প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি
কেমন আছেন বন্ধুরা? আল্লাহ্র অশেষ মেহেরবানীতে আমি সুস্থ্য এবং ভালো আছি। সুস্থ্যতা আল্লাহ্ তা’লার সবচেয়ে বড় নিয়ামত। আর এই নিয়ামত পেয়ে আমি অনেক খুশি।
যাইহোক আজ আমি আপনাদের মাঝে “প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি” শীর্ষক একটি লিখনি উপস্থাপন করছি।
দুঃখ ভারাকান্ত মন নিয়ে আজ লিখছি। কেননা আজ আমার একাডেমিক জীবনের শেষ দিন। আজকের ভাইবা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সতেরো বছরের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটলো।
যেদিন প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনে পদার্পন করেছিলাম সেদিন কেঁদেছিলাম। আজ যখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটলো তখনও কাঁদলাম। সত্যি জীবন বড়ই অদ্ভুত।
আজ এম বি এ (মাষ্টার্স) পর্বের শেষ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো। লিখিত পরীক্ষা বেশ কদিন আগে শেষ হয়েছিলো। শুধু বাকি ছিলো ভাইবা। সেটিও আজ সম্পন্ন হলো।
ভাইবা পরীক্ষার প্রস্তুতি স্বরুপ গত বিশ তারিখে কলেজে প্রস্তুতিমূলক ক্লাস হয়েছিলো। দূর্ভাগ্যবশত আমি ক্লাসে উপস্থিত হতে পারিনি। কিন্তু ম্যসেঞ্জার গ্রুপে এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য পেয়েছিলাম।
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি ছিলো সেটি হলো ফরমাল ড্রেস পরে ভাইবার দিন যথাসময়ে উপস্থিত হতে হবে। এরপর কিছু প্রশ্ন সম্পর্কে জেনেছিলাম যেগুলো ভাইবা বোর্ডে স্যার জিজ্ঞাসা করতে পারে। সব মিলিয়ে আমার প্রস্তুতিও ছিলো দারুণ।
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে তারাতারি করে তৈরি হয়ে নিই। এরপর সকালের নাস্তা খেয়ে সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ কলেজের উদ্দেশ্যে রহনা করি। আমার বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার।
নয়টা পঞ্চাশ নাগাদ কলেজে পৌঁছালে, দেখি ক্যম্পাসে এখনও তেমন কেউ আসেনি। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন বন্ধু আসলো। অনেকদিন পর বন্ধুদের দেখা পেয়ে খুব আনন্দ হচ্ছিলো। সকলের সাথে হাত মিলিয়ে একে অন্যের খোঁজ-খবর নিলাম।
সকলেই আমার ছেলে সম্পর্কে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করছিলো। ছেলের ছবি অনেকে দেখতে চাচ্ছিলো। আবার কেউ কেউ অন্য কিছুও জানতে চাচ্ছিলো। যাইহোক সবাই আমার ছেলের ছবি দেখে বেশ আনন্দ প্রকাশ করেছিলো।
সকাল দশটা পনেরো মিনিটে কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে ঘোষণা আসে আমাদের ভাইবা শুরু হবে এগারোটার পর। কেননা তখন পর্যন্ত ভাইবা বোর্ডের স্যাররা এসে পৌঁছায় নি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম হলো অন্য জেলার কোন সরকারী কলেজের প্রফেসর এসে আমাদের ভাইবা নেবে। নিয়ম অনুযায়ী পাশের জেলা গাইবান্ধা আর ঠাকুরগাঁও থেকে দুইজন প্রফেসর এসেছিলেন আমাদের ভাইবা নেয়ার জন্য।
যেহেতু পরীক্ষা আরো দেড়িতে শুরু হবে তাই বন্ধুরা সহ একটু কলেজের চারপাশ ঘুরে দেখছিলাম। সব মিলিয়ে ভালোই লাগছিলো।
এগারোটা পনেরো মিনিটে আমাদের ব্যবসায় শিক্ষা ভবনের সামনে একটি সিরিয়াল নাম্বার সম্মলিত একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিলো। এই সিরিয়াল অনুযায়ী ভাইবা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু আমি আমার নাম সেই নোটিশে দেখতে পাচ্ছিলাম না।
পরবর্তীতে জানতে পারি যে, যাদের নাম সিরিয়ালে থাকবে তাদের আগে ভাইবা অনুষ্ঠিত হবে। তারপর অন্যদের। সব মিলিয়ে খুব বিরক্ত লাগছিলো। এখন আমাদের আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। কি আর করার।
আমাদের যাদের সিরিয়াল প্রথমে ছিলো না তারা সকলে গিয়ে বসার যায়গায় বসে গল্প করতে শুরু করেছিলাম। এই ফাঁকে ছোট ভাইদের সহযোগীতায় ক্যমেরা বন্দি হয়েছিলাম। সকলকে একসাথে পেয়ে সত্যি আজ অনেক ভালো লাগছিলো।
সকলে মিলে প্রায় চল্লিশ মিনিটের মত সময় কাটিয়েছিলাম। এরপর আমাদের সিরিয়াল নাম্বার আসলে সকলে একত্রে মিলে ভাইবা বোর্ডের বাইরে অপেক্ষা করতে থাকলাম। একেকজন বই নিয়ে হুলুস্থুর কান্ড বাজিয়ে দিচ্ছিলো।
বিশেষ করে ব্রিফ প্রশ্নগুলো। এই প্রশ্নগুলো একে তো কনফিউশন তারপর আবার একেকজন একেক উত্তর দিচ্ছিলো বই থেকে। সব মিলিয়ে যাতা অবস্থা। এই সময়ের মধ্যে যতটুকু পড়েছিলাম ততটুকু ভুলে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিলো।
