খিচুড়ির প্রাচীন ইতিহাস।

in Incredible India8 months ago
IMG_20240102_185508.jpg

খিচুড়ি বাঙালি খাবারে সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি নাম। এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না যে খিচুড়ি পছন্দ করে না। পূর্বে যখন এই বাংলায় মানুষের জীবনযাপন অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থায় ছিল তখন মানুষ অতিথি আপ্যায়নে বলতেন যে দুটো ডাল ভাত খেয়ে যান। বলা চলে এই ডাল -ভাতের ই সংস্করণ হচ্ছে খিচুড়ি।

মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা শুধু চাল আর ডাল নয় বরং তিনি নির্দিষ্ট করে খিচুড়িতে মুগ ডালের কথা উল্লেখ করেছেন। রানী ভিক্টোরিয়ার যুগে বাংলা থেকে ফেরত যাওয়া ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির লোকেদের মাধ্যমেও লন্ডনে ছড়িয়ে পড়ে এই খিচুড়ি। তারা যেহেতু জাতিতে ভদ্রলোক তাই আগের দিনের বেঁচে যাওয়া চাল ও ডাল এর সাথে পরবর্তী দিনে নতুন করে মাংস,ডিম ও অন্যান্য উপাদান যুক্ত করে রান্না করতেন এই খিচুড়ি।

IMG_20240102_154211.jpg

পোঙ্গল, মিষ্টি খিচুড়ি, সাবুদানা খিচুড়ি, ভুনচি খিচুড়ি, কালো চালের খিচুড়ি,খিচড়া ইত্যাদি নামের খিচুড়ি ভারতবর্ষে পাওয়া যায়। এইসব রান্নায় একেক অঞ্চলে একেক ধরনের চাল ও ডাল ব্যবহার করা হয়। আবার কিছু কিছু খিচুড়ি চিনি দিয়ে রান্না করা হয়।শুনতে বড় অদ্ভুত লাগলেও এটি একেবারেই অমূলক নয়। ঠাকুরবাড়ির পুরনো ইতিহাস খেতে দেখা যায় সেখানে খিচুড়ি দই দিয়ে খাওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল।

বাংলায় খিচুড়ির আবির্ভাব বহু পরে এসেছে। কারণ খিচুড়ি রান্নার উপকরণ ডাল এই বাংলার মূল খাদ্যশস্য ছিল না। ডাল ছিল মধ্যপ্রাচ্যের খাদ্যশস্য।মধ্যপ্রাচ্য থেকে আফগানিস্তান হয়ে অতঃপর পাকিস্তান দিয়ে পরবর্তীতে বাংলায় প্রবেশ করে এই ডাল।খিচুড়ির নাকি চার বন্ধু।ঘি, পাপড় দই,আচার। ঘি, পাপড়,আচার এগুলোর যৎ সামান্য প্রচলন থাকলেও খিচুড়ির সাথে দই এটিকে বড়ই অদ্ভুত কম্বিনেশন হিসেবে ধরা হয়। যদিও ঠাকুরবাড়ির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে, খিচুড়ির সাথে দই খাওয়ার একটি প্রচলন তাদের ছিল।

IMG_20240102_154301.jpg
IMG_20240102_154152.jpg

মুঘল হেঁসেলের খিচুড়ির কথা এখানে না বললেই নয়। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর খিচুড়ির মধ্যে কিসমিস ও পেস্তা বাদাম খুব পছন্দ করতেন। এই খিচুড়ির নাম দিয়েছিলেন তিনি লাজিজা। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মাছ ও ডিম দিয়ে আরও একটি খিচুড়ি রান্না করা হতো যার নাম ছিল আলমগিরি। মুঘল আমলে বীরবলের খিচুড়ি নামে ও একটি খিচুড়ি বহুল প্রচলিত ছিল।

বৃষ্টির দিনে ইলিশ-খিচুড়ি এটা ভোজন রসিক বাঙ্গালীদের অত্যন্ত প্রিয় একটি খাবার। বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টিতে গরম গরম খিচুড়ি, সরষের তেলে ভাজা ইলিশ, বেগুন ভাজা ও নানা ধরনের ভর্তা এর স্বাদ প্রতিটি বাঙালি জানে। এই খাবারটিকে বাঙালিরা যেন একেবারে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে গেছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে যত বাঙালি ছড়িয়ে আছে তারা এই খাবারটির প্রচারণা করে চলছে।

IMG_20240102_185439.jpg

ভারতবর্ষের পুরীতে জগন্নাথ দেবের মন্দিরে প্রতিদিন ভুখা-নাঙ্গাদের খিচুড়ির ব্যবস্থা ছিল। কথিত আছে এখান থেকেই খিচুড়ির সুস্বাদ ও ঘ্রাণের কারণে সুনাম ছড়াতে ছড়াতে এই খিচুড়ির নাম জগাখিচুড়ি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মূলত খিচুড়িতে সব রকমের উপাদান চাল-ডাল শাকসবজি থেকে শুরু করে যা কিছু পাওয়া যেত সবই দেওয়া হতো। এ ধরনের বহু উপাদানে তৈরি খিচুড়িকে মূলত জগা খিচুড়ি বলা হয়।

