সরস্বতী পুজো ২০২৫
নমস্কার বন্ধুরা। আজ আবারো চলে এসেছি আপনাদের সাথে নতুন কিছু গল্প শেয়ার করে নেওয়ার জন্য। আজ আমি আপনাদের আমার এই বছরের সরস্বতী পুজোর দিনটি কেমন কেটেছিল সেটাই শেয়ার করব। আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে।
সরস্বতী পুজোর দিনটা আমার কাছে বরাবরই খুবই বিশেষ একটা দিন। এই দিন সকাল বেলায় তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে কনকনে শীতের মধ্যে গায়ে হলুদ মেখে স্নান করার দিন। ছোটবেলায় কত উত্তেজনা ও উন্মাদনার মধ্যে দিয়ে এই দিনটা সূচনা হতো সে বলে বোঝানোর নয়। পাড়ার সব কচিকাঁচারা একমাস আগে থেকেই পাড়ার রাস্তায় গাড়ি ধরে (সাইকেল, বাইক, গাড়ি) চাঁদা তুলতাম। তারপর চলতো রাত জেগে আমাদের কচিকাঁচাদের ছোট করে প্যান্ডেল তৈরি ধুম। তারপর বড়দের সাহায্য নিয়ে চলত ঠাকুর কেনা, ফলমূল ও দশকর্মার বাজার। তাই এক মাস ধরে আমাদের উৎসব চলত। কি আনন্দ করে যে দিনগুলো কাটাতাম আমরা সে ভাবলে এখন স্বপ্ন মনে হয়।
বড় হওয়ার সাথে সাথে সে উন্মাদনা বা উত্তেজনা কোনটাই নেই। আগের বছর পর্যন্তও সব বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার ধুম ছিল। এই বছর সব কেমন যেন ফাকাশে হয়ে গেছে। আমরা চারজন খুব ভালো বন্ধু (মেয়ে) ছিলাম । প্রতিবছর কেউ আমাদের সাথে না বেরোলেও আমরা চারজন একসাথে এই সরস্বতী পুজোর দিন ঘুরতে বেরোতাম। সেই চারজনের মধ্যে এখন আমি একাই অবশিষ্ট রয়েছি (অবিবাহিত)। তাই এই বছর কেমন যেন দল ছাড়া হয়ে পড়েছি। বিয়ে করার পর সবাই কেমন যেন বদলে যায়। ইচ্ছে থাকলেই আবারো চারজনের দল বড়ো করে আটজন মিলে ঘুরতে পারতাম। কিন্তু কারোরই কোন ইচ্ছে নেই বলেই মনে হল। তাই আমিও আর এ বছর কাউকে জোর করে একসাথে ঘুরতে যেতে বলিনি। তাই সকাল থেকেই মনটা একটু খারাপ ছিল। তারপর শুভায়ন মানে আমার হবু বর ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দিল। দেখলাম বাড়িতে বসে মন খারাপ করেও কাজ নেই। তার চেয়ে বরং ঘুরতে গেলে মনটা একটু ভালো হবে। তাই দুজন মিলেই বেরিয়ে পড়লাম নিজেদের শহরের স্কুলগুলোতে সরস্বতী ঠাকুর দেখতে।
মনটা একটু খারাপ তো তাই খুব ভালোভাবে সাজগোজ করতেও ইচ্ছে করছিল না। যা হোক একটা শাড়ি পরে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। প্রথমে চলে গিয়েছিলাম ওর স্কুলের ঠাকুর দেখতে। সেখানে এই বছরের থিম ছিল বৌদ্ধ মন্দির ও গোতম বুদ্ধকে কেন্দ্র করে। কি অসাধারণ শিল্পকলা সেখানে চোখে পড়েছিল। যে পাটির উপর আমরা বসি সেই পাটির ওপরেও যে এত সুন্দর শিল্পকলা দেখানো যেতে পারে তা কখনো ভাবিওনি।
সেখানে স্কুলের বাচ্চাদের রাখা ছবিও দেখেছিলাম। এত সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে ফটো তুলতে ইচ্ছে করছিল। তাই নিজের বেশ কিছু ফটো তুলেছিলাম। এইবার যেহেতু পুজোটাই অনেক দেরি করেই শুরু হয়েছে তাই তখনো পর্যন্ত স্কুলের পুজো শুরু হয়নি। সকলে মিলে তখনও পুজোর আয়োজন করছিল। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আমরা আবার বেরিয়ে পড়েছিলাম পরের স্কুল পরিদর্শন করতে।
এরপর আমরা চলে গিয়েছিলাম কৃষ্ণনগর কার মাইকেল গার্লস স্কুলে। সেখানে সেই মুহূর্তে পুজো চলছিল। প্রতিবছরই এই স্কুলটা যে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হয় তবে এই বছর তেমন কোন ধুমধাম দেখলাম না। দেখে মনে হল কোনক্রমে পুজো করা হচ্ছে। তাই সেখানে বেশিক্ষণ সময় আমরা কাটাইনি। দু চারটে ফটো তুলে বেরিয়ে পড়েছিলাম পরের স্কুলের উদ্দেশ্যে।
