ট্রেন ভ্রমণ করতে গিয়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি
হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
বাসে উঠেই যেতে পারতাম আমার গন্তব্য স্থলে। কিন্তু এই শীতকালে বাসের চেয়ে ট্রেন জার্নি আমার কাছে বেশি ভালো লাগে। প্রথমত প্রচন্ড ঠান্ডায় কিছুটা রক্ষা পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত কুয়াশার কারণে বাসের চেয়ে ট্রেন জার্নি বেশি নিরাপদ। তাই তড়িঘড়ি করে ট্রেনের জন্য চলে আসলাম স্টেশনে। কোনভাবেই ট্রেন মিস করা যাবে না।
প্লাটফর্মের উল্টো দিক দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করেছি। মনে মনে ভাবছি ঘুরে গেলে হয়তো সঠিক সময়ে স্টেশনে পৌঁছাতে পারব না। মনকে সায় দিতে ঘুরে না গিয়ে উল্টো পথে স্টেশনে আসলাম। সম্ভবত সঠিক সময়মতো পৌঁছাতে পেরেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ হতাশ হলাম প্লাটফর্মে কোন লোকজন দেখতে না পেয়ে। স্টেশনের খুব কাছাকাছি চলে আসছি কিন্তু লোকজন না দেখে আমার মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক করতে লাগলো।
যাইহোক প্লাটফর্মে ঢুকে ভেতরের দিকে লক্ষ্য করলাম দু-একজন পায়চারী করছে। আমিও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তাদের কাছে জানতে পারলাম ট্রেন আজকে অনেক দেরি হতে পারে। সঠিক তথ্য দেওয়ার জন্য স্টেশন মাস্টারকে খুঁজতে লাগলাম কিন্তু রুমে গিয়ে দেখি তালাবন্ধ। এদিকে টিকিট কাউন্টারেও দেখি একই অবস্থা। দুটি কাউন্টারের মধ্যে একটি তালাবন্ধ অপরটি খোলা থাকলেও লোক নেই।
পরিস্থিতি ভয়াবহ সবাই শুধু কাজে ফাঁকি দেয়ার ওস্তাদ। অথচ এই পরিস্থিতিতে কর্তব্যরত সবারই উপস্থিত থাকা উচিত ছিল। কিন্তু কে শোনে কার কথা, মনে হয় সরকারি কর্মচারীরা নিজের কাজের জন্য কখনো লজ্জিত হয় না। তারা শুরু থেকেই ফাঁকিবাজি করার ট্রেনিং নিয়ে আসে।
আজ ভাগ্য সুপ্রসন্ন নয়। তাই শুরু থেকেই প্রতিবন্ধকতা আরম্ভ হয়েছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় অনেক দূর পর্যন্ত এসে আবার ফিরে যেতে হয়েছিল। ভুলবশত মোবাইল দুটো আর ওয়ালেট বাসায় রেখে এসেছিলাম।
লক্ষ্য করছি এই ব্যক্তি অনেকক্ষণ থেকে প্লাটফর্মে শুয়ে থাকা দুজনকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। লোকটিকে দেখে মনে হচ্ছে চিড়িয়াখানার পশু দেখছে। আরাম করে দুজন ঘুমাচ্ছিল তাদের মধ্যে একজন বাচ্চা সহ মহিলা ছিল। দেখে আশ্চর্য হলাম লোকটি এগিয়ে গিয়ে তাদের প্লাটফর্ম থেকে যেতে বলছে। শেষ পর্যন্ত বাচ্চা সহ মহিলাটি উঠে চলে গেল। অন্যজন তার কথায় পাত্তা না দিয়ে কম্বলে মুখ ঢেকে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
সভ্য দেশে আমরা আসলেই মানুষরূপী জানোয়ার। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ দেখলাম। আমার মত সেও ট্রেনের যাত্রী। কিন্তু আমার প্রশ্ন দুজন শুয়ে আছে প্লাটফর্মে সেখানে এর মাথাব্যথা কোথায়। আমাদের উচিত সহায় সম্বলহীন এই ধরনের লোকদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। যদি সামর্থ্য না থাকে তাহলে অন্ততপক্ষে সহমর্মিতা দেখানো উচিত। কিন্তু আমি এটা কি দেখলাম ?