DeviceName
Androidvivo v19
Cameratriple camera 48mp+8mp
LocationBangladesh 🇧🇩
Shot by@hasnahena

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iQCjo8xoKWHSEpzPyRNRsVL6gfxRoM2huMuKokQX4y8WbgZrrXEJ88FyZYkLnmKa7wBX1sioJmC.png

Sort:  
Loading...
 8 months ago 

নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইলো।
খিচুরি ভালোবাসে না এমন বাঙালী খুজে পাওয়া মনে হয় কঠিনই হবে।
খিচুড়ি সম্পর্কে খুব একটা কিছু জানা ছিলো না৷ তবে খেতে খুব ভালোবাসি।ধন্যবাদ এমন তথ্য সম্বলিত একটা লেখা উপহার দেবার জন্য।
ভালো থাকবেন সবসময়।

Posted using SteemPro Mobile

 8 months ago 

খিচুড়িতে কিস্মিস বাদাম দেয়া হয় এটাই আমার অজানা ছিল, এর পর অবশ্যই আমিও মুঘলী খিচুড়ি রান্নার ট্রাই করবো।

ধন্যবাদ খিচুড়ি দিয়ে এত বিস্তর জানানোর জন্যে।

খিচুড়ির ইতিহাস পড়ে আমার মাথার মধ্যে তো খিচুড়ি পাকিয়ে গেল। ইংল্যান্ডের লোকেরা জাতিতে ভদ্রলোক হলে আমরা কি ছোটলোক? তারা যেভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে আমাদের মত দেশকে শাসন এবং শোষণ করে গেছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

খিচুড়ি যে দই দিয়ে খাওয়া যায় এই প্রথমবার জানতে পারলাম। ইলিশ-খিচুড়ির ব্যাপারে অনেকবার শুনে থাকলেও এই পদটা আমার এখনো খাওয়া বাকি আছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ খিচুড়ির ইতিহাস নিয়ে চর্চা করার জন্য। অনেক কিছু জানতে পারলাম।

 8 months ago 

খিচুরি বিশেষ করে সকালে এবং রাতে খেতে খুবই মজা লাগে ৷ বিশেষ করে শীতকালে খিচুরি খেতে অনেক ভালো লাগে ৷ আর খিচুরি তে বেশী শাক সবজীর প্রয়োজন পরে না অল্প কিছু দিয়েই খিচুরি রান্না করা যেতে পারে ৷

ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷

 8 months ago 

খিচুড়ি ইতিহাস পড়তে গিয়ে আমার মাথার মধ্যে কিছু এখন খিচড়ি ঘুরছে তাছাড়া এত ধরনের খিচুড়ির নাম সত্যি আমার কাছে অজানা ছিল।
তার থেকেও অদ্ভুত একটি জিনিস জানতে পারলাম। সেটা হল খিচুড়ি নাকি দই দিয়ে খায় যার ইতিহাসটা ঠাকুরবাড়ি ঘাটলে পাওয়া যাবে।

 8 months ago 

বাংলায় খিচুড়ির আবির্ভাব বহু পরে এসেছে। কারণ খিচুড়ি রান্নার উপকরণ ডাল এই বাংলার মূল খাদ্যশস্য ছিল না। ডাল ছিল মধ্যপ্রাচ্যের খাদ্যশস্য।

বেশ তথ্য বহুল একটি লেখা আপনার লেখাগুলো পড়তে আসলে অনেক ভালো লাগে। আপনি আনকমন কিছু শেয়ার করতে পছন্দ করেন। আসলে আমি নিজে জানতাম না যে খিচুড়ি প্রাচীন ইতিহাস।

ডাল যে আমাদের দেশের খাদ্যশস্য না এই প্রথম জানলাম। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ খিচুড়ির এই প্রাচীন ইতিহাস আমাদের কাছে উপস্থাপনা করার জন্য।

 8 months ago 

আপনার পোস্টি পড়ে জানতে পারলাম খিচুড়ি ইতিহাসের সম্পর্কে। সেই সাথে খিচুড়ির বিভিন্ন নাম সম্পর্কে জানতে পারলাম। খিচুড়ি ছোট বড় সকলেই পছন্দের একটি খাবার । বিশেষ করে শুনে আমার অদ্ভুত মনে হলো যে খিচুড়ি নাকি দই দিয়েও খাওয়া যায় । আপনার পোস্টটি পরিদর্শন করে খিচুড়ি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম।

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ খেয়ে ছুরির ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু শেয়ার করেছেন ।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 59241.40
ETH 2525.12
USDT 1.00
SBD 2.47