বোকামি
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলে ভালো আছেন। গতকাল আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম বিশ্বকর্মা পূজার জন্য বাজার করতে যাওয়ার কথা। বাজার করেছিলাম বৃষ্টির মধ্যে। সাথে ঘোরাফেরার কথা শেয়ার করেছিলাম। আজকে শেয়ার করছি তার পরের ঘটনাবলী।
আমি বলেছিলাম আমি ক্যাফেতে কিছুক্ষণ বসে থাকার পরে ,অন্য জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। আসলে আমার বাড়ি কৃষ্ণনগরে আর কৃষ্ণনগরের খুব কাছে শান্তিপুর ।শান্তিপুর শাড়ির জন্য বিখ্যাত বিশেষ করে । পুজোর আগে সকলে প্রায় শান্তিপুরে যায় কাপড় কিনতে, শাড়ি কিনতে। শান্তিপুরে অনেক জায়গায় খুব অল্প দামে ভালো ভালো শাড়ি পাওয়া যায়।
আমার বাবার কৃষ্ণনগরই জন্ম ।কিন্তু এত বছরে শান্তিপুরে গিয়ে কখনো শাড়ি কেনা হয়ে ওঠেনি ,কারণ আমরা আমাদের শহরে সব কিছু ভালো মতো পেয়ে যাই।আমার মায়ের বহুদিনের ইচ্ছা শান্তিপুরে গিয়ে একটু শাড়ি দেখবে ,সেই ইচ্ছা পুজোর আগে এসে কাজের চাপে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে আমরা শান্তিপুর অনেক বার গিয়েছি।
আমার মনে আছে আমি যখন ক্লাস নাইন টেনে পড়ি,তখন একবার শান্তিপুরের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় মেন রোডের ওপরেই কোন একটা দোকান থেকে শাড়ি কেনা হয়েছিল ।আর শাড়িটা খুব ভালো ছিল।
হঠাৎ করে বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন সকাল বেলা থেকেই আমার পাশের বাড়ির কাকু কাকিমা আমাদের বাড়িতে এসে বলতে থাকে ঘুরতে যাওয়ার কথা। আর ওদের নাচানাচিতে আমার মাও রাজি হয়ে যায় ।আমরা যে শান্তিপুরের দিকে যাচ্ছি সেটা আমিও জানতাম না ।সাথে আর একজনও যায়। তিনি হলেন আমাদের মৌসুমী বৌদি।
আমি যখন টোটোতে উঠলাম তখনও আমি জানি না আমরা কোথায় যাচ্ছি ,পরে আমি জানতে পারলাম আমরা যাচ্ছি গোবিন্দপুর বলে কোন একটা জায়গায় ।আমি যদি জানতাম গোবিন্দপুর শান্তিপুরের কাছাকাছি কোন একটা এলাকা। আমি কোনমতেই টোটো করে যেতাম না। পাড়ার লোকজনের পাল্লায় পড়ে আমার মা রাজি হয়ে যায় ।আর ওরাও টোটো বুক করে ফেলে।
আমার বাবা যদি কোন ভাবে শুনতে পারতো যে আমরা এতটা দূর টোটো করে যাচ্ছি, তাও আবার হাইরোড ধরে তাহলে তো আমি, মা সবাই বকা খেতাম। শুধু আমি মা বলে নয় আমার প্রতিবেশীরাও বকা খেত,যারা আমাদের সাথে গিয়েছিল ।আমার মাও ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি। এই শহরে থাকলেও আমার মা যেহেতু খুব কম বের হয় ,তাই রাস্তাঘাট অলি গলি খুব কম চেনে। জায়গার নাম সেরকম ভাবে মা জানে না ।ওরা শাড়ির কথা বলাতে আমার মাও রাজি হয়ে গিয়েছিল।
