বিবাহ ডায়েরী (পার্ট ১) আশীর্বাদ ও রেজিস্ট্রি ম্যারেজ
প্রথমেই বলে রাখি বিয়ে আমি কোনদিনও করতে চাইনি। সব বাবা-মার মত আমার বাবা-মাও চেয়েছিল যে আমি বিয়ে করি। দুর্ভাগ্যবশত আমার বাবা আমার বিয়ে দেখে যেতে পারেননি, বাবা মারা যান ২০১৭ সালে, আর আমার বিয়ে হয় গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে। আমার আশীর্বাদ আর রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হয় ১৮ই ফেব্রুয়ারি আর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় ৪ঠা মার্চ।
২০২০ সালের ১৫ই ডিসেম্বর থেকে আমার মা শয্যাশায়ী। তখন থেকেই মূলত আমি বিয়ে করার ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা করা শুরু করি। আমার মনে এই চিন্তা খেলা করতে থাকে যে আমার অসুস্থ মাকে আমি তো সেবা-যত্ন করছি কিন্তু আমার শরীর খারাপ হলে কে আমাকে দেখবে। সেই কারণে আমি এই বুড়ো বয়সে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নি। তবে ডজন খানেক প্রেম করার পর আমার বিয়ে যে শেষ পর্যন্ত সম্বন্ধ দেখে হবে সেটা আমি কখনো কল্পনাও করিনি।
আমি কিন্তু নিউজপেপারে রীতিমতো অ্যাড দিয়ে বেশ কয়েকজন পাত্রী দেখার পর শেষ পর্যন্ত আমার স্ত্রী মানে সঙ্ঘমিত্রাকে ফাইনালি সিলেক্ট করেছি। বিয়ের ঘটকালি যারা করেন তাদের উপর আমি একেবারেই ভরসা করতে পারি না। আমি যতবার পাত্রী দেখতে গেছি আমি একাই গেছি আর এই পাত্রী দেখার অভিজ্ঞতাও কিন্তু দারুন মজার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখেছি, পাত্রীর যে ছবি আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়েছে, মুখোমুখি সাক্ষাতে তাকে অনেকটাই অন্যরকম লেগেছে।
আশীর্বাদের দিন মেয়ের বাড়ির লোক সকাল ১১ টার মধ্যে আমাদের ফ্ল্যাটে চলে আসেন। তার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ম্যারেজ রেজিস্ট্রারও চলে আসেন। পাত্রী মানে সঙ্ঘমিত্রার বাড়ি থেকে ওর সাথে এসেছিলো ওর বাবা, মা, বোন, কাকু আর বড় মামা। আর হ্যাঁ, ওনারা ওনাদের বাড়ীর কুলপুরোহিত মশাইকেও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। আর আমার বাড়িতে ছিলাম আমি, মা, আমার কাকু আর কাকিমা, দিদি আর জামাইবাবু।
প্রথমে আমাদের রেজিস্ট্রির কাজটা সেরে নিতে হয় কারণ রেজিস্ট্রার ম্যাডামের একটু তাড়া ছিল। মজার ব্যাপার হলো ম্যাডাম সকলের বিয়ে দিয়ে বেরালেও তিনি নিজে কিন্তু বিয়ে করেননি।
এবার শুরু হল আশীর্বাদের পালা। সবার প্রথমে পুরোহিত মশাই আমাদের আশীর্বাদ করে শাস্ত্রীয় উপাচার শুরু করলেন।
তারপর পাত্রীর বাবা, মা, কাকু আর বড় মামা আমাদের দুজনকে আশীর্বাদ করলেন।
এরপর আমরা কিছুক্ষণ গল্পগুজব করলাম। বনি মানে আমার শালী আমার আর সঙ্ঘমিত্রার কিছু ছবি তুললো ফেসবুকে দেবে বলে।
দুপুর দেড়টার মধ্যে ক্যাটারার খাবার দিয়ে চলে গেল। বাড়িতে এতজন লোকের রান্না করার মত লোক আমার ঘরে নেই। সেই কারণেই ক্যাটারার এর উপর রান্নার দায়িত্ব দিয়েছিলাম। খাবারের মেনু ছিল একেবারেই সিম্পল – মাছের মাথা দিয়ে মুগ ডাল, পোস্ত দিয়ে আলু ভাজা, কাতলা মাছের কালিয়া, চিংড়ির মালাইকারি আর চাটনি। শেষ পাতে মিষ্টির ব্যবস্থাও ছিল। মিষ্টি আমার শ্বশুর বাড়ির লোক সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন।
খাওয়া-দাওয়ার পর্ব মিটে গেলে সবাই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ আমার শ্বশুর বাড়ির লোক বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন। কারণ ওনাদের অনেকটা দূর যেতে হবে আর আমাদের বাড়ি থেকে ওনাদের বাড়ি মানে জয়নগরের বহড়ুু যেতে গাড়িতে এক ঘন্টা ১৫ মিনিটের মতো সময় লাগে।
