“স্কুল পালানোর দিনগুলি”

in Incredible India11 months ago

আসসালামু আলাইকুম/আদাব,

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “স্কুল পালানোর দিনগুলি” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

indian-g1b999667b_1280.jpg
source

প্রথম যেদিন স্কুলে গিয়েছিলাম, অনেক রোমাঞ্চিত ছিলাম। যতদূর মনে পরে তৃতীয় সারির একটি বেঞ্চে বসেছিলাম। শিক্ষক কী বলেছিলো মনে নেই। শুধু মনে আছে প্রথম দিনই কানমলা খেয়েছিলাম দুষ্টমির জন্য। দুবছর পর যখন তৃতীয় শ্রেণিতে উঠি তখন আরো বেশি দুষ্টামি আমার ভিতরে বাসা বাধতে শুরু করে।

তৃতীয় শ্রেণিতে আমার প্রথম স্কুল পালানো শুরু। সপ্তাহে চার দিন টিফিন পালিয়েছিলাম। টিফিনের পর মাঝে মঝে ক্লাস করলেও মনযোগ দিয়ে করতাম না। বলা চলে প্রচুর দুষ্ট ছিলাম আমি। ঘন্টা বাজার সাথে সাথে শার্ট ইন করে উপর দিয়ে শার্টের ভেতর বই ঢুকিয়ে দিতাম এক ভোঁ দৌড়।

সে যে দৌঁড় দিতাম এক দৌঁড়ে গিয়ে বাড়ী পৌঁছাতাম। শৈশবের মহূর্তগুলো সত্যি অনেক সুন্দর ছিলো। এখনও মনে পড়লে খুব অবাক লাগে। আমি এরকম ছিলাম! অথচ চার দেয়ালের মাঝে আজ বন্দি। চাইলেও আর দৌঁড়াতে পারিনা। আজকালকার ছেলে মেয়েরাও কিন্তু পারে না।

আমরা যেগুলো শৈশবে করেছি তার ছিটেফোটাও বর্তমান প্রজন্মের মাঝে আমি দেখি না। এর অবশ্য বিশেষ কিছু কারণ আছে। যাইহোক আজ ঐদিকে যাবো না।

আমার খুব মনে পরে, যেদিন বই বেশি থাকতো অর্থ্যাৎ ছয়টি বই সাথে থাকতো সেদিন জানালা দিয়ে বই বাইরে ফেলে দিতাম। তারপর ক্লাসের পেছনের জানাল দিয়ে কোনমতে বের হয়ে স্কুলের পেছন দিয়ে পালাতাম। স্কুলের পেছনে একটু ঝোঁপ ঝাড় বেশি ছিলো।

তাই ঐদিক দিয়ে বের হওয়াটা বেশ সহজ ছিলো। কয়েকবার পালাতে গিয়ে পায়ে কাঁটা হেনেছিলো। বেশ কয়েদিন খুড়িয়েও হেটেছিলাম। পরে মা টের পেয়ে উত্তম মাধ্যম দিয়েছিলো আমায়।

মজার একটা বিষয় হলো চারটার আগে কখনই বাড়ী যেতাম না। কারণ চারটার আগে বাড়ী গেলে মা বুঝে যাবে এবং বাকিটা নাইবা বললাম। তাই সারা গ্রাম ঘুরে বেরাতাম। বিশেষ করে নদীর পারে একটি বড় খোলা জায়গা ছিলো সেখানে গিয়ে অনেকের সাথে লাটিম ঘুরাতাম।

লাটিম ঘোরানোয় আমি ওস্তাদ ছিলাম। মাঝে মধ্যে দু এক টাকা দিয়ে লাটিম ঘুরানো বাজি ধরতাম। বেশ কয়েকবার জিতেও যেতাম। আবার যারা বড় ছিলো তারা আমাদের বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে লাটিম নিয়ে নিতো।

আমাদের খুব সাধারণ একটা খেলা ছিলো দাঁড়িয়াবান্ধা। এছাড়া মারবেল, ফুটবল, ক্রিকেটও খেলতাম। ব্যট হিসেবে অনেক সময় ব্যবহার করতাম কাঠের তক্তা কিংবা তালপাতার ডগা। মাঝে মধ্যে বৃষ্টির দিনে জাম্বুরা পেরে সেই জাম্বুরাকে ফুটবল বানিয়ে খেলতাম।

একটা জাম্বুরা দিয়ে অনেকক্ষণ খেলা যেতো। সেই জাম্বুরাও আবার চুপি চুপি গিয়ে পারতাম। মালিককে বলতাম না। বেশ কয়েকবার মালিকের তাড়াও খেয়েছিলাম।

children-g83d751314_1280.jpg
source

সন্ধ্যার পর পড়তে বসতাম। পড়ালেখা চলতো রাত আটটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত। তারপর শুরু হতো টিভি দেখা। সেসময় বাংলাদেশ টেলিভিশন খুব জনপ্রিয় একটি টিভি চ্যনেল ছিলো। রাতে নাটকের ধারাবাহিক পর্ব, বিভিন্ন ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, ছোটদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইত্যাদির বেশ প্রচলন ছিলো।

