“নিমগাছ”

in Incredible Indialast year (edited)

আসসালামু আলাইকুম/আদাব,

কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “নিমগাছ” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-

tree-g9631f5c18_1280.jpg
source

নিমপাতার বিভিন্ন গুণের কথা আমরা কম বেশি সবাই জানি। নিম একটি ঔষধী গাছ। সকল প্রাণী ও সকল উদ্ভিদের জন্য এত উপকারী গাছ বোধয় আর একটাও নেই। এজন্য পৃথিবীর সবথেকে দামি বৃক্ষ হিসেবে নিমকে বিবেচনা করা হয়। নিমগাছের এত এত গুণাগুণের কথা বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিমকে একুশ শতকের বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

নিমের গুণাগুণ সম্পর্কে সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের মাঝে ধারণা রয়েছে। ঠিক তেমনি বর্তমান প্রজন্ম এর ব্যতিক্রম না। বর্তমান সময়ে নিম নিয়ে মানুষের মাঝে ব্যপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এমনকি নিম চাষাবাদের দিকেও মানুষ এখন অনেকখানি ঝুঁকছে।

বাংলাদেশের মধ্যে প্রায় সব জায়গায় নিম গাছ দেখা যায়। কিন্তু উত্তরাঞ্চলে এটির দেখা সবথেকে বেশি পাওয়া যায়। নিমের আদি নিবাস হিসেবে ধরা হয় বাংলাদেশ, ভারত আর মিয়ানমারকে। আমাদের এলাকায় একটি প্রবাদ এখনো বিদ্যমান। বলা হয় যে কোন মানুষ যদি নিমগাছের তলে বিশ্রাম নেয় কিংবা ঘুমায় তাহলে নাকি তার সব অসুখ দূর হয়ে যায় এবং মনের মধ্যে অধীক সস্তি আসে।

এই প্রবাদের যৌক্তিকতা কতটুকু সেটা আমি জানি না, কিন্তু নিম যে আসলেই আমাদের রোগ বালাই থেকে মুক্তি দেয় সে কথা কিন্তু আমরা সকলেই মানি। তাই আমাদের এলাকায় এখনো প্রতিটি বাড়ীতে কম বেশি নিম গাছ দেখা যায়।

নিমগাছ কিন্তু খোলামেলা যায়গায় বেশি দেখা যায়। রাস্তার পাশে, সমতল ভূমিতে কিংবা নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় যে কোন মাটিতে নিমগাছ জন্মে। তবে বেলে ও দোঁআশ মাটিতে নিমগাছ সবথেকে বেশি ভালো হয়। নিম গাছে মার্চ মাস থেকে মে মাসের মধ্যে ফুল ফুটে থাকে। জুন মাস থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে নিমের ফল পাকলে তখন বিশেষ পদ্ধতিতে বীজ সংগ্রহ করা যায়।

বীজ সংগ্রহ করার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে পলি ব্যগে বা মাটিতে পুতে বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপন একটু দেরি হলে চারা গজানোর হার অনেক কমে যায়। চারার বয়স যখন এক বছর হয় তখন সেটি পলিব্যগ থেকে তুলে মাটিতে রোপন করতে হয়। নিম গাছ যে জমিতে রোপন করবো সেই জমি হতে হবে আগাছাবিহীন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন।

বর্ষাকাল যে কোন চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। নিম গাছও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে গাছের গোড়ায় যেন কোনভাবেই পানি না জমে। আর গবাদি পশু যেন আক্রমন না করে সেই জন্য চারার রোপনের পরপরই বাঁশের বেড়া বা অন্যকিছু দিয়ে চারদিক ঘিরে দিতে হবে। নিয়মিত পানি দিলেই নিম গাছ খুব দ্রুত বড় হতে থাকে।

squirrel-g24d184012_1280.jpg
source

নিমকে বলা হয় ঔষধী গুণসম্পন্ন বহু বর্ষজীবি বৃক্ষ। নিম গাছের ডাল, পাতা সবকিছুই আমাদের বিভিন্ন কাজে লাগে। নিম গাছের কাঠ খুব শক্ত হয়ে থাকে। নিম গাছের কাঠে কখনো উইপোকা বাসা বাধতে পারে না।

ফলে নিম কাঠে কখনো ঘুণ ধরে না। শুধু যে উইপোকা তা কিন্তু নয় অন্য কোনপ্রকার পোকাই নিম কাঠে বাসা বাধতে পারে না। তাই নিম কাঠ দিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করা অনেকটা লাভজনক।

এখন আমরা নিমের কিছু আশ্চার্য ঔষধী গুণাগুণ ও এর কার্যকারিতা সম্পর্কে জানবোঃ-

  • নিম থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তা আমাদের ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী। কেননা নিম তেলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ই থাকে। তাই আমাদের সকলের উচিত নিম তেল ব্যবহার করা। আর নিম তেল ব্যবহারে চুলে কোন প্রকার উকুন হয় না। যদিও থাকে তাহলে নিম তেল ব্যবহারের ফলে সেগুলো মরে যায়।

