশপ্রেম কই।

আমরা তো প্রতিনিয়তই স্বদেশকে ভুলে বিদেশকে ভালোবেসে যাচ্ছি। ভুলে গেলে চলবে না আমরা সেই বীরের জাতি যারা নয় মাস প্রাণঘাতি যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা উপহার দিয়ে গেছে। কথায় আছে বিজয়ের স্বাদ পাওয়া হয়তো কঠিন কিন্তু সেই বিজয় ধরে রাখা সবথেকে বেশি কঠিন।

আগে আমাদের শত্রুরা ছিলো প্রকাশ্যে, কিন্তু এখন রয়েছে গোপনে। প্রকাশ্য শত্রুর সাথে মোকাবেলা করা সহজ কিন্তু গোপন শত্রুর সাথে মোকাবেলা করা বেশ কঠিন। তাই আমরা যারা তরুন প্রজন্ম আছি তাদের কাধে কিন্তু অনেক বড় দায়িত্ব এই দেশের স্বাধীনতা, বিজয় ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার। কিন্তু আমরা কী তা করছি?

bangladesh-3561318_1280.jpg
source

আমার মতে না।
কেননা তরুন প্রজন্ম আমরা সবাই এখন ইন্টারনেট আসক্ত। সারাদিন এতটাই ইন্টারনেটে পরে থাকি যে মাঝে মধ্যে খাওয়া দাওয়া সব ভুলে যাই। দেশ নিয়ে ভাবার সময় কই আমাদের। অনেককেই জাতীয় সংগীত হয়তো বলতে বললে পুরোটা বলতে পারবে না।

পারলেও এই লাইন ঐ লাইন মিলিয়ে কিছু একটা গাইবে। তারপর আমরা অনেকেই এখনো আমাদের বিজয় দিবস কবে, স্বাধীনতা দিবস কবে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কবে ওলট পালট করে ফেলি।

শুধু এই দিবসগুলোতে একটু গান বাজনা করি, নাচানাচি করি আর ভালোমন্দ খেয়ে উৎযাপন করি। কিন্তু এই দিনগুলোর প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবন করার চেষ্টাও করি না। জাতি হিসেবে এটি বেশ ঘৃণিত একটি কাজ।

আমরা বাঙ্গালী জাতি, আমরা রক্ত দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। এই কথা আমাদের প্রতিজনের অন্তরে গেথে নিতে হবে। তাহলে হয়তো দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারবো।

নচেৎ শুধু মুখে বাঙ্গালী পরিচয় থাকবে কিন্তু শরীরি ভাষায় এক বিন্দুও বাঙ্গালীয়ানা থাকবে না। অন্যরা বলবে এ শুধু নামেই বাঙ্গালী, কাজে নয়। তাই আসুন বিজয়ের এই মাসে সবাই একসাথে বলি আমাদের বিজয় আমাদের অহংকার, এই অহংকার আমকে যেকোন মূল্যে রক্ষা করতেই হবে।

আজ আর নয় বন্ধুরা, ভালো থাকবেন সবাই।

Sort:  
 6 months ago 

আসলে বর্তমানে দেশ নিয়ে চিন্তা করার মত মানুষ একেবারেই কম। বিশেষ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যারা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও যদি আপনি চিন্তা করেন। তারপর দেশ নিয়ে চিন্তা করে এমন মানুষ আপনি খুঁজে পাবেন না। কেননা সবাই এখন এটা নিয়ে ব্যস্ত কিভাবে তার পকেট ভারি করা যাবে।

সবাই যদি একটু একটু করে দেশের কথা চিন্তা করত। আমাদের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করত। এবং কতটা কষ্টের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই বিষয়গুলো নিয়ে একটু চর্চা করতো। তাহলে হয়তোবা আমাদের দেশ এতটা তলিয়ে যেত না। বিশেষ করে বর্তমানে দেশের দ্রব্যমূল্য এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। যে সাধারণ মানুষ মাঝে মাঝে দেখা যায় না খেয়ে থাকে। রাস্তায় যারা বসবাস করে এই শীতের মধ্যে, তারা কতটা কষ্ট করে বসবাস করে।

আসলে অনেকেই ভুলে গিয়েছে স্বাধীনতা দিবস কবে বিজয় দিবস কবে। যখন প্রাইমারি স্কুল কিংবা হাইস্কুলে মাইক লাগিয়ে গান চালানো হয়। তখন হয়তোবা অনেকে মনে করে যে না আজকে স্বাধীনতা দিবস আজকে বিজয় দিবস। আর জাতীয় সঙ্গীতের কথা আপনি বলেছেন, সেটা অনেকের মুখ থেকে শুনতে গেলে দুই চার লাইনের বেশি হয়তোবা কেউই পারবেনা। কেননা সবাই বর্তমানে গেম ফেসবুক ইউটিউব এসব নিয়েই অনেক বেশি ব্যস্ত থাকে। আমার স্বাধীনতা আমার গর্ব। এটা আমরা সবাই যদি মেনে নিতে পারতাম, তাহলে আমাদের দেশ আরো বেশি সুন্দর হতো।