বাড়ীর সবাই ধারাবাহিক নাটকগুলো দেখার জন্য সপ্তাহজুরে অপেক্ষা করতো। তারপর প্রতি শুক্রবার ছায়াছবি উপভোগ করার জন্য আমাদের বাড়ীর উঠোন ভর্তি মানুষ হতো। কারণ সেইসময় তেমন কারো বাসায় টেলিভিশন ছিলো না।

আমি যখন ক্লাস ফোর এ পড়ি তখন আমাদের বাড়িতে টেলিভিশন ছিলো না। পাশের বাসায় অর্থ্যাৎ রনিদের বাসায় টেলিভিশন ছিলো। তাও আবার ব্যাটারি দিয়ে সেই টেলিভিশন চলত। ব্যটারির চার্জ শেষ হলে বাজারে গিয়ে চার্জ দিয়ে আনতে হতো। বাজার ছিলো আমাদের বাড়ী থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। তাই সেসময় ব্যটারি চার্জ দেয়া বেশ কষ্টসাধ্য বিষয় ছিলো।

আমাদের শৈশবে পুকুরে সাঁতার কাটা নিত্যদিনের একটা অভ্যাস ছিলো। প্রতিদিন দুপুরে পুকুরে গোসল করতাম। এক দু ঘন্টা কীভাবে যে পার হয়ে যেত সেদিক কোন খেয়ালই থাকতো না। মাঝে মধ্যে পুকুরে মাছ ধরতাম। বরশি দিয়ে মাছ ধরার বেশ ভালো প্রচলন ছিলো সেসময়।

বাড়ী থেকে খানিকটা দূরে একটা বিল ছিলো। সেখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত বর্ষা মৌসুমে। ছেলেরা সবাই ঝাঁক বেধে মাছ ধরতে যেতো। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। ছোট বড় বিভিন্ন মাছ ধরে বাসায় আনতাম।

আমাদের গ্রাম কিন্তু তেমন বড় ছিলো না। আগে এমনিতেই ঘনবসতি কম ছিলো। তখনকার সময় সবাই সবার বাড়ীতে যেতাম। সবার বাড়ীর উঠান অনেক বড় ছিলো। মাঝে মধ্যে উঠানে অনেক খেলাধুলাও করতাম। সব মিলিয়ে দারুণ কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে সেসব বাড়ীতে।

পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর আর স্কুল পালাই নি। টিফিনের পরেও সব ক্লাস করেছিলাম। হয়তো তখন একটু করে বুজতে শিখেছিলাম কিংবা বাবা মায়ের চাপে, শিক্ষকদের চাপে পরে গিয়েছিলাম। তখন বৃষ্টি বাদলের দিনেও সবাই স্কুলে আসতো। বাসায় ছাতা না থাকলে কলাপাতা মাথায় দিয়ে স্কুলে আসতাম।

পঞ্চম শ্রেণিতে বাৎসরিক পরীক্ষায় বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম। তখন বাংলার শিক্ষক আমাকে একটা কথা বলেছিলো আমি তোর খাতাটা আরেকবার দেখবো। তুই তো বাদর নাম্বার ওয়ান। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আর খাতাটি চেক করেছিলেন কিনা তা জানি না। মোটামুটি ভালো রেজাল্ট করেই প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে হাই স্কুলে উঠি।

open-book-g5fe2b935c_1280.jpg
source

হাই স্কুলে বেশ চাপের মধ্যে থেকে এক প্রকার পড়াশোনা করতে হতো। তখন আর বেরোনোর বেশি সুযোগ ছিলো না। কারণ সম্পূর্ণ স্কুলের চারদিকে বাউন্ডারি ওয়াল ছিলো এবং সিকিউরিটিও বেশ হার্ড ছিলো। তাই স্কুল পালানো সম্ভব হতো না। তবে খেলাধুলা ছাড়িনি। স্কুল মাঠে টিফিনের সময় প্রচুর ক্রিকেট খেলতাম।

যাইহোক আমাদের প্রত্যেকেরই শৈশব কালের মধুর কিছু স্মৃতি রয়েছে। আজো সেসব স্মৃতি মনে পড়লে বেশ খারাপ লাগে। আবার মনে মনে হাসিও পায়। মাঝে মধ্যে চোখের কোনে পানি চলে আসে। আগে কী ছিলাম আর এখন কী আছি এবং ভবিষ্যতে কী থাকবো। অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যত নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকা, আমাদের জীবন সংগ্রাম।

আজ আর নয়। ভালো থাকবেন বন্ধুরা।

Coin Marketplace

STEEM 0.27
TRX 0.11
JST 0.030
BTC 69081.21
ETH 3809.03
USDT 1.00
SBD 3.50