  • নিমপাতা যেকোন ব্যকটেরিয়া ও ছত্রাক প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। তাই ত্বককে ছত্রাক ও ব্যকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে নিমপাতার জুড়ি নেই। মুখের ব্রণ সমস্যা দূর করার জন্য নিমপাতা বেটে মুখে লাগাতে পারেন।

  • আমাদের দাঁতের জন্য নিমের ডাল খুবই উপকারী একটি বস্তু। কেননা নিম গাছের ডাল দিয়ে দাঁত ভালো পরিষ্কার হয় এবং ছত্রাক ও ব্যকটেরিয়ার হাত থেকে দাঁতকে সুরক্ষিত রাখা যায়। তাছাড়া মুখের দূর্গন্ধ দূর করতে ও দাঁতের ফাকে আটকে থাকা বিভিন্ন জীবাণুর হাত থেকে দাঁতকে রক্ষা করতে নিম ডালের কোন তুলনা হয় না।

  • আমাদের শরীরের কোন অংশ কেঁটে গেলে বা চিড়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে আমরা নিম পাতা পিষে রস করে ক্ষত স্থানে লাগাতে পারি। এতে রক্ত পরা বন্ধ হয় এবং ক্ষত স্থানে কোন ছত্রাক বা ব্যকটেরিয়া আক্রমন করতে পারে না। নিম পাতার রস তৎক্ষনাৎ ভেষজ ঔষুধের মতো কাজ করে।

  • নিম পাতা ভালো করে রোদে শুকিয়ে তা গুঁড়ো করে রাখতে পারলেই পরবর্তীতে সেগুলো ভেষজ ফেস ওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • আমাদের মাথায় বিভিন্ন সময় খুশকির ফলের চুলকানি কিংবা ক্ষত এর স্মৃষ্টি হয়। নিমপাতার রস এই চুলকানি কিংবা ক্ষত দূর করতে খুব ভালো উপাদান হিসেবে কাজ করি। এছাড়াও নিমপাতার রস চুলে গোড়ায় লাগালে চুল শক্ত হয়, চুলের শুস্কতা ও রুক্ষ ভাব অনেকটাই কমে যায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

  • শরীরে বিভিন্ন যায়গায় চুলকানি হলে নিম পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে অনেক আরাম পাওয়া যায়। আমাদের ত্বকে যেকোন আটকে থাকা জীবানু দূর করতে নিম পাতা সেদ্ধ পানি খুব কার্যকারী একটি উপাদান।

  • প্রতিনিয়ত সকালে উঠে এক বা দু চামচ নিমপাতার রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সহ লিভারের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তাছাড়া রক্ত পরিষ্কার রাখতে, শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করতে, শরীর সুস্থ, সতেজ , রোগমুক্ত ও চাঙ্গা রাখতে নিমপাতার রস খুবই কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।

green-shades-in-nature-gaf6137898_1280.jpg
source

নিম গাছের এতসব গুণ থাকার সত্ত্বেও আমরা এর কদর করি না। আসুন সকলে বেশি বেশি ঔষধী ও ভেষজ গাছ লাগাই। নিজেরাও বাঁচি অন্যদেরও বাঁচাই।

আজ আর নয় বন্ধুরা। সবাই ভালো থাকবেন। আল্লাহহাফেজ।

Sort:  
Loading...
 last year 

আপনি নিম গাছের গুণাগুন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা তুলে ধরেছেন যা পড়ে খুব ভালো লাগল। নিম গাছ মাঝারি আকৃতির চিরসবুজ বা আধা পাতাঝরা বৃক্ষ।

নিম গাছ একটি আশ্চর্যজনক ভেষজ গুণাগুণ সম্পন্ন মহৌষধি গাছ। নিমের সর্বাধিক গুরুত্ব ভেষজ গাছ হিসেবে। পাশাপাশি কৃষি ফসলের ক্ষেত্রে ওঅন্যান্য ব্যবহার রয়েছে। উন্নত দেশের বিজ্ঞানীরা নিম গাছকে ‘গ্রাম্য চিকিৎসালয়’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। নিমের শিকড়, বাকল, ডালপালা, পাতা, ফুল, ফল, বীজ ও বীজের তেল ভেষজ গুনাগুণ সম্পন্ন। প্রাচীনকাল থেকে নিম গাছ ভেষজ উপাদান হিসেবে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম ক্যান্সার প্রতিরোধক, জীবাণুনাশক এবং এতে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক বিরোধী ধর্ম বিদ্যমান থাকায় গাছের বিভিন্ন অংশ কৃমি, চর্মরোগ, চুলকানি, বাতজ্বর, দাঁতের রোগ, মাড়ির রক্তক্ষরণ, আর্সেনিকজনিত ত্বক প্রদাহ, পোড়াজনিত ক্ষত, গুটিবসন্ত, জলবসন্ত, হাম, ফোড়া, কুষ্ঠরোগ, পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি, অরুচি, বদহজম, তৃষ্ণা, বমি ও জন্ডিস রোগ নিরাময় করে। তাই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে নিম গাছের ওষুধি গুনাগুন সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57621.01
ETH 3094.14
USDT 1.00
SBD 2.32