 6 months ago 

সুন্দর একটা কথা বলেছেন আমরা সবাই সৈনিক কেউ প্রতক্ষভাবে কেউ পরোক্ষভাবে। আমরা স্বাধীন জাতি। এ মাস বিজয়ের মাস এ বিজয় আমাদের অহংকার। তবে একটা কথা বলতে হয় স্বাধীনতা অর্জনের চেয়েও স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।

 6 months ago 

বিজয়ের মাসে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।আপনি ঠিকই বলেছেন ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধ করে আমরা এই দেশকে স্বাধীন করেছি।আমরা সেই জাতি। অথচ আজ স্বাধীনতার মূল্য আমরা দিতে ভুলে গেছি। আমরা নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছি ইন্টারনেট আর মাদকতার স্রোতে। হারিয়ে ফেলছি নিজস্ব স্বকীয়তা ও ঐতিহ্যগুলো তাই আমাদের কাছে দিবস গুলো এখন শুধুই একটি ছুটির দিন হিসেবে হয়ে গেছে।
যে নিজের জাতির হতে পারে না সে পৃথিবীর কারোই হতে পারে না। সে বিদেশে যত রমরমা জীবন যাপন করুক না কেন সে আসলে একজন দুর্ভাগা।আপনি দেশ প্রেমের যে জীবন গাঁথা উল্লেখ করেছেন তার সত্যিই দারুন।

 6 months ago 

আমাদের বিজয় , আমাদের অহংকার কেননা নয় মাস যুদ্ধ করার পর তারপরই আমরা এ দেশ কে স্বাধীন করতে পেরেছে ৷ লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ এই যুদ্ধে স্বাধীন হয়েছে ৷ অনেক মা বোনদের নির্যানিত হতে হয়েছে তারপরই না আমরা এই দেশকে স্বাধীন করতে পেরেছি ৷ আর বর্তমানের মানুষ এই স্বাধীনতা দিবস কে এখন পালন ও করতে জানে না ভূলে যাচ্ছে যে এই মাস স্বাধীনতার মাস ৷ এই ডিসেম্বর স্বাধীনতা মাসকে আমি স্যালুট জানাই ৷

ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ৷ শুভকামনা রইলো আপনার জন্য ৷🌺

Loading...
 6 months ago 

আমরা গর্বিত কারণ আমাদের দেশ স্বাধীন দেশ। আমরা আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারি। আমরা সবাই বাঙালি হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকি আর এটা অর্জন করতে কতটা কষ্ট হয়েছে তা আমরা বুঝিনা। আমরা কোন কষ্ট ছাড়াই স্বাধীন দেশ উহার পেয়েছি কিন্তু তাও আমরা দেশটাকে রক্ষা করবে করতে পারিনা। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।আপনার পোস্ট টি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আর পরিবার ও নিজের খেয়াল রাখবেন।

 6 months ago 

আমরা যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন আমাদের প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়েই যেতে হবে। সেটা সংসার ক্ষেত্রেই হোক বা কর্মক্ষেত্রেই হোক। এমনকি অসুস্থ হলেও লড়াই করেই আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর আত্মবলিদান এর পরই ভারত এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আর এটা বলতে আমার কোন দ্বিধা নেই যে আমার বাংলাদেশী ভাই বোনেরা বাংলা ভাষাটাকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে। আমরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বিশেষ করে বাঙালিরা শুধু নামেই বাঙালি কিন্তু বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো উদ্যোগ আমাদের মধ্যে নেই।

 6 months ago 

আমরা মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে বড় হওয়া প্রজন্ম। মুক্তিযুদ্ধ আমরা দেখি নি কিন্তু যুদ্ধের গল্প অনেক শুনেছি। শুরু হয়ে গেল আমাদের মহান বিজয়ের মাস। ১৬ ডিসেম্বর আমরা পাকিস্তানিদের হারিয়ে বিজয় নিশ্চিত করি। এই বিজয় আনতে আমাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ এই দিনে গান বাজনা করে উদযাপন করেই শেষ। অনেকেই যুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করি না। মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ট সন্তান্দের সম্মান করি না। আমাদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে। দেশের বীর সন্তান দের সম্মান করতে হবে।

বিজয়ের মাসে খুব সুন্দর লিখেছেন আপনি।আপনি আপনার লেখনির মধ্যে খুব সুন্দর একটা কথা বলেছেন সেটা হলো আগে আমাদের শত্রু ছিল প্রকাশ্যে কিন্তু এখন রয়েছে গোপনে।এই গোপন শত্রু খুবই ভয়ানক হয়।আমাদরে পূর্বজদের রক্তের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা আমরা সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে দেশকে আরও উন্নত করে তুলব এটা হোক আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা।

বিজয় অর্জন করেছে৩০ লাখ মানুষ শহীদ হ'য়ে আজ আমাদের এই সোনার বাংলা, এটা বাঙালিদের গৌরব এর ইতিহাস,, এটা আমাদের অহংকার কেন না নয় মাস যুদ্ধ করে এই স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার পেয়েছি। স্বাধীনতা অর্জন করার থেকে রক্ষা করা কঠিন। আপনার পোস্ট টা পড়ে খুবই ভালো লাগলো আপনার জন্য দোয়া ও শুভকামনা রইল।

Coin Marketplace

STEEM 0.23
TRX 0.12
JST 0.029
BTC 66649.32
ETH 3562.88
USDT 1.00
SBD 3.12