বিয়ে,ঘটক ও ঘটকালি নিয়ে কিছু কথা।
বিবাহের উদ্দেশ্যে দুটি পরিবারকে একত্রিত করে সংযোগ স্থাপন করার জন্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন যে ব্যক্তি তাকে বলা হয় ঘটক। আর এই কাজ কে বলা হয় ঘটকালী। বগলে ছাতা, লম্বা টুপি, থুতনিতে কিছু দাড়ি,পাঞ্জাবি আর প্লাস্টিকের জুতা পরিহিত এমন ব্যক্তিই ঘটক হিসেবে আমাদের কল্পনায় আছে।
একটা সময় ঘটকালী কাজকে পেশা হিসেবে নেয়ার মত ব্যক্তির অভাব ছিল না। তবে বর্তমান আধুনিক ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কল্যাণে এই পেশাটি তে নিয়োজিত মানুষ এখন প্রায় নেই বললেই চলে। এখনকার বিয়ে-শাদী সাধারণত যোগাযোগ ও পরিচিতজনেরা দেখানোর মাধ্যমে হয়ে থাকে।
পূর্বে ঘটক পাত্রপাত্রী দেখাদেখি করাতো।তখন এই পেশাটি এতটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল না। কিন্তু এই পেশাটি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়াতে বর্তমানে আত্মীয় ও পরিজনেরা যারা ঘটকালি করেন তাদের জন্য এই কাজ খুবই বিপদজনক বলে আমার মনে হয়। কারণ আমি অনেককে দেখেছি যে সাংসারিক জীবনে অসন্তুষ্ট বা অসুখী হওয়ায় যে বিয়ের সম্বন্ধে এনেছিল তাকে এত পরিমানে গালমন্দ ও বদ দোয়া করে যা অবিশ্বাস্য!!!
মূলত এরেঞ্জ ম্যারেজে এ ঘটনাটি ঘটে থাকে। আজকাল পারিবারিকভাবে বিবাহের সংখ্যা কমে গেলেও এখনো বিরাজমান আছে। এখন অধিকাংশই নিজেরা পছন্দ করে নিজেদের সিদ্ধান্তে বিয়ে করে।
বেশ ক'বছর আগের কথা।আমি এক আত্মীয়ের বিয়েতে গিয়েছিলাম। আমি ছিলাম ছেলে পক্ষের মেহমান। বিয়েতে যাওয়ার পূর্বে শুনেছিলাম ছেলেপক্ষ মেয়েকে সাত ভরি স্বর্ণ দেবে। কিন্তু বিয়ের দিন পর্যন্ত দেখি যে ছেলেরা কোন স্বর্ণ কিনেনি। অতঃপর ঘটক কনফার্ম করল বিয়ের পরদিনই মেয়ের হাতে সাত ভরি স্বর্ণ দেয়া হবে। বিয়ের দিন আমি মেয়ের বাড়িতে যখন ছিলাম লক্ষ্য করলাম ঘটক মেয়ের সমস্ত আত্মীয়-স্বজন যেমন খালা, ফুফু, মামি, চাচি,ভাবী ও আর অন্যান্য দের সকলকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন কে কতটুকু ওজনের স্বর্ণের চেইন বা আংটি দেবে।
আর যদি স্বর্ণ দিতে না পারে তাহলে সমপরিমাণ টাকা দেবে। দেখলাম বিয়ের পরে দলে দলে লাইন ধরে সবাই নতুন জামাইয়ের হাতে স্বর্ণ ও টাকা দিল। পরদিন সকালে বৌভাতের দিন সমস্ত স্বর্ণ একত্রিত করে স্বর্ণের দোকানে নিয়ে এগুলোকে বদলি করে মেয়ের জন্য সাত ভরি স্বর্ণ নেয়া হলো। মেয়েকে সেই স্বর্ণ দেয়া হলো। এত আশ্চর্য চাইনিজ বুদ্ধি কারো থাকতে পারে তা আমার কল্পনাতেও ছিল না!!! আসলে মানব জীবনে অভিজ্ঞতার কোন শেষ নেই।
বিয়ের সম্বন্ধ যে ব্যক্তি আনে তাকে রীতিমতো তুলোধুনো করা হয়।অথচ সম্বন্ধে যেই আনুক না কেন খোঁজখবর নিয়ে ভালো-মন্দ বিচার করে বিয়ে দেয়ার দায়িত্ব বাবা-মায়ের।বাবা-মা সেই কাজটি করুক বা না করুক সন্তান বাবা-মাকে দোষারোপ না। করে সেই বিয়ের সম্বন্ধ আনা ব্যক্তিকে।
সম্প্রতি আমি নিজেও ঘটকালির একটি কাজ করেছি। এখন পর্যন্ত আপডেট হলো উভয় পক্ষই একে অপরকে পছন্দ করেছে এবং তারা দেখাদেখি করতে চায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি বেশ ভয়েই আছি ব্যাপারটি নিয়ে।
বিয়ে অত্যন্ত পবিত্র একটি বিষয় । উপযুক্ত ছেলে ও মেয়েকে বিয়ে করানো শরীয়া ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময় বিবাহ না হলে সমাজে অনেক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় ও বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। পৃথিবীর সমস্ত ধর্মের মানুষ বিয়েকে খুব সম্মান দিয়ে থাকে।