তো বন্ধুরা এই ছিল আমার আশীর্বাদের দিনের গল্প। আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
পরবর্তী পর্বে আমার বিয়ে এবং বৌভাত নিয়ে লেখার ইচ্ছে রইলো। সবাই ভাল থাকবেন। আজকের মত বিদায়।
আপনার আশীর্বাদের দিনের ঘটনাটা পড়ে আমার বেশ ভালো লেগেছে, যদিও ডজন খানেক প্রেম করেছেন তবুও বিয়ের জন্য অনেক টাইম নিতে হয়েছে,😄
দাদা সত্যি কথা বলতে জন্ম মৃত্যু বিয়ে সৃষ্টিকর্তার হুকুম ছাড়া হয় না ।যতই ডজন খানেক প্রেম করেন না কেন, আপনার সাথে দিদির সাক্ষাৎ বা বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, তাই অবশেষে গত বছর আশীর্বাদ টা সম্পূর্ণ হয়েছে।
আপনার ঘটনাটি পড়তে গিয়ে আমার আজ থেকে ছয় বছর আগের কথা মনে পড়ে গিয়েছে ।আসলেই এটা এমন একটা দিন যেটা স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবার মতন চাইলেও ভুলা সম্ভব নয়।
তবে আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি আপনারা সংসার জীবনে সুখী হন। আর হ্যাঁ সেই সাথে বিয়ে এবং বৌভাতের পোস্ট পড়বার অপেক্ষায় রইলাম।
একদম ঠিক বলেছেন, সৃষ্টিকর্তার হুকুম ছাড়া জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে কিছুই হয় না। সবই তার ইচ্ছানুসারে হয়। ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
🥰
Shared on Twitter/X: https://x.com/PijushMitra/status/1732438706081161581?s=20
আপনার বাবা আপনার বিয়ে দেখতে পারে নি ৷ তারপর আপনি প্রথমে বিয়েই করতে চান নি কিন্তু আপনার মা অসুস্থ থাকার কারনে আপনাকে শেষ মেষ বিয়ে করতেই হয় আবার কয়েক এক ডজন প্রেম করার পর ৷ অবশেষে আপনার মেয়ে পছন্দ হয়ে যায় তারপর বিয়ের সকল কার্যক্রম সেরে ফেলেন খুব তারাতারি ৷ আপনি আমাদের বৌভাতের সম্পর্কে কিছু বলবেন পর্ব ২ এ তা শুনার জন্য অনেক আগ্রহীর সাথে অপেক্ষায় রইলাম ৷
ধন্যবাদ আপনাকে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷ আপনাদের দাম্পত্য জীবন অনেক সুখের হোক ৷ 🌺
ধন্যবাদ আমাদের শুভকামনা জানানোর জন্য। ভালো থাকবেন।
যদিও বিয়েটা এক বছর আগে হয়েছে সেই গল্পটা আপনি এক বছর পরে এসে আমাদের সাথে শেয়ার করছেন। আপনার বিবাহিত জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। আসলে এত এত প্রেম করার পর বিয়ের জন্য পাত্রী দেখাটা অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং। কেননা পাত্রে দেখতে দেখতে তো আপনার চোখের মধ্যে অন্যরকম একটা জ্বলন্ত অগ্নিকাণ্ড বসে গেছে। বিষয়টা মজা করে বললাম।
আপনার মা শয্যাশায়ী তাই নিজের পরবর্তী জীবনে কি হবে এইভাবে বিয়ে করেছেন। আসলে আমরা এই পৃথিবীতে আছি আমাদের জীবন সঙ্গীর প্রয়োজন। সবকিছু মেনে নিয়েও বৃদ্ধ বয়সে একটা সময় আমরা যখন নিজেদের সবকিছু হারিয়ে ফেলবো। তখন কি করব অনেকেই এই বিষয়টা মাথায় রেখে বিয়ে করে। আপনি ও তার ব্যতিক্রম নন বিয়েটা বেশ ভালোভাবেই হয়ে গেল। এটা দেখে বেশ ভালো লাগলো বিবাহিত জীবন অনেক সুখের হোক এই কামনা করি।
অশেষ ধন্যবাদ আপনার শুভকামনার জন্য। ভালো থাকবেন।