আমি যখন পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে একটু লুকিয়ে ফটোগ্রাফি নেয়ার চেষ্টা করলাম। তখন লোকটি বুঝতে পেরে সামনে এগিয়ে আসলো। এমনভাবে সামনে এসে দাঁড়ালো মনে হচ্ছে সে কিছুই করেনি। অথচ কিছুক্ষণ আগেই সে জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম কাজটি করে আসলো। ঘুমন্ত এক মা ও সন্তানকে তাদের নিদ্রাস্থান থেকে উঠিয়ে দিয়েছে।
আমার দৃষ্টিকোণ থেকে আসলেই জগতের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম কাজ এটি এই মুহূর্তে। কয়েকদিনের প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় আমরা দালানকোঠার ভিতরেই ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। এই পোস্ট লেখার সময় এখনো ঠান্ডায় কাঁপছি। অথচ বাইরে খোলামেলা জায়গায় নিশ্চয়ই তারা ঠান্ডায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। সকালবেলা হয়তো সবেমাত্র ঘুমাতে পেরেছিল কিন্তু লোকটি সব বরবাদ করে দিল।
লোকটি বুঝতে পেরেছে আমি তার ফটোগ্রাফি নেওয়ার চেষ্টা করছি। তাই আস্তে আস্তে এখান থেকে দূরে সরে গেল। এমন অপকর্মকারীরা অনেক ভীতু হয়। ওদের ধারনা যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেই তাহলে তো নিমিষেই ভাইরাল হয়ে যাবে। চোরের মন পুলিশ পুলিশ আর কি! তাই গা বাঁচাতে দূরে সরে গেল। এখান থেকে দূরে সরে গেলেও পাপ কি আর রেখে যেতে পেরেছে।
যাইহোক আরো ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করার পর তখনও ট্রেন আসবে কিনা সঠিক সংবাদ পাওয়া গেল না। তাই শুধু শুধু এখানে সময় নষ্ট করে আর লাভ নেই। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম ইচ্ছা না করলেও হাইওয়েতে গিয়ে বাস ধরেই যেতে হবে। সামনে নামতেই সিএনজি ও রিক্সাওয়ালা আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য দর কষাকষি শুরু করলো। আমি তাদের আশ্বস্ত করলাম হাইওয়ে পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারবো, ঐতো সামনে দেখা যাচ্ছে।
এই বলে হাঁটতে শুরু করলাম হাইওয়ের দিকে। খুব বেশি দূরত্ব নয় সম্ভবত ২০০ থেকে ২৫০ মিটার হবে। ওখানে গিয়ে যে কোন বাসে উঠে চলে যেতে পারবো নিজের গন্তব্যস্থলে। ঠান্ডায় ট্রেনে যেতে পারলেই খুব ভালো হতো। কিন্তু কি আর করা আজকে ট্রেন এত দেরি হচ্ছে কেন বুঝতে পারলাম না। যাক বুঝে আর কাজ নেই এই রহস্য উদঘাটন করতে গেলে আমাকে আরো ঘন্টাখানেক থাকতে হবে। ততক্ষণে আমার সব কাজ পন্ড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
তাই স্টেশন কে পেছনে ফেলে পা বাড়ালাম সামনের দিকে। যদি আর একটুও দেরি করে ফেলি তাহলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তা না হলে ওই লোকের আজ সত্যিই বারোটা বাজাতাম। কিছু করতে না পারলেও তাকে বুঝিয়ে দিতে পারতাম শীতের রাতে এভাবে ঘুমালে কেমন লাগতে পারে। আসলে এসব বুঝতে গেলে বোঝার মত মন থাকতে হয়। আত্মকেন্দ্রিক এই ধরনের লোকদের জন্য আমাদের সমাজ আজ হুমকির মুখে।
আমাদের প্রত্যেকের উচিত আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে নিজেকে সবার মাঝে বিলিয়ে দেয়া। তবেই প্রকৃত সুখ পাওয়া যাবে। আমরা অনেক সময় ভুলেই যাই পৃথিবীতে এসেছি মাত্র কদিনের জন্য। ছোট্ট এই জীবনে আমরা ভালো থাকার জন্য কত কি না করেছি। কিন্তু ভালো কি আমরা থাকতে পেরেছি।
প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায় - - - -?