এরপরে আমরা চলে গিয়েছিলাম কৃষ্ণনগর মৃণালিনী গার্লস হাই স্কুলে। এই বছরে এই স্কুলে থিম ছিল পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্য। এখানে শোলা দিয়ে সুন্দর করে বিভিন্ন মডেল ( মাচু পিচু , পেট্রা, তাজমহল, চিনের প্রাচীর, কলোর্সিয়াম,চিচেন ইৎজা ইত্যাদি) তৈরি করা হয়েছিল। আমি সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়েছিলাম তারপর আবার বেরিয়ে পড়েছিলাম আমাদের পরের গন্তব্যস্থলে।
এরপর আমরা আর কোন কোন জায়গায় গিয়েছিলাম এবং এই দিনটা আমরা কিভাবে কাটিয়েছিলাম সেটা আমার পরবর্তী পোস্টের সাহায্যে আপনাদের সামনে তুলে ধরব। আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
বিয়ের পর আসলেই মেয়েদের জীবনটা এমনই ছন্নছাড়া হয়ে যায়। কয়েকদিন বাদে যখন আপনিও নতুন পরিবারে যাবেন, সেখানকার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে গিয়ে দেখবেন এখনকার মতন আর সময় করে উঠতে পারছেন না। তখন হয়তো বান্ধবীদের একত্রিত হতে না পারার কারণগুলো আপনার কাছেও স্পষ্ট হবে।
তবে হ্যাঁ পুরনো দিনগুলোর স্মৃতি মনে পড়লে এই সকল দিনে মনটা সকলেরই একটু ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে, যেমনটা আপনার হয়েছিলো, তেমনটাই আমাদেরও হয়। যাইহোক সবশেষে অন্তত প্রিয়জনের সাথে বেরিয়ে পড়েছিলেন সরস্বতী ঠাকুর দেখতে।
অনেক ঠাকুর দেখেছেন এবং কি কি থিমের উপরে প্যান্ডেল হয়েছিলো, সেই সম্পর্কিত তথ্য এবং ছবিগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন যা দেখে ভালো লাগলো।
তবে এখনো আরো কিছু ছবি দেখা বাকি আছে বলেই মনে হলো। কারণ শেষের অংশে তেমনটাই আপনি উল্লেখ করেছেন। যাইহোক খানিক মন খারাপ নিয়ে হলেও দিনশেষে কিছু ভালো মুহূর্ত কাটিয়েছেন, এটাই জেনে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ দিদি।
আপনার পোস্টটি খুব সুন্দর এবং আগের দিনগুলো স্মৃতির সাথে একেবারে মিলেমিশে গেছে। যদি আমি মুসলমান তবে অন্য ধর্মের সংস্কৃতি উৎসবের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে বরাবরই। এসব উদযাপন মানুষকে একত্রিত করে এবং ভালোবাসার বার্তা দেয় যা পৃথিবীকে আরো সুন্দর করে তোলে। আপনার পোষ্টের মাধ্যমে সেই সুন্দর মুহূর্ত গুলো দেখতে পেয়েছি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
Thank you for sharing on steem! I'm witness fuli, and I've given you a free upvote. If you'd like to support me, please consider voting at https://steemitwallet.com/~witnesses 🌟
Thank you so much 🙏
আপনাদের যেমন বড় হওয়ার সাথে সাথে আপনাদের বোঝার আনন্দ অনুষ্ঠান উত্তেজনার সবকিছুই কমে যায় ঠিক তেমনি আমাদের ক্ষেত্রেও সেটা হয়ে থাকে ঈদের সময় আগে অনেক আনন্দ করতাম মেতে উঠতাম সবার সাথে আনন্দে কিন্তু এখন আর সেই দিনগুলোকে মিস করি শুধু সেগুলোকে উপভোগ করার সময় হয়ে ওঠেনা।
তার পরেও আপনি আপনার প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে সরস্বতী পূজায় ঘুরতে গিয়েছেন যেটা দেখে ভালো লাগলো বিভিন্ন জিনিস সম্পর্কে আলোচনা করেছেন হয়তোবা সেই আনন্দটা এখন আর হয় না তবে প্রিয় মানুষের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো অনেক বেশি স্পেশাল হয়ে থাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।