প্রথমেই অপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার আর্শিবাদ আনুস্ঠানের কিছু কথা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আমাদের এখানে এটিকে এংগেজমেন্ট বলে। অনেক আংটি পরা ও বলে।এর মানে বিয়ে ঠিক হয়ে গেল।একটা নির্দিষ্ট দিন ক্ষন ঠিক করে উঠিয়ে নিয়ে আসবে।এমন।তো আপনার আর্শিবাদ আনুস্ঠানের ছবি গুলো দেখে খুব ভালো লাগলো। আপনার পোস্টটির ২য় পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। আশা রাখি খুব শীঘ্রই আপনাদের সাথে শেয়ার করবেন।
আমাদের এখানেও আশীর্বাদ বা এনগেজমেন্ট বলে আর আংটি , চেন এগুলো দেয়া নেয়া হয়। ধন্যবাদ আমার পুরো পোস্টটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
তাই তাহলে অনেক টা একি রকমের হয়।মিল রয়েছে আমাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার সাথে। ধন্যবাদ আপনাকে। আমার কমেন্টের রিপ্লাই এতো সুন্দর করে গুছিয়ে দেওয়া জন্য।
আপনার মায়ের কথা আগেও শুনেছি, আজ ছবির মাধ্যমে তাকে এক পলক দেখার সুযোগ হলো। আসলে এইভাবে মায়ের শারীরিক কষ্ট প্রতিদিন দেখাটা কষ্টের বিষয় হলেও, আপনি যেভাবে মায়ের যত্ন করেন তা অতুলনীয়। অনেক সন্তানের কাছে সুস্থ বাবা মাও বোঝার মতো,সেখানে অসুস্থ মাকে আপনি যেভাবে যত্ন করেন, সেটা আসলেই খুব কম মানুষ করতে পারে।
ডজন খানেক প্রেমে ব্যর্থ হয়েই কি বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? যাক শেষ পর্যন্ত অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ করে ভালোই করলেন। অবাক ব্যপার বেছে বেছে এমন রেজিস্ট্রার ঠিক করলেন,যিনি নিজেই বিয়ে করেননি☺। আগে পরিচয় হলে ঠিক চলে যেতাম আর্শিবাদের চিংড়ি মালাইকারি পোস্ত দিয়ে আলুভাজা আর চাটনি খেতে। কাতলা মাছ পছন্দ নয়, তাই ওটা বাদ দিলাম। ধন্যবাদ আপনাকে রেজিস্ট্রি ও আর্শীবাদের ছবি শেয়ার করার জন্য। বিয়ে ও বৌভাতের গল্প পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকবেন।
ডজন খানেক প্রেমে ব্যর্থ হয়েই কি বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? তখন বিয়ের নাম শুনলেই পালাতাম, এমনকি একবার ফোন নাম্বার ও পাল্টাতে হয়েছিলো। অবাক ব্যপার বেছে বেছে এমন রেজিস্ট্রার ঠিক করলেন,যিনি নিজেই বিয়ে করেননি। উনি বাড়ির কাছাকাছি থাকেন, অগত্যা তার সাথেই যোগাযোগ করলাম।
প্রথমে আপনাকে আপনার বৈবাহিক জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা। আপনি আপনার পোস্ট এর মাধ্যমে আপনার আশীর্বাদের সকল স্মৃতি তুলে ধরেছেন। আপনার আশীর্বাদের ঘটনা পড়ে অনেক ভালে লাগলো। ভালো থাকুক আপনাদের বৈবাহিক জীবন।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার আন্তরিক শুভেচ্ছার জন্য।
খুবই সিম্পল একটি বিয়ে আপনাদের ভিতরে এমন বিয়ে খুবই কম দেখা যায়।
তবে আমি একটা ব্যাপারে অনেকটা হাসি পেয়েছি সেই পয়েন্টা উল্লেখ না করে আর পারলাম না।
আমাদের ভিতরেও অনেক মুরুব্বিরা রয়েছে যারা ঘটকালী করে কিন্তু নিজে এখনো বিয়ে করি নাই হাজার হাজার মানুষের বিয়ে দেবে বেড়াই কিন্তু নিজের কপালে একটি বউ মিলাতে পারি নাই।
বেশ ভালো লাগলো বিয়ের ডায়েরি টা পড়ে পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। শুভ বিবাহ বার্ষিকী আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার আন্তরিক শুভকামনার জন্য। ভালো থাকবেন।
আপনার মা অসুস্থ এটা জেনে সত্যিই খুব খারাপ লাগল।আসলে বাবা মা অসুস্থ থাকলে ভীষণ কষ্ট হয়।আপনার আশীর্বাদের গল্প আমাদের সাথে আজ শেয়ার করেছেন।এটা দেখে আমার নিজের আশীর্বাদের কথা মনে পড়ছে।আপনাদের জন্য অনেক শুভকামনা রইল।ভালো থাকুন সারাজীবন,অটুট হোক আপনাদের দাম্পত্য জীবন।
ধন্যবাদ আপনার আন্তরিক শুভকামনার জন্য।