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
ডিভাইস | স্যামসাং গ্যালাক্সি A-10 |
---|---|
ফটো | @mayedul |
লোকেশন | রেল স্টেশন, কুড়িগ্রাম |
আমরা এমন একটি সমাজে বসবাস করি যেখানে
বেশিরভাগ শিক্ষিত, ভদ্র পোষাক পরিহিত লোকজনই সবথেকে বেশি নিম্মরুচির কাজ করে। আপনার বোধহয় সকাল থেকে যাত্রাই শুভ হয়নি, এই কারনে দিনের শুরুতেই এতো হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। যদিও আপনি পোস্টে উল্লেখ করেননি, তবুও আশাকরি শেষপর্যন্ত আপনি আপনার কাজের জায়গায় সঠিক ভাবে পৌঁছে, কাজটি সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। আজকের দিনটি ভালো কাটুক আপনার। ভালো থাকবেন।
হ্যাঁ দিদি পোস্টে বলেছি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মোবাইল ও ওয়ালেট রেখে এসেছিলাম যার কারণে আবার ফিরে আসতে হয়েছিল।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
লেখা টি পড়ে শরীরের পশম দাড়িয়ে গেলো। আমরা শীতের দিনে কত দামী দামী কাপর পরিধান করি, অথচ তাদের এই ছোট আরামটুকুও দেখতে পারিনা। ছিহ ছিহ মানুষ হিসেবেই নিজেকে লজ্জিত মনে হচ্ছে।
কথা টা একদম ঠিক। আসলে আমরা দুনিয়াতে কয়দিনের জন্য আছি, কেও কিন্তু গ্যারান্টি দিতে পারবো না। আজকে এই আমি আপনাদের মাঝে কমেন্ট করে যাচ্ছি, কাল বা আজকে বিকালেই আপনাদের মাঝে থাকবো কিনা সৃষ্টি কর্তা ছারা আর কেও জানেন না।
তাই হিংসা, অহংকার ও লোভ নিয়ে থেকে লাভ কী আমাদের। আসুন সচেতন হই, অভাবগ্রস্থদের পাশে দাড়াই।
সর্বপরি আপনার আজকের লেখাটা আমাকে অনেক কিছু মুগ্ধ করেছে। ধন্যবাদ আপনাকে আসসালামু আলাইকুম
হ্যাঁ ভাই আমরা ভুলেই যাই যে, দুনিয়াতে এসেছি কিন্তু ফিরে যাওয়ার জন্যই। ফিরে গিয়ে অবস্থা কি হবে সেটা নিয়ে মোটেও ভাবিনা।
ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্টটি ভিজিট করার জন্য।
শীতের সময় আসলেই অনেক কুয়াশা পড়ে। আজকে অনেক কুয়াশা পড়েছিল রোদ ওঠেনি তেমন। এই সময় বাস এক্সিডেন্ট বেশি হয়। সুতরাং আপনি নিরাপদ জার্নি হিসেবে রেল জানিয়ে বেছে নিয়েছেন। খুবই ভালো।
সবাই শুধু ফাঁকিবাজি ধান্দা করি তাইতো আজকে রেল স্টেশনে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের। আর এই কারণেই বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়। মানুষের বিবেক এখন অনেক নিম্ন স্তরে চলে গেছে। এই শীতের সময় কত মানুষ কত অবস্থায় জীবন যাপন করতেছে যা বলে বোঝানো অসম্ভব। কেবলমাত্র বিভিন্ন হসপিটাল এবং রেলস্টেশন গুলোতে হাটাহাটি করলেই বোঝা যায় তাদের অবস্থা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে বুঝার তৌফিক দান করুন এবং তাদের পাশে থাকার তৌফিক দান করুন।
ওই যে ভাই যে কথাটা না বললেই নয় সেটা হচ্ছে তারা তো সরকারি চাকরি করে।
আপনার আমার কাছে তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই।
আপনার পোস্টটা পড়ে খুব কষ্ট পেলাম লোকটার অসভ্য ব্যবহার দেখে। আসলে কি বলবো আজকের যুগের মানুষ অন্য জনের কষ্ট বুঝতে চায় না । আমরা দামী দামী শীতের পোশাক পরিধান করে শীত ঠেকাতে পারিনা। অথচ লোক গুলো ফুটপাতে একটু আরামের জন্য বিশ্রাম নিচ্ছে তাও অসভ্য লোকের কারণে আরাম নিতে পারলো না ।আর কি বলবো ভাষা খুজে পাচ্ছি না লোক গুলোর কষ্ট দেখে। পরিশেষে বলি আল্লাহ তায়ালা এমন অসভ্য লোকদের কে অন্য জনের কষ্ট বুজার তওফিক দিন এবং হেদায়েত দিন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আমাদের মাঝে এত সুন্দর পোস্ট উপহার দেয়ার জন্য।
হ্যাঁ ভাই মাঝে মাঝে চলার পথে এরকম কুরুচিপূর্ণ কাজ দেখে মনে হয় সত্যি কি আমরা মানুষ হতে পেরেছি।