অবশেষে টোটোতে উঠে আমি জানতে পারি গোবিন্দপুর বলে একটা জায়গা আছে ,যেখানে খুব পাইকারি দরে শাড়ি পাওয়া যায় ।সেটা একটা গ্রামের মধ্যে এবং আমরা সেখানেই যাচ্ছি, সেটা শান্তিপুর স্টেশনের কাছাকাছি । আমি শুনে মাথায় হাত। তার মধ্যে বৃষ্টি। আমি রীতিমতো রাগারাগি করতে লাগলাম টোটোর মধ্যে ।কিন্তু বাকি বড়রা ছিল বলে আমি কিছু বলতে পারলাম না।
কিছু করার নেই যেহেতু আমি বাড়ি থেকে অনেকটা দূর এগিয়ে এসেছিলাম। তাই ব্যাপারটা ঠিকঠাক সহ্য করে নিলাম। এছাড়াও এই প্লাটফর্মে পোষ্টের কিছু কাজ ছিল। তাই টোটোতে বসে আমি লিখতে লিখতে যাচ্ছিলাম। আমাদের পৌঁছাতে যে কতটা বেশি সময় লাগলো তা ভগবানই জানেন। মোটামুটি ৪০ মিনিট তো লেগেছে।
আমি ফোনে কাজ করতে করতে যাচ্ছিলাম বলে, অতটা বুঝতে পারিনি। পৌঁছে গিয়ে ওরা একটার পর একটা দোকানে ঢুকে শাড়ি দেখতে লাগলো। দোকান বলাও ঠিক হবে না, আসলে বাড়ির মধ্যেই শাড়ির বড় বড় গোডাউন করে রেখেছে। সেখানে সস্তায় অনেক শাড়ি বিক্রি হচ্ছে।
আমি যখন একবার ঢুকলাম ,তারপর আমি বেরিয়ে আসলাম ।কারণ সত্যি বলতে আমার একটা শাড়িও পছন্দ হয়নি। যদি যেতেই হত তাহলে শান্তিপুর গেলেই হত। এই গোবিন্দপুর নামক জায়গাতে শাড়ির পাইকারি বিজনেস কিভাবে চলে জানি না, তবে শাড়ির কোয়ালিটি একদম ভালো না।।
আমার মাও কোন শাড়ি কিনলো না। শুধু আমার সাথে আমাদের প্রতিবেশীরা যারা গিয়েছিল তারা কেনাকাটা করল ।আমি অতক্ষণ ধরে টোটোতে বসে বসেই কাজ করছিলাম ।কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবার যখন মাথাটা হালকা হল ,তখন আবার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছিল এটা ভেবে যে কেমন গাধার মতো আমরা আমাদের গাড়ি ছাড়া এই টোটো করে হাইরোড দিয়ে এতদূর চলে আসলাম ।সব থেকে বড় কথা সেদিনকে আমার মোটামুটি চার ঘন্টা নষ্ট হয়েছে।
আমি যদি আগে জানতাম কখনোই এভাবে আসতাম না। আর আমি বাড়ি ফিরে এসে সেদিনকে এই শপথ নিয়েছি এভাবে আমার প্রতিবেশীদের পাল্লায় পড়ে মাকেও কোন জায়গায় পাঠাবো না।। একদম অবান্তরের মতন যাওয়া আসা হল। কাজের কাজ কোন কিছুই হলো না।। এই বৃষ্টির দিনে টোটোতে করে এতটা দূরে যাওয়ার কোন মানেই হয় না। আমার বাবা জানতে পারেনি। কিন্তু জানলে সবার কপালে কষ্ট ছিল।
যাইহোক কি আর করা যাবে। সবকিছুর পরে রাগের পাশাপাশি নিজের উপরই হাসি পাচ্ছিল। আমার সাথে এই মৌসুমী বৌদিও বলাবলি করছিল। একটা বড় শিক্ষা হল। এবার আর এদের সাথে যাওয়া যাবে না। যাইহোক সবকিছু শেয়ার করতে পেরে আমার বেশ ভালো লাগলো। আজকে এখানেই শেষ করছি।
Your post has been rewarded by the Seven Team.
Support partner witnesses
We are the hope!