যাইহোক কিছুক্ষণের মধ্যে আমার নাম ও রোল নাম্বার ধরে ডাকা হলো। আমি ভীর ঠেলে ভাইবা বোর্ডে গিয়ে সর্বপ্রথম স্যারকে সালাম দিলাম। স্যার বসতে বললে বসে আমার ফাইল স্যারকে দিলাম।
স্যার দেখে বললো যে সব ঠিক আছে। এরপর আমাকে তিনটি প্রশ্ন করলো। আমি দুটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছিলাম। এরপর স্যার কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন যাও সমস্যা নেই।
ভাইবা বোর্ড থেকে বের হতেই সকলে ঘীরে ধরে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো কী প্রশ্ন করেছে বল না? আমি একেক করে সবাইকে বলতে থাকলাম যে এই এই প্রশ্ন করেছে। সকল বন্ধুদের পরীক্ষা শেষ হলে সবার সাথে শেষবারের মত দেখা করেছিলাম।
সবাই আবেগে আপ্লুতো ছিলো। স্যারদের সাথে দেখা করে যে যার মতন চলে যেতে থাকলো। আমি ও আরো কিছু বন্ধুরা মিলে কলেজের পুকুর পারে কিছু সময় কাটিয়ে যে যার মতন বাসায় চলে আসি।
আজ আর নয় বন্ধুরা। ভালো থাকবেন সকলে।
আসলে একদম ঠিক বলেছেন জীবন বড়ই অদ্ভুত। সময় কোন দিক দিয়ে যায় বোঝা যায় না।
ছোট বেলায় যখন মা-বাবারা স্কুলে যেতে বলেছিল তখন কতই না কান্নাকাটি করতাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যখন বুঝতে পারি পড়াশোনায একবারে জীবন থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছে, সেই মুহূর্তে খুব কষ্ট লাগে।
আজ আপনাদের শিক্ষা জীবনের শেষ দিন ছিল। অনেক আগেই আপনার এমবিএ মাস্টার্স লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কিন্তু বাকি ভাইবা পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটলো।
আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন শিক্ষার শেষ নেই।
সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
কথায় আছে শিক্ষার কোন বয়স নেই আমরা যে কোন মুহূর্তেই শিখতে পারি। তবে আমরা হয়তোবা সেটা করি না। আজকে আপনার জীবনের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেষ হয়েছে জানতে পেরে ভালো লাগলো।
হয়তোবা আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে কিছু বছর পরে দেখা হবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্ত আপনি অনেক বেশি মিস করবেন সেদিন গুলো হয়তোবা চাইলেও আর ফিরে পাওয়া যাবে না। কিন্তু জীবনে শিক্ষা গ্রহণ আপনি যে কোন মুহূর্তে করতে পারবেন। জীবন থেকেও আপনি অনেক কিছু শিখতে পারবেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ উপরোক্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। ভালো থাকবেন।
https://x.com/AlRiaz76338/status/1793972451334037552
শিক্ষার কোন শেষ নেই। মায়ের কোল থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মানুষ কিছু না কিছু শিখতেই থাকে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শেষ আছে আর এই দিনটা আসলেই কস্টকর। আপনার লেখা পড়তে গিয়ে আমার নিজের মাস্টার্স শেষ করার স্মৃতি মনে পরে যাচ্ছিল।প্রতিদিন যাদের মুখ না দেখলে মনে হত আজকের দিনে কি যেন একটা মিস করে গেছি আজ কত বছর হয়ে গেছে তাদের সাথে দেখা হয় না। ক্লাসমেটরা আপনার ছেলের ছবি দেখতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমাদের সময় কোন বিবাহিত মেয়ে ক্লাস মেট ছিলো কিন্তু কোন ছেলে ক্লাসমেট ছিল না, ইদানীং অনেক এর লেখায়ই দেখতেছি বিবাহিত। আমাদের দেশের ছেলেদের বিয়ের গড় বয়স কি কমে গেল নাকি এটাই সন্দেহ লাগছে।😀
মজা করলাম, কিছু মনে করবেন না।ভালো লাগলো আপনার দিনলিপি পড়ে।
ভালো এবং সুস্থা থাকবেন সবসময় এই শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
ম্যাম আপনি ঠিক বলেছেন, আমাদের ক্লাসে নব্বই ভাগ মেয়ে এবং চল্লিশ ভাগ ছেলে বিবাহিত। কেননা সেশন জট এবং করনা মহামারির জন্য আমরা অনেক পিছিয়ে গিয়েছি। এর ফাঁকে অনেকেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। আমার মতন অনেকের সন্তান পর্যন্ত আছে। ধন্যবাদ ম্যাম আমার পুরো লিখা মনযোগ দিয়ে পড়ার কারণে এবং সুন্দর কমেন্ট করার জন্যে।
আপনি মজা করেছেন দেখে আমিও কিছুক্ষণ হাঁসলাম। ভালো থাকবেন ম্যাম।
কোথায় আছে যার শুরু আছে তার শেষ ও আছে।। দেখতে দেখতে শিক্ষা জীবনের অবসান ঘটলো।। আর সবাই মিলে আনন্দের সাথেই অনেকটা সময় পার করেছেন।। আর হ্যাঁ ভাই আমিও কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে পড়ি।। প্রথমে আপনার ছবি দেখে পেছনে ব্যবস্থাপনা বিভাগ দেখে আমি একটু মনোযোগ দিয়ে দেখি পরে বুঝতে পারি এটা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ আর আমি এই ব্যবস্থাপনার স্টুডেন্ট।।
দোয়া রইল আপনার জন্য আপনার পরবর্তী জীবন আনন্দের ও সুখের হোক।