ভবিষ্যতে কি হবে এই সিদ্ধান্ত অনুমান করে নেওয়া খুবই কঠিন। আমি লক্ষ্য করে দেখেছি বিয়ের জন্য সকলেরই প্রথম পছন্দ ভদ্র, শিক্ষিত, মার্জিত ও ধার্মিক ছেলে বা মেয়ে।কিন্তু এটি ছাপিয়ে যখন সৌন্দর্য, অর্থ-সম্পত্তি,বৈভব এই ব্যাপার গুলো মুখ্য হয়ে যায় সেরকম বিয়ে পরবর্তীতে ঝামেলায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
ছেলেরা বিয়ে করার সময় কেন যেনো অপরূপ সুন্দরী মেয়ে খুঁজে।আবার মেয়েরা ও বিয়ে করার সময় চায় অর্থ সম্পত্তিতে পরিপূর্ণ সুপুরুষ। ধরে নিলাম দুজনেরই চাওয়া পূরণ হলো।কিন্তু দেখা গেল বিয়ের পরেই তাদের এই চাওয়া পরিবর্তন হয়ে যায়।একজন পুরুষ তখন স্ত্রীর মধ্যে সাংসারিক গুণ খুঁজতে থাকে আর স্ত্রীও স্বামীর মধ্যে মানবীয় গুণাবলী খুঁজতে থাকে।
বগলে ছাতা, লম্বা টুপি, থুতনিতে কিছু দাড়ি,পাঞ্জাবি আর প্লাস্টিকের জুতা, এই বর্ননা পড়তে গিয়ে হঠাৎ করেই স্কুল জীবনের স্মৃতি মনে পরে গেল। তখন নাটক করার সময় ঘটককে এরকম ভাবেই সাজানো হতো। তবে গালে অনেক সম্অয় একটা তিল'ও থাকতো।এই স্মৃতি আমার এত বছরেও মনে পরে নাই।
আগের দিনের বিয়ে ঘটককে ছাড়া আসবে চিন্তা করাটাই কঠিন ছিল।ঘটক তখন ঘরে ঘরে যেয়ে ছেলে মেয়েদের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতেন।
অবশ্য বিভিন্ন ঘটককে পেপারের মাধ্যমে ও ঘটকালি করতে দেখেছি। ঘটক পাখি ভাই বেশ নামকরা ঘটক ছিলেন।
সময়ের সাথে সাথে ঘটকালি পেশা প্রায় বিলুপ্তির এর দিকে।
আপনি ঘটকালি করছেন জেনে ভালো লাগলো।
ভালো থাকবেন সবসময়।
আমাদের গ্রাম অঞ্চলে বিয়ের ঘটক সম্পর্কে যদি বলতে যাই। তাহলে এই ধরনের চতুর বুদ্ধির হয়তো বা কেউই হবে না। কেননা উনি যেভাবে বিষয়টাকে সামনে নিয়েছেন। এভাবে এত সহজে বিষয়টা সামনে নেওয়া হয়তো বা কারোর পক্ষেই সম্ভব না। যাইহোক তারপরেও উনি উনার বুদ্ধির পরিচয় দিতে পেরেছেন, এটাই হচ্ছে সবচাইতে বড় কথা।
বিয়ে হওয়ার পর একটা মেয়ে বা একটা ছেলের মধ্যে সম্পর্ক কতটুকু ভালো হবে। সেটা একমাত্র নির্ভর করে তাদের একজন আরেকজনের প্রতি আগ্রহ ভালোবাসা তার উপরে। কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা যায় বিয়ের পরে সংসারের মধ্যে অশান্তি একেবারেই লেগেই থাকে। ঘটক বলে এক রকম হয়ে যায় অন্যরকম। এই নিয়ে ঘটকের মধ্যে নানা ধরনের সমস্যা শুরু হয়ে যায়।
আমার মনে হয় প্রত্যেকটা ঘটক যদি বিয়েতে সত্যি কথা বলতো। তাহলে হয়তো বা অন্ততপক্ষে তাদের এই বন্ধন কখনোই ভেঙ্গে যেত না। যদিও নিজেদের সমস্যার কারণে ভেঙে যেত। কিন্তু অন্ততপক্ষে দুই পরিবার কিছুটা হলেও শান্তি পেত। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ উপরোক্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। একজন চতুর ঘটকের বুদ্ধি সম্পর্কে জানতে পারলাম। ভালো থাকবেন।
আপনি একদম সঠিক বলেছেন বর্তমান সময়ে ঘটকালি অনেকটা বিলুপ্তির পথে।। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদের পছন্দেই বিয়ে হয় তারপরও পারিবারিক ভাবেও অনেক বিয়ে হয়।।
আপনি একটি বিয়ের ঘটনা বললেন পড়ে একটু আশ্চর্য হলাম এভাবে বিয়ে ঠিক হয়।। আসুন একটু ভালো লাগলো আপনি একটি বিয়ের ঘটকালী করছেন।। আমি মনে করি বর্তমান সময়ে ঘটকালি করাও বিপদজনক।।
সত্যিই আজকে আপনি একদম ভিন্ন রকম একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আগেরকার দিনে ঘটকের অভাব ছিল না। কিন্তু বর্তমানে এই আধুনিক যুগে ঘটকের আর দরকার হয় না।
আগেরকার দিনে দুই পরিবার মিলে অনেক দেখে শুনে যাচাই করে তারপরে বিয়ের সম্বন্ধ করা হতো।
সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।