কেন আমরা সবসময়ই অস্বস্তি বোধ করি।
খেয়াল করে দেখুন তো নিশ্চিন্ত মনে বসতে চাইছেন, ঘুমাতে চাইছেন কিন্তু সব সময় কোন না কোন অস্বস্তি বোধ আপনাকে ঘিরে রেখেছে বলে মনে হচ্ছে। তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন তবুও উড়ে যাচ্ছে না। যেন বারবার এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ছুটে চলা প্রজাপতির মত আপনার কাছে ঘুরে ঘুরে আসে।যদিওবা তেমন গুরুতর না, যদিও বা দীর্ঘস্থায়ী না তবুও এর ফলাফলকে আমাদের স্বীকার করতেই হবে।
এই অস্বস্তিবোধ আমাদের স্বাচ্ছন্দ্যের অনুভূতিতে প্রভাব বিস্তার করে। অনেক সময় যাকে আমরা বাঞ্ছিত ব্যবহার বলে জানি এসবের দরুন তা থেকে আমাদের আচরণ অধিকতর রূঢ় ও বেমানান হয়ে পড়ে। আমরা অনেক সময়ই অসুখী অসুস্থ ভারাক্রান্ত ও ভগ্নোদ্যম বলে আমাদের মনে করি এবং তার কারণ জানতে পারি না। আমরা কদাচ এসব অনুভূতিকে আমাদের অতৃপ্ত চাহিদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মনে করি।
ধরুন একটি ক্ষুধার্ত শিশুর কথা। সে মোটেই নীরব অথবা শান্ত নয়, সে কি হতে পারে? সে ছটফট করে। সে হাত ছোড়ে, সে পা ছোড়ে এবং সে কাঁদেও। সে একেবারেই অস্থির। ক্ষুধার জ্বালা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তার সাধ্যের মধ্যে সব কাজই করে।
এর বিপরীতে এখন একজন চিন্তাগ্রস্ত সাবালকের কথাই ভাবা যাক। সেও মোটে নীরব বা শান্ত নয়। সেও তার চেয়ারে বসে ছটফট করে অথবা পায়চারি করতে থাকে, অস্থিরভাবে চলাফেরা করে। সামনের জিনিসগুলো সজোরে ফেলে দেয়। চিৎকার করে অভিযোগ প্রকাশ করে এবং কোনো কোনো সময় অসংযত ভাষা উচ্চারণ করে। সেও খুবই অস্থির এবং মুক্তি পাওয়ার জন্যই এসব কাজ করে।
শিশুটিকে খাইয়ে পরিতৃপ্ত করা হলে সে উত্তেজনা থেকে মুক্তি লাভ করে এবং শান্ত হয়। আসলে প্রত্যেক ক্ষেত্রে চাহিদার সন্তোষবিধানের ফলেই এমন হয়।উভয় ক্ষেত্রেই উত্তেজনা জনিত সমস্যার সমাধান না হলে একই ফল দেখা দেয়। আবার উত্তেজনার উপশম হলে ফলাফল ভিন্ন রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
আসলে আজকের এই লেখায় আমি এটাই বোঝাতে চাইছি যে শারীরিক বা সামাজিক যে কোনো রকমের হোক না কেন অপরিতৃপ্ত চাহিদার ফলেই অস্বস্তির সৃষ্টি হয়।
এ অস্বস্তিতে সংশোধনের প্রয়াস সৃষ্টি হয়। এই অস্বস্তি থেকেই ব্যাঘাতের মূল উৎপাটনের কর্মকাণ্ড শুরু হয় হয় এবং তার স্থানে সন্তোষজনক অবস্থা দেখা দেয়। শিশু তার অসন্তোষ প্রকাশ করে পা ছুড়ে ও কেঁদে। অনেক বৎসর পরে সে তার অসন্তোষ প্রকাশ করে তার তিক্ততায় ও ভাষায়।
তবে এক্ষেত্রে একটি বিশেষ তারতম্য রয়েছে। শিশুটি তার চাহিদার সন্তোষবিধানের জন্য সম্পূর্ণভাবে অপরের উপর নির্ভরশীল। অপর দিকে একজন সক্ষম ব্যক্তি তার অবস্থার সংশোধনের জন্য নিজেই যে কোনো কিছু করতে সমর্থ।
আপনি যখন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অথবা কোনো কারণে অস্বস্তি বোধ করবেন তখন সবার পূর্বে আপনি তার মূল কারণ উদঘাটন করে ফেলুন। নিশ্চয়ই এতে অস্বস্তি দূর করার কোন না কোন উপায় উদ্ভাবিত হবে। আর যদি সেটি সম্ভব না হয় তাহলে নিজেকে এমন ভাবে গড়ে তুলুন যাতে অস্বস্তি আপনার কোন ক্ষতি করতে না পারে।
কারণ আমাদের সকল বৈরি ক্রিয়া কর্মের মূলে রয়েছে এই অস্বস্তি। যদিও আমরা জানি তথাপি সব সময় নিজের সাথে স্বীকার দেই না। আসুন আজ থেকে নিজেকে ঝেড়ে ফেলি। পেছনের কথা ভুলে যাই। নতুন ভাবে নিজেকে আবিষ্কার করি। নিজেকে উপহার দেই জীবনের প্রশান্তি।
আমরা সব সময় কেন অস্বস্তি বোধ করি এই বিষয় নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। একজন মানুষের মনে নানান রকমের প্রশ্ন ঘুরপাক করে। এজন্য একেক সময় একেক চিন্তা চলে এসে যার কারণে এরকম অস্বস্তি লাগে।